somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাহাড়ের নারী এবং পাহাড়ে নারীরা

২৮ শে আগস্ট, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



২০০৮ সালের মে/জুন মাসের কথা। খাগড়াছড়ি সদর থেকে পানছড়ির বাসে উঠেছি। পাশের সিটে বসেছেন একজন বাঙালি তরুণী, উনার কোলে বছর দেড়েক বয়সের এক পাহাড়ি (মুখাবয়ব দেখে মনে হলো) শিশু। শিশুটি যখন `মা' বলে ডেকে উঠল এবং তাতে ওই নারী যেভাবে সাড়া দিলেন তাতে প্রথমে একটু অবাক হয়েছিলাম। পরে কথা প্রসঙ্গে জেনেছিলাম, উনি বড়ুয়া সম্প্রদায়ের সন্তান, কিন্তু বিয়ে করেছেন চাকমা সম্প্রদায়ের একজনকে।

২০০২/২০০৩ সালের ঘটনা। সমতলের এক বাঙালি মুসলিম তরুণী এক চাকমা তরুণের প্রেমে পড়ে রাঙামাটিতে পালিয়ে আসে। তরুণীর বাবা ঠিকানা যোগাড় করে রাঙামাটিতে আসেন, নানাজনের মাধ্যমে দেনদরবার করে অবশেষে মেয়েকে ফিরিয়ে নিয়ে যান। কিন্তু কিছু দিন পর মেয়েটি আবার বাড়ি থেকে পালিয়ে রাঙামাটি চলে আসে ওই চাকমা তরুণের কাছে।

কিছুদিন আগে সম্ভবত ফেনী জেলার এক মুসলিম মেয়ে খাগড়াছড়ির এক চাকমা তরুণের প্রেমে পড়ে বাবার বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে পাহাড়েই ঘর বেঁধেছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাবেক শিক্ষক সম্পর্কে জানি, উনি খাগড়াছড়ির ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের মানুষ, কিন্তু উনার স্ত্রী বাঙালি মুসলিম। খোঁজ-খবর নিলে এমন ঘটনা আরো পাওয়া যাবে।

পাহাড়ে আন্তঃ ধর্মের মানুষের মধ্যে প্রেম-বিয়ে নতুন কোনো ঘটনা নয়। চাকমা সার্কেল চিফ দেবাশীষ রায়ের দাদী ছিলেন কলকাতার ব্রহ্মসমাজরে প্রতিষ্ঠাতা কেশবচন্দ্র রায়ের নাতনি। বঙ্গবন্ধুর সরকারের সংসদে রাঙামাটির মহিলা সংসদ সদস্য সুদীপ্তা দেওয়ান হিন্দু পরিবারের মেয়ে হলেও তিনি ছিলেন (চাকমা সম্প্রদায়ের) ডা. এ কে দেওয়ানের স্ত্রী। রাঙামাটি কলেজে আমার প্রিয় শিক্ষক শেখর দস্তিদার বিয়ে করেছিলেন চাকমা পরিবারে। পার্বত্য চট্টগ্রামে সাংবাদিকতার পথিকৃৎ এ কে এম মকছুদ আহমেদ আংকেলের স্ত্রীর নাম মঞ্জুলিকা গোর্খা। আসলে এমন উদাহরণ দিয়ে শেষ করা যাবে না।

হঠাৎ করে এসব কথা কেন বলছি?

বলছি কারণ, (কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া) এক সময় এসব ঘটনাকে সহজ এবং স্বাভাবিক বলে ধরে নেওয়া হলেও বর্তমানে তা আর ধরা হচ্ছে না। এখন বিষয়টি জটিল থেকে জটিলতর হয়ে দেখা দিচ্ছে পাহাড়ের জনমানসে। কারো কারো দৃষ্টিতে এটা লাভ জিহাদ, কারো কারো দৃষ্টিতে অধর্ম-অনাচার, কারো কারো দৃষ্টিতে জাতিগত বিনাশের অন্যতম কারণ। ফলে আন্তঃ ধর্মীয় যুগলের মধ্যে যখনই কোনো সম্পর্কের ইঙ্গিত-আভাস পাওয়া যাচ্ছে, তখনই কেউ কেউ এটাকে থামানোর জন্য সর্বাত্মক লড়াইয়ে নামছে। আর সেটা সব সময় যে যুক্তি-তর্কের মতো অহিংস পথে সীমাবদ্ধ থাকছে না, সেটা না বললেও চলে।

গত কয়েকদিন আগে বান্দরবানের লামায় এক ত্রিপুরা তরুণী বাঙালি মুসলিম ছেলের প্রেমে পড়ে ঘর বেঁধেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এটা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। বিশেষ করে, চাকমা, মারমা, ত্রিপুরাসহ অন্যান্য জাতিগোষ্ঠির মানুষ এটাকে দেখছেন নেতিবাচক হিসেবে। তাদের অধিকাংশের মত হচ্ছে, পাহাড়ি তরুণীরা যে হারে প্রেমে পড়ে বাঙালি মুসলিম ছেলেদের বিয়ে করছে। এটা সমান গতিতে চলতে থাকলে এক সময় পাহাড়ি জাতিগুলো অস্তিত্ব বিনাশের মতো সঙ্কটে পড়বে।

এর প্রমাণ স্বরূপ তারা শতাধিক পাহাড়ি নারীর নাম-ঠিকানা সম্বলিত তালিকা স্যোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করে নানা মন্তব্য করছেন, যারা বাঙালি মুসলিম ছেলে বিয়ে করে ঘর-সংসার করছেন। সেসব তালিকার নিচে আবার অন্যরা মন্তব্য করে আরো বহুজনের নামের তালিকা যোগ করছেন। তারা বলছেন, যে হারে পাহাড়ি মেয়েরা বাঙালি ছেলেদের প্রেমে পড়ছে, তাদের বিয়ে করছে তাতে এক সময় দেখা যাবে যে, পাহাড়ি ছেলেরা বিয়ের পাত্রী সঙ্কটে পড়বে। ফলে ধীরে ধীরে তাদের জাতিগত অস্তিত্ব বিনাশের দিকে যাবে।

তবে অপেক্ষাকৃত তরুণরা যতটা উৎকণ্ঠিত, উদ্বিগ্ন হয়ে যেভাবে উগ্র ও সহিংস পদ্ধতিতে বিষয়টি মোকাবিলার কথা বলছেন, একই বিষয়ে উদ্বেগ ও শঙ্কা প্রকাশ করলেও বয়োজ্যাষ্ঠ এবং অভিজ্ঞরা সেটা মোকাবিলার ব্যাপারে কিছুটা সংযত মন্তব্যই করছেন। তাদের কথা হলো, পাহাড়ি মা-বোনদের বোঝাতে হবে, পারিবারিকভাবে, ধর্মীয়ভাবে, সামাজিকভাবে, রাজনৈতিকভাবে এবং সংস্কৃতিগতভাবে। যারা বোঝার তারা বিষয়টি বুঝবেন আর যারা না বোঝার তাদের ব্যাপারে নাক না গলানোই ভালো।

পাহাড়ের নবীন এবং প্রবীণদের মধ্যে বিষয়টি মোকাবিলার ধরন ও পদ্ধতি নিয়ে ভিন্ন ভাবনা থাকলেও এর পরিণতি হিসেবে জাতিগত অস্তিত্ব বিনাশের শঙ্কা নিয়ে তাদের মতের অভিন্নতা লক্ষনীয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, নবীন এবং প্রবীণদের মধ্যে অভিন্ন শঙ্কা থাকার পরও পাহাড়ের নারীরা কেন সেটাকে উপলব্ধি করছেন না? কেন তারা আন্তঃধর্মীয় সম্পর্কের ব্যাপারে আকর্ষণ অনুভব করছেন? এর পেছনে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয়, শিক্ষা এবং সংস্কৃতির মধ্যে কোন বিষয়টি কতটা ভূমিকা রাখছে? নাকি সব কিছুই ঘটছে মানবীয় সাধারণ আকর্ষণ-অনুভব-উপলব্ধির ফল হিসেবে?
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে আগস্ট, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:১৮
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিনেতা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৫



বলতে, আমি নাকি পাক্কা অভিনেতা ,
অভিনয়ে সেরা,খুব ভালো করবো অভিনয় করলে।
আমিও বলতাম, যেদিন হবো সেদিন তুমি দেখবে তো ?
এক গাল হেসে দিয়ে বলতে, সে সময় হলে দেখা যাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×