যমুনা নদীর পাড়ে অবস্থিত আমাদের গ্রাম সয়দাবাদ যা যমুনা সেতু থেতে মাত্র ৩ কিলোমিটার এবং গ্রাম থেকে সিরাজগঞ্জ শহর মাত্র ৮ কিলোমিটার দুরে অবস্থিত। যাতায়াত ব্যবস্থা এবং অন্যান ধরনের সুযোগ-সুবিধার দিক থেকে এটিকে আমারা একটি আধুনিক গ্রাম বলতে পারি।
আমাদের গ্রামে বারুণী মেলা একটা ঐতিহ্যবাহী উৎসব। প্রতি বছর চৈত্র মাসে বারুণী তিথিতে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। সেই অনুসারে এ বছর ১ এপ্রিল থেকে মেলা শুরু হবে চলবে ৩ এপ্রিল পর্যন্ত। এ মেলার ব্যপ্তি কাল তিন দিন হলেও এটি অন্তত ৫ দিন ধরে চলে আর আসবাবপত্রের মেলা চলে আন্তত আরও ১০ দিন।
হিন্দু ধর্মের প্রথা অনুসারে বারুণী তিথিতে এখানে স্নান উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। কথিত আছে যে এ তিথিতে এখানে স্নান করে এক মনে ঈশ্বরের কাছে ক্ষমা ভিক্ষা প্রার্থনা করলে ঈশ্বর সব পাপ ক্ষমা করে দেয় এবং সে ঈশ্বরের অপার কৃপা লাভ করে। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলা যমুনা নদীতে এ স্নান উৎসব আনুষ্ঠিত হয় যেখানে মহিলাদের জন্য করা হয় স্নানের সু-ব্যবস্থা।
যদিও এটা হিন্দুদের একটা ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে মেলাটা অনুষ্ঠিত হয় তবে এখানে হিন্দু-মুসলিমের থাকে সমান আংশ গ্রহন। প্রতিটি বাড়িতে একটা উৎসবের আমেজ বিরাজ করে। প্রতিটি ঘরে শুরু হয় আত্নীয়-স্বজনদের আনাগনা। এ যেন এক অন্য রকম উৎসব যেখানে আস-পাশের কয়েক গ্রমের মানুষের থাকে সমান অংশগ্রহন এবং আন্তরিকতার মিলন মেলা যা না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন।
কবে এই মেলা শুরু হইছে তা সঠিক ভেবে কেউ বলতে পারে না। তবে ধারনা করা হয় এটা শত বছরেরও অধিক সময় ধরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। সয়দাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের সার্বিক ব্যবস্থপনায় এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। মেলা থেকে অর্জিত অর্থ স্কুলের উন্নয়ন কাজে ব্যয় করা হয়ে থাকে। আজ থেকে ১৫ বছর আগে এই মেলাটা আরও সৌন্ধর্য্যমন্ডিত ছিল। তখন মেলা প্রঙ্গন ছিল আরও সু-বিশাল। ১৯৯৫ সালে যমুনা নদীতে সয়দাবাদ গ্রামের সয়দাবাদ উচ্চ বিদ্যালয় সহ বেসকিছু অংশ বিলিন হয়ে যাবার পর নতুন করে স্থাপিত হওয়া স্কুল মাঠ ও এর আস-পাশের খালি জাইগাতে মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
এ বছর এপ্রিলের ১ এবং ২ তারিখ সরকারী ছুটির দিন থাকায় এবার আশা করা যাচ্ছে লোক সমাগম আরও অনেক বেশি হবে। যদি আপনি আপনার শত ব্যস্ততার মাঝে একটু সময় বার করতে পারেন তবে ঘুরে আসুন আমাদের ছোট্ট এই গ্রামটিতে। উপভোগ করুন গ্রামের একটা উৎসব। আমার পক্ষ থেকে রইল আন্তরিক নিমন্ত্রন। আশা করি খারাপ লাগবে না।
কিভাবে আসবেনঃ
ঢাকা থেকে উত্তর বঙ্গ গামী যেকোন গাড়ীতে আপনি আমাদের গ্রামে আসতে পারেন। তবে সিরাজগঞ্জের গাড়ীতে আসতে চাইলে মহাখালি বাস টার্মিনাল থেকে লেকাল বাসের পাশা-পাশি সরাসরি গাড়ী পাবেন আভি এবং এস আই। ফুলবাড়ী বাস টার্মিনাল থেকে পাবেন বিআরটিসি এবং মালিবাগ কাঁচা বাজারের সামনে থেকে পাবেন ষ্টারলিট ও দিনা। এগুলতে ভাড়া পরবে ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা। উক্ত গাড়ীর যেকোন একটিতে উঠে যমুনা সেতু পার হবার পর সয়দাবাদ নামব বললেই তারা আপনাকে নামিয়ে দিবে। বাস ষ্টপ থেকে মেলার প্রাঙ্গন ৫ মিনিটের পায়ে হাটা পথ। বাস থেকে নেমে সয়দাবাদ স্কুলে যাব বললে যে কেউ আপনাকে দেখিয়ে দিবে। আপনি চাইলে ঢাকা থেকে ট্রেনেও আসতে পারেন। সে ক্ষেত্রে আপনাকে নামতে হবে শহীদ মনসুর আলী ষ্টেশনে। ভাড়া পরবে চেয়ার ১১০ টাকা এবং নরমাল ৯৫ টাকা। ষ্টেশনে নামার পরা যেকোনা রিক্সাওয়ালা কে বললেই আপনাকে নিয়ে যাবে। ভাড়া পারবে ১০-১৫ টাকা। আপনি চাইলে ষ্টেশন থেকে লোকাল বাসেও আসতে পাবেন। ভাড়া নিবে মাত্র ২ টাকা। তাহলে আর অন্য কিছু চিন্তা না করে একবার ঘুড়ে আসুন। আপনার অপেক্ষায় আছে আমাদের ছোট্ট গ্রামটি।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




