ছিয়ানব্বই গ্রাম-যশোরের দুঃখের অপর নাম। স্থায়ী জলাবদ্ধতার শিকার এ জনপদের মানুষের দুর্দশার শেষ নেই। মনুষ্যসৃষ্ট জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে কৃষি উৎপাদন নেই বললেই চলে। যেদিকে চোখ যায় শুধু পানি আর পানি। এরই মাঝে জনপদগুলোকে মনে হয় বিচ্ছিন্ন কোন দ্বিপ। তারই একটি সুন্দলি। যশোরের মণিরামপুর উপজেলার এই ইউনিয়ন পরিষদ ভবনটি যেন জনপদ থেকে আরো বিচ্ছিন্ন। সেখানে ধ্যানমগ্ন হয়ে কাজ করেছেন শিল্পীরা। রং আর তুলির আঁচড়ে ক্যানভাসে সাজিয়ে তুলেছেন মনের ভেতরের ভাবনাগুলোকে। এরা এসেছিলেন ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, মাগুরা, ঝিনাইদহসহ দেশের নানাপ্রান্ত থেকে। উদ্দেশ্য অনগ্রসর এই জনপদে একটি মিউজিয়াম গড়ে তোলা-নাম হবে ছিয়ানব্বই গ্রাম ফাইন আর্ট মিউজিয়াম। এর আওতায় থাকবে ওয়াল্ড ভিলেজ অব আর্ট। যার স্বপ্ন দেখতেন বিশ্বখ্যাত চিত্রকর এসএম সুলতান, জয়নুল আবেদীনরা।
ছিয়ানব্বই গ্রাম ফাইন আর্ট মিউজিয়ামের অন্যতম স্বপ্নদ্রষ্টা চিত্রকর ও ভাস্কর জাহিদুল ইসলাম জীবনের ভাষায়-‘দেশের মানচিত্রে ছিয়ানব্বই গ্রাম অসহায় মানুষের জনপদ হিসেবে পরিচিত। স্থানীয় মানুষের দুঃখ-দুর্দশার কথা দেশবাসীর জানা। কিন্তু, পরিবেশ ও ভূগোলকে ঠিক রেখে এখানে এমন একটা কিছু করা যায়, যার সাথে উৎপানের সম্পর্ক থাকবে। এখানকার বিশাল ও বিস্তৃত অঞ্চল নিয়ে এমন কিছু কাজ করা যার মাধ্যমে এই জনপদটি হয়ে উঠবে দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় একটি পর্যটন কেন্দ্র’।
ছিয়ানব্বই গ্রাম ফাইন আর্ট মিউজিয়ামের পরিকল্পনা এমনই একটা ভাবনা থেকে উদয় হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘শিল্পীদের একটা শ্বাসত ও চিরায়ত স্বপ্ন হচ্ছে প্র্রাতিষ্ঠানিকতার বাইরে যেয়ে শিল্প বিকাশের এমন একটা ক্ষেত্র তৈরি করা যেখানে কোনো বাধাধরা নিয়ম থাকবে না। যে যার ভাবনাকে বাস্তবে রূপায়িত করতে প্রকৃতির বিশালতার সাহচার্য লাভ করবে। আর্ট ভিলেজ এমনই একটা ক্ষেত্র। ইউরোপ, আমেরিকা, এশিয়ার চীন, ইন্দোনেশিয়াসহ পৃথিবীর কয়েকটি দেশে এরকম আর্ট ভিলেজ রয়েছে। এমনকী পাশ্ববর্তী ভারতের শান্তিনিকেতনও শিল্পীদের প্রতিভা বিকাশের অবারিত ক্ষেত্র। আমাদের দেশের এসএম সুলতান, জয়নুল আবেদীনরা এসব ভাবনা করতে করতে পৃথিবী ত্যাগ করেছেন। তাদের উত্তরসূরি হিসেবে আমরা ছিয়ানব্বই গ্রাম ফাইন আর্ট মিউজিয়ামের আওতায় ওয়াল্ড ভিলেজ অব আর্ট গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছি’।
আয়োজকরা জানান, ওয়াল্ড ভিলেজ অব আর্ট গড়ে উঠবে সুন্দলী ইউনিয়নের প্রায় দশ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। যার মধ্যে ২০টি গ্রাম অবস্থিত। পুরো এলাকাই হবে আর্ট গ্যালারি। এখানে কেউ প্রবেশ করলেই বুঝতে পারবে এটা একটা শিল্পক্ষেত্র। গ্রামের ফাকা মাঠে স্থাপিত হবে বড় বড় সব ভাস্কর্য। যা দূর থেকেও যেকারো নজর কাড়তে সক্ষম হবে। শিল্পীদের এখানে এসে কাজ করতে থাকবে না কোনো বাধাধরা নিয়ম। সকলে তার মত করেই প্রকৃতির সাথে মিশে প্রতিভার বিচ্ছুরণ ঘটানোর সুযোগ লাভ করবে। যারা আসবেন সকলেই হবেন এই ভিলেজের সদস্য। যে যার মত ইচ্ছা করে তৈরি করে নেবেন গ্যালারি। হবে নিয়মিত প্রদর্শনী। মিউজিয়ামে প্রবেশাধিকারের জন্য টিকেট ছাড়া ভিলেজের শিল্পকর্ম উপভোগ করতে দর্শনার্থীদের কোনো টিকেট লাগবে না।
স্থানীয় আয়োজক অনুপ চন্ডাল জানান, ছিয়ানব্বই গ্রাম ফাইন আর্ট মিউজিয়াম এবং ওয়াল্ড ভিলেজ অব আর্ট গড়ে তুলতে জায়গা দিয়েছেন এলাকার সাধারণ মানুষ। চিত্রকলা ছাড়াও শিল্প-সাহিত্যের আরো যেসব শাখা যেমন নৃত্যশিল্প, সাহিত্য, সংগীত, ভাস্কর্য, নাট্যকলার মানুষেরাও প্রকৃতি আর মানুষের সাথে মিলেমিশে জ্ঞানের বিকাশ সাধনের সুযোগ লাভ করতে পারবেন এই ভিলেজে। সেজন্যও আলাদা প্রস্ততি নেয়া হচ্ছে।
প্রায় চার বছর আগের ভাবনাকে বাস্তবে রূপায়িত করার প্রস্ততি হিসেবে ২ অক্টোবর থেকে এখানে শুরু হয় প্রথম আর্ট ক্যাম্প। বৃহস্পতিবার বিকেলে যশোরের জেলা প্রশাসক মো. মোস্তাফিজুর রহমানের উপস্থিতিতে ক্যাম্পের সমাপনী অনুষ্ঠিত হয়। গাঁটের টাকা খরচ করে ক্যাম্পো যোগ দিয়েছিলেন ৫০ জন শিল্পী। প্রতিদিনই কোন না কোন শিল্পী এসেছেন, কাজ করে ফিরেও গেছেন কেউ কেউ। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তার পরিষদের কক্ষ খুলে দিয়েছিলেন শিল্পীদের জন্য। এখানেই থাকা আর নিজেদের টাকায় খেয়েছেন তারা। দিনরাত অকান্ত পরিশ্রম করে প্রথম ক্যাম্পটি সফল করে ফিরে গেছেন। যার পথ ধরে দেশের নানা প্রান্তে আরো অসংখ্য ক্যাম্প করা হবে। আস্তে আস্তে গড়ে উঠবে কাঙ্খিত ওয়াল্ড ভিলেজ অব আর্ট।
শিল্পের গ্রাম তৈরিতে চিত্রকরদের ঢল নেমেছিল সুন্দলীতে
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন
হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...
হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন
'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন
হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?
হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?
হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন
হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!
হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।