somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আনাড়ি ছবিতে হিমালয় দর্শন

০১ লা এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ১১:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বিভিন্ন ভঙ্গিতে, বিভিন্ন রূপে, বিভিন্ন স্থান থেকে হিমালয়কে দেখতে ভালোবাসি। আল্লাহর রহমতে বেশ কয়েকবার হিমালয়ের সান্নিধ্যে যাবার সুযোগ হয়েছে। হিমালয়ে যাওয়া মানে কম্পাস, ম্যাপ, মোটা নাইলনের দড়ি, ইয়া বড়বড় গামবুট ইত্যাদি সহকারে প্রস্তুতি নিয়ে যাওয়া নয়, আমি একজন সাধারণ মানুষ আমি আমার নিজের মতো করে হিমালয় দেখি। হিমালয়কে দেখেছি লোকাল যানবাহনে চেপে, কারো কাছে তার গাড়িতে লিফট নিয়ে অথবা পায়ে হেঁটে। কিন্তু যেভাবে, যতোবারই দেখি না কেন হিমালয়কে দেখে আগের চেয়ে বেশি মুগ্ধ হই।


হিমালয়ের কিছু ছবি নিয়ে আজকের পোস্ট। তবে দু'টো বিষয়ে ক্ষমা করতে হবে।
১। আমি একেবারেই ছবি তুলতে পারিনা।
২। আমার ছবি তোলার যন্ত্রপাতি একেবারেই আহামরি কিছু না।
তবে এ ব্যাপারে গ্যারান্টি দিতে পারি যে কোন ছবিই এডিট করে আলাদা সৌন্দর্য বর্ধন করা হয়নি।


বেশ কয়েকবার কম্পিউটার নষ্ট হয়ে একগাদা ছবি নষ্ট হয়ে গেছে। তার মাঝেই যে কয়েকটা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে সেখান থেকেই কতোগুলো নিয়ে আজকের সংকলন। উল্লেখ্য সবগুলো ছবিই ভারতীয় হিমালয়ে। এখনো পর্যন্ত অন্য দেশের হিমালয় সন্দর্শনের সৌভাগ্য হয়নি।



২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরের শেষের দিককার এক সকালবেলা হিমাচল প্রদেশে রোথাং পাসে। লোকাল বাস থেকে চলন্ত অবস্থায় ছবিটা তোলা।



কোন এক সময় লাদাখ নামে পৃথিবীর বুকে স্বাধীন এক রাজ্য ছিলো। এখন সেটি ভারতীয় কাশ্মীরের একটি অঞ্চল। লাদাখের সবচেয়ে বড় শহর হচ্ছে লেহ। ছবিটা লেহ রাজপ্রাসাদের ছাদ থেকে তোলা। রাজপ্রাসাদটি কয়েকশ বছর ধরে পৃথিবীর সবচেয়ে উচু ভবন হিসাবে বিবেচিত ছিলো।



পাহাড় ভালোবাসি, ট্রেন ভালোবাসি। আর সিমলা যাবার পথটিতে এ দুটোই আছে। পাহাড়ের শরীর বেয়ে একেবেকে রেলপথ বয়ে চলেছে। ছোট ছোট খেলনার মতো রেলগাড়ি এই পথ ধরে উঠে চলে। সৌভাগ্য হয়েছে এই ট্রেনে চড়ার, এখনো পর্যন্ত তিনবার। তবে প্রথমবারের ভ্রমণ স্মৃতি এখনো অনবদ্য। ট্রেনটা দুই পাহাড়ের ঢালে তিন ঘন্টা নষ্ট হয়ে বিপদজ্বনকভাবে দাঁড়িয়ে ছিলো। ভাগ্যিস নষ্ট হয়েছিলো। নাহলে ঐ রূপ সুধা থেকে বঞ্চিত হতাম।



সূর্যের প্রথম কিরণে আলোকজ্জ্বল সাদা পাহাড় চূড়া। কিলং ওল্ড বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষারত এ দৃশ্যের ছবিটা আমাকে বারবার কিলং-এ নিয়ে যায়। আমি কি কখনো ভুলতে পারবো যে পুরো এক বাজারের সমস্ত মানুষ আমার জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলো যেন আমি একটা গাড়িতে উঠতে পারি! সেই মানুষগুলোর প্রতি কৃতজ্ঞতা।



লেহ নামের অসাধারণ শহরটা তার কারুকার্যমন্ডিত প্রবেশ তোরণ দিয়ে আমাকে স্বাগত জানিয়েছিলো। অপেক্ষা করি, ইশ! আবার যদি যেতে পারতাম এখানটাতে! আলী নামে একজন অমায়িক মানুষ আমাকে শহরটাতে পৌছে দিয়ছিলো। তার মহানুভবতা কখনোই ভোলার নয়। আমি নিশ্চিত আর কখনোই মানুষটার সাথে দেখা হবে না। যেখানেই থাকুক, মানুষটা ভালো থাকুক।



সিন্ধু নদ। প্রথম দেখাতে শিহরিত হয়েছিলাম। পৃথিবীর সবচাইতে প্রাচীন সভ্যতার একটির গর্বিত জনক সে। তার গুরুগম্ভীর পথচলা এখনো সমীহ জাগায়।



দ্যা গ্রেট হিমালয়।



এই ঝরনা থেকেই বিখ্যাত যমুনা নদীর সৃষ্টি। বিখ্যাত যমুনাত্রী গ্লেসিয়ারের বরফ গলা থেকেই তার সূচনা। পাশেই বিখ্যাত যমুনা মন্দির। হিন্দুদের বিখ্যাত তীরস্থান। তীর্থে আসা পূণ্যাথীরা এই ঝরনা থেকে বোতলে করে পানি সংগ্রহ করে। এখানেই রয়েছে ভীষন গরম পানির এক কুন্ড। যেখানে কাপড়ে চাল বেঁধে ভাত রান্না করে প্রসাদ হিসাবে গ্রহণ করা হয়। প্রকৃতির কি সৃষ্টি! একই সাথে বরফ গলা জল আর আগুন গরম পানি পাশাপাশি প্রবাহিত হয়।



ভুজবাসা নামে একটা জনপদ। জনসংখ্যা ৫০ জনের কম। পৃথিবীতে এরকম অসাধারণ জায়গার সংখ্যা মনেহয় খুবই কম। আল্লাহর রহমতে এখানে যাবার সৌভাগ্য হয়েছিলো।



চীরবাসা নামে অদ্ভুত অসাধারণ একটা জায়গা। কেউ কি বিশ্বাস করবে যে এই জনপদের বাসিন্দা মাত্র দু'জন!



তপোবন। চারপাশে শুধু আরো উচু সাদা পাহাড়। এখানে রঙ্গিন ঘাস, আর ধূসর হরিণ। ছোট এক নদী, নাম অমরগঙ্গা। শুধুমাত্র একজন সন্ন্যাসী এখানে তপস্যারত। চারপাশে আর কোন জনমানুষ নেই। সন্ন্যাসীর তপস্যার একটা অংশ হচ্ছে ১২ বছর ধরে তিনি কারো সাথে কথা বলবেন না। অথচ হো হো করে শব্দ তুলে প্রাণখোলা হাসিতে তিনি অতুলনীয়। তার হাসি সাদা পাহাড়গুলোতে অনবরত ধাক্কা খেতে থাকে।



প্রচন্ডভাবে শিহরিত হয়েছিলাম আমাদের প্রমত্তা পদ্মা নদীর উতপত্তিস্থল দেখে। গঙ্গোত্রী গ্লেসিয়ার থেকে ফোটা ফোটা বরফ গলে এই জলধারর সৃষ্টি। এখানে তিনি ভাগিরথি নামে পরিচিত। অনেকখানি পথ চলে দেবপ্রয়াগে এসে অলকানন্দার সাথে মিলিত হয়ে নাম নিয়েছেন গঙ্গা। সেই গঙ্গা প্রায় কয়েক হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের আগ মুহূর্তে হয়ে গেছে আমাদের প্রিয় পদ্মা।



তপোবনে একপাল পাহাড়ি বন্য প্রাণীর সাথে। আহ! কি অসাধারণ মুহূর্ত ছিলো সেটি!



গঙ্গোত্রীতে পাইনের আরালে লুকিয়ে থাকা এক হোটেল।


আমার জীবনে এখনো পর্যন্ত থাকা সবচেয়ে অসাধারণ লোকেশনের হোটেল। ছবিটি আমার হোটেল রুম থেকে তোলা। সদ্য জন্ম নেয়ে গঙ্গা নদীটি এখানে এসেই বাক নিয়েছে। এই জনপদটি মাত্র ৬ মাসের জন্য খোলা থাকে। তারপরেই শহরটি তল্পি-তল্পা গুটিয়ে প্রায় শ'কিলোমিটার দূরে চলে যায়।



প্রিয় শহর সিমলা। এখনো পর্যন্ত সেখানে তিনবার যাবার সৌভাগ্য হয়েছে।



গন্তব্য ওই দূরের সাদা পাহাড়। ওখানেই আছে বিখ্যাত কেদারনাথ মন্দির। আমার লক্ষ্য অবশ্য শুধুই হিমালয়।




তুঙ্গনাথ যাবার পথ। চোপতা বুগিয়াল থেকে চোখ ফিরিয়ে রাখা একেবারেই অসম্ভব।



গোধুলীর আলোতে চোপতা বুগিয়াল। চোখের পলকে তার রঙ বদলানোর খেলা।



কাশ্মীরের নীলম নদীটা তখন কেবল জমাট বাঁধা শুরু করেছিলো। রাতের বেলা ঐ কাঠের ঘরগুলো থেকে আলো যখন জমাট বাঁধা নদীতে পড়ে সে মুহূর্তটা নিজের জীবনের সবচেয়ে দামী সম্পদ মনে হয়।



মিরিকের চা বাগানে মেঘগুলো বড্ড বিরক্ত করে ছবি তোলার সময়।




কাশ্মীরে জমাট বাঁধা নদীতে একটা গাড়ি যেন লুকিয়ে আছে।




আকাশকে স্পর্শ করার প্রাণপণ চেষ্টারত দার্জিলিংয়ের পাইনগুলো।



চন্দশীলাতে সূর্যদয়ের আগ মুহূর্ত। পৃথিবীর সব সৌন্দর্য যেন এই সময়ে এইখানে এসে থমকে যায়!



কাশ্মীরের নীলম নদীটি তার সব সৌন্দর্য যেন ময়ুরের মতো পেখম মেলে দিয়ে আছে। নামের চাইতেও তিনি রূপবতী।


যদি আমাকে জিজ্ঞাসা করা হয় আমার দেখা হিমালয়ের সবচেয়ে অসাধারণ রূপটি কোথায়। একবারও না ভেবে আমি বলবো, অবশ্যই উত্তরাখন্ড।

অনেকগুলো ছবি হয়ে যাবার জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ১১:৫৬
২৩টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিব নারায়ণ দাস নামটাতেই কি আমাদের অ্যালার্জি?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৭


অভিমান কতোটা প্রকট হয় দেখেছিলাম শিবনারায়ণ দাসের কাছে গিয়ে।
.
গত বছরের জুন মাসের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে হঠাৎ মনে হলো যদি জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×