somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভার্চুয়াল থেকে একচুয়াল ;)

১৭ ই মে, ২০১৩ রাত ১১:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কেমন আছো ? ! গতকাল লেখা গল্পটায় নতুন একটা কমেন্ট এসেছে । সেই বিকাল থেকে বসে আছি এই মানুষটার কমেন্ট এর আশায় আর উনার এই রাত ১২ টায় সময় হলো কমেন্ট করার। এই মানুষটা কে যে আমি পছন্দ করি, এই মানুষটার সব লেখাগুলো আমার ভালো লাগে , তার সবকিছুই যে আমার কাছে অনেক আপন মনে হয় এটা কি সে একটুও বুঝে না ! ? না কি বুঝেও না বুঝার ভান করে থাকে ! আজ দুই দিন ধরে জ্বরে ভুগতেছি , একটাবারও কি আমার কথা মনে পড়লো না ?! জ্বর নিয়েও শুধু তার জন্য কম্পিউটারের সামনে বসে থাকি । রাগ করে খাওয়া দাওয়া, ওষুধ - পত্র কিছুই খাচ্ছি না। উফ কি যে করি । বাসার সবাই কতো করে খেতে বললো কিন্তু কারো কথাই শুনলাম না , শুধুই তার অপেক্ষায়। আর উনার কোন দেখা নেই ! তার আর কোন কমেন্টের রিপ্লাই-ই দিবো না আজ থেকে, আর তার ব্লগেও যাবো না , তার লেখা পড়তে । উনি ভালো লেখেন তাতে আমার কি ?! আমি তো উনার কেউ না । শরীরে ১০৩ জ্বর নিয়ে রিনি কম্পিউটারের সামনে বসে বসে এই কথা গুলো ভাবতে থাকে ।

আচ্ছা এসব কথা আমি ভাবছি কেন ?! ঐ মানুষটার উপরে রেগে যাচ্ছিও বা কেন !? তাহলে কি আমি ....... ?! না না !! ধুর এসব কি ভাবছি আমি ? মনের অজান্তেই রিনি হেসে ওঠে। কিন্তু মনের ভিতরে কিছু একটা খুত খুত করছে । কিন্তু কি সেটা। ঘুরে ফিরে সব কথা গুলোই শুধু একটা মানুষকে ঘিরে রচিত হচ্ছে। আশ্চর্য , এমনটা কি করে হয় !!?? এর মাঝেই আরেকটা নোটিফিকেশন চলে এলো, "কি হলো কেমন আছো, বলবে না ? সুস্থ আছো তো ? " ! এবার রিনি একটু বেশীই অবাক হলো । অবাক তো হবেই। ও যে অসুস্থ সেটা তো কেউই জানে না , আর উনার ও তো জানার কথা না, তবে কি উনিও .........?!

" অনেক বেশী ভালো আছি " লিখে রিপ্লাই দিলো রিনি। সাথে সাথেই আরেকটা রিপ্লাই এলো, " অনেক বেশী ভালো আছো ? কি হয়েছে শুনি তো , আমার কেন যেন উল্টো টা মনে হচ্ছে " । রিনি এবার ধড়ফড় করে উঠে বসলো। মানুষটার কি সত্যিই মনে হচ্ছে যে ও অসুস্থ নাকি অনুমান করে বলেছে ! যাই হোক আমি তাকে বলছি না। তোমার জন্য আমি অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেছি তুমি আসো নি। এখন তোমাকে একটু না ভুগিয়ে ছাড়ছি না। এই যা ! তাকে তো আমি মনে মনে তুমি তুমি করে বলছি !! হায় আল্লাহ্‌ কি হচ্ছে আমার সাথে ?! ;)
এরপরই চ্যাটএ মেসেজ আসলো একই কথা লেখা
** কি হয়েছে তোমার ?

-কিছু না

** কিছু না কিছু তো হয়েছেই ।

-বললাম তো কিছু হয় নি। আমি অনেক ভালো আছি :)

** হুম, রাতের খাবার খেয়েছো ?
-না ।

** কেন ?

-খেতে ইচ্ছে করে নাই তাই। আর খাবার রুচি ও নাই।

**আজব তাই বলে না খেয়ে থাকবে ?! যাও কিছু খেয়ে নেও।


মনে মনে তো রিনি এটাই চাইছিলো যে তাকে খেতে যেতে বলুক, তার প্রতিটা জিনিসের খোঁজ রাখুক, তাকে অনেক বেশী বেশী আগলে রাখুক। এখন কি লিখবে ও ?! সে যেটা চেয়েছিলো সেটাই তো হচ্ছে । কিন্তু .....
এমনিতেও খাবার রুচি নেই, গায়ে এখনও বেশ জ্বর, সাথে পুরো শরীর ব্যাথা করছে । তারপরেও খেতে তো হবেই । সুস্থ না হয়ে উঠলে কি করে হবে । অফিস থেকে নেয়া ছুটি ও তো কাল শেষ হয়ে যাবে। :(
রিনি এবার রিপ্লাই দিলো,

-এই কথা গুলো আগে এসে বলা যেত না ?! আমি কেমন আছি সেটা আগে এসে জিজ্ঞেস করা যেত না ?! তাহলে তো আমরা এতো কষ্ট করতে হতো না ।

** মানে কি ?! আমি সারাদিনই তো বাসার বাইরে ছিলাম, এই কিছুক্ষন হলো বাসায় এসেছি। আজ অফিস নিয়ে অনেক ব্যাস্ত ছিলাম ।

- হ্যাঁ ! অফিসই তো সব ! আমি তো কারো কেউ না !


ওপাশ থেকে আর কোন রিপ্লাই নেই ........ রিনির খুব অস্বস্তি লাগতে লাগলো ! কি লিখলাম আমি এসব !?! হায় খোদা ! এখন কি হবে ! উনি আমাকে কি মনে করবেন ?!

চ্যাট এ নীরবতা। রিপ্লাই ও আসছে না । রিনিও সাহস করে কিছু লিখছে না । কি বা লিখবে ও ?!

নীরবতা ভেঙ্গে ওপাশ থেকে একটা ছোট্ট রিপ্লাই এলো-

** আসছি আমি। একটু কাজ আছে.........

-আচ্ছা ঠিক আছে।


রিনি অপেক্ষার প্রহর গুনতে লাগলো। আর নানান কথা তার মাথায় ঘুরতে লাগলো। আচ্ছা সে কি কিছু বুঝেছে ? রাগ করেছে নাকি ?! মনে তো হয় রাগ করেছে। আচ্ছা সে এলে কি বলা যায় ?! মজা করেছি এটাই বলে দিবো , হ্যাঁ এটা বলাই মনে হয় ঠিক হবে। কথা ঘুরিয়ে অন্য দিকে নিয়ে যেতে হবে। উফ এখনও আসছে না কেন ? ১৭ মিনিট হয়ে গেছে ! এভাবে প্রায় ১ ঘণ্টা হয়ে গেলো, রাত ২.২৩ বেজে গেছে। রিনির এবার বেশ টেনশন লাগছে, মনে হয় মানুষটা খুব রাগ হয়েছে, আজ আর আসবে না। কাল হয়তো অনেক কড়া কড়া কথা শুনিয়ে দিবে। হায় হায় ! কথা বলা বন্ধ করে দিবে না তো ? !

রিনির ইচ্ছে করছে নিজের গালে নিজেই কষে দুইটা চর লাগায়। কি দরকার ছিল অতো কথা বলার । এই বেশী কথার জন্যেই মনে হয় ভালো লাগার মানুষটাকে হারাতে হবে । সকালে অফিস আছে, কিন্তু টেনশনে তো ঘুম ই আসবে না । হঠাৎ একটা মেসেজ এলো মোবাইলে। এটা নির্ঘাত মোবাইল অপারেটরের কাজ। মুখ বাকিয়ে ফোন টা হাতে নিয়ে মেসেজ টা ওপেন করলো। মেসেজ প্রেরণকারীর নাম্বার দেখে রিনির চোখ পুরোই ছানাবড়া হয়ে গেলো।

From:+88017............

ki koro ? ghumiye poreso naki ? Sorry !!
Ektu late hoye gelo....

উনি ফোন থেকে মেসেজ দিচ্ছে কেন ? আজব !! দেখি জিজ্ঞেস করে-

To:017............

na ghumai ni ekhono. kichui korchi na.
apni phone diye messege dicchen keno?
net e proble naki ? ar apni sorry bolchen keno?
Ami fun korechilam... Asha kori apni
amar upor raag hoye thakben na .

যাক কথা গুলো আগে ভাগেই জানিয়ে দিয়েছে এখন নিশ্চয়ই উনি আর অন্য কিছু ভাববেন না। যাক বাঁচা গেলো। অনেক রাত হয়ে গেছে এবার পিসি অফ করে শুয়ে পড়ার বন্দোবস্ত করি। পিসিটা শাট ডাউন দিয়ে ওয়াশ রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এলো সে। লাইট টা নিভিয়ে শুয়ে পড়লো। কি মনে করে ফোনটা শুয়ে শুয়ে হাতে নিলো রিনি। কি প্যাড এ চাপ পরতেই দেখল যে ৪ টা মেসেজ এসে জমা হয়ে গেছে। ইস রিনি তো ভুলেই গিয়েছিলো। রিনি প্রথম থেকে সর্বশেষ পাঠানো মেসেজটা ওপেন করলো-

From: +88017...........

sokale dekha hobe . Gud night.

সকালে দেখা হবে মানে কি ? রিনি অবাক হয়ে আগের মেসেজটা ওপেন করলো-

From:+88017...........

room er light ta off hoye gelo. ghumate jaccho mone hocche !?

রিনি তো অবাক ?! কি লিখতেছে এসব :O

From:+88017............

ami ekhane esechi dekhe ki raag korecho ?
tai amar messege er reply diccho na ?
ami shudhu ekta nojor tomake
dekhte chai.. kotha dicchi er
porei chole jabo..

রিনি এবার উঠে বসে। উনি কি লিখছে এসব ? আর উনি কোথায় এখন ? কাকেই বা দেখার কথা বলতেছেন উনি ? তাড়াহুড়ো করে প্রথম পাঠানো মেসেজ টা ওপেন করলো রিনি-

From: +88017............

ekta bar ki baranda te ese darabe.
ami tomar bashar samne dariye achi...
tomake khub dekhte isse hocche
tai ese porechi. ekta bar
barandate aso na plz..
barandate jodi na ashte paro
tobe at least janala ta khule ektu
tomake dekhte dao..

রিনি ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। এই মুহূর্তে অ যে কি করবে বুঝতে পারছে না। বিছানা থেকে উঠে এক প্রকার দৌড়ে গিয়ে জানালার কাছে দাঁড়ালো, জানালার পর্দাটা হালকা করে ফাঁকা করে নীচের দিকে তাকিয়েই এক ঝটকায় পিছনের দিকে সড়ে এলো। কি দেখছে ও ? ! নিজের চোখকেই তো বিশ্বাস করতে পারছে না ও !!!! দৌড়ে গিয়ে বারান্দার দরজা খুলে বারান্দার রেলিং ধরে দাঁড়ালো, আর ততক্ষনে রিনির বাসার ঠিক উল্টো পাশে লাইট পোস্টটার সাথে ঠেস দিয়ে দাড়িয়ে থাকা মানুষটাও সড়ে এসে ঠিক রাস্তার মাঝখানটাতে এসে দাড়িয়ে উপরের দিকে চেয়ে থাকলো। আহারে বেচারাকে এতিমের মতো লাগছে ! রিনির চোখ মুখ কোন এক খুশিতে জ্বল জ্বল করছে, হ্যাঁ এই মানুষটাও তাকে ভালোবাসে। ওর মতোই কখনো মুখ ফুটে বলতে পারে নি। মোবাইল টা হাতে নিয়ে ঝট করে ছোট্ট করে লিখে ফেললো ও -

eto raat e emon paglami keu kore ?

মেসেজ পাঠানোর সময়টুকু বাদে বাকী সময়টুকু দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। নীচের দাড়িয়ে থাকা মানুষটির কাছ থেকে একটা মেসেজ এলো রিনির হাতে-

tomar jonno ami sobkichu korte pari !!!


********************************সমাপ্ত******************************

ইহা কোন বাস্তব কাহিনী নহে তবে হইতে কতক্ষন ?! ?! ?! ;) ;) ;)

উৎসর্গঃ আমার শুভাকাঙ্ক্ষী সব ব্লগার ভাইয়া ও আপুদের। ( আরমান তোরে কিন্তু ভাইয়া কই নাই, খেয়াল কইরা ;) )


সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ৮:২৫
৪৪টি মন্তব্য ৪৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যমদূতের চিঠি তোমার চিঠি!!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:০৮

যমদূতের চিঠি আসে ধাপে ধাপে
চোখের আলো ঝাপসাতে
দাঁতের মাড়ি আলগাতে
মানুষের কী তা বুঝে আসে?
চিরকাল থাকার জায়গা
পৃথিবী নয়,
মৃত্যুর আলামত আসতে থাকে
বয়স বাড়ার সাথে সাথে
স্বাভাবিক মৃত্যু যদি নসিব... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×