somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উত্তর ভারতের হিমালয় (পর্ব - ৩, আধিক্য বনগাঁ লোকাল )

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সবগুলো পর্ব

বনগাঁ স্টেশন থেকে কলকাতার দিকে দিনে ২৯ টার বেশি ট্রেন আছে। প্রতি ১৫ মিনিট থেকে ৪৫ মিনিটের মধ্যেই ট্রেনগুলো পাওয়া যায়। খোঁজ নিয়ে জানলাম যে ১০’২৮ এর ট্রেনটা ২ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে ছাড়বে। ২ নম্বর প্ল্যাটফর্মে যেতে হলে ওভারব্রিজে উঠতে হবে। কে ওঠে!! ১ নম্বরেও একটা ট্রেন দাঁড়িয়ে ছিলো সেটাতে উঠে গেলাম, তারপর লাফ দিয়ে ২ নম্বর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ানো ট্রেনে পৌছে গেলাম।





আমি সবসময় শেষের বগিটাতে বসি, প্রথম স্টেশনে সাধারণত এটি অনেকখানি ফাঁকা থাকে। হাঁটতে হাঁটতে শেষের বগিটাতে পৌছালাম। কিন্তু গিয়ে দেখি যে সবগুলো জানালার পাশের সিট দখল হয়ে গেছে। কি আর করা। ব্যাগটা উপরে তুলে দিলাম। আর তারপর একজনের পাশে বসে পড়লাম।





এই লোকাল ট্রেনগুলো খুবই যাত্রী সহায়ক। ইন্ডিয়ান লোকাল ট্রেনগুলোতে চড়ার সময় অবচেতন মনেই একটা গভীর দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসে। বনগাঁ থেকে দমদম ৭০ কিলোমিটার যাবো, ভাড়া ১৫ রুপি। অথচ ঢাকার বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত যেতে মাঝে মাঝে ৪৫ টাকার টিকিট কাটতে হয়, তারপরও অনেকসময় বগির মধ্যে উঠতে না পারার কারণে ইঞ্জিনে করে যেতে হয়। ইন্ডিয়ান লোকাল ট্রেনে সত্যিই খুব ভীড় হয়, কিন্তু তার মাঝেও বোধহয় একটা সুন্দর সিস্টেম চলে এসেছে। প্রতিটা বগিতেই অনেকগুলো করে ফ্যান, এবং সেগুলো সচল। দাঁড়িয়ে যাওয়া যাত্রীদের জন্য হাতলের ব্যাবস্থা। প্রতিটি বগিতে ৮ টা করে চওড়া দরজা। ট্রেনগুলোতে টয়লেটের ব্যাবস্থা নেই, কিন্তু ৪/৫ মিনিট পরপর ট্রেনগুলো যে স্টেশনগুলোতে থামে সেখানে টয়লেটের খুব ভালো ব্যাবস্থা আছে। আর আছে পানি খাবার ব্যাবস্থা। কোন কোন স্টেশনে ৫০টিরও বেশি খাবার পানির কল আছে।


লোকাল ট্রেনগুলোর কিছু কিছু আসন সংরক্ষণ করা থাকে। ইন্ডিয়াতে সিনিয়র সিটিজেনশীপ বলে একটা খুব ভালো ব্যাপার আছে। ৫৮ বছরের উপরের নারী এবং ৬০ বছরের উপরের পুরুষদেরকে বিশেষভাবে সম্মান করা হয়। এই সিনিয়র সিটিজেনশীপদের জন্য অনেক সামাজিক কর্মকাণ্ডেই কোটা সংরক্ষণ করা আছে। বিশেষ করে যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে। ট্রেন, বাস, ট্রাম ইত্যাদি যানবাহনে এই বয়স্কমানুষদের জন্য আসন সংরক্ষণ করা আছে। এমনকি দূরপাল্লার ট্রেনগুলোতে তারা প্রায় অর্ধেক ভাড়ায় ভ্রমণ করতে পারে। যেমন, কলকাতা থেকে দিল্লী পর্যন্ত ১,৪৪৬ কিলোমিটারের স্লীপার ক্লাসে সাধারন ভাড়া হচ্ছে ৬০৫ রুপি। কিন্তু সিনিয়র নারীদের জন্য এই ভাড়া হচ্ছে ৩৩০ ও সিনিয়র পুরুষদের ভাড়া হচ্ছে ৩৮৫ রুপি।


লোকাল ট্রেনগুলোতে সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য কিছু আসন সংরক্ষন করা থাকে। এছাড়াও নারীদের জন্য কিছু আসন নির্ধারিত থাকে। প্রতিটি লোকাল ট্রেনের দুটি করে বগি নারীদের জন্য। এছাড়াও বনগাঁ থেকে শিয়ালদাহ পর্যন্ত শুধুমাত্র নারীদের জন্যও ট্রেন আছে। এইসব ট্রেনে কোন পুরুষ উঠলে তাদের কপালে সত্যিকারের খারাবী আছে।


ঠিক ১০ টা বেজে ২৮ মিনিটে ট্রেনটা ছেড়ে দিলো। এবং চালু হওয়া মাত্রই ট্রেনটা খুব দ্রুত চলা শুরু করলো। বিদ্যুৎ চালিত এই ট্রেনগুলি খুব দ্রুত গতি তুলতে পারে। দুপাশের দৃশ্য বাংলাদেশের মতোই। তবে এখানকার অধিকাংশ ঘরই হচ্ছে টালির। বাংলাদেশে তো এখন টালির ঘর প্রায় চোখেই পড়ে না। কয়েকজায়গাতে ফুলের ক্ষেতও চোখে পড়লো। আর জলাশয়গুলোতে শাপলা ফুল ফুটে আছে। ভালোই লাগছে দেখতে।


আমি যেখানটাতে বসেছি সেই বগিটা বেশ ফাঁকা। আমার পাশে যে ছেলেটা বসে আছে বোঝা যাচ্ছে যে সে নেশাখোর, ঢাকার তেজগাঁও স্টেশনে এরকম পোলাপান ভালোই চোখে পড়ে। মজার ব্যাপার হচ্ছে প্রথম যে স্টেশনে ট্রেনটা থামলো সেখানেই এই নেশাখোর ছেলেটা নেমে গেল। আর আমি জানালার ধারটা দখল করে বসলাম।


প্রথম স্টেশনটার নাম হচ্ছে বিভূতিভূষণ হল্ট। এমন নাম কেন কে জানে! সুবিখ্যাত সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় উত্তর চব্বিশ পরগনাতেই জন্মগ্রহন করেন। বনগাঁ তো উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলাতেই পড়েছে। হয়তো খুব কাছাকাছির কোন গ্রামেই তাঁর বাড়ি ছিলো, এজন্যই হয়তোবা এই ষ্টেশনটা তাঁর নামে নামকরণ করা হয়েছে, বিভূতিভূষণ হল্ট।


আস্তে আস্তে ট্রেনের মধ্যে ভীড় হওয়া শুরু করেছে। তবে যাত্রীদের অধিকাংশই অল্পবয়সী, মানে ছাত্র-ছাত্রী। অফিস আওয়ারের ট্রেনগুলো সকালে চলে গেছে, এখন অন্য যাত্রীতে ভরপুর ট্রেন। তবে তরুন বয়সে যেরকম উচ্ছ্বাস দেখে আমরা অভ্যস্থ সে তুলনায় এই লোকাল ট্রেনগুলো বেশ নির্জীব বলা চলে।


বিভিন্ন ধরনের হকার উঠেছে, হরেক রকম জিনিস বিক্রি হচ্ছে। আমলকি বিক্রি হচ্ছে ছোট ছোট প্যাকেটে। অনেকেই এটা কিনে খাচ্ছে। এটা বোধহয় এখানে বেশ জনপ্রিয়। হকার যে শুধু পুরুষ ব্যাপারটা এরকম না, নারীরাও আছে। তারা সমান তালে তাদের জিনিসপত্র বিক্রি করছে। তবে কোন ভিক্ষুক আমার চোখে পড়েনি। নেই তা বলছি না, অন্তত আমি দেখিনি। ভিতরে যথেষ্ট ফাঁকা থাকা সত্ত্বেও দরজায় কতোগুলো ছেলেমেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। খোলা দরজা দিয়ে আসা বাতাস যথেষ্ট আরামদায়ক, সে তুলনায় জানালা দিয়ে বাতাস প্রায় ঢুকছেই না।


ঠাকুরনগর, গোবরডাঙ্গা, মাছলান্দপুর এরকম স্টেশনগুলো একেএকে পার হয়ে চলেছি। আর একই সাথে ভিড় বেড়েই চলেছে। প্রতিটি স্টেশনে কয়েক সেকেন্ডের জন্য ট্রেন থামে আর হুড়মুড় করে যাত্রী ওঠে। ট্রেনটা একেবারে কানায় কানায় ভরে গেল।


লোকাল স্টেশনগুলোও বেশ বড় বড়। কোন ট্রেনের কোন বগি কোথায় কোথায় এসে দাড়াবে সেগুলো মার্ক করা রয়েছে। মহিলা বগিগুলো যেখানে দাড়াচ্ছে সেখানে মহিলাদের প্রচন্ড ভীড়। ইন্ডিয়াতে মহিলাদের পোষাক-আশাকগুলো বেশ চোখে পড়ে। সল্পবসনাদের আধিক্যই বেশি। নাহ! সল্পবসনা শব্দটি ঠিক হলো না। এরা অনেক কাপড় পড়ে ঠিকই, কিন্তু শরীরে কাপড় ধরে রাখার ব্যাপারে ততোটা যত্নবান না।


ট্রেনে আমি তো একেবারে জানালার ধারেই বসেছি, মুখটা জানালার গ্রীলে ঠেকিয়ে রেখেছি। যখন বিড়া স্টেশনে ট্রেন আসলো দেখি প্রায় ৪৫ বছর বয়সের একজন নারী, হালকা নীল রঙের টাইট জিন্স আর গাড়ো লাল রঙের শার্ট পড়ে আছে। শার্টের উপরের দুটো বোতাম খোলা। মোহনীয় একটা ভঙ্গী। হঠাত তার হাত থেকে কি যেন পড়ে গেল, তিনি জিনিসটা কুড়ানোর জন্য সামনের দিকে ঝুকে নীচু হলেন। এইরকম একটা ব্যাপার দেখার জন্য নিশ্চয় আমাদের দেশে বেশ একটা ভীড় জমে যেত। কিন্তু এখানে দেখলাম কেউ ফিরেও তাকালো না।


বিভিন্ন স্টেশনে দেখি কোন কোন ঠাকুরের একটা দুইটা ছবি আর তার নীচে টুকটাক উপকরন রেখে মন্দির বানানো হয়েছে। সেখানে প্রনামীর সংখ্যাও কম না।


ট্রেন থেকেই দেখা যাচ্ছে ষ্টেশনের টয়লেটগুলো। যদিও অনেকগুলো করে টয়লেট তবুও সেগুলোতে প্রচন্ড ভীড় আর লম্বা লাইন। এই টয়লেটগুলো বিনামূল্যের। ষ্টেশনের এই টয়লেটগুলোর উপযোগিতা খুবই বেশি। মানুষ তো খুব ভোরেই বাসা থেকে বের হয়, সারাদিনে তো তার অনেকবারই টয়লেটে যাবার প্রয়োজন পড়ে। ষ্টেশনের এই টয়লেটগুলো না থাকলে তো খুবই সমস্যার সম্মুক্ষীন হতে হবে। আহারে আমাদের দেশের স্টেশনগুলোর কি অবস্থা। পুরুষেরা তো নাহয় ট্রেন রাস্তার ধার ধরে দাঁড়িয়ে পড়তে পারে, কিন্তু নারীদের যে কি পরিমান সমস্যার সম্মুক্ষীন হতে হয় তা শুধুমাত্র ভুক্তভোগীরাই জানে।


প্রতিটা স্টেশনেই অনেকগুলো করে দোকান। সেখানে খাবার-দাবার থেকে শুরু করে বিভিন্ন জিনিসপত্র বিক্রি হচ্ছে। আর রয়েছে লটারীর
দোকান। বিভিন্ন পোস্টার টাঙ্গানো দেখছি লটারী নিয়ে। এই দোকান থেকে লটারি কিনে ওমুক এতো হাজার টাকা লটারি জিতেছে, বিশ্বাস না হলে এই নম্বরে ফোন করে দেখুন, এইরকম ধরনের সব বিজ্ঞাপন।


যতোই কলকাতার কাছাকাছি চলে আসছি ততোই ষ্টেশনের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। দু-তিন মিনিট পরপরই একেকটা স্টেশন। মানুষে বোঝায় হয়ে গেছে ট্রেনটা। আশেপাশে যে কটা ট্রেন ক্রস করছে সেগুলোও যাত্রীতে ঠাসা। বিভিন্ন দিক থেকে কলকাতা অভিমুখে পাশাপাশি কয়েকটি ট্রেন ছুটে চলেছে। প্রতিটা স্টেশনেই প্রচন্ড ভীড়। অবশেষে বেলা প্রায় সোয়া বারোটাতে ট্রেন দমদম জংশন এসে থামলো। এখানেই ট্রেন অনেকখানি খালি হয়ে যায়। বেশিরভাগ যাত্রী এই স্টেশনেই নেমে পড়ে।


আমি যাবো বিবাদীবাগ স্টেশনে, সেজন্য শিয়ালদাহ যাবার দরকার নেই। সবচেয়ে ভালো হতো বনগাঁ থেকে ৯’৫০ এর ট্রেনটা ধরতে পারলে। ওটা সরাসরি বিবাদীবাগ যায়। কিন্তু যেহেতু সেটা ধরতে পারিনি, এখন দমদমে নামতে হবে। দমদম থেকেও বিবাদী বাগের ট্রেন পাওয়া যায়।


ট্রেনটা দাড়িয়েছে চার নম্বর প্ল্যাটফর্মে। স্টেশনে নামতেই প্রচন্ড ভিড়ের খপ্পরে পড়লাম। কি পরিমান যে ভীড় তা কল্পনাও করা যাবে না। এই অবস্থায় বিবাদীবাগের ট্রেন খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। সহজ উপায়টা বেছে নিলাম। মেট্রোর দিকে যাবার চেষ্টা। প্রচন্ড ভিড়ে সবকিছু উলোট-পালোট হয়ে যাচ্ছে। ক্যামেরা বের করে একটা ছবি তুলবো সেরকম অবস্থা নেই। কিছু সেকেন্ড পরপর একেকটা প্ল্যাটফর্মে একেকটা ট্রেন এসে দাড়াচ্ছে আর হাজার হাজার যাত্রী ওঠানামা করছে। আমি এই ভীড়ের মাঝে হারিয়ে গেলাম।


মেট্রোতে চড়ার জন্য ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মের দিকে যেতে হবে। ৪ থেকে ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে যেতে হলে মাটির নীচে ঢুকতে হবে। অনেক কষ্টে সুড়ঙ্গটা খুঁজে পেলাম। কিন্তু ভয়ঙ্কর ভিড়ে সেখানে বেসামাল অবস্থা। ব্যাগ টেনে যেতে আমার খুবই কষ্ট হচ্ছে। অনেক কষ্টে একটা স্রোতের মধ্যে যেতে পারলাম, আর তারপর সেই স্রোতটাই আমাকে মাটির নীচে টেনে নিয়ে গেল।


প্রায় দোতলা সমান নীচে নামতে হবে সরু একটা পথ দিয়ে। পথটা আসলে সরু না, কিন্তু সবসময় সেখানে এতো মানুষ গিজগিজ করে যে সেটা সরুই মনে হয়। মাটির নিচ দিয়ে এসে পৌছালাম ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে। এখান থেকেই মেট্রো ট্রেনের টিকিট কাটতে হবে।


কিন্তু ওরে বাবা!! এখানে আরো ভীড়। বেশ কয়েকটা কাউন্টার, অথচ অনেক লম্বা লাইন। লাইনগুলোতেও একটা বিশৃঙ্খল অবস্থা, কে কার পিছনে দাড়িয়েছে সেটা বোঝা যাচ্ছে না। কিন্ত কোথাও কোন চিল্লাপাল্লা হৈ চৈ হুংকার নেই। সবাই মিলে চেষ্টা করছে লাইনগুলো ঠিক করার জন্য। বিপাকে পড়েছি আমি, কারণ আমার রয়েছে বাচ্চাসহ একটা বড় ব্যাগ।


কিছুক্ষনের মধ্যেই স্টেশনের একজন পুলিশ এসে লাইন ঠিক করে দিলো। আমার বড় ব্যাগটা দেখে সে স্পেশাল টেক কেয়ার করলো এবং সবাই তার নির্দেশনা মেনে চলে তাকে সহযোগিতা করতে লাগলো। অল্পক্ষনের মাঝেই সুশৃঙ্খল একটা ভাব চলে এলো। এতো মানুষের ভীড় অথচ খুব দ্রুত টিকিট বিক্রি হচ্ছে, লাইন খুব দ্রুত ছোট হচ্ছে। কাউন্টারে পৌছে একটা এম জি রোডের টিকিট নিলাম, ভাড়া ১০ রুপি। মেট্রো ট্রেনের টিকিট হচ্ছে প্লাস্টিকের ছোট্ট গোল একটা কয়েন।


টিকিট কাটা শেষ হলে ব্যাগ মেশিনে দিয়ে চেক করালাম। তারপর টোকেনটা মেট্রো স্টেশনে ঢোকার দরজাতে ছোঁয়ালাম। দরজা খুলে গেল। এরপর চলন্ত সিঁড়ি দিয়ে উপরের প্ল্যাটফর্মে উঠে গেলাম। কলকাতা মেট্রোর দমদমের অংশটা উড়ন্ত স্টেশন। অর্থাৎ এটা মাটি থেকে বেশ উপরে। প্ল্যাটফর্মে এসে দেখি একটা ট্রেন দাঁড়ানো অবস্থানে আছে। দৌড়ে সেটাতে ঢুকে পড়লাম। কিছুক্ষনের মাঝেই সংকেত দিয়ে দরজা বন্ধ হয়ে ট্রেনটি চলা শুরু করলো। আর তার অল্পক্ষনের মাঝেই ট্রেনটি উড়ন্ত অবস্থা থেকে মাটির নীচে ঢুকে গেল।


মেট্রো ট্রেনগুলি বেশ ভালো এবং আরামদায়ক। দরজার উপরে প্রতিটি ষ্টেশনের নাম লেখা আছে। যেগুলোতে লাল আলো জ্বলছে সেগুলোর মানে হচ্ছে যে এই স্টেশনগুলো পার হয়ে এসেছে, আর যেগুলিতে সবুজ আলো জ্বলছে তার মানে হচ্ছে এই স্টেশনগুলির দিকে ট্রেন যাচ্ছে। এছাড়াও বাংলা, ইংরেজি এবং হিন্দী এই তিন ভাষায় বর্ণনা দেয়া হচ্ছে যে ট্রেনটি এবার কোন স্টেশনে আসবে আর সেই স্টেশনে কোন পাশের দরজা দিয়ে নামতে হবে।


মাটির নীচের সুড়ঙ্গ পথ দিয়ে ট্রেন খুব জোরে ছুটে চলেছে। একেএকে বেলগাছিয়া, শ্যামবাজার, শোভাবাজার, গিরিশ পার্ক পার হয়ে এলাম। এরপর ট্রেন এসে থামলো এম জি রোড। এখানেই নামলাম আমি। দমদম থেকে এ পর্যন্ত আসতে ৮ মিনিটও লাগলো কিনা সন্দেহ।


কলকাতার মেট্রো স্টেশনগুলিতে ছবি তোলা নিষেধ। মাটির নীচের প্ল্যাটফর্ম থেকে চলন্ত সিঁড়ি বেয়ে দোতলা উপরে উঠে এলাম। এখানকার একটা ফিল্টার থেকে পেট ভরে ঠান্ডা পানি খেলাম। বোতলেও ভরে নিলাম। তারপর মেশিনের মধ্যে টিকিট টা জমা দিয়ে দিলাম, হাট করে দরজা খুলে গেল। তারপর আবারো চলন্ত সিঁড়ি বেয়ে মাটির উপরে উঠে এলাম।


মেট্রো স্টেশন থেকে বের হয়ে দেখি চারিদিকে রোদ ঝলমল করছে, আর রাস্তায় গাড়ির বেশ ভিড়। রাস্তা পার হয়ে দেখি একটা বাস ডালহৌসি যাচ্ছে, খালি দেখে সেটাতে উঠে পড়লাম। বসার জায়গা নেই, আমি দাঁড়িয়ে আছি। আর কলকাতার বাসে বসতেও আমার ভয় লাগে, কোনটা যে নারীদের আর কোনটা যে সিনিয়র সিটিজেনশীপদের আর কোনটা যে পুরুষদের জন্য সংরক্ষিত তা আমি মাঝে মাঝে গুলিয়ে ফেলি। বাসে দাড়াতেও খুব বেশি কষ্ট হচ্ছে না, এখানকার অধিকাংশ বাসেই লাগেজ রাখার জন্য ভালো ব্যাবস্থা আছে।


বেশ কিছুক্ষন যাবার পর জানালা দিয়ে দেখি সেন্ট্রাল মেট্রো স্টেশন। হা কপাল! এম জি রোড না নেমে সেন্ট্রালে নামলেও তো হতো। আচ্ছা! অসুবিধা নেই। কয়েকটা সিট ফাঁকা হওয়া মাত্রই বসতে গেলাম, এসময় দেখি কন্ট্রাকটার ডালহৌসি ডালহৌসি বলে ডাকছে। ব্যাগটা কাঁধে চাপিয়ে কন্ট্রাকটারকে ১০ রুপির একটা নোট দিলাম, সে আমাকে খুচরা ফেরত দিলো। আর তারপর নেমে পড়লাম ডালহৌসিতে।

সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৪:৩২
১৮টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×