আমি যে জায়গায় বসে আছি সেটা কোন ছবি তোলার জায়গা নয় । কিন্তু ডানদিকের সামনের সিটে বসা মেয়েটি স্মার্টফোন বের করে বিভিন্ন এঙ্গেলে সেলফি তুলছে । কখনও মুখ বাকা করছে , কখনও চুল এদিক সরাচ্ছে , কখনও ওদিকে সরাচ্ছে , আবার ব্যাগ থেকে লিপিস্টিক বের করে ঠোটে দিচ্ছে । হেডফোনট বের করে গলায় ঝুলিয়ে রাখছে । সাদা রংয়ের হেডফোনটি গলার সাথে ঠিক মানায় নি । দুই প্যাকেট চিপস কিনেছে, একটু পরে তা চিবানো শুরু করছে মচাৎ মচাৎ শব্দ করে । দুপুর বেলা, আকাশে হালকা মেঘ করেছে । রোদ নেই কিন্তু ভ্যাপসা গরমে একটা অসস্তি ভাব লাগছে । গাড়ি ছাড়বে বলে , কিন্তু দেরি করছে । চারিদিকে হর্ণের আওয়াজ, ধূলাবালি, গাড়ির ডিজেল পোড়া উৎকট গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে যাচ্ছি । বাসে এক ফেরিওলা উঠে ঝালমুড়ি , ঝালমুড়ি বলে চিল্লাচ্ছে । ভিক্ষারী, এতিমখার লোকে এসে নানা ভাবে টাকা চাচ্ছে । পাশের সিটে এক আঙ্কেল বসেছে , টাক, ইয়া বড় ভুড়ি, লম্বায় ছয় ফুট, শরীরখানা যেন হিমালয় পর্বত , কথা বলছে যেন মাইক । এই সব দেখে আর শুনে আমার মাথা ঝিম ঝিম করছে । একটু পরে বাস ছাড়ল । আস্তে আস্তে উচু দালানকোটা, শহর , বসতবাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছি । রেল লাইনের মত সোজা সড়কটি চলে গেছে ফাঁকা মাঠের মাঝ দিয়ে , দুধারে গাছের সারি , বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে সবুজ ধানক্ষেতে বাতাসে ঢেউ খেলে যাচ্ছে । পাশে বসা আঙ্কেলটি ঘুমিয়ে পড়েছে ।ডানপাশের সিটের মেয়েটি কৌতূহল দৃষ্টি দিয়ে জানালার দিকে চেয়ে আছে । বাইরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দুচোখ ভরে দেখছে, বাতাসে চুলগুলো উড়ছে । আর এখন ওকে পরীর মত সুন্দর লাগছে । আর আমি কানে হেডফোন দিয়ে শুনছি, “এই পথ যদি না শেষ হয়, তবে কেমন হত তুমি বল তো ।” তবে এটুকু বুঝলাম যে, অবস্থা পরিবর্তনের সাথে সাথে মানুষের মনেরও পরিবর্তন হয়, দেখার দৃষ্টিকোণের পরির্তন হয় ।আর এ কারণেই হয়তবা মহাজনেরা বলেছেন , পৃথিবীর কোন কিছুই স্থির নয়, সবই আপেক্ষিক ।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১২:০০