somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লুকিয়ে বিয়ে আর পারিবারিক বিয়েয় পার্থক্য কী?

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ১২:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লুকিয়ে বিয়ে আর পারিবারিক বিয়েয় পার্থক্য কী?

লুকিয়ে বিয়ে দুইজনে ঝটপট সেরে ফেলে। গয়নাগাটি তো দূরকি বাত, অনেকে শাড়ি-শেরওয়ানিও জোগাড় করে না বা করতে পারে না।
আর পারিবারিক বিয়ে হলো, দুই পক্ষে বিশাল ঢাকঢোল পেটানো হবে। ধারাবাহিকভাবে খালু, চাচা, ছোট আপুরা রাগ করে বেঁকে থাকবে। পাত্র লিপস্টিক একটা কম নিলেও তার চৌদ্ধগোষ্ঠী উদ্ধার হবে। ইত্যাদি ইত্যাদি।

পালিয়ে বিয়ে করলে বলে, তারা দুজন পরস্পরকে ভালোবাসে। নিজেদের ভালোর জন্যই বিয়ে করে নিয়েছে।
আর পারিবারিক বিয়ে? বিয়ের সাতদিন আগ থেকে নানান রকম অনুষ্ঠান শুরু হয়। ঘরের দুয়ার থেকে রাস্তার মাথা পর্যন্ত লাইটিং না হলে মানিজ্জত পাংচার হয়ে যায়। পাত্রের ব্যাপারে সারাক্ষণ বদচিন্তা, সে তো মেয়েকে সুখে রাখবে না! সাজানি এত কম কেন, কৃপণ বংশ নাকি? মেয়ের বাড়ি থেকে টয়লেটের বদনি থেকে শুরু করে সবকিছু আসতে হবে। প্রতি সিজনে পিঠা, মিষ্টি, খাসি ইত্যাদি 'উপহার' আসতে থাকতে হবে। কোনোবার একটু কম হলেই হলো, বাড়ি বাড়ি রটে যাবে, 'অমুকের খেশি ভালো পড়ে নাই'। আরও কত কী!
আমার ধারণা, আলেম কি জাহেল, হাজারটার মধ্যে একটা বিয়ের বিবরণ খুঁজে পেতে কষ্ট হয়ে যাবে, যেখানে অন্তত কথার দ্বারা পরস্পরকে আঘাত করা হয়নি!

এখানে মেয়ের চেয়ে মেয়ের পরিবারের এবং ছেলের চেয়ে ছেলের পরিবারের চাহিদা থাকে বেশি। আর এই বেশির কোন সীমা থাকে না।
মেয়ের চাহিদা কী! মনমতো একজন স্বামী, যে তাকে ভীষণ ভালোবাসবে। সুখে-সবরে সঙ্গ দেবে। বিয়ের দিন তার শখ থাকে সাজগোজের। বিয়ের পরে স্বামী সঙ্গে থাকবে।
কিন্তু তার পরিবার কী চাইবে? দশ লাখ টাকা কাবিন দিতে হবে।
দশ লাখ টাকা কাবিনের যুক্তি কী?
তাহলে ছেলে তাদের মেয়েকে যত-যাই হোক, টাকা পরিশোধের ভয়ে তালাক দিতে পারবে না।
দেখুন ভাই, কাবিন বা মোহরানার টাকা অবশ্যই পরিশোধ্য। আপনি যদি চিন্তা করেই রাখেন, দশ লাখ টাকা শোধের ভয়ে আপনার মেয়েকে সে তালাক দিতে পারবে না, এতে কী হলো? আপনিই পরোক্ষভাবে তার টাকা অপরিশোধ হবে মেনে নিচ্ছেন। আপনার মেয়েও মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছে।
সে টাকা তো হারাল, দুইজনের বনিবনা না হলে সারাজীবন মানসিক টর্চার ভোগ করতে হবে। স্বামী তাকে ছাড়বে না ঠিক, তাকে সময় ও ভরণও দেবে না। গোপনে হয়তো পরকীয়াও করবে! কথায় কথায় খোঁটা ও খোঁচা দেবে। সংসারে অশান্তি করবে।
তারপর বিয়ের দিন বা আগে-পরে প্রায় পরিবারেই দেখা যায়, পাত্রপক্ষকে দৃষ্টিকটু মন্তব্য করে। পাত্রীর স্বজনেরা খুঁটিনাটি প্রসঙ্গেও ঠকে গেছে ভেবে শুরু করে জেরা বকাবাদ্য। ধরুন আপনার ওয়াদা ছিল, বিয়ের দিন দশ কেজি মিষ্টি আনবেন। কোনো কারণে পরিমাণে কম হলো, বা আনতেই পারলেন না। ব্যস, যাবেন কই! শুরু হয় নিন্দা তিরস্কার। এবং বাজেভাবে মহিলাদের ভেতর এই স্বভাবটা অতিমাত্রায় প্রকট। অনুষ্ঠানে আসা পাত্রের আত্মীয়াদের দফাসারা না করে তারা শান্ত হতে পারে না।
এর ফলাফলও হয় খুব বিদঘুটে। এই মেয়ে তো স্বামীর সংসার করে! সারাজীবন কথায় কথায় বিভিন্ন কাজে ও উপলক্ষ্যে তার এসব শুনতে হয়। স্বামীর মুখে, শ্বাশুড়ির মুখে, ননদদের মুখে এসব শুনতে, খোঁচা শুনতে নিশ্চয়ই তার কষ্ট হয়! এর দায় কার? তার ভালোর জন্য বিয়ের আসরে প্রচুর সমাজপ্রথা দেখিয়ে যে বিষ মারল, মেয়েটি কি নিজের পরিবারকে ক্ষমা করতে পারবে?
অথচ আমরা দেখি, আলি রাযিয়াল্লাহু আনহু যখন হযরত ফাতিমা রাযিয়াল্লাহু আনহাকে বিয়ে করতে যান, তার কাছে কিচ্ছু নেই। নবীজি বললেন, আমি যে তোমাকে একটা বর্ম উপহার দিয়েছিলাম, সেটা কই?
তিনি বললেন, সেটা আমার কাছে আছে ইয়া রাসুলাল্লাহ। তবে বেশ পুরোনো এবং খারাপ হয়ে গেছে।
নবীজি বললেন, তা-ই বিক্রি করে দাও।
আলি রাযিয়াল্লাহু আনহু বাজারে গেলেন বর্মটি বিক্রি করতে। উসমান রাযিয়াল্লাহু আনহু এসে চারশ দিরহাম দিয়ে কিনে নিলেন। বললেন, ভাই, এতে তো তোমার প্রয়োজন সারবে!
- হ্যাঁ, সারবে।
- ধরো, এই বর্মটি আমি তোমাকে উপহার দিলাম।
দিরহাম এবং বর্ম উভয়টি নিয়ে তিনি ফিরে এলেন।
বিখ্যাত তাবেয়ি সাঈদ ইবনু মুসাইয়িবের অনিন্দ্য সুন্দরী এক মেয়ে ছিল। খলিফা আবদুল মালিক নিজের ছেলের জন্য প্রস্তাব পাঠালেন। সাঈদ রাজি হলেন না। খলিফা তাকে নানান রকম চাপে ফেলতে শুরু করলেন, তবু দিলেন না।
কিছুদিন পর কুরাইশের এক হতদরিদ্র ছেলে দেখা করতে এল। অনেক দিন পর এসেছে দেখে সাঈদ জিগ্যেস করলেন, এতদিন এলে না কেন?
- আমার স্ত্রী মারা গেছে।
- আমাকে খবর দাওনি কেন, জানাযায় আমিও শামিল হতাম! তুমি দ্বিতীয় বিয়ে করে ফেলেছ?
- আমার কাছে বিয়ে করার মতো জোগাড়যন্ত্র কিচ্ছু নেই।
- তুমি বিয়ে করতে ইচ্ছুক কি না, সেটা বলো!
- জি, ইচ্ছুক।

সঙ্গে সঙ্গে সাঈদ ইবনু মুসাইয়িব নিজের অতি সুন্দরী আদুরে দুলালীকে হতদরিদ্র বিপত্নীক কুরাইশি ছেলের সঙ্গে বিয়ে পড়িয়ে দিলেন।
যুবক তো মহাখুশি, বন্ধুদের থেকে ধারদেনা করে হলেও আয়োজন-অনুষ্ঠান করবে।
সন্ধ্যায় সাঈদ মেয়েকে নিয়ে যুবকের দুয়ারে হাজির। যিনি সাধারণত কোথাও যান না, তাকে দেখে যুবক ব্যস্ত হয়ে উঠল। সাঈদ ইবনু মুসাইয়িব বললেন, তুমি বিয়ে করেছ, স্ত্রী থাকতে একা রাত কাটাবে কেন? এই বলে মেয়েকে ঘরে ঢুকিয়ে দিয়ে বাইরে থেকে দরজা লাগিয়ে দিয়ে চলে গেলেন।
যথাসময়ে যুবক তার নববধূর ঘোমটা তুলে দেখে, সুবহানাল্লাহ, এ তো পরমা সুন্দরী! তারপর জানতে পারে, তার নববধূ কুরআনের হাফেজা, হাদিসের জ্ঞানী। ইসলামের বিধিবিধান সম্বন্ধে যথেষ্ট জানাশোনা শিক্ষিত তরুণী।
মাশাআল্লাহ। এমন একজন মেয়েকে সাঈদ স্বয়ং খলিফার ছেলেকে না দিয়ে তুলে দিলেন অতি সাধারণ এক বিপত্নীক যুবকের হাতে! কোনো কথা কাটাকাটি নেই। পরস্পর দুনিয়াবি চাহিদা নেই। আখেরাতই তাদের আসল। পুণ্যময় জীবনই তাদের আকাঙ্ক্ষা। এ কারণেই তাদের যুগ ছিল সোনালি। তাদের ঘরে জন্মেছে যুগের সেরা ব্যক্তিত্বরা। তারা হয়ে আছেন অনুসরণীয়।
আর আমাদের সমাজে বিয়ে মানে গুনাহের আসর। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত, কী এক অতিমারি রূপ নিয়েছে 'সমাজপ্রথা' নামক বিদঘুটে কার্যকলাপ। করোনার টিকা বেরিয়েছে, কিন্তু বিয়ের আসরে আয়োজনে স্বজনে 'সমাজপ্রথা'র টিকা কবে পুশিং হবে, ইসলামে আমরা কবে ফিরে যাব, আল্লাহ মালুম।
.
মূল লিখা
ওমর আলী আশরাফ
ওয়াসেকপুর
৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২
খানিক পরিবর্তনে, আমি।

কথাগুলা খুবই বাস্তবিক ও হৃদয় বিদারক। কিন্তু কেউ ই এই অপসামাজিকতার অবসায়নে এগিয়ে আসে না।
যতদিন পারিবারিক বিয়ে কঠিন থাকবে, পালিয়ে ও একা বিয়ে আর বিবাহ ছাড়া অবৈধ সম্পর্ক বাড়তেই থাকবে।
আপনার মনে হয় আপনার কচি খোকা বা খুকি কেবল হয়ত ক্লাস ৯/১০/১১/১২ বা অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ে, সে এসবের কি বুঝে?
জেনে অবাক হবেন যে নাটক, সিনেমা ও পিয়ার প্রেসারে অবৈধ প্রেমের যে চাষ চলছে তাতে প্রেম ও অবৈধ শারীরিক সম্পর্ক ও গোটা খানেক ঘফ ভফ না রাখলে, থাকলে "সমাজে" এখন টেকা যায় না! "সমস্যা" আছে বলে ধরা হয়!
তাই সব শেষ হবার আগেই আল্লাহর দিকে ফিরে আসুন।
সামনের যিনা দিবসকে না বলুন, এইটা মূলত ব্যবসায়ীদের কূটচাল। তারা তাদের মুনাফার জন্য আমার আপনার পরিবার শেষ করছে। কারণ, পরিবার শেষ হবার পর "পারিবারিক ফিল" নেবার ব্যবসা চালু করবে!
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ১২:১৯
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×