somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার আপন মানুষ "মুকুল রতন বড়ুয়া"র ৪র্থ মৃত্যু বার্ষিকী স্বরণে

০৩ রা মে, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দুই প্রান্তের দুজন মানুষ ছিলাম আমরা। কারো সাথে কারো পরিচয় ছিল না কখনো। ছিল না কোনো আত্মীক সম্পর্ক। হঠাৎ করেই এই ব্যস্ত শহরে আমাদের পরিচয় হয়। মাত্র একটা সন্ধ্যা পরেই তৈরি হতে থাকে আমাদের সম্পর্কের সেতুবন্ধন। রাতটা কেটে যায় আমাদের খোশগল্পে। সকালবেলা এক সাথে নাস্তার টেবিলে।সিদ্ধান্ত যে বাসায় গত সন্ধ্যায় আমাদের পরিচয় হয়েছে সেই বাসা ছেড়ে দিয়ে নতুন বাসায় উঠব দুজন এক সাথে। প্রয়োজন হলে পুরো মাসের ভাড়া দিয়ে বাসা ছেড়ে দেব। বললাম দাদা আপনার আমার মাত্রই পরিচয় হয়েছে, এই বাসাতে অন্তত পক্ষে এই মাসটা থাকি, আমার সম্পর্কে আপনে জানেন, আপনে তো মুরুব্বী মানুষ আপনার সম্বন্ধে আমার আর কি জানার আছে। তাছাড়া আমি পোলাপাইন মানুষ আমার বিভিন্ন ধরণের বদ অভ্যাস আছে আপনে কি এগুলো সহ্য করতে পারবেন? একটু ধমক দিয়েই বললেন এই ব্যাটা আমার তো তোর বয়সী দুইটা ছেলে আছে তু্ই কি তাদের চেয়েও বেশী ফাজিল??? হইলেও কোন সমস্যা নেই মানুষ করে ছেড়ে দেব। প্রথম প্রশ্নের উত্তরে আমি দাদার উপর ৯৫% ফিদা হয়ে গেলাম। তাছাড়া প্রথম বাক্যেই ডিরেক্ট 'তুই'তে নেমে আসাতে ধর্ম বর্ণ বয়সের যোজন যোজন ব্যবধান নিয়ে আর কোনো প্রশ্ন করার সুযোগ ফেলাম না। যেই কথা সেই কাজ, দুদিনের মধ্যে আমরা নতুন বাসা পেয়ে গেলাম। শুরু হল পিতা-পুত্র, দাদা-নাতি, বন্ধু যেই সম্পর্ক বলি না কেন সব সম্পর্কের উপাদন দিয়ে আমাদের পথ চলা। বাহ্যিক দিক দিয়ে আমাদের মাঝে ছিল শুধু বয়সের ব্যবধান। কিন্তু মনের দিক দিয়ে কোন ব্যবধান উপলব্দি করিনি কখনো। ধর্ম ভিন্ন হলেও ছিলাম একই মতে বিশ্বাসী। কর্মেও ছিলাম আমরা একে অপরের পরিপূরক।সুখ দু:খ হাসি আনন্দে একই সাথে চোখের পলকে কেটে গেল সাত সাতটি বছর। একই বাসায় একই রুমে। সদস্য আমরা সেই দুজনই প্রবীন আর নবীন। এক সাথে থাকাকলিন সময়ে হঠাৎ করেই একটা টর্নেটো ঝড়ে আমার জীবন কিছুটা এলোমেলো করে দিয়ে গেল। চোখের সামনে সবকিছু দেখলেন, সাহস দিলেন, দায়িত্ব নিলেন। অভিজ্ঞতার কথা শুনালেন, ৫% অবশিষ্ট যেটা ছিল সেটাও দাদার উপর ফিদা হয়ে গেলাম। একজন আরেকজনকে ছাড়া একটি মুর্হুত্ থাকতে পারিনা। ছুটিছাটায় কেউ কোথাও গেলে অস্থির হয়ে যেতাম কখন ফিরবে। এমনি এক ছুটিতে গেলেন মার্চ মাসের ১৫ তারিখে, মার্চ মাস গেলে, এপ্রিলও গেল চিটাগাং থেকে আসার কোনো নাম গন্ধ নেই। ফোনে যোগাযোগ হয়, বলেন এই তো ভাই পত্রিকার কাজটা শেষ করেই চলে আসব।মে মাসের ২ তারিখ বৃহস্পতিবার রাতে ফোন দিলাম, একটু অভিমান করেই বললাম আপনে কি শুরু করছেন??? আসছেন না কেন??? আপনে চলে আসেন আমার ভালো লাগছে না, পরে না হয় আবার চিটাগাং যাবেন। আসার বানী শুনিয়ে বললেন

টিকেটের জন্য ষ্টেশনে গেছিলাম, টিকেট পেয়েছি শনিবার সকালের। বাসায় আসার সময় এই মাত্র তোর বৌদির জন্য ইয়া মোটা একটা তরমুজ নিয়ে আসলাম, বললাম ঠিক আছে শনিবারে যেনো মিস না হয়, অবশ্যই আসবেন। বললেন ওরে পাগল টিকেট যখন কাটা হয়ে গেছে না এসে কি পারব??? বললাম আচ্ছা ঠিক আছে শুক্রবারে রাতে আবার ফোন দেব। কল্পনায়ও ভাবতে পারিনি এটাই হবে দাদার সাথে আমার শেষ কথা। আমাদের কথাবার্তা শুনে হয়তো বিধাতাও তখন মিটিমিট হেসেছেন, দীর্ঘ সাতটি বছর এক সাথে আপন হয়ে থেকেছো বলে তোমাদের শেষবার কথা বলার সুযোগ দিলাম। যাতে যে চলে যাবে সে শান্তিতে থাকবে, আর যে ধরনীর বুকে থাকবে সে তোমাকে আজীবন স্বরণ রাখবে। দাদা আজও ভূলতে পারিনি সেই রাতের শেষ কথাগুলো।যদি আরো দুটিদিন আগে ট্রেনের টিকেটটা বুকিং দিতে তাহলে হয়তো "০৩ মে ২০১৩" শুক্রবার ভোরের বিধাতার ট্রেনটি তুমি মিস করতে। তাতে ক্ষতি কি ছিল??? আরো কিছুদিন পরে যেতেও পারতে!! বিধাতার ট্রেনে তো সবাইকেই আসন নিতে হবে। তাহলে আমাদের শেষ সাক্ষাতের ট্রেনটি কেন মিস হল???? (চলবে.......)

সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মে, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:২১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×