শুরুতেই বিভিন্ন পারিবারিক দিনকে “দিবস” হিসেবে উপস্থাপন (আসলে আসল বিষয় সেটা নয়) করার একটা ট্রেন্ড গত কয়েক দশকে বেশ জোরালো হয়েছে। যেমন ধরুন – মা দিবস, বাবা দিবস, ভালবাসা দিবস। এগুলো পরিবারের সাথে খুবই সম্পৃক্ত।
আপনার মনে হতেই পারে এতে সমস্যা কি? দোষেরই বা কি?
এই সমস্যার আগে বলুন তো, খাবার প্রতিদিন নিয়মমত পরিমিত খাওয়া ভাল নাকি বছরে একবারই খাওয়া ভাল বা সারা বছর যেনতেনভাবে খেয়ে একদিন ঘটা করে, উৎসব করে জম্পেশ খাওয়া ভাল?
উত্তরটা আশা করি দিবেন ও নিজের কাছে লিখে রাখবেন।
এর উত্তরটা সকল ডাক্তার, বিজ্ঞজন – ই নিয়মিত, পরিমিত খাবার পক্ষেই মত দিবেন। এর বাইরে দিবেন না। (যারা খুবই দরিদ্র, এক বেলাই খেতে পায় না – এমন কারও কথা বলা হয়নি)
আপনি আপনার মা-বাবাকে ভালবাসেন, যত্ন করবেন – এটাই স্বাভাবিক। আর সেটা নিয়মিতই আপনার সাধ্যের ও সামর্থ্যের মধ্যে। এর বাইরে এই আদর ভালবাসা কেবল বিশেষদিনের জন্য রাখলে সেটা হয়ে যায় স্মৃতির দিবসের মতন। যেমন কারও প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী, মৃত্যুবার্ষিকী – ইত্যাদির মতন। কেননা, মৃতদেরকে (সাধারণভাবে) প্রতিদিন বা নিয়ম করে স্মরণ করা হয় না। কিন্তু জীবিতদেরকে প্রতিদিন বা নিয়মিত স্মরণ করতে হয়, যত্ন নিতে হয়। নইলে সম্পর্ক টিকে না। ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। আর এটা সর্বজন বিদিত।
আপনার মা-বাবা নিশ্চয়ই কেবল একদিনের জন্য আপনার মা-বাবা নয়। সেটা সব সময়ের জন্যই। তাই এই বিশেষদিন করা, বিশেষদিনের আয়োজন আপনার জন্য, আমার জন্য কোনভাবেই উপকারী ও কার্যকরী নয়। এটা বিশেষভাবে আয়োজন করলে কার লাভ? অবশ্যই কর্পোরেটদের, আর পূর্ণ ক্ষতি আমার আপনার। কারণ, ঐ একদিন আপনি খরচ করছেন বেশি করে। কিন্তু ঐদিন ছাড়া বাকীদিন আপনার আমার খবর থাকে না। উনারা থাকে অবহেলায়। আপনি আমি Taken for granted হিসেবে নিয়ে নিচ্ছি। সম্পর্কগুলো টিকছে না। একাকিত্ব, হতাশা বা ডিপ্রেশন – ইত্যাদির বসবাস ও চাষাবাদ হচ্ছে ব্যাপকভাবে। আর এর চিকিৎসায় কাড়িকাড়ি অর্থ, শ্রম যাচ্ছে স্লো পয়জনের মতন; যার খবর কেউই রাখছি না।
এবার আসি, আলুবাসা দিবস নিয়ে। ভালবাসা – এর সাথে দায়িত্ব এমনিতেই চলে আসে। যত্নআত্তির বিষয়ও চলে আসে। ভ্যালেন্টাইনের মূল টার্গেট অবিবাহিতরা। বিবাহ ছাড়া নারী-পুরুষের সম্পর্ক শয়তানের খুশির ও পছন্দের লিস্টের এক নাম্বার সম্পর্ক। এতে লস আমার, আপনারই। এটাকে প্রমোট আমার আপনার বর্তমান ও ভবিষ্যৎকে শেষ করে ফায়দা ও কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার চাল।
মানুষের মধ্যে নিষিদ্ধের প্রতি আকর্ষণ থাকেই। সভ্য মানুষ নিজের প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করে। সেটাকে প্রমোট করে না। বিয়ে মূলত সবাইকে জানিয়ে করা হয়। আপনি চুপিচুপি কি বিয়ে করতে পারবেন? পারলেও বিয়ের পর স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরাঘুরি, সন্তানদের নিয়ে স্কুলে যাওয়া, শ্বশুড়-শ্বাশুড়ির খেদমত করা, পারিবারিক অনুষ্ঠান করা – ইত্যাদি কাজের মাধ্যমে আপনার বিবাহের কথা প্রকাশিত হয়েই যাবে। কিন্তু বিবাহের আগের সম্পর্কের কোন ভিত্তিই নাই – না আইনগত, না সামাজিক, না ধর্মীয়, না মানসিক, না আত্মিক। প্রেমে পড়লে লোকেরা সেটাকে লুকিয়ে রাখতেই পছন্দ করে। লুকিয়ে লুকিয়ে “এডভেঞ্চার” – করে। প্রথম প্রথম মনে হয়, এ এমন আর কি! কিন্তু আস্তে আস্তে রুম ডেট, গাড়ি ডেট, গণ ডেট – ইত্যাদি নানা রকমের ঘটনার অবতারণা ঘটে। কারণ, জৈবিক তাড়না – এটাকে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। আর হাতের কাছেই সহজলভ্য উপকরণ পেলে তো আর কিছু বলার থাকে না। কারণ, প্রমিকা (বিয়ে করা বউ নয়) প্রেগনেন্ট হলে তার দায়িত্ব বফ নেয় না, শুধু নেয় না তাইই না – নেবার কোন সুযোগও থাকে না। কারণ, যারা ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড করে তারা তো জানেই না কার থেকে প্রেগনেন্ট হল! আর আইনিভাবেও কেউ বফকে বাধ্য করতে পারে না। আপনি আপনার বফ থেকে আপনার ভরণপোষণ দাবি করতেই পারবেন না; পারবেন না আপনার সন্তানের (পিতৃপরিচয়হীন – মানে জা-র*জ/) খরচ দাবি করতে। আর শুধু মজা মজা নয়। এই সম্পর্কগুলোতে যারা থাকে তারা প্রথমে খুব মজায় থাকে, কিন্তু যেহেতু এটা কোন দায়িত্ব ছাড়া মজা তাই এটার মার্জিনাল ইউটিলিটি কম, বা থাকে না। অনেকটা নেশার মত। একটা সময় আর স্বাভাবিক কিছু ভাল লাগে না। একজনেও পোষায় না। এই প্রেমের নেশার ডোজ বাড়াতে হয়। সবার যে এমনটা হয়, সেটা নয়, কিন্তু অনেকেরই এই অবস্থা। এই কয়দিন আগের আনুশকার মৃত্যু – উভয়ের সম্মতিতে হলেও এই নেশার ডোজ (জৈবিক তৃপ্তি) বাড়াতে বাড়াতে সেটা অস্বাভাবিকতায় চলে যায় ও হিতাহিত জ্ঞানশূণ্য হয়ে মারা যায়। এই দায় কার?
আবার, “ছ্যাঁকা” খাওয়াটা খুব স্বাভাবিক। এরপর কি হয়? হতাশা, ড্রাগের নেশা, আত্মহত্যা, অন্যদের ছ্যাঁকা দেয়া, প্রতিশোধ নেয়া – ইত্যাদির অবতারণা হয়। এসবের পিছনে অর্থও তো লাগে! এই আলুবাসা দিবস পালনেও তো অনর্থক অর্থের খরচ হয় – ফুলে, শাড়িতে, গাড়িতে, নারীতে, বাড়িতে, লিটনের ফ্ল্যাটে, ডার্ক ক্যাফেতে, রুম ডেটে, হোটেলে – এসবের কি আদৌ দরকার ছিল?
বিয়ে করে একজন নারীকে পেতে যথেষ্ট মেহনত দরকার – অর্থ, সামাজিকতা, লৌকিকতা, পারিবারিক বিষয়াদি – ইত্যাদি তো রয়েছেই। মোহর না দিয়ে তো আর স্ত্রীর ধারে কাছেও যাওয়া যায় না। কিন্তু এত কষ্টের পর স্ত্রী কিন্তু আপনারই। তাকে বিদায় দিতে হলেও আপনাকে যথেষ্ট বেগ পেতে হবে, খরচ ত হবেই।
বিপরীতে, অবৈধ ও অনৈতিক প্রেমে সাময়িক “সুখ” পেলেও এরপর কি হয়? জীবন থেকে কাউকে বিশ্বাস করাটাই উঠে যায়। মানুষ হিংস্র, সন্ত্রাসী হয়ে উঠে। সাইকোপ্যাথ হয়ে উঠে। এভাবে আপনার আমার সুখের দিবসে লাভ হয় কর্পোরেটদের, আপনি আমি ডিপ্রশনে থাকলেও সেটার লাভ তাদেরই হয়। কিন্তু বিবাহে তাদের লস হয়। কারণ, বিবাহ থেকে, নিয়মিত মা-বাবার সেবা করে আপনি প্রকৃত সুখ, শান্তিতে থাকবেন। আপনার সন্তান আপনারই থাকবে, আপনার বাধ্য থাকবে।
আসুন, এসব অনৈতিক দিবস পালন বাদ দিই। ক্ষণিক অবৈধ মোহে পা না দিয়ে দায়িত্ব নিতে শিখি আর নিজেরা ভাল থাকি।
- সাজ্জাদ হোসেন
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ২:৩৩