somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঈদ মোবারক ঈদ

২৫ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ৯:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঈদে বাড়ি ফিরতে না ফিরেতই কাকু শোনালেন, তোমাকে নিয়ে আমাদের অনেক প্রত্যাশা। ভালো কিছু কর, তারাতারি কর। আমি কেবল শুনে যাই।


বিকেলে আরেক কাকা ডেকে নিয়ে গেলেন চাচী আমাকে দেখবে বলে। তাদের বিয়ের ১৪ বছর পর চাচীর সাথে প্রথম পরিচয় (তারা বছরে যে কোন একটা ঈদে বাড়ি আসেন। আমি বহুবছর কোন ঈদেই যাইনি)। কাকা বললেন, ও (চাচী) ফেসবুকে তোর সেমিনারের নিউজ পড়ছিল। আমি দেখে বললাম, তুমি কি চেন সে কে। চাচী না বললে, কাকা বলে, ও আমাদের ছেলে। বাড়ি আসার পর থেকেই চাচী বারবার কাকাকে বলছে সেই ছেলেকে দেখবে।


ঈদ শেষ। পর দিন সকালে চুপি চুপি বের হলাম ঢাকায় আসব বলে। চাচাতো ভাইরা সব খাসি জবাই করে গোল হয়ে বসে আছে। তাদের সামনে ধরা দেব না বলে আমি দ্রুত পায়ে হাঁটি। এক ভাতিজা চিল্লান দেয় মেহেদী কাকা চলে যাচ্ছে। চাচী দৗড়ে এসে রাস্তার মাঝখানে জড়িয়ে ধরেন। চাচীকে না দেখে কোথায় চলে যাচ্ছ বাবা (দেশে ফেরার পর তার সাথে প্রথম দেখা)। কতোবছর পর তরে দেখছি বলতো বলে কেঁদে ফেলেন তিনি। আমি তাকে জড়িয়ে ধরে চাচী, চাচী বলি। টেনে বাড়িতে নিয়ে আসেন, একটা চেয়ারে বসান। ভাবীরা ঘিরে ধরে। একজন চিল্লায়, মানুষ এতো সীমার হয় কি করে। কি করে হয়, হে। সামনে দিয়ে চলে যাচ্ছ, একটু না বলে। বড় হলে বুঝি ছেলেরা এমনই হয়। হে,,, আমি হাসি। ভাবিদের অনেকেই আমার মতো অতিথি। বছরে একবার কি দুইবার শ্বশুর বাড়িতে আসেন বেড়াতে।


এবার আমি উঠি। চাচার বাড়ি থেকে নিজের বাড়ি আর ফিরে যাইনা। ঢাকার পথ ধরি। আসতে আসতে আম্মার মুখটা মনে পড়ে। আমার বোকা মা। ঈদের দিন সন্ধ্যায় বিদ্যুৎ চলে গেলে তিনি একটা হাত পাখা নিয়ে আসেন আমার সামনে। আমি ধমকাই এইটুকু গরমে আমার কিছু হয় না। আপনার রুমে যান। তিনি বাতাস করতে করতে আলাপ জমানোর চেষ্টা করেন। অমুকের ছেলে বিয়ে করেছে, তমুকের মেয়ের ঘরে আর একটা বাচ্চা হয়েছে। আমি শুধু শুনি।
কথায় কথায় জানতে চান, একটা সরকারী চাকরি কি পাওয়া যায় না! আমি আবারও হাসি। আম্মা কি বুঝতে পারে আমার হাসির অর্থ? মনে হয় না। তবে আমি ঠিকই বুঝি, বাতাস করার ছলে তিনি ছেলের সাথে আরও কিছুক্ষণ গল্প করতে চান। আরও কিছু কথা হয়তো বলতে চান। বুড়া মায়ের দু:খ দুর্দশরা কথা, সুখের কথা। তার অন্য ছেলেমেয়েদের কথা। অসুস্থ আব্বা কিছু বলেন না আজকাল, আগেও খুব একটা বলতেন না। আব্বারটা-আম্মারটা, দুটাই আম্মা বলেন।


আমি যতবার গ্রামে ফিরি ততবারই নষ্টালজিয়া পেয়ে বসে, ভাবি যদি থেকে যেতে পারতাম চির জীবনের জন্য! আবার ঠিকই সব কিছুকে পেছনে ফেলে ফিরে আসি মিথ্যে কথার জঞ্জালে ভরা ঢাকা শহরে। যে শহর সকাল-সন্ধ্যা খাটুনির বিনিময়ে আমাকে দু’বেলা খেতে দেয়। কাজে এক আনা ছোট ভুল হলে ১৬ আনা বড় বড় কথা শোনায়। তবু আমি এই শহরের ছুটে আসি। কেউ কি কোনদিন জানবে, হৃদয়টা রেখে আসি কুমিল্লার আড়ালিয়া নামক গ্রামটাতে। মায়ের আঁচলে, চাচীর আদরে আর ভাবিদের খুঁনসুটিতে ভরা প্যান্ডোরার বাক্সে। বিধি তুমি কি বলতে পার, আর কোনদিন, কোনভাবে কি ফেরা হবে সেই গ্রামে? যেখানে আমার জন্মের খবর শুনে দৌড়ে গিয়ে আজান দিয়েছিল জেঠা। হবে কি ফেরা? সেই মানুষদের কাছে, যারা রিকশায় চড়লে ভাড়া নিতে চায় না, হেসে বলে বছরে দুয়েকটা মাত্র দিন পাই তোমারে। কিসের ভাড়া, যাও যাও। যে গ্রামে এমন সব মানুষ থাকে যারা আমার অসুস্থতার খবর শুনলে রোজা রাখে। আমি কি আর কোনদিন তাদেরই একজন হয়ে ফিরতে পারব? শুধু একটা দিনের জন্য তাদের কাছে ছোট্টবেলাকার তাদের সেই ছোট্ট ছেলেটি হয়ে! সেই ছেলেটি, যেই ছেলেটিকে তারা শিক্ষা নামক অসভ্যতার মেলায় হারিয়ে ফেলেছিল যুগেরও বেশি সময় আগে। যেই ছেলেটি বাজারি মানুষ হওয়ার প্রতিযোগিতায় জিতবে বলে মনুষত্ব্য বিকিয়ে দিয়েছে পানির দরে।

মাত্র একটা দিনের জন্য হবে কি আর ফেরা তার? মাত্র একটা দিন!

সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা। জগতের সকল প্রাণীর মঙ্গল হোক।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ৯:৩৯
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×