somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রিয় ভ্রমণসঙ্গী ও পুরানো ঢাকা (তিন-তৃতীয়াংশ)

২০ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ৯:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



প্রিয় ভ্রমণসঙ্গী ও পুরানো ঢাকা (এক-তৃতীয়াংশ)
প্রিয় ভ্রমণসঙ্গী ও পুরানো ঢাকা (দুই-তৃতীয়াংশ)
অন্য পর্বগুলো

ইংলিশম্যান মিটফোর্ড ঢাকাকে সত্যিকারভাবে ভালোবেসে ফেলেছিলেন। ১৮৩৬ সালে লন্ডনে মারা যাবার আগে তিনি তার সকল সম্পদ ১ লক্ষ ৬৬ হাজার রুপি ঢাকাবাসীর জন্য উইল করে গিয়েছিলেন। কিন্তু এত বিপুল সম্পদ তার আত্মীয়-স্বজনেরা হাতছাড়া করতে চায়নি। তারা মামলা ঠুকেছিলো এই সম্পত্তি পাবার জন্য। কিন্তু তারা সুবিধা করতে পারেনি। ১৮৫০ সালে লন্ডনের আদালত ঢাকাবাসীর পক্ষে মামলার রায় দিয়েছিলো। এই টাকায় ঢাকাতে তৈরী করা হয় হাসপাতাল। নাম রাখা হয় মিটফোর্ড হাসপাতাল।

আগে এখানে একটা ওলন্দাজ কুঠি ছিলো। তৎকালীন নূতন ঢাকাও শুরু হয়েছিলো এখান থেকে। ১৮৫৪ সালে ওলন্দাজ কুঠি, একটা মসজিদ আর একটা পুরানো স্মৃতিস্তম্ভ ভেঙ্গে মিটফোর্ড হাঁসপাতাল ভবন নির্মাণ শুরু হয়েছিলো। সুদৃশ্য ভবন নির্মাণ শেষে ১৮৫৮ সালে এটার উদ্বোধন করা হয়।




১৮৭৩ সালে ইংরেজ সরকার সিধান্ত নেয় যে ঢাকাতে একটা মেডিকেল স্কুল স্থাপন করা হবে। বিভিন্ন পর্যালোচনা মোতাবেক ১৮৭৫ সালে মিটফোর্ড হাসাপাতালে মেডিকেল স্কুল স্থাপন শেষে ক্লাস শুরু হয়।এবং মজার ব্যাপার হচ্ছে যে এখানে তখন বাংলা ভাষায় মেডিকেল শিক্ষা প্রদান করা হতো। বিখ্যাত বিপ্লবী বিনয় বসু এই মিটফোর্ড মেডিকেল স্কুলেরই ছাত্র ছিলেন। এখানেই তিনি হত্যা করেছিলেন কুখ্যাত পুলিশ ইন্সপেক্টর জেনারেল লোম্যানকে।

১৯৬২ সালে মেডিকেল স্কুলটি কলেজে রুপান্তরিত করা হয় এবং এর নাম রাখা হয় সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ।


মিটফোর্ড হাসপাতালের মধ্য দিয়ে আমি আর সোহেল ভাই পার হয়ে এলাম। এসে নামলাম মিটফোর্ড রোডে। এগিয়ে চললাম চকবাজারের দিকে।



আমাদের গল্প তখন ইন্দিরা গান্ধীতে এসে ঠেকেছে। সোহেল ভাই বলে চলেছেন..... নেহেরু পরিবারটির আদিবাদ কাশ্মীরে। তারা বিখ্যাত পন্ডিত সম্প্রদায়। সুদৃশ্য একটা নহরের পাশে বসবাস করায় তাদের বংশের নাম হয়ে যায় নেহেরু। মতিলাল নেহেরু ছিলেন একজন ইংরেজ বিরোধী, ইংরেজ সরকারের রোষানল থেকে দূরে থাকতে তিনি উপস্থিত হন উত্তরপ্রদেশে। এলাহাবাদে জন্মহয় তার সন্তান জহরুলাল নেহেরুর। জহরুলাল নেহেরুর সন্তান হচ্ছে ইন্দিরা।

সোহেল ভাইকে আমি সংযোজন করলাম, এটা ভাবতেই ভালো লাগে যে রবীন্দ্রনাথ তার প্রিয় ছাত্রী ইন্দিরার নাম দিয়েছিলেন প্রিয়দর্শিনী। ইন্দিরা প্রিয়দর্শিনী নেহেরু।

সোহেল ভাই তখন ইন্দিরা প্রিয়দর্শিনী নেহেরু থেকে ইন্দিরা গান্ধী হয়ে ওঠার কাহিনী বললেন। অক্সফোর্ডে পড়ার সময় যে মেয়েটি তার বাবার কাছে ১০০ টি চিঠি লিখেছিলো। যার প্রতিটিতেই একটি কথা লেখা ছিলো, বাবা আমি ফিরোজকে ভালোবাসি। ফিরোজকে বিয়ে করেই ইন্দিরার গান্ধী হয়ে ওঠা.....

চকবাজার যাবার পথটি প্রচন্ড ঘিঞ্জি। এতো স্থবির পথ আমি ঢাকার আর কোথাও দেখিনি। দুনিয়ার এমন কোন বস্তু নেই যা বোধহয় এখানে পাওয়া যায় না। আর তার ফলাফল হচ্ছে যে এখানকার রাস্তাতে হাটাও যায় না। সারাদিন ব্যাবসায়ীরা পাইকারী মালপত্র কিনতে এখানে আসছে। এইসব মালপত্র পরিবহনের কাজে ট্রাক বা পিকাপ সহজে ঢুকতে পারে না। তার ফলে রিক্সা, ঠেলাগাড়ি এবং মানুষের মাথায় ঝাকা মূলত এই তিনটি জিনিসই ব্যাবহার হয় মালপত্র পরিবহনের জন্য। এই পথে হাটতে গেলেও বিশাল জ্যামের সম্মুখে পড়তে হয়। সরু পথটার দুদিকে বিশাল বিশাল বিল্ডিং। অবাক বিস্ময়ে আমি ভাবি যে এই বিল্ডিংগুলি বানানোর সময় যন্ত্রাংশ এনেছে কিভাবে!!



অবশেষে আমরা পৌছে গেলাম চকবাজারে।

চকবাজার
চারশো বছরের পুরানো এই চকবাজার। মোঘল সেনাপতি মানসিংহ বাংলার বিদ্রোহ দমনে এসেছিলেন। কিছুদিন আগে পরিত্যাক্ত হয়ে যাওয়া কারাগারটিতে তিনি মোঘল দুর্গ স্থাপন করেছিলেন। দুর্গের প্রয়োজনেই গড়ে উঠেছিলো এই বাজারটি। একসময় এখানে দাস কেনা-বেচা হতো। এটিই ছিলো শহরের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা। নূতন বরকে বিয়ের সময় চকবাজারের চারদিকে এক চক্কর, দুই চক্কর অথবা সাত চক্কর দেয়া রেওয়াজ ছিলো। তবে এখন এই প্রথা বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

সোহেল ভাইকে অনুরোধ করলাম, আচ্ছা আপনাকে যদি আমন্ত্রন জানাই তাহলে কি আপনি একটা মজার জিনিস খাবেন? ভাই বললেন, অবশ্যই খাবো, চলো সেখানে। আমরা তখন চকবাজারের একটা বিখ্যাত লাচ্ছির দোকানে ঢুকলাম।



বরফের কুচি মেশানো দু’গ্লাস ঠান্ডা লাচ্ছি যখন পরিবেশন করা হলো সেটা দেখতেই ভালো লাগছিলো। বুঝতে পারলাম যে এতোক্ষন রোদে হাটাহাটি করে আমরা বেশ ক্লান্ত হয়ে গেছি। গ্লাসের দিকে তাকিয়ে থাকলেও অনেকখানি ক্লান্তি দূর হয়ে যাচ্ছে। সোহেল ভাই লাচ্ছির গ্লাসে প্রথম চুমুক দিয়ে বিস্ময়ের সাথে ছোট একটা চিৎকার করে উঠলেন, আরে!! এটাতে মধু দিয়েছে নাকি!!!

দোকান থেকে যখন বের হচ্ছি সোহেল ভাইয়ের ভাবভঙ্গি দেখে আমি তাকে একটা ধাক্কা দিলাম। তারপর কাউন্টারের দিকে টাকা বাড়িয়ে দিয়ে সোহেল ভাইকে বললাম, ভাই আজকে আপনি আমার অতিথি।

পুরো চকবাজার খাবারের গন্ধে ম ম করছে। ঢাকার বিখ্যাত খাবারের অনেকগুলিই এখানে পাওয়া যায়। রমজান মাসে চকবাজারের ইফতার তো জগৎবিখ্যাত। যদিও আমার কখনো চকবাজারের ইফতার ভালো লাগেনি।



একটা সিগারেটের দোকানদারকে গিয়ে সোহেল ভাই বড় কাটরা যাবার গলিটা জিজ্ঞাসা করলেন। আমি হেসে ফেললাম। সোহেল ভাই হাসির কারন জানতে চাইলে বললাম, একবার দিল্লীতে গুরুদুয়ারা যাবার পথ জিজ্ঞাসা করায় এক দোকানদার আমাকে বলেছিলো যে “আমি কি তোমার চাকর নাকি যে পথ বাতলে দেব”। সোহেল ভাই শুনে হেসে বললেন যে দুনিয়ার সবজায়গাতেই সবধরনের মানুষ থাকে।

সরু একটা গলি দিয়ে বড়কাটরার দিকে এগিয়ে গেলাম। দুপাশে দোকান, মাঝখানে সরু পথ। দূর থেকে বড়কাটরার ধংশাবশেষ দেখতে পাচ্ছি।



বড়কাটরা
১৬৪৪ সালে শাহ শুজার আমলে তার প্রধান স্থপতি আবুল কাসেম ক্লান্ত পথিকদের বিশ্রামের জন্য সরাইখানা হিসাবে নির্মাণ করেছিলেন এই ভবনটি। ভবনটির রক্ষণাবেক্ষণ ও বিভিন্ন ব্যয় নির্বাহের জন্য তৈরী করা হয়েছিলো ২২ টি দোকান। ভবনটির মাঝখানে ছিলো তিনতলা উচু ফটক। ফটকের দুপাশে দ্বোতলা ঘরের সারি। এটি ছিলো তৎকালীন ঢাকার সবচেয়ে মনোরম অট্টালিকা।



আহারে!! বড়কাটরাকে যে কি ভয়ঙ্করভাবে দখল করা হয়েছে। ভাঙ্গাচুরা ফটকটি কোন রকমে টিকে আছে। বড়কাটরা দখল করে অসংখ্য দোকানপাট, বাড়ি এবং একটি মাদ্রাসা তৈরী করা হয়েছে। আমি আর সোহেল ভাই বেশ খানিকক্ষন ধরে বড় কাটরার উপরে ওঠার পথ খুজে বের করার চেষ্টা করলাম। কিন্তু সেগুলো এমনভাবে দখল হয়েছে যে আমরা সেরকম কোন পথই খুজে পেলাম না।

বিফল মনরথে এগিয়ে গেলাম ছোট কাটরার দিকে। চম্পাতলি সড়ক দিয়ে এগিয়ে যেতে হয়। বেশ খানিকক্ষন খোজাখুজির পর পেলাম ছোটকাটরা।

ছোটকাটরা
ঢাকায় সুবেদার হয়ে আসার পর শায়েস্তা খা ছোট কাটরা নির্মাণকাজ শুরু করেছিলেন ১৮৬৩/৬৪ সালে। বড় কাটরার পরিকল্পনার সাথে ছোটকাটরার তেমন কোন অমিল নেই, কিন্তু আকারে ছোট বিধায় এটির নাম হয়ে যায় ছোটকাটরা।ইংরেজ আমলে ছোট কাটরার বেশ কিছু পরিবর্তন সাধিত হয়।১৮১৬ সালে ঢাকার প্রথম ইংরেজি স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো এখানে।



সোহেল ভাই আর আমি ছোটকাটরা দেখে হতভম্ব হয়ে গেলাম। বড়কাটরার তুলনায় ছোটকাটরার অবস্থা আরো ভয়াবহ। সোহেল ভাইকে একটা কিংবদন্তির কথা বললাম। শায়েস্তা খার আমলে যখন ১ টাকায় আট মন চাল পাওয়া যেত তখন শায়েস্তা খা নাকি ছোটকাটরায় একটা দরজা তৈরী করে তালাবদ্ধ করে রেখেছিলেন। যদি আর কখনো কেউ তার শাসনামলে চালের দাম কমাতে পারে তবে সে এই দরজা খোলার অনুমতি পাবে। মজার ব্যাপার হচ্ছে আরো কয়েকবছর পর শায়েস্তা খা যখন আবারো ঢাকার সুবেদার নিযুক্ত হয়েছিলেন তখন তিনিই আবার চালের দাম কমাতে পেরেছিলেন। ফলস্বরুপ তিনিই সেই বন্ধ দরজা খোলার অধিকারী হয়েছিলেন।



ছোটকাটরা ছেড়ে আমরা বুড়িগঙ্গার দিকে হাঁটা শুরু করলাম। আমাদের গল্প তখন সিরাজউদ্দৌলায় এসে পৌছেছে। সোহেল ভাই শুনিয়ে চলেছেন নবাব মুর্শিদকুলি খার কাহিনী। যার সাথে বেইমানি করেছিলো সিরাজউদ্দোলার নানা আলীবর্দি খান। মুর্শিদকুলি খার মৃত্যুর পর আলীবর্দি খান দখল করেছিলো সিংহাসন আর মুর্শিদকুলি খার পরিবারকে নির্বাসন পাঠিয়েছিলো ঢাকার জিঞ্জিরার প্রাসাদে। মুর্শিদ কুলি খার পরিবার নাকি আলীবর্দি খানকে অভিশাপ দিয়েছিলো যে এই অন্যায়ের জন্য তার পরিবারকেও একই পরিস্থিতি বরণ করতে হবে।

ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস। কিছুদিনের মধ্যে আলীবর্দি খানের পরিবারকেও ঠিক একই ভাগ্য বরণ করতে হলো। আলিবর্দি খানের দৌহিদ্র নবাব সিরাজউদ্দোলা ইংরেজদের সাথে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে ছদ্মবেশে পালিয়ে যাবার সময় ধরা পড়ে। তার মৃত্যু হয় মুহাম্মদী বেগের হাতে। আর সিরাজের স্ত্রী-কন্যাকে নির্বাসন দেয়া হয় ঢাকার জিঞ্জিরার সেই প্রাসাদে যেখানে মুর্শিদকুলি খানের পরিবারকে নির্বাসন দেয়া হয়েছিলো।

আমি আর সোহেলভাই এখন জিঞ্জিরার সেই প্রাসাদটা দেখতে যাচ্ছি।

সোয়ারিঘাট থেকে নৌকায় উঠলাম কেরানীগঞ্জ যাবার জন্য। বুড়িগঙ্গায় নৌকাতে চড়ার সময় নবাব সিরাজউদ্দোলার খালা ঘোষেটি বেগমকে নৌকা ডুবিয়ে হত্যা করেছিলো মীরন । ঘোষেটি বেগম নাকি মৃত্যুর আগমুহূর্তে মীরনকে অভিশাপ দিয়ে বলেছিল যে তোর মৃত্যু হবে বজ্রাঘাতে। সোহেল ভাইকে সে কথা বলতেই তিনি বললেন যে মীরনের মৃত্যু হয়েছিলো তাবুতে আগুন লেগে।


বুড়িগঙ্গায় নৌকা চেপে নদী পার হচ্ছি। ছোটবেলায় পড়েছিলাম যে পানির কোন রঙ নেই। কিন্তু বুড়িগঙ্গাকে দেখে সেকথা কে বলবে!! কুচকুচে কালো রঙের পানি, আর সাথে প্রচন্ড দুর্গন্ধ। পাশ দিয়ে যখন অন্য কোন নৌকা যাচ্ছে তখন তার আলোড়নে কালো পানিতে সাদা ফেনার সৃষ্টি হচ্ছে। দুর্গন্ধের মাত্রা তখন বেড়ে যাচ্ছে আরো বহুগুনে। আহারে বুড়িগঙ্গা!!!


নৌকায় করে কেরানীগঞ্জ এসে নামলাম। এখানেই কোথাও প্রাসাদটি। কয়েকজনকে জিজ্ঞাসা করা হলো, কিন্তু কেউই ঠিকমতো বলতে পারলো না। বিভিন্ন অলিগলি দিয়ে যাওয়া হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত আমরা বোধহয় কিছুটা বিরক্ত হয়ে গেলাম। ওখানকার এক দোকানদার বললো যে তারা শুনেছে এখানে একসময় পুরানো বাড়িঘর ছিলো। সেগুলো ভেঙ্গেচুরে এইসব বহুতল ভবন তৈরী করা হয়েছে। পুরো এলাকাটাই নাকি সেই ধংসস্তুপের উপরে গড়ে উঠেছে।

সোহেল ভাই কিন্তু হাল ছাড়লেন না। শেষ পর্যন্ত এক বয়স্ক ব্যাক্তি আমাদের জানালেন যে সেই প্রাসাদের একটা অংশ এখনো টিকে আছে। তিনি সেখানে যাবার পথ দেখিয়ে দিলেন। সরু একটা গলিপথ দিয়ে আমরা এগিয়ে গেলাম। খুব বেশিদিন হয়নি এই এলাকার নূতন বাড়িগুলো তৈরী হয়েছে। এতো সরু গলি কেন তা কে জানে। রিক্সা তো দূরে থাকুক কেউ তার সাইকেল নিয়েও এই গলি দিয়ে যেতে পারবে না।



একজন বয়স্ক ভদ্রমহিলা জানতে চাইলেন আমরা কোথায় যেতে চাই। আমাদের গন্তব্য শুনে তিনি আমাদের কিছুদূর এগিয়ে নিয়ে গেলেন। একটা বাড়ির দরজা দেখিয়ে বললেন যে এই বাড়ির মধ্যে পুরানো প্রাসাদের ধ্বংসস্তূপ আছে।

অন্যের বাড়ির মধ্যে বিনা অনুমতিতে ঢুকতে খারাপ লাগে। তবুও সাহস নিয়ে ঢুকে পড়লাম। কতোগুলো কুকুর আমাদের দেখে ঘেউঘেউ করা শুরু করলো। নূতন কয়েকতলা ভবন, মাঝখানে উঠোন। উঠোনের এক কোনে ভাঙাচুরা কতগুলো কাঠামো। এই কাঠামোগুলো জুড়ে আবর্জনার স্তুপ। হঠাত আমার মনে হলো এখানে না এলেই বোধহয় সবচেয়ে ভালো হতো।



এখনো ভাবলে আমার এতো মন খারাপ হয় যে এই স্থাপনাটি নিয়ে আমার আর কিছু বলতে ইচ্ছা করছে না। শুধু অনেকগুলো দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসে বুক থেকে।





চলে এলাম এখান থেকে। হাটতে হাটতে এগিয়ে চলেছি। আর নৌকায় উঠবো না। বাবুবাজার ব্রীজ দিয়ে হেঁটে নদী পার হবো। জিঞ্জিরা প্রাসাদের ধংসাবশেষের রেশ মনজুড়ে রয়েছে। ব্যাথিত হয়েছি। জাতি হিসাবে কি আমরা প্রচন্ড পরিমানে ধংসপ্রিয়!!!

সিড়ি বেয়ে ব্রীজে উঠলাম। গোধূলীর হলুদাভ আলো কৃষ্ণবর্না বুড়িগঙ্গাকেও সুন্দরী করে তুলেছে। নৌকাতে করে যাত্রী পারাপার হচ্ছে। অন্যদিকে সদরঘাট। বড়বড় লঞ্চ বাধা রয়েছে সেখানে।



এতো দূর থেকেও ভোঁ ভোঁ হর্নের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। বেশ লাগছে দেখতে। হঠাত করে অনুভব করলাম যে, সোহেল ভাই আমার একজন প্রিয় ভ্রমণসঙ্গী হয়ে উঠেছেন।



অধিকাংশ তথ্য শ্রদ্ধেয় লেখক মুনতাসীর মামুনের ঢাকা সম্পর্কিত বিভিন্ন লেখালেখি থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। তার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা। তার লেখাগুলোই ঢাকাকে গভীরভাবে ভালোবাসতে শিখিয়েছে।

অন্য পর্বগুলো
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০১৭ বিকাল ৫:৪৯
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমিও যাবো একটু দূরে !!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২২

আমিও যাবো একটু দূরে
যদিও নই ভবঘুরে
তবুও যাবো
একটু খানি অবসরে।
ব্যস্ততা মোর থাকবে ঠিকই
বদলাবে শুধু কর্ম প্রকৃতি
প্রয়োজনে করতে হয়
স্রষ্টা প্রেমে মগ্ন থেকে
তবেই যদি মুক্তি মেলে
সফলতা তো সবাই চায়
সফল হবার একই উপায়।
রসুলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×