somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এলোমেলো-৫

০৩ রা এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ৯:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১।
হঠাত করে সিদ্ধান্ত হল, আমাকেই যেতে হবে। না বলার অভ্যাসটা না থাকায় এড়িয়ে যেতে পারলাম না। খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যে ভিসা হয়ে গেল। কত প্লান ছিল, বাড়ি যাব । এপ্রিলের শেষে বালি। সব বানচাল করে এখন যেতে হচ্ছে ব্যাংকক। দীর্ঘ কয়েক বছর ওখানে কাটানোর ফলে নিজের আরেকটি শহর বলেই মনে হয়। অনেক অনেক স্মৃতিময় শহর ব্যাংকক, অনেক সুন্দর এই দেশটির মানুষ গুলোও অনেক ভালো। থাই বন্ধু বান্ধবীগুলো সব এখন চাকরী বাকরি ও ব্যবসা নিয়েই ব্যাস্ত। ফেসবুকের কল্যানে সবার আপডেট দেখি আর ভালই লাগে। ওদের কয়েকজনের সাথে দেখা হবে ব্যাংককে। আর দূরে থাকা বন্ধু বান্ধবগুলো অভিমান করবে ওদের সাথে দেখা না করাতে সেটা ভালো করেই জানি। কিন্তু ব্যাংককের থেকেও বেশি চিন্তা হচ্ছে মঙ্গোলিয়া নিয়ে। ওখানে যাবার প্লান আছে সাম্নের মে মাসে। ওই দেশের ঠান্ডা ঠেকানোর জন্য যে শীতের পোশাক দরকার তার কিছুই নেই, অযথাই কিনতে হবে কয়েকদিনের জন্য। যাই হোক, ব্যাস্ত জীবন, নানান দেশ, নানান মানুষ। প্রকৃতি ও মানুষের এই বিচিত্রতা ওপার বিস্ময় নিয়ে দেখি আর মুগ্ধ হই

২।
বিভিন্ন শহরে ট্রেনিং দিতে গিয়ে বিব্রতকর, মজার অথবা বিচিত্র অভিজ্ঞতা হয়। দেশের মানুষের আঞ্চলিক কথাবার্তা গুলো শুনতে ভালই লাগে। সন্ধার পরে আশে পাশে ঘুরে, বিভিন্ন চায়ের দোকানে বসে অচেনা মানুষগুলোর সাথে বসে কথা বলতে ভালই লাগে। গত মাসে বরিশাল গিয়েছিলাম এবং আমার জন্য প্রথম যাওয়া। দারুন ভালো লাগলো সবকিছু। জার্নি থেকে শুরু করে, শহরটা, মানুষগুলো, খাবার দাবার সব কিছু। লঞ্চেই পেয়ে গেলাম ইউনিভার্সিটি জীবনের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে অনেক বছর পর, দারুন আড্ডা হল সারা রাত কন কনে শীতের ঠান্ডা হাওয়া, জলন্ত শলাকা আর কিঞ্চিত পানীয় সহ। আর উপরি হিসাবে আমি বিদেশে থাকা অবস্থায় বিয়ে হওয়া খালাতো বোনের বাড়ি যে আমার ট্রেনিং সেন্টারের পাশেই সেটা জানতে পারা ছিল চরম আনন্দের। বোনটার কি সে অভিমান!!! বলল, এক সপ্তাহ হয়ে গেলো আপনি এখানে আর যাবার আগে আমার খোজ হলো !!! আসলে ভুল আমারই, আমি জানতাম ওর শশুর বাড়ি বরগুনা, কিন্তু ওর বর যে বরিশালে চাকরি করে সেটা জানতাম না। যাই হোক অল্প হলেও দারুন একটা সময় কাটলো ওদের সাথে।

এক ট্রেনিং এ সিলেটের একজন প্রবীন প্রশীক্ষণার্থী যার দেশে বিদেশে কাজ করার দীর্ঘ ২৫ বছরের অভিজ্ঞতা, তিনি দ্বিতীয় দিন শেষে বললেন, যা না বললেই নয় বা না বললে সেটা হবে আমার জন্য অপরাধ তা হল, মিঃ আহসান এ্যাজ এ ট্রেইনার ইউ আর আনপ্যারালাল। আই হ্যাব নেভার সীন দিজ টাইপ এনথুজিয়াজটিক মান লাইক ইউ। আই থিঙ্ক অ্যাট ইয়োর এজ ইঊ আর অ্যাট ইয়োর পীক।“ লোকটি সত্য না মিথ্যা বলেছে জানিনা কিন্তু প্রশংশাটি শুনে ভিতরে ভিতরে খুব ভালোই লাগলো।

এক শহরে ট্রেনিং দিতে গেলাম, দুপুরে খাবার পর টানা রোদের মধ্যে ঘুরে ট্রেনিং সেন্টারের আশে পাশে কোথাও সিগারেটের দোকান না পেয়ে অবাকই হলাম। কারন রাস্তার দুপাশে বিভিন্ন প্রকার অজস্র দোকান কিন্তু কোন পান সিগারেটের দোকান নেই। যাক কোথাও না পেয়ে এক দোকানদারকে যখন জিজ্ঞেস করলাম, "আচ্ছা এখানে কোথাও কি সিগারেট পাওয়া যাইবে ?? " দৈনিক পত্রিকাটি চোখের সামনে থেকে নামিয়ে প্রৌঢ় দোকানদার বলল, "ওহে জনাব, রোদ চশমা খুলিয়া দোকানের সাইনবোর্ডটি দেখলে বুঝিতে পারবেন যে ইহা একটি ঔষধের দোকান। বুঝিতে পারিতেছি যে আপনার জ্বালা উঠিয়া গিয়াছে। সাময়িক জ্বালা কমাইবার দাওয়াই আমি দিতে পারিব, ১২৫ টাকা লাগিবে। আর নিজেকে আরও আপডেট করুন, বাজারে ইদানিং আরও উন্নত মানের দ্রব্য পাওয়া যাইতেছে, যথাঃ বাবা, পিনিক, ধুন, কেরু, লেজ, নারী ইত্যাদি। আর ভুলিবেন না যে, ধুমপান স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর" । সানগ্লাস খুলে উপরে বিবর্ণ সাইনবোর্ডে লেখা, উপশম মেডিকেল ও স্টেশনারিজ পড়ে মুরুব্বিকে তার মূল্যবান জ্ঞানের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে তিক্ত মনে আবার ট্রেনিং সেন্টারে ঢুকলাম।

৩।
সেদিন বসে আছি ধানমন্ডী লেকের পাড়ে। চারদিকে ঠান্ডা বাতাস, বন্ধুরা একে একে এসে হাজির হল। সাথে বিভিন্ন প্রকার খাবার দাবার এর আয়োজন। কোমল-কঠিন পানীয় ও চলে এলো। হাওয়ার মাতম বাড়তে বাড়তেই শুরু হল বৃষ্টি, মোটামুটি ভারী বৃষ্টি। আর সাথে সাথেই বিদ্যুৎ চলে গেলো। সবাই বিরক্তি সূচক মন্তব্য করা শুরু করছে, কিন্তু আমাই তাকিয়ে আছি জানালা দিয়ে বাইরে। দেশে ফেরার পর এই প্রথম ঢাকা শহরে লোডশেডিং কে ধন্যবাদ জানালাম। ছোটভাই মেহেদী বলল, ভাই আপনি তো সুযোগ পাইছেন, এইরকম কাব্যিক পরিবেশ আর হয় না, একটা কবিতা বা গল্প লিখে ফেলেন। আমি মুচকি হেসে মুগ্ধ চোখে বাইরের প্রকৃতির উম্মাতাল সৌন্দর্য উপভোগ করছি। অনুভুতিটা শেয়ার না করে পারলাম না , মোবাইলটা বের করে স্ট্যাটাস্টা লিখে দিলাম “ ঝড় হাওয়া সহ বছরের প্রথম বৃষ্টি, বিদ্যুতহীন শহুরে রাত। কাবাব আর মোগ্লাই পরোটা সাথে ভিনদেশী পানীয়, বাইরে ধানমন্ডি লেকের পানিতে মরা চাঁদের আলো আর বৃক্ষের প্রবল তান্ডব। আহ সময়টা যদি এখানে থেমে যেত!!!!”

৪। হঠাৎ করে সম্প্রতি উচ্চতর ডিগ্রি শেষ করে ফেরা ইঞ্জিনিয়ার বন্ধু ফোন দিল। বলল রেডি হ, ছুটি নে, বন্ধু ডাঃ সাইফুল সহ কক্সবাজার যাবো, আমরা আজ রাতে রোনা দিচ্ছি খুলনা থেকে তুই ঢাকা থেকে রওনা দে রাতেই। আমি বললাম, এতো শর্ট নোটিশে হবে না হাতে অনেক কাজ, তোরা যা। ও বলল, অত শত বুঝি না, তোকে পরশুদিন ২৬ মার্চ যেন সী বিচে দেখি। চিটাগং থাকা আমার খালাতো বোনকে দিলাম ফোন। ধরেই বলল, পরে ফোন দিচ্ছি এখন অপারেশন রুমে ঢুকবো। বোন আমার সরকারি মেডিকেলের ডাক্তার, এখন এসিস্টান্ট প্রফেসর। বললাম, এক মিনিট কথা বলি, আমি চিটাগাং আসতেছি। শুনেই ঝাড়ি, এত বছরে এখন সময় হল আসার!!! আমি যাচ্ছি দেশের বাইরে দুই সপ্তাহের জন্য। খবরদার এখন আসবি না, আমি ফিরে আসি তারপর আসবি। এতদিন ধরে আমি চিল্লাচ্ছি তাতে কাজ হচ্ছে না, এখন বন্ধুরা বলছে আর শুড় শুড় করে চলে আস্তেছো। নাকি সাথে মেয়ে আছে, সত্যি করে বল ?? আমি ফিরি তারপর, এখন বীচে অনেক ভীড়, মজা পাবি না। আর শোন, তোর জন্য মেয়ে দেখতেছি। ছবি পাঠিয়ে দিবো মেইলে। ভালো থাক, পরে কথা হবে। আচ্ছা আপু, মেয়েটার মোবাইল নম্বরটা দেওয়া যাবে ? যার সাথে সংসার করবো, তার সাথে কিছু কথপোকথন থাকা ভালো না ?? রাখ এখন, শয়তান।
এবার দিলাম ফোন চিটাগং থাকা আমার পুলিশ বন্ধু কে, বললাম, অফিসার রিপোর্ট ইওর পজিশন। উত্তরে বলল, ইয়েস স্যার, ইন রাঙ্গামাটি স্যার। অন লিভ স্যার। আমি আসতেছি বলতেই, রেগে গেলো। এখন আসার সময় হল !!! আর কয়েকদিন আগে বললে কি হত ?? আমি না হয় ছুটী ক্যান্সেল করতাম। না এখন আসার দরকার নেই। আমি ডাঃ সাইফুলকে বলবো না আসতে এখন। এবার ফোন দিলাম, কলাবাগান/পান্তপথে ডিঊটিরত পুলিশ অফিসার বন্ধুদের যেন আমার জন্য চিটাগংএর টিকিট বুক করে রাখে। সন্ধার পরে গেলাম টিকিট আনতে কিন্তু বিধি বাম, কোন টিকিট নাই। সব বাস অনেক আগে থেকেই বুকড। মন্ত্রী হইলেও নাকি টিকিট দেওয়া সম্ভব না। কিছুক্ষন পরে ঈগল কাউন্টারের একজন অপরাধী ভাবে বলল, স্যার বিশ্বাস করেন কোন টিকিট নাই, তা না হলে আপনাদের না বলি !!! ২৬শে মার্চ এর বন্ধ সাথে আবার শুক্র শনিবার পড়ছে, অনেক রাশ যাচ্ছে। শুধু মাত্র খুলনার একটা টিকিট আছে আজ রাতের এসি গাড়ি আর এম-২ তে। হঠাত কি হলো যানিনা, বললাম খুলনার টিকিটটাই দিন, ঢাকার বাইরে যখন যাব সিদ্ধান্ত নিয়েছি তো যাবই। না হোক চিটাগং , খুলনা হলেই বা মন্দ কি!! সাম্নের মাস থেকে অনেক ট্যুর আছে ব্যাংকক, ইন্দোনেশিয়া, সুতরাং বাড়ি যেতে অনেক দেরী হবে। রাতে বাসে উঠে বন্ধুরে ফোন দিয়ে বললাম, দোস্ত বাসে ঊঠছি কিন্তু ভুল করে খুলনার বাসে টিকিট কাটছি। তোরা যেয়ে ঘুরে আয়, খুলনায় আছি, দেখা হবে। বন্ধু আমার কইলো, মর হারামজাদা। চলে আসলাম প্রাণের শহর খুলনায়। আহ পৃথিবীর অনেক শহর বন্দর ঘুরেছি কিন্তু এই শহরের মত শান্তির স্থান খুজে পাইনি। বাড়ির গেটে এসে মা সহ সবাইকে হঠাত হাজির হয়ে চমকে দিয়ে যে মজা পেলাম তা কক্সবাজার সী বিচের আনন্দ থেকে কোন অংশে কম নয়।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১০:০৪
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×