somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এলোমেলো -৩

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১।
আজ ছোট বোনটার জন্মদিন, অনেক বেশী আদরের ছোটবোন। পৃথিবীর যে দেশেই গিয়েছি বা বাংলাদেশের যেখানেই গিয়েছি ওর জন্য ছিল সর্বদাই স্পেশাল উপহার বা সব কিছু বেশী বেশী বা বেশী দামী। কিন্তু আজ অনেক অনেক দূরে বসে ফেসবুকে অনিয়মিত ওর জন্য শুধু শুভ কামনা ছাড়া আর কিছুই করার নেই। দামী নতুন মোবাইল্টাও হাত থেকে পড়ে গিয়ে অকেজো, নতুন একটা বুঝি কিন্তেই হবে, ততদিন বিশ্বের সাথে যোগাযোগহীন। গতকাল রাতেই টিম টিমে তারা জ্বলা হীমঠান্ডা আকশের দিকে তাকিয়ে ভাবছিলাম যে আমার দেশে এখন কোমল শীতের কুয়াশা ভরা ভোর, তনুন দিনের জানান দিচ্ছে সাথে সাথে ছোট বোন্টার বয়সের স্কেলে একটা নতুন দাগ যোগ করছে। সাইলেন্ট গার্ল হিসাবে খ্যাত ছোট বোনটির মিষ্টি হাসিমাখা মুখটি বড় বেশী মনে পরছে। আশা করি আমার বড় বোনেরা বরাবরের মত আমিহীন ছিমছাম ভাবেই দিনটি পালন করবে।

২।
আমার জীবনে ভালো মানুষের সংখ্যা অনেক অনেক বেশী। ৫০ টির ও বেশী দেশের মানুষের সাথে গভীর ভাবে মেশার সুযোগ হয়েছে। জানিনা এটা বিচিত্র কিনা, বেশীর ভাগ মানুষের সাথেই অসাধারন অভিজ্ঞতা। আর যতগুলো দেশের মানুষের সাথে খারাপ অভিজ্ঞতা হয়েছে তার মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম, থাইল্যান্ড দ্বিতীয়, ইন্ডিয়া তৃতীয় । কাজের চাপে ফেসবুকে বা অনলাইনে দীর্ঘদিন আপডেট না থাকলেও যখন দুরদেশের বন্ধুদের মেইল/মেসেজ পেতে থাকি তখন এক অন্য প্রেওকার ভালোলাগা ছড়িয়ে পড়ে। খুব বেশী ভাললাগার এক স্মৃতি শেয়ার না করে পারছি না। বিদেশে উচ্চতর ডিগ্রী সম্পন্ন করার পর কনভোকেশনে সারা ক্যাম্পাসে পরিবার পরিজন হীন একা একা এতিমের মত ঘুরে বেড়াচ্ছি। ক্যাম্পাস সেজেছিল বর্নীল রঙ্গে, চারদিকে ছবিতোলার উপযোগী সুন্দর ডেকোরেশন যেন বিদায়ী স্টুডেন্টরা নিজের ইচ্ছে মত বিভিন্ন স্পটে ছবি তুলতে পারে। প্রায় সব স্টুডেন্ট এর পবিবারের কেউ না কেউ এসেছে কনভোকেশনে। হাতে গোনা কয়েকজনের মধ্যে আমি একজন। একের পর এক বিভিন্ন এওয়ার্ড নিচ্ছি কিন্তু ছবি তোলার মত আপন কেউ নেই। অডিটোরিয়ামের বাইরে এসে দাঁড়িয়ে দেখছি বিভিন্ন স্টুডেন্ট্রা তাদের বাবা মা বা ভাই বা বোনের সাথে ফুল হাতে বিভিন্ন ঢঙ্গে ছবি তুলছে। আমার হাতে শুধু সার্টিফিকেট আর এওয়ার্ডগুলো। হঠাত করে এক নাম না জানা অপিরিচিত এক বয়স্ক মহিলা আমার পাশে এসে বিজাতীয় ভাষায় কিছু বলে আমাকে একটা তাজা লাল গোলাপ দিল সাথে খুব মিষ্টি একটি হাসি। বুঝলাম তিনি ইংরেজী বলতে পারেন না, আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো আরও কয়েজন দাঁড়িয়ে থকা মানুষের কাছে। আমি হতচকিত হয়ে তার সাথে গেলাম। বুঝলাম তার ছেলে গ্রাজুয়েট হয়েছে, ছেলেকে শুভেচ্ছা জানাতেই তার মেয়েকে নিয়ে তিনি ফিলিপাইন থেকে চলে এসেছেন। ছেলেটি মায়ের সাথে কথা বলেই আমাকে বলল, "মিস্টার, কিছু মনে করো না। আমার মা অনেক্ষন থেকে খেয়াল করেছে যে তুমি একা একা দাঁড়িয়ে আছো মন খারাপ করে, তোমার হাতে কোন ফুল নেই। তাই আমার মা ভেবে নিয়েছে যে তোমাকে শুভেচ্ছা যানাতে কেউ আসেনি,এ জন্যই মা তোমাকেও তার একটা ছেলে মনে করে শুভেচ্ছা জানাতে চায়। তিনি তোমার সাথে সুন্দর সুন্দর কিছু ছবিও তুলতে চান।" জানিনা কি হল, একথা শুনেই চোখে পানি চলে আসলো, মহিলা খেয়াল করে আমাকে সস্নেহে জড়িয় ধরলো। অনেক অনেক ছবি তুললাম ওদের সাথে, ওদের ফ্যামিলি মেম্বার হয়ে। এই স্মৃতি আজীবন আমার সাথে রয়ে যাবে। আশা করি সেই মমতা ময়ী মা সৃষ্টিকর্তার কৃপায় সুস্থ আছেন। এবার ঢাকার একটি স্মৃতি শেয়ার করি, তখন গ্রীষ্ম কাল, ঢাকা শহরের গনগনে একদুপুরে রিক্সায় করে বাসায় ফিরছি। রিকশা ওয়ালা খালি গায়ে ঘর্মাক্ত শরীরে ৭৫ কেজী ওজনের আমাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। জাকির হোসেন রোডে ঈদ্গাহ মাঠের সামনে এসে রিক্সা ওয়ালা হঠাত পিছন ফিরে অনুনয়ের সুরে কিছু বলল কিন্তু তীব্র শব্দের কারনে কিছুই শুনতে পেলাম না। বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম ঘটনা কি ?? সে বলল যে সে একগ্লাস ঠান্ডা বরফ দেওয়া সরবত খেতে চায়, দুমিনিটের জন্য রিক্সা দাড়ালে আমার কোন ক্ষতি হবে কিনা । শুনে বললাম, না না কি বলো !!! যাও ভাই তুমি, ৫ মিনিট লাগলেও সমস্যা নেই, তুমি যাও আমি ওয়েট করি। দেখলাম সে দৌড়ে রাস্তা পার হয়ে পিছন দিকে মাঠের পাশে বিভিন্ন রঙ এর বোতল সাজিয়ে রাখা এক মোবাইল সরবতের দোকানে গেল। আমি বসে হাতে রাখা ডকুমেন্ট খুলে পড়ছি। হঠাত দেখি আমার রিকশা ওয়ালা এক গ্লাস সরবত নিয়ে হাজির, আমাকে দিয়ে বলছে,- ভাইয়া খান,অনেক ঠান্ডা-শরীর জুড়ায় যাবে, গ্লাস ভালো করে ধুয়ে নিয়ে আইছি। কিঞ্চিত অবাক হলাম তার ব্যবহারে, আমি সরবত টা খেলাম। বললাম টাকা নিয়ে যাও, সে বলে লাগবেনা, আমি দিয়ে দিছি বলে দৌড়ে গ্লাসটা ফেরত দিতে গেলো। বাসার সামনে এসে দশ টাকা বেশী দিতে গেলাম কিন্তু কোন ভাবেই সে টাকাটা নিলো না। আমাকে অবাক করে দিয়ে সে টাকা না নিয়েই হাসি মুখে চলে গেলো, শুধু বল্ল-থাকেন ভাইয়া, দোয়া কইরেন। এই প্রকৃত বড় লোকের সামনে বিশ্বের সর্বচ্চ প্রতিষ্টানে চাকুরী করা এই আমাকে বড় বেশী হীন মনে হল। বাসার সিড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে মনে হল, লোকটা নিজের অজান্তেই আমাকে এক বড় শিক্ষা দিয়ে গেলো যা আজীবন আমার স্মৃতিতে জ্বলজ্বলেৎ হয়ে থাকবে।

৩।
প্রতিবারের মত ঢাকায় বইমেলা শুরু হয়েছে এবারো। আমার বড় বেশী প্রিয় একটি উৎসব, কিন্তু গত ৭ বছরে মাত্র ২ বার সূযোগ হয়েছে বইমেলা থেকে নিজে ঘুরে ঘুরে পছন্দের বই কেনার, তার মধ্যে গত বছর অনয রকম। রাজাকারের ফাসীর দাবীতে তখন শাহবাগ, টিএসসি উত্তাল, রোমান নামে এক ছোট ভাইকে নিয়ে গেলাম বই মেলায়। আমার বই কেনা দেখে ও আমাকে বলল ভাই বাদ দেন আর কিনেন না। আমরা বাসায় যাবো কিভাবে ? রিক্সা তো পাবোনা, দুই জনে এতো বই নিয়ে হেটে যেতে পারবো না। বড় বেশী মিস করবো এবারে বই মেলা। যদিও পড়ার মত দারুন দারুন বেশ কিছু বিদেশী বই পেয়েছি, আমার বই পড়ার নেশা দেখে এখাণকার ব্রিটিশ হাইকমিশনে চাকরীরত এক জন আমাকে তার নিজস্ব লাইব্রেরী থেকে অনেক গুলো বই গিফট করেছে। আর বলেছে এগুলো ফেরত না দিলেও হবে। বরাবরের মত, বিদেশের মাটিতে পরিচিত হওয়া এই মানুষের কাছে চিরদিনের জন্য কৃতজ্ঞতা জালে আবদ্ধ হয়ে গেলাম।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×