somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রসঙ্গঃ সংখ্যালঘু নির্যাতন

০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




১ সংখ্যাটি ১০০ এর চেয়ে অনেক ক্ষুদ্র হলেও তুচ্ছ নয়। বরং ১ এর অবস্থান সঠিকভাবে না থাকলে (১ ০০ বা ১.০০ এমনটা হলে) ১০০ কে নিয়েই সন্দেহের সৃষ্টি হয়। আবার ১০০ থেকে ১ যদি একদম বাদই চলে যায় তবে ১০০ আর ১০০ থাকেনা ৯৯ হয়ে যায়। আমাদের দেশে এই ‘‘১’’ এর অবস্থা এখন চরম সংকটের মুখে, ‘‘১’’ এখন আক্রান্ত আর অবহেলিত। ফলে ১০০-র অবস্থানও আজ প্রশ্নের মুখোমুখি। দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ই এই ‘‘১’’।


আমরা জানি “বৈচিত্র্যই সৌন্দর্য”। একটি দেশের বা জাতির শ্রেষ্ঠত্ব অনেকাংশেই নির্ভর করে ওই দেশের বা জাতিসত্তার বৈচিত্রের উপর। যে দেশে যত বেশি ক্ষুদ্র জাতিসত্তা আছে, যত বেশি বৈচিত্র আছে, তারা তাদের কৃষ্টি-কালচার, সংস্কৃতিতে তত বেশি সমৃদ্ধ, উন্নত। আমাদের দেশেও এমন বৈচিত্র্যমণ্ডিত কিছু সত্তা আছে যাদেরকে আমরা বলি “সংখ্যালঘু”। প্রকৃতির নিয়মে, নির্বাচনী মৌসুমে এই সংখ্যালঘু সম্প্রদায় আজকে আবারও আক্রান্ত। প্রতি পাঁচ বছর পরপর তাদের উপর হামলা-নির্যাতনের ঝড় ঝাপটা যেন তাদের জন্য নিয়তির অমোঘ নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের দোষ তারা একটি নির্দিষ্ট পক্ষকে ভোট দেয়। তাদের দোষ তারা নিজের দেশের মাটিতে নিরাপদে সাধারণ মানুষ হয়েই বেঁচে থাকতে চায়। আক্রমণকারীদের আক্রমনের প্রধান কারণ সংখ্যালঘুদের একটি নির্দিষ্ট পক্ষকেই ভোট দেয়া। কিন্তু তারও তো একটা কারণ আছে, আক্রমণকারীরা তা খুঁজে বের করুক, নিজের দলকে সেভাবে তৈরি করুক যাতে সংখ্যালঘুরা তাদের উপর আস্থা রাখতে পারে, তাদের দলকে সমর্থন দেয়। তা না করে গৃহকর্ত্রী, কর্তার উপর রাগ করলে তাকে কিছু করতে না পেরে যেমন বাড়ির কাজের লোকের উপর রাগ ঝাড়ে তেমনি আমাদের উগ্র গোষ্ঠী প্রতিবার নির্বাচনের পর তাদের রাগ প্রদর্শন করে থাকে। সংখ্যালঘুরা হচ্ছে তাদের সেই রাগ ঝাড়ার জায়গা, তাদের মিথ্যে আস্ফলন দেখানোর জায়গা। গোষ্ঠী হিসেবেওতো সংখ্যালঘুরা এদেশে কারও জন্য হুমকি নয়। তারা তাদের কৃষ্টি-কালচার নিয়ে শুধু দুটো খেয়ে পড়ে ভালভাবে দিনযাপন করতে পারলেই খুশি থাকে, আমাদের দারিদ্রঘেরা অধিকাংশ বাঙালিরই যেটা চাওয়া। তারপরও কেন শুধু তাদের উপরই অত্যাচার নিপীড়ন?


আমরা কি কখনও খেয়াল করে দেখেছি যে, বারবার সংখ্যালঘুদের উপর এসব আক্রমণ হচ্ছে কেন? কেন হামলাকারীরা বারবার এসব করেও পার পেয়ে যাচ্ছে? কারণ সংখ্যালঘুদের পাশে দাঁড়ানোর কেউ নেই, নেই কোন গোষ্ঠী, কোন প্রশাসন, কোন সরকার। অসাম্প্রদায়িকতার কথা এদেশে এখন ফাঁকা বুলি ছাড়া আর কিছু নয়। গত পাঁচ বছর ধরে এই নির্যাতনের মাত্রা আরও বেড়েছে। ক্যান্সারের মত সারা দেশে এই উগ্র সাম্প্রদায়িকতার কালো ছায়া ছড়িয়ে পড়েছে। যে সরকারকে সংখ্যালঘুরা তাদের জন্য নিরাপদ মনে করেছিল তারাও নীরব থেকেছে তাদের উপর আক্রমনের সময়। সাম্প্রদায়িক এসব হামলাকে রাজনৈতিক ইস্যু বানিয়ে তারা ফায়দা লুটেছে অথচ হামলা বন্ধের জন্য কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেয়নি। কারণ তারা জানে যাই হোকনা কেন তাদের এই সংখ্যালঘুর ভোটব্যাংক অন্যত্র যাবার সম্ভাবনা আপাতত নেই। তাই আজ দেশের উগ্র হিংস্র একটি গোষ্ঠী হায়নার মত তার থাবা বসিয়ে দেবার সাহস পায় নিরীহ শান্তিপ্রিয় সংখ্যালঘুর উপর! কি চায় এসব উগ্র, ধর্মান্ধ আক্রমণকারীরা? তারা কি চায় বাংলাদেশ থেকে সব সংখ্যালঘু মানুষগুলো দূর হয়ে যাক। কোথায় যাবে? কেন যাবে? এদেশটা কি তাদের নয়? একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হয়েছে এই সংখ্যালঘুরাই। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধে অংশ নিয়েছে আজকের এই সংখ্যাগুরু বাঙালীরই সাথে। তাহলে কেন তাদেরকে আজকে আবার একাত্তরের মত উদ্বাস্তু হতে হবে? এ প্রসঙ্গে উচ্চ শিক্ষার জন্য আমেরিকাতে যাওয়া এক বড়ভাইয়ের হতাশাভরা ফেসবুক স্ট্যাটাসটা এখানে না দিয়ে পারছিনা। তিনি লিখেছেন-
‘‘বাবা-মা কে জিআরই ও টোফেল পরীক্ষা দেবার পরামর্শ দিলাম.........
মার খেয়ে, খালি হাতে ইন্ডিয়া যাবার চেয়ে ২৮ ইঞ্চি দুইটা লাগেজ নিয়ে ইউএসএ যাওয়া ভালো!’’


আমি মনেপ্রানে বিশ্বাস করি আমাদের দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠের বৃহৎ অংশটাই ভালো, শান্তিকামী এবং তারা সংখ্যালঘুদের প্রতি সহানুভূতিশীল মনোভাবই পোষণ করে থাকেন। শুধুমাত্র গুটিকতক উগ্র ধর্মান্ধ মানুষের কারণে সবাই দোষী হতে পারেনা। তবে তাদেরকে তাদের অসাম্প্রদায়িকতার পরিচয় দিতে হবে এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার মাধ্যমে, সংখ্যালঘুদেরকে মানুষ হিসেবে বাঁচবার সুযোগ করে দেবার মাধ্যমে। নাকি সংখ্যালঘুদের উপর হামলা তখনই বন্ধ হবে যখন এদেশে আর সংখ্যালঘুই থাকবেনা। যদি তা-ই হয় তবে বুঝব আমার বিশ্বাসে ভুল ছিল।


সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:৪৮
৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×