জন্ম বলতে আসলে কি বুঝায় সেটা আমি এখন পরিস্কার না। মায়ের গর্ভে যেদিন ভ্রুন সৃস্টি হয় সেদিন বা অন্য কিছু প্রাণী যেমন পাখির ক্ষেত্রে ডিম সৃষ্টির দিন থেকেই বায়োলজিক্যাল জন্ম হলেও আমরা জন্ম ধরি যেদিন পৃথিবীতে ভূমিষ্ট হয় অথবা ডিমের খোলস ভেঙে যেদিন বের হয়। একটা জীব দেহের প্রতিটা কোষ জীবিত ধরলে ভ্রূনটাও জীবিত।আর জীবিত মানে তার জন্ম হয়েই গেছে। যদিও কোন ধর্ম বা সমাজ তা স্বীকার করে না। অতএব জন্মের সঙ্গা ধর্ম বা সমাজে বিজ্ঞান সম্মত না। এমনকি এখনকার যুগেও সমস্ত দেশের সরকারও এই নিয়মে চলছে। এটা গেল জন্ম নিয়ে বিতর্ক।
এখন আসি মৃত্যু কথা নিয়ে যার অনেক রকম মতবাদ আছে তবে এক্ষেত্রে মোটামুটি ভাবে বিজ্ঞান সম্মত মতবাদকেই সমর্থন করে সবাই। তবে আমার দ্বীমত আছে। স্বভাবিক ভাবে মৃত্যু বলে কিছু আছে বলে আমার কাছে মনে হয় না। আমি বলতে পারি ধ্বংস হয়ে যায় সবাই। একটু ব্যাখ্যা করি তবে আশা করব যারা এই বিষয়ে অনেক জ্ঞান রাখেন পারলে আমার ভুল ভাঙ্গিয়ে দেবেন।
এক কোষী প্রাণীর আসলে কোন স্বাভাবিক মৃত্যু নাই এবং বিজ্ঞানের কথা আমার না। এক কোষী প্রণী পরিণত হলে ভেঙ্গে দুটো হয়, দুটো থেকে চারটা এভাবে বাড়তেই থাকে ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত। কিন্তু আমার প্রশ্ন বহুকোষী প্রাণী যেমন মানুষ নিয়ে। মানুষকে কখন আমরা মৃত বলি? যখন সে নড়াচড়া করে না, কথা বলে না বা উত্তর দেয় না, কোন আবেগ বা অনুভুতি থাকে না। নিথর হয়ে পড়ে থাকে। তবে নড়াচড়া করলেও কিন্তু মৃত হতে পারে যেটাকে ক্লিনিক্যাল ডেড বলে মেডিক্যাল এর ভাষায়।
মানুষের শরীর অনেকগুলো অঙ্গপ্রতঙ্গ নিয়ে গঠিত যাদের প্রত্যেকের আলাদা আলাদা জীবন ও কার্যক্রম রয়েছে। যেমন ঋদযন্ত্র, কিডনী, ফুসফুস, যকৃৎ ইত্যাদি। এছাড়াও মানুষের শরীরের কোটি কোটি কোষেরও আলাদা আলাদা জীবন আছে। যেকারনে কোন একটা অঙ্গ বা কোষ কাজ না করলে আমরা প্রতিস্থাপন করে আবার মানুষকে সচল করতে পারি। সুতরাং একটা মৃত বলে যে মানুষটাকে ফেলে রাখি তার শরীরের ৮০ শতাংশ মটামুটি ভাবে ৬ ঘন্টা পর্যন্ত জীবিত থাকতে পারে। সমস্যাটা হয় তখন যখন মস্তিষ্ক অকার্য্যকর হয়ে সমস্ত অঙ্গপ্রতঙ্গ পরিচালনা বন্ধ করে দেয় অথবা অন্য কোন অঙ্গের অকার্যকারীতার কারনে মস্তিষ্ক কায করা বন্ধ করে দেয়। বা আঘাত জনিত কারনেও হতে পারে। মস্তিষ্কের অনেকগুলো কাজের মধ্যে দুটো প্রধান বৈশিষ্ঠ্য হল পরিচালনা বা প্রসেসিং ও অন্যটা হল তথ্য সংরক্ষন বা ডাটা স্টোরেজ। মূল সমস্যাটা হয় যখন প্রসেসিং ইউনিট অচল হয়ে যায়। এতে ঋদযন্ত্র ও ফুসফুস বন্ধ হয়ে গেলে রক্তবাহিত অক্সিজেনের ও খাদ্যের অভাবে অন্য সব অঙ্গপ্রতঙ্গ ও কোষগুল ধীরে ধীরে অকেজ হয়ে জেতে থাকে। এটাকেই আমরা মৃত্যু বলে চালিয়ে দেই। তবে একমাত্র মস্তিষ্ক অচল না হলে কৃত্তিম ভাবে যন্ত্রের সাহায্যে মানুষকে বাচিয়ে রাখা সম্ভব। মস্তিষ্ক অচল হলেও বাচিয়ে রাখা সম্ভব তবে আবেগ ও হুষ না থাকায় তাকে ক্লিনিক্যাল ডেড বলে। তবে এরকম মৃত অবস্থায়ও অনেকে বড় হয় এমন কি সন্তানও জন্ম দেয়।
এখানেই আমার প্রশ্ন যে মৃত হলে আবার সন্তান জন্ম দেয় কেনো, এটা কি মৃত মানুষের কাজ হতে পারে নাকি। অনেক অঙ্গই ডাক্তাররা প্রতিস্থাপন করতে পারলেও অনেক গুলো এখনো পারে না। এর জন্য যদি অন্য অঙ্গ অকার্যকর হয়ে মানুষের কার্য্যকারীতা বন্ধ হয়ে যায় তাকে আমরা মৃত বলব কেন। এটাত আমাদের ব্যার্থ্যতা যে আমরা ঐ বিষেশ কিছু অঙ্গ এখনো প্রতিস্থাপন করতে শিখি নাই। যখন শিখে যাব তখন কি হবে। তাহলে মৃত্যুটা কোথায় যাবে।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মে, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:২৪