somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাসূলের অপমানে যদি না কাঁদে তোর মন, মুসলিম নয় মুনাফিক তুই, রাসূলের দুশমন

২৪ শে জুন, ২০২২ রাত ১০:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এই মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা ও পরিচালক হইতেছেন আল্লাহ। সেই মহান আল্লাহর বার্তাবাহক মোহাম্মাদ (উনার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক)।
এখন কেহ যদি এই মানুষ নিয়ে কটুক্তি করেন, স্বভাবতই তাহা সভ্য মানুষ দ্বারা কৃত কাজ না। উহা অবশ্যই নিকৃষ্ট এবং মুর্খ শ্রেণির লোক তাহা নিয়ে সন্দেহ নাই।

কথা হইতেছে রাসুল সাঃ এর ওপর যদি কেহ খারাপ কথা বলেন, বিবেক বর্জিত অন্যায় আচরণ করেন তবে একজন মুসলমান হিসাবে কি আচরণ করা উচিত?
এর উত্তর পাইতে হইলে আমাদের দেখতে হবে রাসুল সাঃ জীবিত থাকাকালে যখন উনি অবমাননার শিকার হইয়াছিলেন, তখন কি রি-একশন করেছিলেন/সাহাবাদের করতে দিয়েছিলেন।
একেবারে প্রথম দিকে, যখন ইসলামের চুড়ান্ত রুপ (এককালে যাহা ইয়াহুদী, খ্রিস্টিয়ান) মাত্র শুরু হচ্ছে তখন আল্লাহ পাক জিবরাঈল আঃ মারফত রাসুলকে আদেশ করলেন ইসলামের দাওয়াত নিজ গোত্রে দেবার জন্য।
জিবরাঈলের কথা শুনে রাসুল বিপদে পড়ে গেলেন। উনার যে গোত্র, মক্কার সবচেয়ে প্রভাবশালী বড়লোকদের গোত্র। বাপ চাচার মুখের ওপর কথা বলে এমন লোক নেই বললেই চলে। এছাড়া উনার আর্থিক সক্ষমতা কম, আর তিনি অনেক লজ্জাশীল। অতএব, তিনি ইতস্তত করতে লাগলেন, দাওয়াত দিতে পারলেন না। দিন কয়েক পরে জিব্রাঈল আমিন এসে বললেন, আপনে দাওয়াত না দিলে আপনাকে শাস্তি দেওয়া হইবে।
রাসুল বাধ্য হলেন নিজ ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু একটা করতে। তিনি আলী রাঃ কে বললেন কিছু আটা রুটি, বকরির মাংস আর উটের দুধ যোগাড় করতে।
আলী কথা অনুসারে কাজ করলেন। এক সকালে রাসুল সাঃ বিপদ সংকেত ( যা আরবের গোত্রে গোত্রে প্রচলিত ছিল) দিয়ে নিজ গোত্রের সবাইকে সমবেত করলেন।
রাসুল সাঃ খানিক উঁচু জায়গায় দাঁড়িয়ে সকলের উদ্দেশ্যে বললেন-
- তোমরা কি আমার কথা বিশ্বাস করো? আমি সত্যবাদী, আমি মিথ্যা বলি না।
- অবশ্যই। তুমি যদি বলো পাহাড়ের ওপাশে শত্রু ওৎ পেতে আছে আমরা চোখে না দেখেও বিশ্বাস করব কারন এটা তুমি মোহাম্মদ বলেছ।
- আমি তোমাদের কি এমন এক বার্তা দেব, যদি তোমরা পালন কর, মেনে নাও তবে আরবের বাইরের লোকেরাও তোমাদের কথায় ওঠবে বসবে।
রাসুলের চাচা আবু জেহেল, আবু তালিব, আবু লাহাব সকলেই সেখানে ছিলেন। উত্তরে আবু জেহেল বলে ওঠলেন-
- এইরকম কথা একটা কেন দশটা বল।
রাসুল সাঃ উত্তরে বললেন, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। তোমরা এক আল্লাহর ওপর ঈমান আনো।
আবু লাহাব ছিল রাসুল সাঃ থেকে ৭ বছরের বড়।আবু লাহাব তখন বললো- এই কারণে তুমি আমাদের ডেকেছো নাকি? তোমার ধ্বংস হোক!
রাসুল সাঃ ছিলেন উনার গোত্রে সৎ, সম্মানিত একজন মানুষ। তার কথা কেউ সহসা ফেলার কথা না। তবে এইভাবে কিংকর্তব্যবিমুড় অবস্থায় পড়বেন সেটা হয়ত রাসুল নিজেও আশা করেন নি।
যাইহোক, আল্লাহর রাসুল নিরাশ হয়ে এদের থেকে ফিরে আসেন। এদিকে তার বউ ছিল আরেক কাঠি সরেস। সে লাঠি নিয়ে রাসুল সাঃ কে মারতে বের হয়ে গেল। সমাজে রাসুল সাঃ এমনই অপদস্থ, অসহায় হয়ে পড়লেন সত্য, কিন্তু রাসুলের অপমানের জবাব অচিরেই আল্লাহ তাআলা দিলেন পবিত্র কুরআন থেকে-
তাব্বাত ইয়াদা আবু সুরা লাহাব
ধ্বংস হোক আবূ লাহাবের দু’হাত এবং সে নিজেও ধ্বংস হোক।
এ তো গেল এক ঘটনা। যখন নবী সাঃ এর ছেলে মারা গেলেন, তখন আবু জাহেলেদের বড় অনুসারী এক লোক চিল্লায়ে চিল্লায়ে বলতে লাগল- মোহাম্মদের একমাত্র ছেলেটিও গেল। তার নাম নেওয়ার মত কোন লোক আর অবশিষ্ট থাকল না। এই বিরাট খুশিতে সে নেচে গেয়ে পৌত্তলিকদের সাথে আনন্দ করতে লাগল।
রাসুল সাঃ অপমানিত হবেন আর আল্লাহ চুপ থেকে যাবেন এমন তো হইতে পারে না। আল্লাহ সুরাহ কাউসারে বললেন-

নিশ্চয় তোমার প্রতি শত্রুতা পোষণকারীই নির্বংশ।

এমনকি রাসুল সাঃ এর সামনে এক লোক মক্কা শরিফে পেশাব করতে শুরু করে দিল। রাসুল সাঃ এর সাহাবীরা উদ্যত হলে তিনি তাদের থামিয়ে দেন, বলেন- আগে তার পেশাব শেষ করতে দাও।
আল্লাহর রাসূল সাঃ প্রকৃত অর্থেই আল্লাহর রহমত, পুরো মানব জাতির জন্য। তিনি এমন কোন আদেশ দেন নি যা আদতে শান্তি বিনষ্ট করবে। বরং আল্লাহর রাসুল সবচেয়ে উগ্র, বর্বর, অসভ্য এক জাতিকে রুপান্তর করেছিলেন, নম্র, উদার ও সভ্য এক জাতিতে।
সেই রাসুল সাঃ এর কটাক্ষ করলে মুসলমান হিসাবে এর বিরুদ্ধে নিন্দা জ্ঞাপন করাই উচিত। কোন মিছিল, মিটিং, ভাংচুর করে আদতে রাসুল সাঃ এর শিক্ষাকেই অবজ্ঞা করা হয়। কারন ইসলাম মানেই শান্তি, ইসলাম শান্তির ধর্ম।

ফুটনোটঃ
টাইটলে দেওয়া উক্তিটি আমি নজরুলের কোন লেখায় পাইনি। নেটে সার্চ দিয়ে দেখা গেল যে আসলে এটা উগ্রপন্থী ধরণের মুসলিম ফিরকা দ্বারা প্রতিষ্টিত করা হইয়াছে।

আমার হিসাবে উক্তি এমন হইতে পারে-
রাসূলের অপমানে যদি চেতে তোর মন, মুসলিম নয় মুর্খ তুই, রাসূলের দুশমন

এই উক্তি ব্যবহার করে করে অনেক ওয়াজিন মানুষদের উত্তেজিত করে নিজেদের পোর্টফোলিও উজ্জল করতে সচেষ্ট আছেন। ইসলামের কনটেক্সট কিন্তু এটা অনুমোদন করে না।
এই দেখেন, ইসলামি (হাই/হেলো) সম্বোধন হচ্ছে একে অপরের জন্য শান্তি কামনা করা। যে ইসলাম নামাজ আদায় করতে দেয় শান্তির বার্তা নিয়ে সে ইসলাম কিভাবে অন্যের ক্ষতি/অশান্তির দিকে মানুষকে আহবান করবে?
রাসুল সাঃ এর প্রতি আমাদের ভালবাসা জরুরি। এই ভালবাসার কারণ হইতেছে ইসলাম, রাসুলের শিক্ষা, উপদেশ, সুন্নাহ। এখন কুরআন, সুন্নাহ কেয়ার না করিয়া যদি আপনে নিজ/গোত্রের মত কেয়ার করতে শুরু করেন তাহলে বুঝা উচিত, এটা সঠিক নহে।

সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুন, ২০২২ রাত ১০:৪১
১১টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিপ্লবের নিঃশব্দ মূল্য: অর্থনৈতিক বৈষম্য ও বাংলাদেশি ছাত্র আন্দোলন

লিখেছেন মুনতাসির, ১২ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ৯:২৫

এ লেখাটি বেশ বড়ো। এখানে ছোট করে দেয়া হল। পুরো লেখাটি যদি কেও পড়তে চান, তবে নীচের লিঙ্ক থেকে পড়তে পারবেন।


সাম্প্রতিক ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে হতাহতের সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন পর্যালোচনা চলছে। জাতিসংঘের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিরহ

লিখেছেন গোধুলী বেলা, ১২ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ৯:৪৪

একটি কবিতা লিখা হবে বাদে কিছুক্ষণ
মেঘমালারা বারি পাত করিছে ক্ষণে ক্ষণ।
গগনভেদি কামান গোলা পরিছে মুহুর্মুহু
দুরুদুরু ভয়েতে কাপিছে বুক বাদ যায়নি কেহ।

জানালার পাশে  প্রেমিকার ছলছল চোখ
বৃষ্টিরো সাথে সে কেঁদে  ভাসাইছে বুক।
হাজারো... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিছু কিছু মানুষ বলার শুরু করেছে, "আমরা আগেই ভালো ছিলাম"।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ২:০২



একাধিক কারণে মানুষ ইহা বলার শুরু করেছেন: (১) সাধারণ মানুষ কোমলমতিদের ক্রমেই চিনতে পারছেন, ইহা ভীতি ও অনিশ্চয়তার সৃষ্টি করছে; কোমলমতিরা সরকারের গুরুত্বপুর্ণ অনেক পদে আছে ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি - একাল সেকাল

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮



টানা বৃষ্টির মধ্যে মরিচের দাম বেড়ে হয়েছে ৪০০ টাকা কেজি । অন্যদিকে ফার্মের মুরগির এক পিছ ডিমের দাম বেড়ে হয়েছে ১৫ টাকা।শুধু মরিচ নয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কমলা যদি পরাজিত হয়, "দ্রব্যমুল্য"ই হবে ১ নম্বর কারণ

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৭



দ্রব্যমুল্য হচ্ছে অর্থনৈতিক সুচকগুলোর ১ টি বড় প্যারামিটার; ইহা দেশের অর্থনীতি ও চলমান ফাইন্যান্সের সাথে সামন্জস্য রেখে চলে; টাস্কফোর্স, মাস্কফোর্স ইহার মুল সমাধান নয়; ইহার মুল সমাধন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×