আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদের আগে কেউ আমার কথা মন দিয়ে শোনেনি, বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন মানুষ বলে গণ্য করেনি! আত্মপ্রকাশের সাহস দেয় নি!
১৯৮৯ সালে অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদের সাথে যখন প্রথম দেখা হয়, আমার প্রথম স্মৃতি হল, সদ্য স্কুল পাশ করা একটা বাচ্চা মেয়ের কথা কেউ কখনও মনোযোগ দিয়ে শুনছে। শুধু শুনছেই না, এমনভাবে শুনছে, যেন সমকক্ষ একজন বুদ্ধিবৃত্তি সম্পন্ন মানুষ আরেকজন বুদ্ধিবৃত্তি সম্পন্ন মানুষের আলাপ হচ্ছে ( এই অনুভূতিটা আমি ঢাকা শহরে আরেকজন মনীষার কাছে পেয়েছিলাম, তিনি হলেন সলিমুল্লাহ খান।)। অনুজ, অল্পবয়েসীদের সাথে সমকক্ষতার পাটাতনে ঢাকাতে আলাপ করেন এমন মানুষ হাতে গোনা।
এহেন অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদকে পরিণত জীবনে এসে আমি পলিটিকালি ইনকারেক্ট মনে করি। শ্রেণী, লিঙ্গ, বর্ণ, জাতি, জাতীয়তাবাদ - এই সব কিছু নিয়েই তাঁর বক্তব্য উচ্চবর্গীয় এলিট শ্রেণীর অবস্থান থেকে বিচার করা। যদিও ব্যক্তিগত জীবনে তিনি - আমি যতদূর দেখেছি - একজন চিন্তাশীল, বেদনার্ত, আত্মত্যাগী, পরিশ্রমী, নিবেদিতপ্রাণ, সৎ মানুষ। আজকাল আমি বিত্তবাসনাহীন এমন আর কারো কথা মনে করতে পারি না।
আবু সায়ীদের চিন্তার জগতে আধুনিক বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের একটা কলোনিয়াল আদর্শ তাঁকে সম্পূর্ণ অভিভূত করে রেখেছে। 'বঙ্গীয় রেনেসাঁ'র একটা ভাবধারায় বাঙ্গালী মধ্যবিত্ত পুরুষকেন্দ্রিক আধুনিক শিক্ষার হেজেমনি উৎপাদনের কাজটিকে তিনি সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করেছেন, কিম্বা বুঝতে চেষ্টা করেননি; যেটা প্রতিফলিত হয়েছে তাঁর সকল কর্মযজ্ঞে।আমার জন্যে অন্তত নৃবিজ্ঞানের তত্ত্ব ও পদ্ধতির আলোকে তাঁর আলোকিত মানুষের গোটা ভাব-আন্দোলনকেই রাজনৈতিকভাবে ভুল বলে মনে হয়। সমাজতন্ত্রী ভাবনার বিচারে শ্রমিক- কৃষক, চাষা-মুটে-মজুরদের শ্রেণীসংগ্রামের সাথে এই আলোকিত মানুষের আন্দোলন বিচ্ছিন্ন। নিম্নবর্গীয় চৈতন্যের অস্তিত্বের নড়াচড়াকে, বিপুল বিস্তারকে এখান থেকে ধরা অসম্ভব। এই চৈতন্যের সাথে শহুরে মধ্যবিত্তের বইপড়ার আন্দোলন প্রায় কোন যোগাযোগ ঘটাতে পারে না বললেই চলে।
নারীবাদীদের কাছে তাঁর সাহিত্যবিচার - নারীত্ব, পৌরুষের ধারনা, প্রেম, বিয়ে ও পরিবারের ভাবনা - ভীষণভাবে সমস্যাজনক। এমনকি তাঁর বিখ্যাত রসিকতাগুলোও ভীষণ আপত্তিকর। বিশেষ করে সর্বশেষ 'শাড়ি' বিষয়ক লেখাটি তাঁর রচনাসমগ্রের মধ্যে সবচেয়ে পলিটিকালি ইনকারেক্ট। পেশাগত ব্যস্ততায় অনেক বছর তাঁর লেখা পড়ার সময়-সুযোগ পাই নাই। শাড়ি বিতর্কের সময় আমার অনেক সমাজতন্ত্রী, কৃষক-শ্রমিকের শোষণ মুক্তির লড়াইয়ে লড়াকু কমরেড, নারীবাদী বন্ধুরা আমাকে আরও কিছু লেখা পাঠিয়েছেন, যেগুলো পড়ে মনে হয়েছে, এই রচনাগুলো সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য, এগুলো না থাকলেই ভাল হত।
নৃবিজ্ঞান, সমাজবাদ, এবং নারীবাদ - চিন্তার অন্তত তিনটি বিচার পদ্ধতির সাথে অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদের আলোকায়নের সামাজিক ও সাহিত্যিক চিন্তা পদ্ধতি এবং আন্দোলন সাংঘর্ষিক। ফলে, নিজের বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার সাথে অধ্যাপক সায়ীদের পথে মেলার আর সুযোগ থাকে না।
অথচ যখন নিজের জীবন এবং গড়ে ওঠার দিকে ফিরে তাকাই, তখন দেখি, যে জীবনকে আমি এ যাবৎ যেটুকু দেখতে পেয়েছি, তাঁর কাছে ঋণের শেষ নেই। তাঁর কাছে গ্রীক মিথোলজির প্রমিথিউসের অন্ধ আশাবাদের চাষাবাদ শিক্ষা ছাড়া এই আপোষহীন সংগ্রামের জীবন কেমন করে দেখতে পেতাম? স্বর্গ থেকে আগুন চুরির ধৃষ্ট চিন্তা করতাম কিভাবে? সক্রেটিসের জবানবন্দী, প্লেটোর সংলাপে ন্যায়-বিচার প্রতিষ্ঠার লড়াই কেমন করে আলাপ-সংলাপ দিয়ে, যুক্তি-তর্ক-বুদ্ধি দিয়ে, অহিংসা দিয়ে, জীবন উৎসর্গ করে করা যেতে পারে, বুঝতাম কেমন করে? জীবনকে এমন তুলাধুনা করে, ধোপার পাটে আছড়ে, প্রেমে-অপ্রমে- বিরহে- ঘৃণায়, স্মৃতি- বিস্মৃতিতে, পতন ও উত্থানে, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এক প্রচণ্ড রকম বেঁচে থাকা কেমন করে শিখতাম? ঘিয়ে ভাজা মধ্যবিত্তের মিডিওকার চাকুরী এবং কেরিয়ারের ছকে বাঁধা জীবনকে প্রশ্ন করার সাহস ও আত্মবিশ্বাস পেতাম কিভাবে? নিজেকে একটি মহত্তর প্রেমময় জীবনের জন্য তিলে তিলে প্রস্তুত করবার স্বপ্নে বিভোর হতাম কিভাবে? নিজের বুদ্ধিবৃত্তি ও হৃদয়বৃত্তিকে এমনভাবে সম্মান করতে শিখতাম কার কাছে? এমন হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করতাম কি, নিজেকে গভীরভাবে মর্যাদা দেয়া সম্ভব নিজের ইতিহাস, ভাষা, সাহিত্য, দেশ ও জাতিকে গভীরভাবে জানাশোনা করে, চর্চা করে, অগ্রসর করে ?
নব্বইয়ের দশকে ১৬ বছর বয়েসে যখন বাংলা সাহিত্যের এই অধ্যাপকের দর্শন ও সান্নিধ্য লাভ করি, মোটামুটি বছর পাঁচেক তাঁর পরিকল্পনায় এবং পরিচালনায় অনুষ্ঠিত বিভিন্ন পাঠ্যসূচিতে আমি অংশগ্রহণ করেছি । ওই পাঁচ বছরে আমি আমার মত অনেক ছেলেমেয়ের সাথে বাংলা ভাষা এবং বিশ্বসাহিত্যের ক্লাসিক ধারার প্রধান লেখালেখিগুলো পড়ে ফেলেছি। এখনও অবিশ্বাস্য লাগে যে, মাত্র ১৬-২১ বছর বয়েসে ঢাকার একদল ছেলেমেয়ের সাথে আমি প্রাচীন গ্রীক সাহিত্যের সক্রেটিস, প্লেটো, আরিস্তেতল, হোমার, সফোক্লিস, আরিস্তফানিস, ইউরিপিদিসের অনুবাদ, রাশিয়ান সাহিত্যের তলস্তয়, দস্তয়ভস্কি, মাক্সিম গোর্কি, চেখভ, নিকলাই গোগল, নিকলাই অস্ত্রভস্কি, বরিস পাস্তারনাক পড়ে ফেলেছিলাম, ফরাসী সাহিত্যের রুশো, ভলতেয়ার, বোদলেয়ার, আলবেয়ার কামু, জা পল সার্ত, বোভায়া, ভিক্টর হুগো, গুস্তাভ ফ্লভেয়ার, মোপাসা। পড়েছিলাম আমেরিকান ও ব্রিটিশ ইংরেজি সাহিত্যের মার্ক টোয়েন, চার্লস ডিকেন্স, জ্যাক লন্ডন, জর্জ বার্নার্ড শ, সামারসেট মম, অস্কার ওয়াইল্ড, আরনেস্ত হেমিংওয়ে। হারম্যান মেলভিলের মবি ডিক আর তিমি শিকারের হারপুন এখনও দুঃস্বপ্নের মত তাড়া করে বেড়ায়! ১৯৪৭ এর দেশভাগের গাদ্দারকে তখন থেকেই চিনে রেখেছিলাম। বাংলা সাহিত্যের প্রেমে মজেছিলাম, আলাওল, বিদ্যাপতি থেকে পড়েছিলাম। রামায়ণ, মহাভারত, ময়মন্সিংহ গীতিকার রসে ভজেছিলাম। রবীন্দ্রনাথ এবং নজরুলের প্রধান রচনাগুলো পড়ে ফেলেছিলাম। জীবনানন্দ, তিরিশের পাঁচ কবি, থেকে জসীম উদ্দিন, ষাটের দশকের শওকত ওসমান, শওকত আলী, মাহমুদুল হক, আবুল হাসান, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, মহাশ্বেতা দেবী থেকে মামুন হোসাইন, রুদ্র মহাম্মদ শহিদুল্লাহর সাথে গভীর অচ্ছেদ্য প্রণয় ঘটে গিয়েছিল। মনে আছে, ঠিক সেই সময়েই তসলিমা নাসরিনের নির্বাচিত কলাম প্রকাশ শুরু হলে আমাদের মধ্যে তোলপাড় ঘটে যায়। নীলিমা ইব্রাহীমের "আমি বীরাঙ্গনা বলছি"র খণ্ডগুলোও আমাদের হাতে আসে। সেসব নিয়ে আমরা ভীষণ উত্তেজিত হয়েছিলাম। ঠিক সেই সময়েই সুমনের হাল ছেড়ো না বন্ধু, ভীষণ অসম্ভবে তোমাকে চাই, চিরতরে বুকে বিঁধে গিয়েছিল। যদি আর কিছু অর্জন করতে নাই পারি, কেবল এই ধনরত্নের ভাণ্ডার দিয়েই বাকী জীবন ঐশ্বর্যের মধ্যে বৈভবময় কেটে যাবে।
অনেক লেখা সায়ীদ স্যার নিজে থেকে আলাপ করতেন আর আমাদেরও আলাপে প্রলুব্ধ করতেন। গল্প, কবিতা, উপন্যসের সেই পাঠ ছিল এক উস্কানিমূলক মনোমুগ্ধকর পারফরম্যান্স! সেসব ছিল অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদের finest hours। সে ছিল আমাদের বোদলেয়ারের মত এক মাতোয়ারা হওয়ার যুগ। তারপর অনেক বছর হয়, সেই সব তরুণ বন্ধুরা বিভিন্ন পথে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেছে। কেউ সংসারী, কেউ বিবাগী হয়েছে! কেউ স্থিতাবস্থার মধ্যে রয়ে গেছে, কেউ সমাজ বদলের রাজনীতিতে ঢুকেছে, কেউ লিখেছে, কেউ লেখেনি। কেউ খ্যাতিমান রথী- মহারথী, কেউ নীরব-নিরালা । কিন্তু যেন আজও দেশজুড়ে পুরানা সেই তরুণমানসের এক বন্ধুত্ব্বের সমাজ এক অদৃশ্য সুতোয় গেঁথে রয়েছে।
সায়ীদ স্যারের জীবনের অনেক মুহূর্তকেই তাঁর finest hours বলাও যাবে না। কিন্তু বাংলাদেশে ১৩, ১৪, ১৫, ১৬, ১৮, ১৯, বছরের বাচ্চাদের মনের জগতকে নিয়ে ভাবার অতি জরুরী কাজটি আর কে করছে আমাদের জানা নেই। তাদের সৎসঙ্গ করার সুযোগ কবে কে কোথায় দিয়েছে ? গত তিরিশ বছরেও খুব বেশী কাউকে দেখতে পাই নাই। এ জাতির বিপ্লবী চৈতন্য কে কেমনে গড়বে ভেবে না পাই। না দেখি কোন ভূমিসংস্কার আন্দোলন, না চৈতন্যের তেভাগার দাবী। বাংলাদেশে কিশোর-তরুণদের বাংলা ভাষায় গদ্যে-পদ্যে লেখার কলাকৌশল হাতে কলমে বিনা পয়সায় শেখানোর জন্যে জীবন ব্যয় করবার মত এমন পাগল আর কেউ আছে কিনা জানি না। কে কে জীবনের এতোগুলো ঘণ্টা, দিন, মাস, বছর বিনা বেতনে স্বেচ্ছাসেবায় বাচ্চাদের সাথে বসে ছিলেন, সময় দিয়েছিলেন? নন্দনকাননের মালীর মত কে বা কারা পিপাসিত-ক্ষুধার্ত বাচ্চাদের হৃদয়-মনের পরিচর্যা করেছেন ? তাদের সৃষ্টিশীলতার মাঠে চাষাবাদ করেছেন? তাদের মনের বাগানে ফুল ফোটানোর চেষ্টা করেছেন?
বাংলা ভাষাকে, বাংলা সাহিত্যকে এমন প্রগাঢ় ভালবাসতে কাউকে দেখেছি কিনা মনে করতে পারি না। তরুণদের মনে, হৃদয়ের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বাংলার প্রতি গভীর ভালবাসা এমন অর্গানিকভাবে রোপণ করে দিতে আর কাউকে পাই নাই। বই পড়ার মত নিরামিষ, নিরীহ একটা বিষয়কে এমন তীব্র আবেদনময় করে তুলতেও আর কাউকে দেখি নাই। আমি নিজেও সারা জীবনের চেষ্টায় আমার ছাত্রছাত্রীদের বইয়ের প্রতি বিন্দুমাত্র মনযোগী করে তুলতে পেরেছি বলে মনে করি না । বিসিএসের মরণ বাঁশীওয়ালা আমার ছাত্রছাত্রীদের হাইজ্যাক করে নিয়ে গেছে। জাতি যে বইপড়ার বিরুদ্ধে বাঘে-গরুতে একজোট, সেটা তরুণদের আর তাদের হর্তা-কর্তাদের, নেতাদের, বড় ভাইদের, ইনফ্লুয়েন্সারদের আলাপ থেকেই স্পষ্ট। সাহিত্য, ক্লাসিক ইত্যাদি উচ্চবর্গীয় ও পরিত্যাজ্য! ওদিকে নিম্নবর্গীয় সাহিত্য ও চৈতন্যের আন্দোলন গড়ে তুলবার কাজটি ঘোলা জলে আদৌ কেউ করছে কিনা, করলে কে যে কোথায় করছে তাও ঠাহর করা মুস্কিল।
বাংলা মোটরে আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদের ৫০তম জন্মদিন উদযাপনের আনন্দ আড্ডার কথা স্পষ্ট মনে আছে। মাতৃগর্ভ থেকে নেমে পিতার হাত ধরে পৃথিবীর পথে চলবার সময়, পৃথিবীর পাঠশালায় দীক্ষা নেয়ার সময় কিছু অতিকায় দানবদের দেখা পেয়েছিলাম। এই অতিকায় দানবদের কাঁধের উপর দাঁড়াতে পেরে সামান্য আমি যা দেখতে পেয়েছি, আমি যা করতে পেরেছি, আমি যা হতে পেরেছি, তা অসামান্য, তার মূল্য পরিমাপ করা অসম্ভব। আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ সেই দানবদের একজন, যিনি একদিন ১৬ বছরের নাম না জানা এক তুচ্ছ মেয়ের কথা শুনেছিলেন, তার বুদ্ধিবৃত্তিকে সক্রেতিস, তলস্তয়, বোভায়া, রোকেয়ার মতই স্বীকৃতি দিয়েছিলেন, চিরজীবনের জন্যে স্থির আত্মবিশ্বাস মনের গভীরে বুনে দিয়েছিলেন, প্রমিথিউসের অন্ধ আশাবাদ রক্তে মিশিয়ে দিয়েছিলেন।নিজেকে নিশ্চিতভাবে এক একজন খনা, জোয়ান অব আর্ক, ভার্জিনিয়া উলফ, লক্ষ্মী বাই ভাবতে শিখিয়েছিলেন। আমার মত এমন অসংখ্য বাচ্চাদের গনগনে উত্তপ্ত হৃদয়ে তুলকালাম আঘাত করে মিডিওকার জীবনকে প্রত্যাখ্যান করতে আহ্বান করেছিলেন। তিনি ঠিক এমন করেই জাতির বিশ্বাস জাগাতে চেয়েছিলেন। নিজেকে বিশ্বাস করবার, নিরাসক্ত প্রেমের মধ্যে ডুবে কাজ করবার আর প্রবলভাবে বাঁচবার কথা বলেছিলেন। আর সেই জন্যে মধ্যবিত্ত জীবনের জন্যে আরামদায়ক অধ্যাপনার নিশ্চিত সরকারী চাকুরী মাঝপথে ছেড়ে দিয়ে নিজেকে সম্পূর্ণ উৎসর্গিত করেছিলেন।
চিন্তা করাই তো রাজনৈতিক। পড়া একটি রীতিমত আবশ্যিক রাজনৈতিক কাজ। লেখা একটি বিপদজনক রাজনৈতিক কর্মসূচী। চিন্তা, করা, পড়া, লেখা, সংগঠিত হওয়া, সৃষ্টিশীল জীবন্ত আনন্দময় সাথীত্বের সমাজ গড়ে তোলা - এইসব ভয়ংকর কৌশল আপনার সান্নিধ্যে আমরা শিখেছিলাম। আপনার রাজনৈতিক বা অন্যসব ভুলগুলোও আমাকে কেবল সতর্ক এবং সজাগই করেছে।
আমরা কি নিজের দুই পায়ে হাঁটতে শিখিনি? আমাদের নিজের বুদ্ধিবৃত্তির উপর ভরসা করবার অগাধ সাহস কি আপনি দেন নি? যে কোন কিছুকেই, সে যত মহানই হউক না কেন, আমরা কি তন্ন তন্ন করে পরীক্ষা করতে প্রস্তুত নই? প্রশ্ন করবার দুঃসাহস কি আমরা আপনার কাছ থেকে অর্জন করিনি? এমনকি আপনার চিন্তা ও পথকেও?
আমরা বলতে পেরেছিলাম কিছু। আপনি যে আমাদের শুনতে পেয়েছিলেন, আমার প্রজন্মকে বুঝতে চেয়েছিলেন, সেজন্যে আপনি যে পরিপূর্ণভাবে আত্মনিবেদন করেছিলেন তার জন্যে গভীর কৃতজ্ঞতা ও অনুরাগ ! আজও ৮২ তম জন্মদিনে যদি এই কথা না বলি, তবে আর কবে বলবো?
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা আগস্ট, ২০২১ সকাল ৭:২৪