এ বছর সরকার ঘোষণা দিয়েছে, হাটে গিয়ে সকল গরুর রক্ত পরীক্ষা করা হবে। যদি ঐ গরুকে মোটাতাজাকরণ ইঞ্জেকশন দেয়া হয় তবে ঐ গরুকে বাজেয়াপ্ত করা হবে এবং গরু ব্যবসায়ীকে শাস্তি দেয়া হবে। অনেকে বলতে পারেন, ‘সরকার এ কাজ করলে তো ভালোই, কারণ ঐ বিষাক্ত ইঞ্জেকশন দেয়া গরু খেলে তো মানুষের ক্ষতি হতে পারে’।
আমি বলব, যারা আপনারা সরকারের দেয়া এ টোপ খেয়েছেন তারা মস্ত বড় ধোকা খেয়েছেন, কারণ সরকারের খেয়ে দেয়ে আর কাজ নেই যে সরকার পাবলিকের স্বাস্থ্য নিয়ে হঠাৎ সচেতন হয়ে উঠবে, পাবলিকের স্বাস্থ্যের চিন্তা থেকে তার আরো বড় বড় ধান্ধা আছে। আসলে এগুলো করে বিভিন্ন ভারতীয় ইসলামবিদ্বেষী হিন্দুবাদী মহল। প্রতি বছর কুরবাণী ঈদ আসলেই এরা গরু বিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। কিভাবে গরু কুরবাণী বন্ধ করা যায় সেই ধান্ধায় থাকে তারা। যেমন:
১) যে বছর সিডর হলো, সে বছর তসলিমার জামাই নাইমুল তার ‘আমাদের সময়’ পত্রিকায় প্রচারণা শুরু করলো, ‘গরু কুরবাণী না করে সেই টাকা সিডরে পাঠিয়ে দিন’।
২) গত ২ বছর আগে ছড়িয়ে দেয়া হলো অ্যানথ্যাক্স আতঙ্ক, সে বছর মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হলো গরু ব্যবসায়ীরা। অনেক মানুষ গরু কুরবাণী না দিয়ে খাসি কুরবাণী দিলো।
৩) গত বছর স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয় এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে গরুর হাট বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছিলো, যুক্তি ছিলো দুর্গা পূজা। বলেছিলো, শেষ তিনদিন গরুর হাট চালু থাকবে। কিন্তু গরু ব্যবসায়ীদের তীব্র প্রতিবাদের মুখে পিছু হাটে সেই মহলটি। (প্রজ্ঞাপন ও তার সম্পর্কে পোস্ট: http://goo.gl/t2mE1C)
আপনারা দেখেছেন, আমে ফরমালিন জুজু নিয়ে কি ধরপাকড়টি না করলো সরকার, এসময় বহু আম নষ্ট করা হয়েছে, অনেকেই এ বছর আম খাওয়া বাদ দিয়েছে। কিন্তু এই ফরমালিনের পেছনে কিন্তু জনস্বাস্থ্য মূল উদ্দেশ্য ছিলো না, উদ্দেশ্য ছিলো বাংলাদেশের আমগুলো নষ্ট করে ভারতীয় আম বাংলাদেশের মার্কেটে চালানো, কারণ এ বছর ভারতীয় আম মিডলইস্টে নিষিদ্ধ হওয়ায় প্রচুর আম ভারতে রয়ে যায়। (এ সম্পর্কে পোস্ট:http://goo.gl/99MwUJ)
ঠিক তেমনি যদি এবার গরুর রক্ত পরীক্ষার নাম দিয়ে হাটে ব্যাপক ধারপাকড় করা হয় এবং রাসায়নিক পদার্থের ভীতি ছড়িয়ে দেয়া হয় তবে এবারের কুরবাণীর ঈদে বিরাট সমস্যা হয়ে যাবে, এতে মানুষ গরু কুরবাণী কম করবে এবং মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবে ব্যবসায়ীরা।
গরু মোটাতাজাকরণ সম্পর্কে ভীতি ছড়ানোর সময় বলা হচ্ছে, মোটাতাজাকরণ ইঞ্জেকশন ক্ষতিকর, সে সকল গরুর শরীরে তা ব্যবহার করা হয় সে সকল গরুর গোশত খেলে লিভার কিডনী ও মস্তিষ্কে ক্ষতি হতে পারে। এ বিষয়ে কিছু তথ্য জেনে রাখা প্রয়োজন:
১) গরুর হাটে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় দেশী কৃষকের গরু, এ সকল গরুতে মোটাতাজাকরণের কোন ঔষধ বা ইঞ্জেকশন ব্যবাহার হয় না। ব্যবসায়ীরা যে সকল গরুতে মোটতাজাকরণের ঔষধ ব্যবহৃত হয় তা মোট গরুর মাত্র ৫ শতাংশ হবে কি না সন্দেহ। তাই ঢালাও ভাবে বিষয়টা প্রচার করার প্রয়োজন থাকতে পারে না।
২) গরু মোটা তাজাকরণে যে বিশেষ ইঞ্জেকশন পুশ করা হয় তা সাধারণত তিন মাস পূর্বে গরুর শরীরে পুশ করা হয়, এ ইঞ্জেকশন পুশ করার এক মাস পর্যন্ত ঐ গরুর গোশত খাওয়া নিষেধ থাকে, এরপর খাওয়া যায়। গরুর শরীরে যদি ক্ষতিকর মাত্রায় ইঞ্জেকশন পুশ করা হয় তবে ৭ দিনের মধ্যেই গরুটি মারা যায়। তাই যারা গরুর মোটতাজাকরণের উদ্যোগ নিয়েছে তারা ইতিমধ্যে তাদের ইঞ্জেকশন পুশ করে ফেলেছে। কেউ যদি ভাবে, গরুর ইঞ্জেকশন পুশ করে তাকে হাটে নিয়ে আসা হয়েছে তবে তা বোকামি। তাই ঈদের সময় এ বিষয়টি নিয়ে টানা হ্যাচরা করা অব্যশই উদ্দেশ্যমূলক চক্রান্ত মনে হচ্ছে।
৩) গরু মোটা তাজাকরণের যে বিশেষ ইঞ্জেকশন দেয়া হয়, তার পরিমাণ মাত্র ২০ সিসি। তিন মাস পর ৫-৬ মন ওজনের গরুর গোশতে তা কতটুকু অবশিষ্ট থাকে তা চিন্তার বিষয়। আর একটা মানুষ তো অনেক গোশত খায় না, সামান্য কিছু খায়। তাহলে তার শরীরে কতটুকু ঐ রাসায়নিক প্রবেশ করতে পারে?? যদি সামান্য কিছু প্রবেশও করে তবে তা অবশ্যই ক্ষতিকারক হবে না, কিন্তু এটা নিয়ে ব্যাপক ভীতি তৈরী করা অবশ্যই উদ্দেশমূলক হতে পারে।
আমার এ লেখা জনগণকে সচেতন করার উদ্দেশ্য, সাধারণত যারা ইসলাম ও মুসলমান বিরোধী চক্রান্ত করে তারা আগে থেকেই তার টার্গেট নেয়। মনে রাখবেন, আমাদের সচেতনতার অভাব এবং হুজুগে স্বভাবের কারণেই চক্রান্তবাজ সুযোগ পায়। তাই আমরা যদি সচেতন থাকি তবে তারাও চক্রান্ত করার ফুসরত পাবে না।
আপনাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব হবে, বিষয়টি সম্পর্কে নিজ নিজ এলাকার গরু ব্যবসায়ীদের আগে থেকেই সতর্ক করে দেয়া এবং নিজেও সতর্ক থাকা যেন হঠাৎ মিডিয়ায় হুজুগ তৈরী করে কুরবানীর ঈদকে কেন্দ্র করে গরু বিরোধী কোন কার্যক্রম গ্রহণ করতে না পারে ভারতীয় ইসলামবিদ্বেষী হিন্দুবাদীরা।
খবরের লিঙ্ক: Click This Link
**অমুসলিম কাউকে কষ্ট দেয়ার মত কোন লিখা লেখা হয়নি। তাই, উদ্দেশ্যমূলক গালাগালি মন্তব্যকারীর অবস্থান প্রকাশ করবে**