somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মরা চাঁদের আলো

১০ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ৩:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


দিন-১ম স্থানঃ লাইব্রেরীর ব্যাগ শেলফ

ছেলেঃ হাই (ব্যাগে খাতা, নোট শিট ঢুকাতে ঢুকাতে)
মেয়ে: তুমি কি আমার সাথে প্রেম করার সুযোগ খুজতেছ ?

ছেলেঃ (অবাক হয়ে) কেন এমন মনে হল ?
মেয়েঃ কারন আমি দেখেছি দুই দিন তুমি লাইব্রেরীতে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলে। আর দুই দিন সেধে আমার সাথে কথা বলেছ।

ছেলেঃ ও আচ্ছা।
মেয়েঃ আমার সাথে এই চেষ্টা করো না। তুমি ইন্ডিয়ান। আমি জানি তোমরা সুন্দরী বিদেশী মেয়ে দেখলে প্রেম করতে চাও, তারপর তাদের বিয়ে করো সিটিজেনশিপের জন্য। সিটিজেন শিপ পেয়ে গেলে তখন আমাদের দেশের মেয়েদের ডিভোর্স দিয়ে নিজের দেশ থেকে আরেকটা বিয়ে করে নিয়ে আসো। তোমরা ডেঞ্জারাস এবং ফ্রড।

ছেলেঃ (বিরক্ত, রাগ চেপে) জাস্ট ওয়ান থিং। যদি তোমার সাথে প্রেম করলে ইঊনিভার্সিটি আমার টীঊশন ফিস ফুল ফ্রী করে দেয় তবে আমি প্রেম করতে রাজী আছি। তা না হলে তুমি কান্নাকাটী করলেও আমি রাজী হব না। বাই ( দ্রুত প্রস্থান)
মেয়েঃ এই দাঁড়াও , দাঁড়াও। এস্কুজ মি !!!!

দিন -২য় ২ সপ্তাহ পর স্থানঃ ক্যান্টিন-লাঞ্চ আওয়ার

মেয়েঃ হ্যালো হ্যালো। ইয়েস ইউ, ইউ। এখানে ফাকা আছে, বসতে পারো, কোন সমস্যা নেই।
ছেলেঃ (খাবার ট্রে হাতে অনিশ্চিত ভঙ্গিতে তাকিয়ে) তুমি কি আমাকে বলছ ?

মেয়েঃ হ্যাঁ। সামনেই বসো। গত দুইদিন কোথায় ছিলে ? তুমি জান আমি তোমাকে খুজছিলাম।
ছেলেঃ (মুখে খাবার ঢুকিয়ে) খুজে লাভ নেই। আমি প্রেম করবো না।

মেয়েঃ (রেগে গিয়ে) কি সাহস তোমার !!! তুমি কি জানো যে তুমি আগের দিন আমাকে অপমান করেছ ???
ছেলেঃ তাই নাকি !!! তাহলে হয়তো আনন্দে ভুলেই গিয়েছিলাম কি বলছি তোমায়। তুমি তো আমায় খুব সন্মান করেছিলে, সেই আনন্দে আমি আত্মহারা হয়ে গিয়েছিলাম।

মেয়েঃ তুমি অনেক বাড়াবাড়ি করছো আমার সাথে। আমি দেখে নেবো, যাই, তোমাকে ডেকেই ভুল করেছি ।
ছেলেঃ রাবিশ (আস্তেকরে)

মেয়েঃ (ফিরে এসে) তুমি কি কিছু বলেছ আমাকে ???
ছেলেঃ নাহ, বলেছি (খাবার দেখিয়ে) রাবিশ।

দিন -৩য় স্থানঃ ক্যান্টিন-লাঞ্চ আওয়ার

মেয়েঃ (ট্রে হাতে) তুমি আমাকে দেখেছো তারপরেও ভদ্রতা করে ডাকতে পারতে এই টেবিলে বসতে !!! গত কয়েকদিন তুমি একই কাজ করেছ !!! তুমি আসলে খুব অভদ্র।
ছেলেঃ (ঊঠে দাড়িয়ে) ওহ সরি ম্যাডাম। আমার খুব ভুল হয়ে গেছে। প্লীজ বসুন।

মেয়েঃ জীবনেও না। (চলে যেতে যেতে) তুমি আসলেই একটা অভদ্র, ফাজিল।
মেয়েঃ (কিছুক্ষন পর, ট্রে নিয়ে অপরপাশে এসে বসে) তুমি মিট মিট করে হাসছো কেন ? তুমি নিজেকে খুব স্মার্ট মনে কর ।

ছেলেঃ ছোট বেলার অভ্যাস। ইণ্ডিয়ানরা এরকম হয়। (মেয়ের প্লেটের খার দেখিয়ে) রাইস !!! ইন্ডিয়ান ফুড !! গুড চয়েজ । ওকে, হ্যাভ আ গুড মিল। আমি একটু ব্যস্ত, পরে কথা হবে ম্যাডাম ওয়েস্টার্ন । বাইইইইইই

দিন -৩য় ২ মাস পর; স্থানঃ ইঊনিভার্সিটির বাস স্টপেজ
সময়ঃ ঠান্ডা শীতের দিন সন্ধ্যা

মেয়েঃ এই !! হ্যালো ।
ছেলেঃ আমাকে ডাকছেন ম্যাডাম।

মেয়েঃ হ্যাঁ। তুমি বাস কাউন্টার পার হয়ে হেটে কোথায় যাচ্ছ ? বাসে যাবে না ? আর আকশের দিকে তাকিয়ে হাটছো কেন ? তুমি কি ঠিক আছো ?
ছেলেঃ নাহ। হাটতে ভালো লাগছে। ওয়েদার টা ভাল লাগছে। যাই...

মেয়েঃ (দৌড়ে এসে) তোমার সাথে আসতে পারি ??
ছেলেঃ (মুচকি হেসে) হ্যাঁ শিওর।

মেয়েঃ তুমি কখনও শব্দ করে হাসো না ?? তোমার এই মুচকি হাসি দেখলে মনে হয় তুমি পৃথবীর সব কিছু জানো।
ছেলেঃ জানি। কিন্তু অনেকদিন হাসা হয় না, হয়তো ভুলেই গিয়েছি। নিজের সব হাসিই ধার দিয়েছি অন্য মানুষদের।

মেয়েঃ আস্তে হাট প্লিজ। আমি তোমার সাথে হেটে পারবো না, তুমি অনেক লম্বা। আচ্ছা তোমার কি মন খারাপ ??
ছেলেঃ কি জানি, জানিনা। মাঝে মাঝে এরকম হয়। আমি কিন্তু সময়টা উপভোগ করছি। এই মরা চাঁদ টাকে ভালোই লাগছে। মনে হচ্ছে জিবনটা একটা চক্র। একই পথে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ঘুরছি আর চাঁদটা যেন ল্যান্ডমার্ক। একই চাঁদ, ভিন্ন ভিন্ন সময়ের ভিন্ন ভিন্ন মূহুর্তের নিশ্চুপ সাক্ষী।

মেয়েঃ কি হয়েছে তোমার ?? তোমার কথা শুনে আমারও মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এই পথটাকে এখন একটা চক্র আর চাঁদ টাকে ল্যান্ডমার্ক মনে হচ্ছে। হি হি হি
ছেলেঃ তোমার হাসি টাতো অনেক সুন্দর। (ভালো করে তাকিয়ে) এই মরা চাদের আলোয়ও তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে। তারমানে তুমি আসলেই সুন্দরী, তোমার নিজস্ব একটা আলো আছে। ভালো, তোমার একটা ভালো প্রেম হবে।

মেয়েঃ লজ্জা পেলাম। তবে শুনতে ভালোই লাগলো। এভাবে আগে কেউ বলেনি। কি হয়েছে তোমার ?? বলোনা
ছেলেঃ নাহ কিছু না। এই চাঁদ দেখে নস্টালজিক হয়ে গেলাম। মনে হচ্ছে অনেক চেনা সেই পূরোনো চাঁদ। আজ থেকে ১০ বছর আগের কোন এক ঠান্ডা শীতের সন্ধায় কোন এক অপ্সরা নারী আমায় জিজ্ঞেস করেছিল, "মন খারাপ হওয়া চাঁদ, তারপরেও ওয়েদারটা আর পরিবেশটা ভালো লাগছে। তুমি কি আমার হাতটা একটু ধরবে !!! "

মেয়েঃ তারপর
ছেলেঃ তারপর ?? আজ থেকে ৬ বছর আগে এই একই মরা চাঁদের আলোয় এক অপ্সরা মনূষ্যটানা রিক্সায় বসে আমায় বলেছিল- "এই চাঁদ দেখে একটা গান গেতে ইচ্ছে হচ্ছে। কিন্তু লজ্জা লাগছে । তুমি কি আমার হাতটা ধরবে, তাহলে আমি গান গেতে পারবো।"

মেয়েঃ তারপর ?? আচ্ছা দাঁড়াও আমিই বলি। তুমি সেই হাত গুলো ধরোনি, যদিও হাতগুলো ছিলো ভালবাসাময় হাত।
ছেলেঃ (মুচকি হেসে) কেন এমন মনে হল !!!

মেয়েঃ জানিনা। কেন যেন মনে হল। তোমাকে আমি চিনে ফেলেছি। মনে হচ্ছে যেন অনেক দিন ধরে চিনি তোমাকে। তুমি ভালবাসার হাত ধরা মানুষ না।
ছেলেঃ হা হা হা !!! মজা পেলাম। কাল আমি চলে যাচ্ছি এই ইঊনিভার্সিটি থেকে, আমি শুধু রিসার্চের কাজে এসেছিলাম এখানকার ল্যাবে। কাল ফিরে যাবো আমার ইঊনিভার্সিটি নেব্রাস্কায়। সো তোমার আর চেনার সূযোগ থাকছে না।

মেয়েঃ রিয়েলী!!!! বড় বড় চোখে তাকিয়ে। আমি বিশ্বাস করি না।
ছেলেঃ অনেক পথ হেটে ফেললে। যাও ডর্মে চলে যাও, আমি আরও কিছুক্ষন হাটবো তোমাদের এই শহরে, হয়তোবা শেষবারের মত।

মেয়েঃ আমিও হাটবো তোমার সাথে। আসলেই পরিবেশটা ভালো, মন খারাপের। চাদটা আসলেই মরা, বিষন্ন। এভাবে কখনো দেখিনি।
ছেলেঃ কি ব্যাপার !!! তোমার মন খারাপ করে দিলাম নাকি !! এই ব্যাপারটা আসলে সংক্রামক, আনন্দ সহজে শেয়ার করা যায় না, কিন্তু দুঃখ যায় । আচ্ছা দাঁড়াও তোমার মন ভালো করে দেই, তোমার নাম হচ্ছে ফিজান। ইরানিয়ান বংশদ্ভুত, তোমার জন্ম এইদেশে। এখানে মাস্টার্সের ১ম বর্ষ। ব্যচেলর করেছ হাওয়াই। আর তোমার পছন্দ হল ছেলেদের পায় পাড়া দিয়ে ঝগড়া বাধানো। কি ঠিক বলেছি না সব ???
মেয়েঃ (মৃদু হেসে) তুমি সব কিছু জান!!! আমার মায়ের সাথে তোমার পরিচয় হয়েছিল কয়েক মাস আগেএখানে। আমি শুনেছি তার কাছে তোমার কথা। তুমি তাকে নাকি অনেক হেল্প করেছ !!! তোমার খুব প্রশংশা করলো। আর বলল তুমি নাকি বাংলাদেশী, তোমার নামটাও তার মনে আছে-ডিঊ।

ছেলেঃ হ্যাঁ ইংরেজীতে ডিঊ। বাংলায় শিশির। ওই আকাশের থেকে বৃহৎ আমি অনেক পথ পাড়ি দিয়ে নেমে ভোরের সবুজ ঘাসের মাথায় জমা হয়ে সুর্যের আলোয় জ্বলে ঊঠি।
মেয়েঃ তুমি তো সব কিছু জান, ডিউ। এটাকি জান যে, আমিও তোমার হাতটা ধরতে চাই এই মরা চাঁদের আলোয়।
ছেলেঃ (মরা চাঁদের দিকে তাকিয়ে বিষন্ন কন্ঠে) আমি জানি ফিজান, আমি জানি।

...................................................................................................
এই রুটের সন্ধার বাসের ড্রাইভার দেখলো যে প্রতিদিনের প্যাসেঞ্জার শেতাংগ ছটফটে সুন্দরী মেয়েটি ফূটপাত দিয়ে একটি এশিয়ান ছেলের হাত ধরে হেটে যাচ্ছে। আশ্চর্য ব্যাপার, দুইবার হর্ণ দেবার পরেও কেউ ফিরে তাকালো না কারন ওরা দুজনই গভীর মনযোগে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।




সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:০১
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

টের পেলে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৭

টের পেলে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

টের পেলে গুটিয়ে যায় লজ্জাবতী/ পরিপূর্ণ যৌবনে যুবতীর নিখুঁত অনুভূতি। আমার চাওয়া, ইচ্ছে, স্বপ্ন! আমার পছন্দ বুঝদার, সুন্দর হৃদয়ের রূপ! সৌন্দর্য সুন্দর যা চিরন্তন সত্য। কিন্তু সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের চার খলিফার ধারাবাহিকতা কে নির্ধারণ করেছেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৭




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব)... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×