somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

“এমন গনতন্ত্রকে ধিক্কার জানাই”

০২ রা মে, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

“যেসব গনতন্ত্রে আমার ছোট্ট বোনটির ক্ষুধার কান্না স্থম্ভিত হয় দূর্নীতিবাজদের কুত্তা টমিকে কুকী খাওয়ানোতে, সেসব গনতন্ত্রকে আমি ধিক্কার জানাই”।

পোস্টের শিরনাম দেখে হয়তো অনেকেই এসি রুমে বসে, হাই কনফিগারের ল্যাপটপে অথবা i-ফোন-5, গ্যালাক্সি S-3/S-4 এর স্ক্রিনে চোখ রেখে, গরম অথবা ঠান্ডা কফিতে চুমুক দিয়ে আমার প্রতি লাল-রক্ত চোখে তাকিয়ে পোস্টে গালি দিয়ে হানিকৃত গনতন্ত্রের মান ফিরাতে উন্মুখ হয়ে আছেন। এই পোস্টটি হয়তো এখনই মুছে দেওয়া হবে আথবা আমাকে চিরতরে ব্যান্ডও করা হতে পারে। কিন্তু এই আমি বাংলাদেশের এক সাধারন ছেলে এমনই এক হতভাগ্য পরিস্থিতিতে উপনীত হয়েছি যে এর চেয়ে ভদ্র ভাষার শিরনাম আমি আর পেলাম না।

আমার এই লেখা পড়ে আপনারা হয়তো আমাকে নব্য-রাজাকার বলতেও দ্বিধা করবেন না যদিও মুক্তিযুদ্ধে আমার পূর্বপুরুষের রক্ত আর নারীদের ইজ্জতের গর্ব আমি করবোনা । কারন আমি জানি, আমি, আপনি আমরা সবাই এমনই এক গনতন্ত্রের বীষ বাতাসে বেড়ে উঠছি ।

• আমি এমনই এক গনতন্ত্রের মাঝে বেড়ে উঠেছি, যে গনতন্ত্রে আমার বাসায় নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। বাজারের উচ্ছিষ্ট পোকায় খাওয়া, আধা-পচা, তরকারী আর মাছ বাছতে হয় সাধ্যের মধ্যে কেনার জন্য। মাংস আর বড় মাছের স্বপ্ন সারা জীবন স্বপ্নই থেকে যায়। দু-কেজি মানে মাত্র স্বল্পমূল্যের কাঁকর ভরা চাল কিনতে আমাকে অথবা আমার মাকে এই কাঠ ফাটা রোদে পুড়ে আর বৃষ্টিতে ভিজে লাইন ধরতে হয়। জিহ্বাতে পোলাও-কোরমার স্বাদ পাই একমাত্র ঈদের সময়, যখন মা অন্যের বাসায় কাজ করে সামান্য যা উচ্ছিষ্ট পায় নিয়ে আসে আমাদের জন্য।

- অন্যদিকে একশ্রেণীর নির্লজ্জ অসাধু বিত্তবান দুর্নীতিবাজ চোরদের টেবিলে থরে থরে সাজানো থাকে কোরমা, পোলাও, মাংশ, কাচ্চি, কাবাব, হরেক রকম বড় মাছের ভূনা আর ভাজি, দই, মিষ্টি আরো কত কী। তাতে আমার সামান্যটুকুও আফসোস নেই, কারন আমি এমনই এক গনতন্ত্রের বীষ বাতাসে বেড়ে উঠেছি।


• আমি এমনই এক গনতন্ত্রের বীষ পানি খেয়েছি, যেখানে রেললাইনের ধারে আর পরিত্যক্ত পঁচা ডোবার উপর মাচা করে পলেথিনের সামান্য ছাউনি দিতে হয় মাথা গোঁজার জন্য। সেখান থেকেও মাঝে মাঝে উঠিয়ে দেওয়া হয় উচ্ছেদ অভিযান করে। সামান্য ছোট্ট দু-রুমের ভাড়া দিতে আমার বাবার সামান্য বেতনের বড় অংশটাই চলে যায়। জীর্ণ টিনের ফুটো দিয়ে হঠাত রাতে বৃষ্টির পানিতে ভেজার স্বাদ পাই আমরা।

- অন্যদিকে একশ্রেণীর বেহায়া অসাধু বিত্তবান দুর্নীতিবাজ চোরদের দেশে-বিদেশে এসি, টাইলসযুক্ত বহুতল বিলাস-ভবন একের পর এক বাড়তেই থাকে।এত্ত টাকার উতস কোথায় ? তাতেও আমার সামান্যটুকুও আফসোস নেই, কারন আমি এমনই এক গনতন্ত্রের বীষ পানি পান করে বেড়ে উঠেছি।



• আমি এমনই এক গনতন্ত্রের বুকে মাথা রেখেছি, যেখানে আমার অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধা বাবা বীনা-চিকিতসায় ঘরে ধুকছে। অসুস্থ মা আমার পড়ে আছে ডাক্তার ও ঔষধ বিহীন হাসপাতালের নোংড়া মেঝেতে। ডাক্তারদের চেম্বারে তাদের লোভের ঔষধ কোম্পানির পার্সেন্টেজের বলি হয়ে জমি-জমা বেচে নি:স হতে হচ্ছে অহরহ।


- অন্যদিকে একশ্রেণীর বেসরম অসাধু বিত্তবান দুর্নীতিবাজ চোররা সামান্য অসুখেও লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করে চিকিতসা করাচ্ছে গরিবের জন্য স্বপ্ন স্বরূপ, আধুনিক ডাকাত শ্রেণীর বেসরকারী হাসপাতালে ও বিদেশে। এত্ত টাকা আসে কোথা থেকে ? তাতেও আমার সামান্যটুকুও আফসোস নেই, কারন আমি এমনই এক গনতন্ত্রের বীষ বাদ্য শুনে বেড়ে উঠেছি।



• আমি এমনই এক গনতন্ত্র দেখছি, যেখানে আমি পড়ালেখা শেষ করেও পাইনি কর্মসংস্থান। তা হাজারো রাজনীতি, দূর্নীতি আর কোঠায় পরিপূর্ণ। প্রাইভেট চাকুরীও নেই “হ্যালো” করার লোকের অভাবে। রাজনীতির নেতা আর অসদ টাকা না থাকায় বাবার চাকুকীতে হয়নি প্রমশন। মায়ের পেনশনের টাকার ফাইলটা এখনও আটকে আছে ঘুষের অভাবে।


- অন্যদিকে একশ্রেণীর বেলাজ অসাধু বিত্তবান দুর্নীতিবাজ চোররা প্রচুর টাকার বিনিময়ে বেচাকেনা করছে চাকুরী আর প্রমশন। সব রকম ফাইল তীরের বেগে ছুটছে এক টেবিল থেকে আর এক টেবিলে ঘুষের টাকায়।তাতেও আমার সামান্যটুকুও আফসোস নেই, কারন আমি এমনই এক গনতন্ত্র দেখে বেড়ে উঠেছি।


• আমি এমনই এক গনতন্ত্রের স্পর্শে শিহরিত, যেখানে আমার নির্দোষ ভাই রাস্তার ধারে সবার সামনে দিনের আলোতে খুন হয় চাপাতি আর রামদার আঘাতে। আমার বোনের ইজ্জত দিবালোকে উন্মুক্ত আর ভূলুন্ঠিত হয়, আবার মেনে নিতে হয় পৈশাচিক মৃত্যু আর অপরাধী নর-কীটদের জয়োল্লাস।


- অন্যদিকে একশ্রেণীর বেকুব অসাধু বিত্তবান দুর্নীতিবাজ চোররা আর তাদের চামুচেরা এসব অন্যায় নর-কীটের কাজ করেও পার পেয়ে যাচ্ছে রাজনীতি, টাকা আর ক্ষমতার খেলায়। তাতেও আমার সামান্যটুকুও আফসোস নেই, কারন আমি এমনই এক গনতন্ত্রের স্পর্শে বেড়ে উঠেছি।



• আমি এমনই এক গনতন্ত্রের গন্ধে গন্ধিত, যেখানে আমি, আমার বেকার ভাই-বোনেরা নি:স শেয়ার বাজার আর ডেসটিনি নামক অসংখ্য মরন ফাঁদে। মাথা কুটে মরে গেলেও আমরা পাইনা এক টাকা লোন স্বনির্ভরতার জন্য।

- অন্যদিকে একশ্রেণীর বেহুদ্দা অসাধু বিত্তবান দুর্নীতিবাজ চোররা শেয়ার বাজার, ডেসটিনি, হল-মার্ক, পদ্মা-সেতু দূর্নীতি করে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে পাচার করছে বিদেশের মাটিতে, আর করার পায়তারা চালিয়েই যাচ্ছে। তাতেও আমার সামান্যটুকুও আফসোস নেই, কারন আমি এমনই এক গনতন্ত্রের গন্ধে বেড়ে উঠেছি।


আমি আর কিছুতেই সামান্যতমও আফসোস করি না্, কারন, “আমি এমন গনতন্ত্রকে ধিক্কার জানাই”।

আমি আরো ধিক্কার জানাই সেসব গনতন্ত্রে, যেসব গনতন্ত্র আমার মৌলিক পাঁচটি অধিকার (অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিতসা) পূরন করতে পারে না নিজেদের দূর্নীতির কালো থাবা চরিতার্থে। যেসব গনতন্ত্র আমার ভায়ের মুখের দাঁড়ি ধরে তার বুকে গুলি করতে দ্বিধা না করে করে জয়োল্লাস। যেসব গনতন্ত্রে আমার ছোট্ট বোনটির ক্ষুধার কান্না স্থম্ভিত হয় দূর্নীতিবাজদের কুত্তা টমিকে কুকী খাওয়ানোতে। যেসব গনতন্ত্রে আমার রিকশাচালক মুক্তিযোদ্ধা বাবার পরিশ্রমের ঘামে চলা চার চাকার দামি গাড়িতে আমার দেশের লাল সবুজের পতাকা লাগিয়ে এসির হাওয়া খায় ৭১ এর যুদ্ধাপরাধীরা। রোদে পুড়ে শ্রমিক ভাইদের টাকায় আয়েশের ঢেকুর তোলে আর বড় বড় লেকচার দেয় দূর্নীতিবাজ কালো বেড়ালরা।


আমি এমন গনতন্ত্রকে ধিক্কার জানাই আর জানাতেই থাকবো, যেভাবে আমার বোন “রানা প্লাজায়” দূর্নীতিবাজ কাল নর-কীটদের চাপায় পিষ্ট হয়ে মারা গিয়েও পুরো জাতিকে পা দেখিয়ে ধিক্কার দিয়ে গেল বুকে অনেক বেদনা নিয়ে।


জননেত্রী হোন আর দেশনেত্রী হোন এখনও সময় আছে সাধারন জনগনের প্রত্যাশার প্রতি নজর দিন এবং আপনাদের চামুচদের গলায় রসি পরান, নইলে দেখবেন একসময় পুরো জাতি আমার মত এমন সব গনতন্ত্রকে ধিক্কার জানাচ্ছে। সেদিন আর খুব বেশি দূরে নয়।

আমার লিখা পূর্বের আণুবীক্ষণিক গল্প সমূহ :
১।অনাবৃতা পরিণীতা একটি ফুল । ( আণুবীক্ষণিক গল্প – ০১ )
২।বিছানায় একটি কোল-বালিশ ( আণুবীক্ষণিক গল্প – ০২ )



সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মে, ২০১৩ বিকাল ৩:৩১
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×