হীরা !! ডায়মন্ড !! এই শব্দ গুলোর সাথে মিশে আছে বহু মানুষের জীবন ও রক্ত। আমরা অনেকেই ব্লাড ডায়মন্ড মুভিটা দেখেছি। এই একটা বস্তু পুরো আফ্রিকাকে, আফ্রিকার মানুষের অবর্ননীয় কষ্টের কারন। মেয়েদের খুশি করানোর জন্য এর চেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র আর নেই আজকে বলবো দুনিয়ার সবচেয়ে দামী কিছু হীরার কথা। চলুন দেখি কে কোনটা চান, আর কে কোনটা কিনতে পারবেন।
১) Koh-I-Noor--
কোহিনূর বা “Mountain of Light” বা "আলোক পর্বত" নামে খ্যাত এই হীরার ইতিহাস অতি দীর্ঘ এবং বর্ণাঢ্য। এর ইতিহাসের সূচনা ১৩০৪ সালে। প্রাচীনকালের সুন্দরী কুমারীর মতো এটিও বিভিন্ন রাজা বাদশাহ ও শাসকের হাত ঘুরে এখন স্থান পেয়েছে টাওয়ার অফ লন্ডনে। ষোড়শ শতাব্দীতে কোহিনূর মালওয়ার রাজাদের অধিকারে ছিল এবং পরবর্তীকালে তা মোগল সম্রাটদের হাতে আসে এবং সম্রাট শাহজাহান নির্মিত ময়ুর সিংহাসনের শোভা বর্ধন করে। মোগল সাম্রাজ্য যখন বিক্ষিপ্ত ও ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে তখন নাদির শাহকে আমন্ত্রণ জানানো হয় মুসলিম শাসনের গৌরবোজ্জ্বল দিন ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করতে। কিন্তু তাকে প্রতিশ্রুত অর্থ না দিয়ে প্রতারণার আশ্রয় নেয়া হয়। কৌশলে তিনি মোগলদের কাছ থেকে কোহিনূর উদ্ধার করে নিয়ে যান ইরানে। কোহিনূর নামটিও নাদির শাহের দেয়া। নাদির শাহ নিহত হবার পর কোহিনূর আসে আফগানিস্তান সম্রাট হুমায়ুনের পুত্রের কাছে। আফগানিস্তান থেকে মহারাজা রণজিত্ সিং সেটি গ্রহণ করেন এবং শেষ পর্যন্ত রণজিত্ সিংএর পুত্র সেটি আনুষ্ঠানিকভাবে ১৮৫০ সালে তুলে দেন রাণী ভিক্টোরিয়ার হাতে। ১০৮.৯৩ ক্যারট ওজনবিশিষ্ট কোহিনূর প্রথমে রাণী ভিক্টোরিয়া ব্যবহার করতেন তার হাতে। এরপর সেটি স্থান পায় বৃটিশ মুকূটে। বলা হয়, এই প্রিসিয়াস হীরা টি অভিশপ্ত, যে রাজাই এই হীরাটি পেয়েছে সে ই তার রাজ্য হারিয়েছে। তবে যে সব রাজা এটি তার রানীদের দিয়েছেন তারা বেচে গেছে উপমহাদেশের এক সময়ের অহংকার এখন বৃটেনে। কোহিনূরের মালিকানা নিয়ে আশির দশকেও বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল। ইরান, ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, এমনকি বাংলাদেশ পর্যন্ত এর সত্ত্ব দাবি করেছিল। তবে বৃটিশ সরকার সব দাবিই প্রত্যাখ্যান করেছে এবং এসকল দাবী অযৌক্তিক বলে আখ্যায়িত করেছে। এর মুল্য নির্ধারন করা সম্ভব হয় নি। এর ছবি নেটে পেলাম না। সব দেখি রেপ্লিকার ছবি। [আমি কই জানি শুনছিলাম যে আসল কোহিনুর হীরা টি বাংলাদেশের পুরান ঢাকার একটা ব্যাংকের লকারে মালিকানা বিহীন ভাবে জমা আছে, আর যেইটা রানীর কাছে আছে সেইটা আসল কোহিনুরকে পাচারের হাত থেকে বাচাতে হীরার তৈরি রিপ্লিকা]
২) The Sancy Diamond
ফেকাসে হলুদ রং এর Sancy ডায়মন্ডের ওজন ৫৫.২৩ ক্যারেট (১১.০৫ গ্রাম) কাছাকাছি। এর প্রথম মালিক, নিকোলাস হারলাই, এর নামকরন করেন "Seigneur de Sancy", পরে এটি "The Sancy Diamond" নামে পরিচিত হয়ে উঠে। ধারনা করা হয় এটি ইন্ডিয়ান রিজিয়ন থেকে আসেছে। এখন এটা ফ্রান্সের লুভর যাদুঘরের অ্যাপোলো গ্যালারিতে রাখা আছে। এর দামও নির্ধারন করা যায় নি।
৩) The Cullinan Diamond
এটি যখন উদ্ধার করা হয় তখন এর ওজন ছিল ৩১০৬.৭৫ ক্যারেট (৬২১.৩৫ গ্রাম) যা বর্তমান দুনিয়ার বৃহত্তম। এতো বড় হীরা বিশ্বের আর কখনও বা অন্য কোথাও পাওয়া যায়নি। এটিকে কেটে দুই টুকরা করা হয় এবং এর একটি Cullinan I or "Great Star of Africa" যার ওজন ৫৩০.৪ ক্যারেট (১০৬.১ গ্রাম) এবং অন্যটি Cullinan II or Lesser Star of Africa যার ওজন ৩১৭.৪ ক্যারেট (৬৩.৫ গ্রাম)। মনে প্রশ্ন জাগতাছে না যে ৬২১.৩৫গ্রামের একটি হীরা কেটে দুই টুকরা করলে ১০৬.১+৬৩.৫= ১৬৯.৬ গ্রাম হয় বাকী ৪৫১.৭৫ গ্রাম গেল কোথায় ? কাহিনী হলো এই হীরাটিকে ৯টি আলাদ আলাদ সেপ দেয়া হয়েছিল। তখন এই হীরা কাটা পরে। তাতে কিন্তু হীরার দাম কমে যায় নি বরং বেড়েছে, এর দাম ৩১,৯৩২,৮০,২৪,০৪২ টাকা (৪০০মিলিয়ন) মাএ !!!
৪) The Hope Diamond
বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত হীরা এটি, হোপ ডায়মন্ড বিশ্বের সর্বাপেক্ষা পরিদর্শনকৃত দ্বিতীয় আর্টওয়ার্ক, Mona Lisa-এর পরে এটিই মানুষ বেশি দেখেছে। এটি একটি ৪৫.৫২ ক্যারেট (৯.১০ গ্রাম) ওজনের গভীর নীল হীরা যা স্মিথসোনিয়ান ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামে ওয়াশিংটন ডিসিতে রাখা আছে। খুবই সুন্দর এই হীরাটিকেও অভিশপ্ত মনে করা হয়। এই হীরা নাকি যার হাতেই গেছে তারই নাকি সর্বনাশ করে ছেড়ে দিয়েছে। যত সর্বনাশ করেছে এর দাম তত বেড়েছে। বর্তমান মূল্য ২৭,৮২৯,২৮,৪২,৭০৪ টাকা ($৩৫০মিলিয়ন) মাএ !!!
৫) De Beers Centenary Diamond
এটির আকৃতি সব দিকথেকে এতো টাই নিখুত যে এর নামই হয়ে গেছে “perfect”। Gemological institute of America একে graded D তে তালিকাভুক্ত করেছে। এটি একটি ২৭৩.৮৫ ক্যারেট (৫৪.৭৭ গ্রাম) হীরা এবং তার চুড়ান্ত ফর্ম ১৯৯১ সালে ছিল উন্মোচন করা হয়। এর বর্তমান মালিক কে তা অজানা তবে ধারনা করা হয় এক আমেরিকা প্রবাসী ইহুদি এটি ২০০৮ সালে ৭,৯৫১,২২,৪০,৭৭২ টাকায় ($১০০মিলিয়ন) কিনে নেন। সস্তায় কিনছে কি বলেন
৬) The Steinmetz Pink
স্টেইনমেট্স পিঙ্ক হীরা বর্তমান বিশ্বের বৃহত্তম এবং নিখুত গাড় গোলাপী রঙের হীরা। এটি ৫৯.৬০ ক্যারেট(১১.৯২গ্রাম) ওজনের, এটি প্রথম মে ২০০৩ সালে মোনাকোতে উন্মোচন করেন। এই হীরা টি এতোটাই রেয়ার টাইপ যে এটি কাটতে ৮ জন কারিগরের ২০ মাস সময় লেগেছিল। এটি Smithsonian’s “ The Splendor of Diamonds” exhibit-এ পদর্শিত হয়। এর মূল্য ১৯৮,৭৮,০৬,০৯৩ টাকা ($২৫মিলিয়ন)।
৭) Wittelsbach-Graff Diamond
Wittelsbach-Graff ডায়মন্ড একটি ৩১.০৬ ক্যারেট (৬.২১ গ্রাম) গভীর নীল হীরা। লন্ডনের জহুরি Laurence Graff এটি ২০০৮ সালে কিনে নেন। যে সময়ে, একটি নিলামে এটির সর্বোচ্চ মূল্য ২৩.৪ মিলিয়ন উঠে। Wittelsbach ডায়মন্ড হিসাবে পরিচিত। সেপ দেয়ার সময় এটি ৪.৪৫ ক্যারেট (890 মিলিগ্রাম) ওজন হাড়ায়। এর দাম ১৩০,৩৬,১১,৩৩১ টাকা ($১৬.৪মিলিয়ন)
৮) The Heart of Eternity Diamond
হার্ট আকৃতির প্রগাঢ় নীল এই হীরাটি ২৭.৬৪ ক্যারেট (৫.৫২৮ গ্রাম) ওজনের। এটা স্টেইনমেট্স গ্রুপের মালিকানধীন ছিল যা পরে Beers গ্রুপের কাছে বিক্রি করে দেয়া হয়। দক্ষিণ আফ্রিকাযর একটি হীরার খনিতে এটি পাওয়া যায়। খুবই রেয়র টাইপ এই হীরাটিকে ২000 সালে চুরি করা প্রচেষ্টা করা হয় কিন্তু চোরের দল ব্যর্থ হয়। এর দাম ১২৭,১৮,১৫,৯৩৩ টাকা ($১৬মিলিয়ন) মাএ। [আমার কাছে এইটা টাইটানিক মুভিতে দেখানো "হার্ট অফ দি ওসান" এর মত লাগছে, দুইটার ভিতর কোন কানেকশন আছে কি না বুঝতাছিনা, আপনেরা কিছু জানেন?]
৯) The Moussaieff Red Diamond
ভাইরে এইটার কাহিনী এক বড় কপাইলা কৃষকের। ১৯৯০ সালে ব্রাজিলের এই কৃষক Abaetezinho নদীতে গোসল করতে গিয়ে ৫,১১ ক্যারেট(১,০২২ গ্রামের) ওজনের এই হীরাটি ভাগ্যক্রমে পেয়ে যায়। লাল রং এর এই হীরাটি trilliant (triangular brilliant) সেপে কাটা। এর বর্তমান মালিক Moussaieff Jewelers Ltd। এর বর্তমান মুল্য ৫৫,৬৪,১৯,৪৭০ টাকা ($৭মিলিয়ন)
১০) The Allnatt Diamond
তার সাবেক মালিক, মেজর আলফ্রেড আর্নেস্ট Allnatt এর নামে এর নামকরণ করা হয়। Allnatt হীরা একটি রেয়ার উজ্জ্বল হলুদ হীরা যার ওজন ১০১.২৯ ক্যারেট (২০.২৫৮ গ্রাম)। এটাও দক্ষিণ আফ্রিকার একটি হীরার খনি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এর বর্তমান মূল্য ২৩,৮৪,৬৫,৪৮৭ টাকা ($৩মিলিয়ন)
এখন বলেন ভাইয়ারা , আপুদের কে কোনটা কিনে দিবেন??? অবস্থা খারাপ আপুদের কার কোনটা পছন্দ ???
সবাইকে শুভকামনা , আজ এ পর্যন্তই ...
আমার "কত অজানা রে" সিরিজ:
পৃথিবীর যত সব আজব-অদ্ভুত ... আজকের বিষয়-উৎসব (কত অজানা রে পার্ট-১)
পৃথিবীর যত সব আজব-অদ্ভুত ... আজকের বিষয়-কম্পিউটার মাউস (কত অজানা রে পার্ট-২)
পৃথিবীর যত কিছু আজব-অদ্ভুত ... আজকের বিষয়-প্রাকৃতিক গরম পানির লেক (কত অজানা রে পার্ট-৩)
পৃথিবীর যত কিছু আজব-অদ্ভুত ... আজকের বিষয়- জাপানের কিছু পুকুর যাকে তারা 'হেল' বা নরক বা জিগোকু বলে (কত অজানা রে পার্ট-৪)
পৃথিবীর যত সব আজব-অদ্ভুত ... আজকের বিষয়-দুবাই ওয়াল্ড (দেখলেও পস্তাইবেন না দেখলেও পস্তাইবেন) (কত অজানা রে পার্ট-৫)
পৃথিবীর যত সব আজব-অদ্ভুত ... আজকের বিষয়-ক্রেজিয়েষ্ট ম্যানমেইড ফাউনটে (কত অজানা রে পার্ট-৬)
পৃথিবীর যত সব আজব-অদ্ভুত ... আজকের বিষয় - জিওলজিকাল বিশ্ময় (এর অনেক গুলো আজ প্রথম দেখবেন) (কত অজানা রে পার্ট-৭)
পৃথিবীর যত সব আজব-অদ্ভুত ... আজকের বিষয়-এক্সট্রিম বডিবিল্ডার (কত অজানা রে পার্ট-৮)
পৃথিবীর যত সব আজব-অদ্ভুত ... আজকের বিষয়-জীবন্ত পাথর (পাথর কেটে বানানো বিশাল মূর্তি) (কত অজানা রে পার্ট-৯)
পৃথিবীর যত সব আজব-অদ্ভুত ... আজকের বিষয়-ভুতুড়ে শহর (কত অজানা রে পার্ট-১০)
পৃথিবীর যত সব আজব-অদ্ভুত ... আজকের বিষয়-"পারফেক্ট" ক্রাইম (কত অজানা রে পার্ট-১১)