somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বনলতার খোঁজে বরিশালে মহারাজা

২১ শে জুলাই, ২০২১ বিকাল ৫:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
রাজাকে চিঠি লিখে বনলতা জানতে চেয়েছিল-কেমন আছো গ্যাদু? আবেগে গদগদ রাজা ‘ভালো আছে’ জানাতে স্বয়ং নিজে বরিশালে এসে উপস্থিত।



তপ্ত দুপুরে আঁকাবাঁকা পথ ধরে হাঁটছেন তিনি। মধ্যবয়সী এক মহিলা রাজাকে হাঁকায়-তুমি ক্যাডা ল্যাদু? ল্যাদু মেনা লেদাইন্না! রাজাকে ল্যাদু, রাজাকে! রাজা রাগতে গিয়েও রাগেন না। নিচু স্বরে উত্তর দেন-আমি মহারাজা। এই অঞ্চলের রাজাধিরাজ।

মহিলা রাজার দিকে তাকায়। তারপর বলে, এই উট দুইডা লইয়া আমার পেছে পেছে আইও। রাজা বিস্ফারিত নয়নে উটের দিকে তাকান। কি হলো এই দেশের মানুষের! হাসরে বলে উট। হাসদ্বয় রাজাকে দেখে গলা উঁচিয়ে পেকপেক শুরু করে। হাসদের এই সাহস রাজার ভালোলাগে। মানুষ হলে নিচু গলায় জ্বি জ্বি করত। চামচামি, চামবাজি মানুষের স্বভাব, পশুর না। রাজা তাদের হাতে তুলে নিলে হাসেরা সহোৎসাহে রাজার হাতে লেদায়। তবু রাজা মাইন্ড করে না। হাসদের মাথায় হাত বুলাতে মন চায় তার। আজ আর তাকে কেউ ন্যাংটু বলেনি, কেউ অন্তত মাঝি বলে ডাকেনি। তিনি দেশের চলমান সংকট নিয়ে ভাবতে ভাবতে আনমনা হয়ে যান।

রাজা এখন পুকুরের পাড় ধরে হাঁটছে। আলপথের মতো পাড়ের আরেক পাশে সবুজ ধানক্ষেত। পানি দেখে হাসেরা আরও জোরে পেকপেক শুরু করে। দুইটার একটা ডানা ঝাঁপটায়, তারপর আরও জুড়ে পেকপেকাতে পেকপেকাতে লাফ মারে। আরেকটা রাজাকে কামড় বসায়-ঠোকর ঠোকর খেলা যাকে বলে। রাজা তাল সামলাতে না পেরে পানিতে পড়ে যায়। সেই হাসওয়ালী মহিলা পিছিয়ে এসে রাজাকে কলার ধরে টেনে তুলে। তারপর কটমট কটমট করে রাগী চোখে সোধায়-পাগল ছাগলের জ্বালায় আর এই দেশে থাহা যাবে না। রাজাকে বলে ছাগল।রাজা নিতে পারে না।তার হৃদয় ভেঙে যায়।

এই মহিলার জানার কথা না, রাজা কেন আজ বরিশালে পথের বিবাগী। বনলতাকে ‘ভালোবাসি’ বলতে এই শহরে ছুটে এসেছেন রাজা। কিন্তু লতা কোথায়? কোন পাতায়, কার সাথে জড়িয়ে আছে কে জানে? না জানি জীবনানন্দের বউ, লাবণ্যের সাথে ঝগড়া শুরু করে দিয়েছে। সে কি নাটোর না গিয়ে এখানে এসে ভুল করল! অবশ্য রাজা শুনেছে, বনলতা ঝগড়া করার মেয়ে না। সে কেবল হাসায়, ভালোবাসায় ভাসায়। মোহময়ী বনলতা খালি মায়ার বাঁধনে বাঁধে।

মোনালিসার মতো টুল পড়া হাসি হাসে বনলতা। সে এমন এক হাসি যে হাসিতে জীবনানন্দের মতো গভীর জলের ভাবুক কুপোকাত। সেখানেতো রাজা কিছু না। আমাদের রাজার মন হলো পদ্ম পাতার জলের মতো। মেয়ে মানুষের ছায়া দেখলেই গলতে শুরু করে। তবু তার চরিত্র আমাদের দেশের কবিদের মতো বেশ্যা চরিত্রের না। রাজার কাছে কবিতার মানে শুধু কামরস না। রাজা প্রেমিক যেমন, তেমন বিদ্রোহী। আজকালকার হক-বালদের না থাকলে কি হবে, তবু রুচি বলে একটা বিষয় থেকে যায়। মানুষ এখনো আত্মসম্মানের কথা চিন্তা করে।

সে যাইহোক, আমাদের রাজা পিকাসো হলে, মোনালিসার মতো বোনালিসা তৈরি করতেন। মানে বরিশালের মোনালিসা। অবশ্য রাজার বোনালিসা হতো ন্যাংটা। কাপড়-চোপর দিয়ে ঢেকে রেখে সৌন্দর্য্য দেখা থেকে মানুষকে বঞ্চিত করার কোন মানে হয় না। রাজা সেটা করতেও চায় না। তাই শীতকালে রাজা পরনের লুঙ্গি খুলে মাথায় বেঁধে হাঁটে। গরমে সেই লুঙ্গি দিয়ে নিজেই নিজের নিচে বাতাস করে। আমাদের শাসকদের সাথে মহারাজার বড্ড মিল। তারা মশা মারতে ঢাকা শহরে ব্যাঙ ছাড়ে, ব্যাঙের লালন-পালন দেখতে দলবল-সহ বিদেশ ভ্রমণ করে, তারপর ব্যাঙ নিধনের জন্য সাপ কেনার পরিকল্পনা করে দুই হাজার কোটি টকার আপ্যায়ন বিল নেয়, কোন সাপ কিনবে তা ঠিক করতে সুইজারল্যান্ডে বিশেষ কর্মশালার আয়োজন করে, সাপগুলোরে ট্রেইনিং দিতে চাইনিজ ভাড়া করে আনে, এতে ভারতীয়রা ক্ষীপ্ত হলে তাদের আস্ত নদীতে বালুর বস্তা ফেলে রাস্তা তৈরি করে দিয়ে দাঁত কেলিয়ে হাসে। সে সব কথা থাক, এসব রাজা গল্পে গল্পে বলবে। তার গল্পের নাম হবে-ফগার মেশিন!

এখন কথা হলো, সেই মহিলার সাথে আর টেকা যায় না। মুখে কোনো মায়া নেই, কথায় কোনো শ্রী নেই। রাজা তার হাঁস তার হাতে তুলে দিয়ে পাগলা হাঁটা দেয়। এক হাঁটায় কীর্তনখোলার তীরে। কী মায়ময় মায়াবী নদী। যেন মায়ার পর্দা দুলে দুলে উঠে। এখানে এসে রাজা মশাই গানে টান দেয়-ও নদীরে, একটি কথা শুধাই শুধু তোমারে |
বলো কোথায় তোমার দেশ
তোমার নেই কি চলার শেষ! ও নদীরে…

সূর্য অস্ত যাচ্ছে। নদীর জলে সূর্যরা যেন লুটোপুটি খায়। মাঝিদের আবছায়া মাছ ধরায় ব্যস্ত। রাজা মুগ্ধ নয়নে এসব দৃশ্য উপভোগ করে। কখন সন্ধ্যা গড়িয়েছে সে খেয়াল তার নেই। চারদিকে নিকষ কালো অন্ধকার নেমে আসছে।ঝিঁঝিঁ পোকারা ঝিঁঝিঁ করছে। রাজার মন রোমান্সের ঠেলায় নেচে উঠে।

ওমা রাজার সামনে এ কে! এতো বোনালিসা! রাজা তোতলায়। চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,/ মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য। রাজা মহাশয় তালগোল পাকিয়ে ফেলে। তিনি আর নিতে পারেন না। এই অন্ধকারে এমন দূরে থাকা, বড্ড বেমানান। খপ করে বোনালিসার হাতটা ধরে ফেলেন। বোনালিসা বাধা দেয় না, উল্টো লায় দেওয়ার হাসি হাসে। বলে-যা দুষ্ট। কেউ দেখে ফেললে।

রাজাকে কে দেখবে, এইখানে যা যা আছে সবইতো রাজার। রাজাকে লোকজন কথায় কথায় কেন ছোট করে রাজা বুঝতে পারনে না। অথচ তিনি রাজা। মি. মহারাজা। এবার বোনালিসা নিজেই রাজার আরেকটু কাছে আসে। আসতে আসতে লতায় যেমন গাছে পেচায় তেমনি পেচিয়ে ধরে। উত্তেজিত রাজা আবেগে চোখ মেলতে পারে না। কেউ জানে না, আমাদের রাজা বেলাজ না। নারীরা খোলা শুরু করলে রাজা আর তাকাতে পারে না।

হায়! বিঁধি বাম। ভালোবাসায় বল্লমের হুল। আহ্লাদি রাজা প্রাণপনে ছোটার চেষ্টা করছে, পারে না। মনে হয় দুটি সাপ তার পা পেচিয়ে ধরেছে। অন্তত ঝাঁপ দিয়ে নদীতে পরতে পারলে বাঁচা যেত। ঝাড়ুর পেটা যে এত মারাত্মক রাজার জানা ছিল না। সেই হাঁসওয়ালী, হাঁসফাঁস করা ভদ্র মহিলা, দেব-দেবীর নাম জপার মতো করে রাজাকে গালাচ্ছে আর ঝাড়ুপেটা করছে। গোলামের পুত, আর কারো মাইয়া খুজেঁ পাস নাই, লাইন মারতে। আমার বাচ্চা মাইয়াডারে ভুলাইয়া-ভালাইয়া নিয়া আইছস, এইহানে। তোর পিরীতির সখ আজ ছুডামু… গোলামের পুত…

রাজা সজোরে দৌড়ায়, হাঁসওয়ালী, হাঁসফাঁসওালী রাজার পিছে পিছে…মহিলাকে দেখে গায়ের ছেলেরাও ন্যাংটুরে ধর ধর বলে রাজার পিছু নেয়।
দুষ্টু ছেলেদের কেউ কেউ স্লোগান দেয়- দড়ি ধরে মার টান/রাজা হবে খান খান...

সিরিজ: মহারাজার মহাভ্রমণ
পর্ব-১৩
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুলাই, ২০২১ বিকাল ৫:৫৬
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেনারসী রঙে সাজিয়ে দিলাম চায়ের আসর=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫২



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনে কি পড়ে সেই স্মৃতিময় সময়, সেই লাজুক লাজুক দিন,
যেদিন তুমি আমি ভেবেছিলাম এ আমাদের সুদিন,
আহা খয়েরী চা রঙা টিপ কপালে, বউ সাজানো ক্ষণ,
এমন রঙবাহারী আসর,সাজিয়েছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজ্ঞানময় গ্রন্থ!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪২

একটু আগে জনৈক ব্লগারের একটি পোস্টে কমেন্ট করেছিলাম, কমেন্ট করার পর দেখি বেশ বড় একটি কমেন্ট হয়ে গেছে, তাই ভাবলাম জনস্বার্থে কমেন্ট'টি পোস্ট আকারে শেয়ার করি :-P । তাছাড়া বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

অস্ট্রেলিয়ার গল্প ২০২৪-৪

লিখেছেন শায়মা, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৫


চলে যাবার দিন ঘনিয়ে আসছিলো। ফুরিয়ে আসছিলো ছুটি। ছোট থেকেই দুদিনের জন্য কোথাও গেলেও ফিরে আসার সময় মানে বিদায় বেলা আমার কাছে বড়ই বেদনাদায়ক। সেদিন চ্যাটসউডের স্ট্রিট ফুড... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×