somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধুর্ত অথচ নির্বোধ মানুষ!

২৩ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১১:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার রুমে একজোড়া ঢাউস সাইজের টিকটিকির বসবাস ছিল। ঘুম থেকে উঠে হঠাত মাথার ওপর তাদের চলাচল দেখে ডাইনোসর যুগের কথাও ভেবেছি কয়েকবার। গা শিউরেও উঠেছে দুএকবার। দীর্ঘদিন আমার রুমে বসবাসের পর কিছুদিন আগে দেখি তাদের ৩ টা বাচ্চা হয়েছে। ২টা তুলনামূলক বড় এবং ১টা একটু কৃশকায়। আগে বড় দু'টার উপদ্রুপ সহ্য করা যেত কিন্তু বাচ্চাকাচ্চাসহ পাঁচ'টা টিকটিকি একটা রুমে দাপিয়ে বেড়ানোর ব্যাপারটা সুবিধাজনক হবেনা বলেই মনে হল। কোনদিন যে আমাকেই তাড়া করে রুম থেকে বাহির করে দেয় তা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় পড়ে গেলাম।

মাত্র কদিন আগে এক ভর দুপুরবেলায় দেখি ঢাউস সাইজের টিকটিকিটা কৃশকায় যে বাচ্চাটা ছিল সেটাকে খপ করে ধরে ফেলল। চোখমুখে তার শিকারীর উন্মাত্ততা। আস্তে আস্তে সে পুরো বাচ্চাটিকে গিলে ফেলল। আমি স্পষ্ট দেখতে পেলাম টিকটিকিটার মুখের সামনে বাচ্চাটার লেজ এদিকওদিক নড়ছে। প্রথমে বিশ্বাসই হচ্ছিল না যে, টিকটিকি তার নিজের সন্তানকে এভাবে খেয়ে ফেলতে পারে! চিন্তায় পড়ে গেলাম তার কি খাবারের অভাব পড়েছিল? নাকি এটা তার স্ত্রীর অবৈধ সন্তান?(লোল) ঠিক কি কারণে খেয়ে ফেলল?
এই লোমহর্ষক ঘটনা দেখার পর কয়েকদিনের মধ্যে সব বেমালুম ভুলে গেলাম। রুমে এদিক সেদিক দেখি কোন টিকটিকিই নাই। সকালে ঘুম থেকে উঠেও দেখিনা, রাত্রে টিউবলাইটের পাশে ঘাপটি মেরে থাকাও দেখি না। খুব আশ্চর্য হলাম তাদের এই কোথাও না থাকা দেখে। তারপর বইপত্র ও ব্যাগ রাখার এক যায়গায় দেখি ২ টা বাচ্চা বইসা রইছে কিন্তু সারা রুম খুঁজেও তাদের পিতা মাতাকে পেলাম না। অবশেষে অনেক ভাবনার পর রহস্য উদঘাটন করতে পারলাম যার কারনে লিখতে বসা।

প্রকৃতিতে কিছু প্রাণী নিজের অফস্প্রিংকে (সন্তানকে) হত্যা করে তাদের বাকী অফস্প্রিং-এর সীমিত সম্পদে (খাদ্য, নিরাপদ আশ্রয় ইত্যাদি) সুষ্ঠুভাবে বাঁচিয়ে রাখার জন্যে। সোজা কথায় তাদের বংশধরের বেটার লিভিং যাতে হয়। তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন ভালোভাবে সাসটেইন করতে পারে। এটি ইঁদুর, সাপ, টিকটিকি সহ আরো কিছু রেপটাইলের মধ্যে দেখতে পাওয়া যায়।
এবার আমার রুমের টিকটিকি প্রসঙ্গতে ফিরে আসা যাক। প্রথমে বাচ্চা টিকটিকি ৩ টার মধ্যে যেটা অডম্যান মানে দুর্বল বা অসম সেটা কদিন অবজার্ভ করে পিতা নিজেই সিদ্ধান্ত নেয় যে কোনটাকে মেরে ফেলবে। নিশ্চিত হলে সেটাকে নিজেই হত্যা করে খেয়ে ফেলে। এরপর তারা তাদের এতদিনের জায়গাটা বাঁকী দুটিকে দিয়ে চলে যায় অন্য কোন বাড়িতে বা ঘরে।
একঘরে ২ জোড়া বা চারটা/পাচটা টিকটিকি আপনি দেখতে পারবেন না। পাইলেও খুবই বিরল।

এই যে এমন প্রাচীন একটা প্রাণী (যেহেতু রেপটাইলরা মানুষের অনেক আগে পৃথিবীতে এসেছে) ছোট্ট ঘিলু নিয়েও টিকে আছে লাখ লাখ বছর এর কারণ এরা জানে কিভাবে প্রকৃতিকে নষ্ট বা ওভারইউজড না করে নিজদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা সম্ভব।
পৃথিবীর বর্তমান বয়স প্রায় ৪ হাজার ৬'শ মিলিয়ন বছর। হিসাবের সুবিধার জন্যে আমরা পৃথিবীকে যদি ৪৬ বছরের একজন নারী হিসাবে ধরে নিই তবে ৪০ বছর বয়সে পৃথিবীর গর্ভে প্রথম প্রাণের সূচনা হয় বিভিন্ন এককোষী প্রাণীর জন্মের মধ্য দিয়ে। একসময় পুরো পৃথিবী দাপিয়ে বেড়ানো ডাইনোসরের মত রেপটাইলরা আসে ৪৫ তম বছর বয়সে।

আর সবচেয়ে চমকপ্রদ তথ্য হচ্ছে মানুষ এসেছে এই ৪৬ বছর পূর্ণ হওয়ার ঠিক ২ ঘন্টা আগে!!! সেই সাপেক্ষে আমাদের বর্তমানের বিজ্ঞান, ধর্ম, সংস্কৃতি, সভ্যতা সব কিছু তৈরি হয়েছে মাত্র চোখের পলক ফেলার মত সময়ে।

অথচ এই অতিশয় অল্প সময়ে আমরা আমাদের এই ধারক ধরিত্রী মাতাকে চষে ফেলেছি, দূষিত করে ফেলেছি প্রায় প্রতিটা উপাদান। প্রতিদিন দুমড়ে মুচড়ে, পাতাল খুঁড়ে কিংবা আকাশ ভেঙে ইচ্ছামত ভাঙা গড়ার খেলা খেলে যাচ্ছি নিজেদের খুশিমতো। যেন পৃথিবীতে মানুষই সব বাকী সব প্রানী বা উদ্ভিদরা জঞ্জাল, আমাদের দয়ায় তাদের বাঁচা-মরা।

আমরা জীবজগতের সবচেয়ে বেশী ঘিলুধারী প্রানী হয়েও নিজেদের অফস্প্রিং এর জন্য সাসটেইনএবিলিটির হিসাব করিনা। সম্পদের হিসাব করিনা। আগে সংখ্যা বাড়াই তারপর তাদের ভবিষ্যৎ নিয়া প্রচুর চিন্তা করি, গবেষণা করি, হাইব্রিড ফসল বানাই, বন কেটে ফসলের ক্ষেত বানাই, কলকারখানা বানাই, আকাশচুম্বী বাক্স বানাই ।

এই হঠাত ২ ঘন্টা আগে আবির্ভূত অতিরিক্ত ধুর্ত অথচ নির্বোধ প্রানীর এই অত্যাচার ধরিত্রী মাতা আর কতদিন টলারেট করে এটাই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। হয় এরা নিজে নিজেই ধ্বংস হয়ে যাবে নতুবা প্রকৃতি/পৃথিবীই এদের ধ্বংস করবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১১:২৬
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×