somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শুদ্ধ বাংলা বানান শেখার স্কুল চাই

১৭ ই মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৫:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ভুল বানানে লেখা সাইনবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন দেখে এখন আর কেউ অবাক হন বলে মনে হয় না। ইদানীং এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ব্লগ, ফেসবুক, অনলাইন নিউজ পোর্টালসহ বিভিন্ন ওয়েব সাইট। অবস্থা দেখে মনে হয়, এসব স্থানে যা খুশি তা লেখাটাই যেন রীতি! কিংবা এ ক্ষেত্রে বানান নিয়ে ভাবার কোনো দরকার নেই। শুধু তাদের কথাই-বা বলি কেন, প্রতিদিন যত পত্রিকা প্রকাশ হচ্ছে তার ক’টার মধ্যে শুদ্ধ বাংলা বানান প্রয়োগের চেষ্টা থাকে?

সর্বত্র বাংলা প্রচলনে আইন আছে। আর, সর্বত্র প্রয়োগ করার মতো বানান রীতি তথা প্রমিত বানানের নিয়মও ঠিক করা আছে। কিন্তু তার প্রয়োগ যে কতটা হচ্ছে সেটা বোঝা যায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো চিঠিতে যখন ‘মন্ত্রনালয়’ লেখা দেখা যায়। প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম প্রণয়ন করেছে বাংলা একাডেমি। সেই বাংলা একাডেমির মাসিক পত্রিকা ‘উত্তরাধিকার’ মাঘ ১৪১৮ সংখ্যার একটি ছোট গল্প পড়তে গিয়ে দ্বন্দ্বে পড়ে গেলাম। ‘অন্ধকারে বসে থাকেন আমার বাবা’ শিরোনামের গল্পটির কয়েকটি বাক্য-
১. ‘বাবা, তুমি সবসময় এত কি ভাব?’ ২. ‘কি হয়েছে তোমার?’ ৩. ‘কি নিয়ে ভাবছ এত?’ ৪. ‘কিন্তু তুমি কি নিয়ে ভাব, বাবা?’ ৫. ‘বিষয়টি কি?’ ৬. ‘কি করছ বাবা?’

প্রমিত রীতি অনুযায়ী এখানে প্রতিটি বাক্যে ‘কি’ এর স্থলে ‘কী’ হওয়ার কথা। কিন্তু হয় নি।

বাংলা একাডেমি এবার একটি অসাধারণ কাজ করেছে। প্রকাশ করেছে বিবর্তনমূলক বাংলা অভিধান। তিন হাজারের বেশি পৃষ্ঠা সংবলিত অভিধানটি তিন খণ্ডে বিভক্ত। প্রথম খণ্ডের ফ্ল্যাপে লেখা হয়েছে, ‘বাংলা ভাষার সব শব্দ একই সময়ে জন্ম হয়নি অথবা একই সময়ে সেসব শব্দ ভাষায় ব্যবহৃত হয়নি। কোন শব্দ প্রথম কখন ব্যবহৃত হলো, এবং তারপর ধীরে ধীরে তার অর্থ কিভাবে বদলে গেলো, এ অভিধানে প্রধানত তা-ই দেখা যাবে। কেবল অর্থের বিবর্তন নয়, শব্দের বানান কিভাবে বদলে গেলো, সে ইতিহাসও জানা যাবে এই অভিধান থেকে।’ প্রমিত রীতি অনুযায়ী হওয়ার কথা ‘হয় নি’ এখানে লেখা হয়েছে ‘হয়নি’, তেমনি ‘কিভাবে’ না হয়ে ‘কীভাবে’ লেখা প্রয়োজন ছিল।


কণ্ঠশীলন-এর প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষাগুরু ওয়াহিদুল হক এক মান ভাষার প্রতিষ্ঠায় কাজ করেগেছেন জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত। তাঁর সেই চেষ্টার ফসল ‘কণ্ঠশীলন’ ৩০ বছর পূর্ণ করছে। সম্পন্ন করেছে ৭৯টি আবর্তন কোর্স। ৮০তম আবর্তনে অংশ নিয়ে আমিও আজ কণ্ঠশীলনের গর্বিত অংশীদার। ভাষার বাচিক রূপ নিয়ে কাজ করে কণ্ঠশীলন। কিন্তু লিখিত রূপের স্পর্শ বাঁচিয়ে চলা কণ্ঠশীলনের পক্ষে সম্ভব হয় নি। পাঠ্যপুস্তকসহ নানা কারণেই কণ্ঠশীলনকে লিখিত রূপের সহায়তা নিতে হয়। তাই বাংলা বানান নিয়ে ভাবনা এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই।

‘ওয়াহিদুল হক স্মারণিক মিলনোৎসব ২০১২’ শিরোনামে প্রকাশিত স্মারণিকে গুণীজনদের অনেক লেখা ছাপা হয়েছে। ওয়াহিদুল হক রচিত ‘গুরু, আমার উপায় করো না : পিপাসার্ত এক যোগ্যতাহীনের কথা’ শিরোনামের লেখাটি পড়ে মুগ্ধ হয়েছি। ব্যক্তি ওয়াহিদুল হক নিজের বেড়ে ওঠা থেকে শুরু করে তাঁর চেতনা ও অনুপ্রেরণার অনুষঙ্গগুলো তুলে ধরেছেন সাবলীলভাবে। এমন একটি চমৎকার লেখা পড়তে গিয়েও মাঝে মাঝে হোঁচট খেতে হয়েছে মুদ্রণপ্রমাদের চোখরাঙানি দেখে।

বানান ভুল হয় নানা কারণে। এর মধ্যে অসতর্কতা অন্যতম। আর ছাপাখানার ভূত তো আছেই। বাচিক মান ভাষা প্রতিষ্ঠায় যেমন শুদ্ধ উচ্চারণ শেখার বিকল্প নেই, তেমনি লিখিত মান ভাষার জন্য প্রয়োজন শুদ্ধ বানান। এর কোনটা বাদ দিয়ে শুদ্ধ বাংলা তথা মান বাংলা ভাষার কথা ভাবা যায় না। তাই, আমাদের শুদ্ধ উচ্চারণ শেখার স্কুলের পাশাপাশি প্রয়োজন শুদ্ধ বানান শেখার স্কুলেরও। কিংবা একই প্রতিষ্ঠানে সমন্বয় করা যেতে পারে দুটি বিষয়কেই।
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×