প্রেম ও সভ্যতার মহাদেশ বলে পরিচিত ইউরোপে আক্ষরিক অর্থেই বইছে প্রেমেরজ্বর। গত কয়েক বছরে ইউরোপের আলোচিত রাষ্ট্রপ্রধানদের অধিকাংশই মতাসীন থাকার সময়ে নানাভাবে নতুন প্রেমের জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন।
অথচ এ প্রেমের জন্যই যুগে যুগে রাষ্ট্রপ্রধান/ সিংহাসন ছাড়ার ঘটনাও আছে অনেক। এই বিংশ শতাব্দিতেই ইংল্যান্ডের রাজা অষ্টম অ্যাডওয়ার্ড এক মার্কিন নারীকে বিয়ে করার জন্য ব্রিটিশ রাজমুকুট ত্যাগ করেছিলেন।
কিন্তু একবিংশ শতাব্দিতে এসে রাষ্ট্রমতায় গিয়েই কি আর স্ত্রীদের ভালো লাগে না ইউরোপের রাষ্ট্রপ্রধানদের? নতুন প্রেম, বিয়ে ভাঙা আর বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া যেন ডাল-ভাতে পরিণত হয়েছে।
ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজি থেকে বর্তমান ফ্রাঁসোয়া ওঁলাদ আর এখন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট লৌহমানব পুতিন; সবাই প্রেমের কাছে লুটিয়ে পড়েছেন। আর ইতালির বার্লুসকোনি তো ব্যয়বহুল বিবাহবিচ্ছেদ ঘটিয়েছেন এক কিশোরীর প্রেমে পড়েই।
ইতালির সাবেক প্রধানমন্ত্রী সিলভিও বার্লুসকোনি। নিত্যনতুন প্রেমের জন্যও তার খ্যাতি অনেক। ১৯৭২ সালে প্রথম বিয়ে তার। এরপর ১৯৮০ সালে মিলানের একটি নাট্যমঞ্চে অভিনয় করার সময় ভেরোনিকা লারিওর প্রেমে পড়েন ইতালির অন্যতম বিত্তশালী বার্লুসকোনি। সেদিনই সাজঘরে লারিওর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি। ১৯৯০ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন ২ জন। তাদের ৩টি সন্তান রয়েছে। ভেরোনিকা লারিও ছিলেন তার দ্বিতীয় স্ত্রী। প্রথম স্ত্রীর ঘরে বার্লুসকোনির একটি সন্তান রয়েছে।
২০০৯ সালে ইতালির শীর্ষস্থানীয় মডেল নোয়েমি লতিজিয়ার ১৮তম জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বার্লুসকোনি। তিনি ওই মডেলকে নেকলেস উপহার দেন। আর এটিই হয় ভেরোনিকা লারির সঙ্গে তার ঘরভাঙার কারণ। সম্প্রতি প্রতি মাসে ৩৬ মিলিয়ন ইউরো (৩০ মিলিয়ন ডলার) দেওয়ার শর্তে দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটিয়েছেন তিনি।
অবশ্য এটিই প্রথম ঘটনা নয়। এর আগে-পরে বার্লুসকোনির আরও কিছু প্রেমের গুজব ওঠে। বর্তমানে নিজের দল পিপল অফ ফ্রিডম পার্টির কাউন্সিলর ২৮ বছর বয়সী ফ্রানসেসকা প্যাসকেলের সঙ্গে প্রেম করছেন তিনি। বার্লুসকোনি ৩ দফায় ইতালির প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে ২০১১ সালের নভেম্বরে পদত্যাগ করেন। ২০১৩ সালের নির্বাচনে আবারও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
ইউরোপের রাষ্ট্রপ্রধানদের মধ্যে আরেক আলোচিত প্রেমিক ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজি। তিনি প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরও চুটিয়ে প্রেম করছিলেন ইতালির সাবেক সুপার মডেল, সংগীতশিল্পী কার্লা ব্রুনির সঙ্গে। নানা ঘটনার পর তিনি তাকে বিয়ে করতে বাধ্য হন। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজি যখন প্রথম ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে উপ-সাগরীয় দেশগুলো সফরে গিয়েছিলেন শুধু এ কারণে তিনি তখনকার তার লাইফ পার্টনার কার্লা ব্রুনিকে সঙ্গে নেননি। তার ভারত সফর নিয়েও বেশ রসালো আলোচনা ছড়িয়ে পড়ে।
কূটনৈতিক অঙ্গনে চলতে থাকে নানা জল্পনা-কল্পনা। কারণ নিকোলাস সারকোজি ভারত সফরের সময় কার্লা ব্রুনিকে সঙ্গে আনবেন কিনা তা নিয়ে শুরু হয় কূটনৈতিক দৌড়ঝাঁপ। তখনও তারা বিয়ে করেননি। ফলে কার্লা ব্রুনির সঙ্গে কি ধরনের আচরণ করতে হবে, তাকে কি ধরনের সম্মান দেখানো হবে এ নিয়ে এক রকম অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়। এমনকি তারা হোটেলে একই স্যুটে থাকবেন কিনা বা তাদের থাকতে দেয়া হবে কিনা এ সব নিয়ে শুরু হয়েছিল নানা বিতর্ক। এমন এক অনিশ্চয়তার মুখে বাধ্য হয়ে শেষ পর্যন্ত নিকোলাস সারকোজি তার পার্টনার কার্লা ব্রুনিকে ছাড়াই ভারত সফরে আসেন। তবে তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর ফের ভারত সফর করেন। সে সময় তারা ভালবাসার অমর নিদর্শন তাজমহল পরিদর্শন করেন।
ফ্রান্সের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ওঁলাদও এমন সমস্যায় রয়েছেন। ৪৭ বছর বয়সী সাংবাদিক ভালেরির প্রেমে পড়ে তার স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটান ফ্রাঁসোয়া ওঁলাদ। সম্পর্কচ্ছেদের আগে ওঁলাদের রয়েছে ৪ সন্তান। ভালেরি পেশায় সাংবাদিক। তিনি ৩ সন্তানের জননী। এর আগে তার ২টি বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু একটিও টেকেনি। অবশেষে তিনি প্রেমে মজেছেন ওঁলাদের। ২ বার বিবাহবিচ্ছেদ ঘটানো ভালেরি এবার ওঁলাদের হাত ধরে প্রবেশ করেন যাচ্ছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের জন্য নির্ধারিত এলিসি প্রাসাদে।
সম্প্রতি এ প্রেমিক তালিকায় যুক্ত হয়েছে রাশিয়ার লৌহমানব বলে পরিচিত প্রেসিডেন্ট পুতিনের নাম। দিনকয়েক আগে ‘সামাজিক বিচ্ছেদ’ বলে নিজেদের বিবাহবিচ্ছেদের ঘোষণা দিলেও এর নেপথ্যে রয়েছে সাবেক জিমন্যাস্ট কাম মডেল বর্তমানে ইউনাইটেড রাশিয়া দলের আইন প্রণেতা ৩০ বছর বয়েসী সুন্দরী এলিনা কাবায়েভা। ব্যক্তি জীবনে খেলাধুলা, শরীর গঠন শিকারের প্রতি অনুরাগী পুতিন প্রেমে পড়ে যান এই সুন্দরীর। দীর্ঘদিন ধরে তাদের রোমান্স চললেও তা উভয়েই অস্বীকার করে আসছেন।
উইকিপিডিয়ায় পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, ১২ মে ১৯৮৩ সালে তাজাখস্তানের তাসখন্দে জন্মগ্রহণ করেন এলিনা কাবায়েভা। ২০০৭ সালে রাজনীতিতে আসার আগে তিনি জিমন্যাস্ট হিসেবে অলিম্পিকে রাশিয়ার প্রতিনিধিত্ব করেছেন ২ বার। বর্তমানে তিনি ইউনাইটেড রাশিয়া থেকে নির্বাচিত আইন প্রণেতা (ডেপুটি এস্টেট দুমা)। প্রায় ৫ বছর ধরে অলিম্পিকে ২ বার রাশিয়ার প্রতিনিধিত্ব করা এলিনা কাভায়েভার সঙ্গে সম্পর্কের কথা শোনা যাচ্ছিল। এ নিয়ে রাশিয়ার একটি পত্রিকায় রিপোর্ট প্রকাশের পর পুতিন তা অস্বীকার করেছিলেন। পরে ওই পত্রিকা তিনি বন্ধ করে দিয়েছিলেন। ডেইলি মেইল জানিয়েছে, এলিনা কাভায়েভাকে পুতিনের একটি ‘লাভ চাইল্ড’ জন্ম দিয়েছেন। যদিও তারা উভয়েই তা অস্বীকার করেছেন।
পুতিনের হৃদয়হারিনীর কিছু ছবি: (সত্ত্ব : গুগল মামা)
প্রাক্তন জিমন্যাস্ট ও মডেল
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুন, ২০১৩ রাত ১০:১৫