অনন্ত জলিল লোকটারে ধন্যবাদ না দিয়া পারলাম না, একটা লোক এতো কষ্ট করে তারপর তার নিজের শখ ও বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিরে উপরে উঠানোর জন্য চরম পরিমান খাটল। আমার মতে সে তার অবস্থান থেকে সফল।
এতো গুণগান করতেছি এই লোকটার কারণ এই লোক ছবি বানাইতে মেলা টেকা খরচা করে। মানুষ এখন হল এ যাইতেছে, কিন্তু আমাগো দেশের মধ্যবিত্তরা এখনও হল মুখী না, তারা শেষ সিনেমা হল এ গেছে সালমান শাহ্ এর আমলে, এগো হোগায় আঠা হইতাছে প্রায় ১৫ বছরের, আর এই আঠার মূল কারণ হইল বাজে সিনেমা আর ভারতীয় সিরিয়াল। এগোরে টাইনা হল এ আনতে হইব।
যাই হোক মেলাক্ষণ তেনা পেঁচাইলাম। কাজের কথায় আসি। গেছিলাম ইভটিজিং ছবিটা দেখতে। কাজী হায়াৎ কইছেন এইটা নাকি তার শেষ ছবি। একটা ফ্রেশ ছবি দেখলাম অনেকদিন পর। আমি নিয়মিত হল এ যাই এ কথা বলা ভুল , তবে এই কিছুদিন ধরে আমি যাচ্ছি আর এর সম্পূর্ণ দায়ভার অনন্ত জলিলের। ইভটিজিং এ অভিনয় করেছেন কাজী মারুফ, তমা মির্জা, কাবিলা, কাজী হায়াৎ সহ অনেকে।
ছবির ঘটনা শুরু হয় গ্রামের একটি ছেলেকে দিয়ে যে মরা টেনে জীবিকা নির্বাহ করে। তার ঘরে বিধবা মা আর একটি স্কুলগামী বোন আছে। বোনকে তার স্কুলের কেউ পছন্দ করে না কারণ তার ভাই মরা টানে, যার জন্য সে একা হয়ে পড়ে। এদিকে গ্রামের চেয়ারম্যান এর ছেলে আর তার বন্ধুরা মিলে এ সব স্কুলগামী মেয়েদের ইভটিজিং করে। চেয়ারম্যান এর ছেলের চোখ পড়ে নিরীহ মরা টানা কাশেমের বোনের উপর।
ঘটনা এইটুকুই বললাম কারণ এর বেশি বললে হল এ যাবার আকর্ষণ হারিয়ে ফেলতে পারেন অনেকেই।তাছাড়া আমাগো বাঙ্গালীগো একটা খারাপ অভ্যাস আছে, কিছু ফ্রী পাইলেই সেইটা পরি বা দেখি পড়ে সেটা নিয়ে পুনারব্রিত্তির কোন আকর্ষণ নাই। এ ছাড়া কাশেমের সাথে ফুলবানুর কেমিস্ট্রিটাও ভালোই জমে উঠেছে এই ছবিতে।এ ছাড়া গ্রামে আগের দিনের লাঠি খেলা ও তলোয়ার খেলাও এসেছে এ ছবিতে। সহজ কথায় ছবিটা বর্তমান বাংলাদেশের গ্রামের অবস্থার রূপ। গরিব ধনী সম্পর্ক সব কিছুই ফুটিয়ে তুলেছেন পরিচালক এই ছবিতে। যদি কারো মন চায় দেখে আসতে পারেন ছবিটা বলে দিলাম টাকাটা জলে ফেলবেন না আসা করি পুরো টাকাটাই উশুল হয়ে যাবে।
এবার ছবির কাজের দিকে আসি। ছবিটাতে অনেক গান ব্যবহার করা হয়েছে, একমাত্র প্রথম গানটা বাদে বাকি সবগুলো গানের সঙ্গীত ও কথা খুবই ভালো লাগার মতো, একটা আধ্যাত্মিক গানও আছে। তবে গানগুলো একটু পরপর যা একটু একঘেয়মি আনতে পারে। গ্রামের খুব সুন্দর দৃশ্য ধারন করা হয়েছে বিশেষ করে সই এর সাথে ফুলবানুর গানের সময়। কিছু কিছু গানের দৃশ্যের সাথে পোশাকটা মানায় নি তবে ওভারঅল ভালো বলতে পারি।ব্যাকগ্রাউন্ড সাউন্ড নিয়ে আরও কাজ করা যেত বলে মনে হয়েছে। এ ছাড়া আর একটু মেকআপ এর দিকে দৃষ্টি দিলে ভালো হতো।
দর্শক হল এ যায় পরিচালক এর নিজস্ব দৃষ্টি ও নিজস্ব আবেগ দিয়ে ছবি দেখার জন্য, এই ক্ষেত্রে আমার মনে হয়েছে কাজী হায়াৎ সম্পূর্ণ সফল। হল এ লোকজন প্রথম দেড়ঘণ্টা মজা নিয়েছে, পরের দেড়ঘণ্টা সম্পূর্ণ চুপচাপ থেকে ছবি দেখেছে। পিন পড়লে শব্দ হবে এ রকম নীরবতা। চিত্রগ্রাহক ও কলাকুশলীদের ধন্যবাদ না দিয়ে উপায় নেই এ রকম একটা ছবি ও সামাজক বিভিন্ন সমস্যা ছবির মাধ্যমে তুলে আনার জন্য।
সব শেষে একটাই কথা চেন্নাই এক্সপ্রেস এর থেকে কয়েকগুন ভালো ছবি এটা আর আমি আপনি হল এ না গেলে ভালো ছবি আসবে কিভাবে, ঘুম ভাঙ্গুন অগ্রযাত্রায় সামিল হন, আর কতো নেট থেকে চুরি করে ইন্ডিয়ান ফিল্ম আর সিরিয়াল দেখবেন। আমরাই যদি না আগাই তবে কেউ তো আগাবে না ,কারণ আমারাই তো বাংলাদেশ।
কাজী হায়াৎ সাহেবকে অনুরোধ করবো তিনি যাতে এতো তাড়াতাড়ি ছবির কাজ ছেড়ে না দেন। এখনও অনেক দূর যেতে হবে বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে আর তার মতো একজন অভিজ্ঞ সৈনিকের দরকার অচিরেই অনুভব করবে বাংলা ছবির জগৎ।
ধীরে ধীরে আরও মুভি আপডেট পাবেন সেই পর্যন্ত বিদায়।