somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হিগস সংক্রান্ত জটিলতা

০৪ ঠা জুলাই, ২০১২ রাত ১০:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বর ঢাকায় লেখাপড়া করে, চাকরী সূত্রে। বৌ থাকে মফস্বল শহরে। প্রোষিতভর্তৃকার মেজাজ খারাপ থাকে। একাকিত্ব কাটায় ফেসবুকে আজব সব স্টেটাস দিয়ে। প্রথমে মনে হয় সোজা, বোকার মত কথা। আবার খেয়াল করলে বোঝা যায়, কথার পেছনে কথা আছে, অনেক যত্নে লেখা। যদি মন্তব্য করি খুশি হয়, কিন্তু আমাকেও সাবধান থাকতে হয়, বেফাঁস কিছু যাতে কখনো না বেরিয়ে যায়। ছবির পর ছবি - পৃথিবীর সুন্দরতম বালিকার। বিবাহিত জেনেও অনেকে মুগ্ধ বিস্ময় প্রকাশ করে - তুমি মানুষ, না স্বর্গের অপ্সরী? ও ভীষণ পছন্দ করে এই সব মন্তব্য। কিন্তু আমার মন্তব্য থাকে না কোন ছবিতেই। এমন কি একটা ছোট্ট 'লাইক'ও না। সব কথা কি ভাষায় লেখা যায়? বা একটা ক্ষুদ্র চিহ্নে?

ঢাকায় এলে একবার ঢু মেরে যায়।
- কি সব হৈ চৈ হচ্চে। হিগস নামে কি জানি পাওয়া গেছে? এটা কি জিনিস?
- অনেক দিন আগে আমার এক লেখাতে এক বিখ্যাত পারসী কবির দুটি ছত্রের উল্লেখ করেছিলাম। প্রিয়ার গালের তিলের বিনিময়ে তিনি সমরকন্দ ও বোখারাও দিয়ে দিতে রাজী। একেবারে পার্ফেক্ট মুখের চাইতে একটা একপেশে তিলওয়ালা মুখ বেশি সুন্দর।
ও উঠে ঘরের বেসিনের আয়নায় গিয়ে মুখ দেখল।
- আমার মুখে কোনো তিল নেই।
-তোমার ডান ভ্রূর ওপরে একটা এক সেন্টিমিটার লম্বা আধা মিলিমিটার চওড়া এক মিলিমিটারের তিরিশভাগ গভীর কাটা দাগ আছে।
অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালো।
-ওটা অনেক ছোট বয়সে কেটেছিল। আমি তো ভেবেছিলাম এখন আর কেউ দেখতে পায় না। তুমি এমন খুঁটিয়ে খুঁটিতে আমার মুখ দেখো কেন? আমি এখন আর এক জনের বৌ।
আমি হাসলাম।
-ওটা আগেই দেখা। তবে ফেসবুকে যে হারে বিভিন্ন লাইটিং আর এঙ্গেলের ছবি দিচ্ছ, কোনো কোনোটায় হালকা দেখা যায়। চিন্তার কিছু নেই। ওটা কোন ত্রুটি না।
ও কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। তারপরে হঠাৎ খেয়াল হলো।
- হিগসের সাথে তিলের কি সম্পর্ক?
- স্পন্টেনিয়াস সিমেট্রি ব্রেকিং, স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিসাম্য ভঙ্গ। হিগসের মডেলে এমন একটা কণা আছে যা একটা প্যারামিটারের সাইনের ওপরে নির্ভর ক'রে অন্য সব কণার , মানে মহাবিশ্বের সব পরিচিত ইলেক্ট্রন প্রোটন ইত্যাদির ভর দেয়। না হলে ভর বলে কিছু থাকত না।
- তাহলে তো অবশ্যই এটা আছে।
-হুম, থাকতে পারে; না-ও থাকতে পারে। যদি প্রতিসাম্য ভাঙ্গার অন্য পথ থাকে তাহলে এই কণার দরকার নেই।
- মানে?
- তিল হলো জন্মগত, সাধারণত। কিন্তু তোমার কাটাদাগ ডায়নামিক। ডায়নামিক সিমেট্রি ব্রেকিং হতে পারে। তাহলেও ভর পাওয়া যেতে পারে, অথচ হিগস কণার দরকার হবে না।
ও আবার উঠে আয়নার কাছে গেল।
- আচ্ছা আমার এই কাটাদাগ আসলে কি খুব স্পষ্ট?
আমি হাসলাম।
- না, ভীষণ কড়া চোখে দেখতে হয়। আমি ছাড়া আর কেউ দেখতে পাবে না। হয়তো তোমার বরটি দেখেছে। ওখানে দাগটা যত মানানসই তিল তত ভালো দেখাতো না।
আরো কিছুক্ষণ মুখ বেজার করে রইল। তার পরে আবার কি জানি মনে পড়ল।
- আচ্ছা, এই হিগসের সাথে সত্যেন বোসের নাকি সম্বন্ধ আছে?
- আছে এক রকম, হিগস কণার স্পিন নেই। মানে এর পৃথিবীর মত নিজের অক্ষের ওপরে কোনো আহ্নিক গতি নেই। এ ধরণের কণা যে শ্রেণীর সেগুলির পরিসংখ্যান, মানে কত শক্তিতে কতগুলো থাকার সম্ভাবনা কত সেই হিসাব, আবিষ্কার করেছিলেন সত্যেন বোস কার্জন হলে বসে। আলো, মানে ফোটনও, এই শ্রেণীর, যদিও তা ঘোরে। আসলে বোস আলো নিয়েই তাঁর তত্ত্ব দিয়েছিলেন। পরে দেখা যায় ইলেক্ট্রন প্রোটন - এগুলোর ঘোরার নিয়ম আলাদা এবং সেই কারণে পরিসংখ্যানও। শেষের কণাগুলোকে ফার্মিয়ন বলে, আর আলো বা হিগস কণাকে বোসের নাম অনুসারে বোসন।
আমার মনে হলো না এসব ওর মাথায় ঢুকছে। ওর আগ্রহ মানুষে মানুষে সম্পর্কে।
- আইনস্টাইন নাকি বোসের বন্ধু ছিল।
আমি একটু হাসলাম আবার।
- বেচারা সত্যেন্দ্রনাথ। আইনস্টাইনকে গুরু মানতেন মনে মনে। তাঁর একটা বই জার্মান থকে ইংরেজীতে অনুবাদ করেছিলেন। নিজের এই বোসন পরিসংখ্যানের পেপারটাও আইনস্টাইনের সাহায্যেই তখনকার ডাকসাইটে জার্নাল ৎসাইটশ্রিফট ফ্যুর ফিজিকে প্রকাশ করতে পেরেছিলেন। আইনস্টাইন কিন্তু এর ওপর ভিত্তি করে নিজেও একটা পেপার লিখে ফেলেন বোসকে না জানিয়েই। তাতে তিনি দেখান যে এই ধরণের অসংখ্য কণা এক সাথে এক বিন্দুতে জড় করে ফেলা যায়। এই ব্যপারটা অনেক বছর পরে ল্যাবে দেখাতে পেরে নোবেল পেয়েছেন দু জন। কিছু নাম করার পরে সত্যেন বসু আইনস্টাইনের কাছে গিয়েছিলেন এক সাথে কাজ করার আশায়। কোনো পাত্তা পান নি।
- তুমি দুই চোখে আইনস্টাইনকে দেখতে পারো না। আমি জানি। বাদ দাও। তো এখন কি পাওয়া গেল। এই হৈ চৈ কিসের?
- ইউরোপে সার্ন নামে এক নিউক্লিয়ার বিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠান আছে। সেখানে বহু সরকার অনেক পয়সা দিয়ে লার্জ হ্যাডরন কলাইডার নামে এক বিরাট যন্ত্র বানিয়েছে যাতে দুদিক থেকে দুটো প্রোটনের স্রোত এসে ধাক্কা খায়। ভেঙ্গে চুড়ে অনেক কণা হয়। অনেক চেষ্টা আর এনালিসিসের পরে মনে হচ্ছে এমন একটা কণা তৈরী হয়েছিল যার ভর হিগস কণার প্রত্যাশিত ভরের নাগালের মধ্যে , এবং যার ঘুর্ণন নেই, অর্থাৎ এটা বোসন।
ব্যাপারটা খুব গুরুত্বপূর্ণ কি না ওর মাথায় এলো না। কিন্তু ও ফিজিক্স নিয়ে ভাবে না, মানুষ নিয়ে ওর সব দুশ্চিন্তা।
- তোমার কথার সুরে মনে হচ্ছে তুমি খুব খুশী না। তুমি চাও এটা যেন হিগস বলে প্রমাণিত না হয়।
আমি অনেক দূরের গাছগুলোর দিকে তাকিয়ে উত্তর দিলাম।
- ঠিক বলেছ। আমি স্ট্যাটিক তিলের চেয়ে ডায়নামিক কাটা দাগ পছন্দ করি।
- তুমি আর কক্ষনো আমার কাটা দাগের দিকে তাকাবে না। তোমার ভাগ্যে যেন এক তিলওয়ালা সুন্দর মেয়ে জোটে।
যাওয়ার আগে আর একবার আয়নার দিকে তাকালো।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুলাই, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:২০
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×