somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

শরিফুল ইসলাম (ফরহাদ)
জন্ম মৃত্যুর মাঝখানের সময়টাতেই আমাদের চাহিদা বেশি,সেটাই মূল্যহীন।nঅন্ধ মানবজাতি মূল্যহীন ইহকালের পথেই বেকুল।nআল্লাহ্ আমাদের নেক হেদায়েত দান করে,তার গোলামি করার তৌফিক দান করুক।আমিন।

সে অলুক্ষণে ছিলোনা

২৪ শে অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ১:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আবির আফরিন এর চিৎকার শুনে তার হাতে থাকা বইটা রেখে এক দৌড়ে রান্না ঘরে চলে আসলো।
আফরিন পেটে হাত দিয়ে মাথাটা নিচে দিয়ে বসে আছে। টপ টপ করে তার চোখের পানি পড়ছে। আবির কিছু বলার আগেই আফরিন বললো। আবির,আমার খুব খারাপ লাগতেছে লতা ভাবিকে একটু আসতে বলো।
আবির এক সেকেন্ডও দেরি না করে লতা ভাবিকে ডাকতে গেলো,লতার বাসা পাশে থাকাতে আবিরের সেখানে যেতে খুব বেশি সময় লাগেনি ২-৩ মিনিটের সময় লেগেছে।১০ মিনিটের ভিতরে আবির লতাকে নিয়ে বাসায় আসতেই আফরিনের অবস্থা ক্রমান্বয়ে খারাপ হতে থাকে।

লতা সবকিছু বুঝতে পেরে তাড়াতাড়ি আফরিনকে নিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাবার জন্য বললো।আবির ড্রাইভারকে গাড়ি বের করতে বলে আফরিনকে দু হাতে কোলে তুলে আস্তে করে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো।আবির এমন পরিস্থিতিতে আর কখনো পড়েনি।তাই সে লতাকে তাদের সঙ্গে যেতে বললো।লতা তার স্বামীকে সবকিছু জানিয়ে আবির আর আফরিনের সাথে দ্রুত হাসপাতালে চলে গেলো।

আবির খুব শক্ত ছেলে,খুব কম সময় আবিরের চোখ বেয়ে পানি পড়তো।আবির কখনো কাদঁতো না।আফরিনকে বুকে জড়িয়ে আজ আবিরের চোখ বেয়ে বেয়ে পানি পড়তে আরম্ভ করলো।

আবিরের ফোন থেকে তার বাবা মাকে লতা গোপনে কল দিয়ে সবকিছু বলে।


আবির তখন অনার্স ২য় বর্ষের ছাত্র।রকিব স্যারের বাসা থেকে প্রাইভেট পড়ে বের হয়ে ভার্সিটিতে প্রবেশ করার সময় গেইটেই সে প্রথম আফরিনকে দেখতে পায়।আবিরের কেন যেন হঠাৎ করেই মনে হলো।এত সুদর্শন মেয়ে সে এই ভার্সিটিতে আর দেখেনি।এক পলকেই আবির আফরিনকে পছন্দ করে ফেলে।পরে বিস্তারিত জানতে পারলো যে, সেদিনই ছিলো আফরিনের এই ভার্সিটিতে প্রথম দিন।সে ট্রান্সফার নিয়ে আসছে এখানে।আবির সবসময় আফরিনের পিছে আঠার মত লেগেই থাকতো।ধীরে ধীরে সে মনের কোণে সাহস জুগিয়ে এক পড়ন্ত বিকালে আফরিনকে প্রেম নিবেদন করে,আফরিন কিছু না বলেই চলে যায়।
আবিরের নানা পাগলামি দেখে আফরিন আবিরের প্রতি দুর্বল হয়, তাদের দুজনের প্রেম হয়।

আফরিন তার বাবার একমাত্র মেয়ে। বছর খানেক পরেই তার বাবা তাকে বিয়ে দিবার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে তখন তারা ৩য় বর্ষে পড়ে।আবির তাদের দুজনের কথা তার পরিবারে বলে।আবির তার বাবা মায়ের খুব আদরের সন্তান।আবিরের দেয়া প্রস্তাব নিয়ে পারিবারিকভাবে আবিরের বাবা মা আফরিনকে
দেখতে গিয়ে পচন্দ করে এবং তাদের দুজনকে অনার্স শেষ করার পর দুটো পরিবার বিয়ে দিবার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়।

আবির এবং আফরিন অনার্স শেষ করলে তাদের পরিবার তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে দেন।


আফরিন আদর আর যত্নে ভুলেই গিয়েছিলো যে,সে তার বাবা মাকে ছেড়ে চলে এসেছে স্বামীর বাড়ি।আবির কখনো কোন ছোট কারণেও আফরিনকে এতটুকু কষ্ট দেয়নি।আবির কখনো আফরিনকে কোন কটুক্তিকর কথা বলেনি।আবিরের কোন বোন ছিলোনা,আবিরের মা একটি মেয়ে যেন খুজেঁ পেলো আফরিনকে পেয়ে।

আবির এই পর্যন্ত দুইবার বাবা হতে গিয়ে দুইবারই সিজারে বাচ্চা মারা যায়।আফরিন হাউমাই করে কান্না করতো।আবির তাকে শান্তনা দিতো,বুকে ধরে আগলে রাখতো। সবসময় তার পাশে পাশে থাকতো যাতে আফরিন তার কষ্টগুলো ভুলে থাকতে পারে।


একদিন আবিরের মা তাকে ডেকে নিয়ে বলতে আরম্ভ করলো।
দেখ বাবা তোর বউয়ের দুই দুইবার সিজার হয়েছে বাচ্চাটা বাচাঁতে পারেনি।বাবা তুই আরেকটা বিয়ে কর।
আমাদের বংশ মর্যাদা বলে তো কিছু আছে।এমন একটা অলক্ষুণে মেয়ে ঘরে কেন এনেছিস।

আবির তার বাবা মাকে যতটুকু ভালবাসে আফরিনকে তার চেয়ে একটুও কম ভালবাসেনা।আফরিনকে বলা খারাপ কথাগুলো আবির হজম করতে পারেনি।আবির তার মায়ের সামনে টপ টপ করে চোখের পানিগুলো ছেড়ে দিলো।মা, আল্লাহর ইশারায় সবকিছু হয়,এখানে কারো কোন দোষ নেই।মা আমি আফরিনকে নিয়ে দূরে বাসা নিয়ে থাকবো,তারপরও তার নামে কুৎসিত কথাগুলো বলবেন না।আফরিন পর্দার আড়াল থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে তাদের কথাগুলো শুনেছিলো সেদিন।


পরদিন আবির জলভরা চোখ নিয়ে আফরিনকে নিয়৷ বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়।আবিরের বাবা মা অপরাধী হয়ে তাদের চলে যাওয়া দেখছিলো।

আবিরের মনের হাহাকারগুলো, বেদনার্ত হৃদয়ের আকুতিগুলো আফরিন অনুভব করতো।আফরিন গনকালো অন্ধকারে তার বুকে মাথা রেখে বলে আবির আমি তোমাকে বাবা ডাক শুনাতে চাই।আবির এসব কথার কোনো পাত্তা দিতোনা,কারণ আবির জানে আফরিন দুইবারের সিজার করা রোগি।

আফরিন অনেক কান্নাকাটি করে,জোর করে আবার মা হবার জন্য প্রস্তুত হয়।আজ আফরিনের অবস্থা খুব খারাপ আবির তাকে ইমারজেন্সিতে রেখে মনমরা হয়ে বসে আছে, বাইরে বসে সে আল্লাহকে ডাকছে।

আবির খানিক পরে একটু স্পর্শ পেয়ে মাথা তুলে দেখে তার মাথায় তার মায়ের হাত।আবির তার মাকে জড়িয়৷ কাঁদতে থাকে।

ঘন্টাখানেক পর একজন ডাক্তার ইমারজেন্সি থেকে বের হয়ে বললেন।আপনাদের একজন কন্যা সন্তান নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমেই ভুমিষ্ট হয়েছে বাবু সুস্থ ।তবে রোগির অবস্থা খুব একটা ভালো নয়।তার খুব রক্তক্ষরণ হচ্ছে।আপনারা আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।আপনারা কিছু এবি+ রক্তের ব্যবস্থা করে রাখেন,প্রয়োজনে লাগতে পারে।

আবিরের বাবা মা আবিরকে বুকে জড়িয়ে শান্তনা দিতে লাগলো।বাবা সব ঠিক হয়ে যাবে।ঘন্টা দুয়েক পর একজন নার্স ফুটফুটে একটা কন্যা সন্তান নিয়ে এগিয়ে আসলো আবিরের দিকে।লতা বাবুটিকে আবিরের কোলে তুলে দিলো।আফরিনের অবস্থা জানতেই নার্স চুপ করে রইলো,আবির চোখ তুলে তাকাতেই দেখলো দুজন নার্স সাদা কাপড়ে মুড়িয়ে একটি মরদেহ নিয়ে আসছে। একজন ডাক্তার বললো,আমরা তার রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে পারিনি।আমাদের ক্ষমা করবেন।


আবির তার বাবুটিকে মরদেহটির পাশে রেখে তার মাকে বললো দেখো মা তোমার নাতনিকে।তুমিনা একদিন বলেছিলে আফরিন অলক্ষুণে মেয়ে।মা আফরিন অলুক্ষণে মেয়ে ছিলোনা।

কথাটা বলতে বলতেই আবির হাসপাতালের মেঝেতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×