আমাদের দোহার উপজেলায় কারেন্ট ( বিদ্যুত) আসে সম্ভবত ১৯৭৮-৭৯ সালের দিকে। তাও স্বল্প পরিসরে। অর্থাৎ যেই এলাকাগুলো সাবেকী ( অর্থাৎ চর নয়) সেই এলাকায় সংযোগ দেয়া হয় বিদ্যুতের। বাকি সব এলাকার কোন উৎসব কিংবা যে কোন ধরনের বড় অনুষ্ঠানে আলো দেবার কাজ করতো হ্যাজাক লাইট।
অসাধারণ একটি জিনিস ছিল এই হ্যাজাক। আমি অবাক বিস্ময়ে এর কার্যকলাপ দেখতাম। এই লাইটের ভিত্তিতে ( বেসমেন্ট) ছিল একটি চেম্বার যাতে তেল ভরে তা পাম্প করা হতো। পাম্প করলে তেলের উপর যে চাপ পড়তো তাতে তেলা চিকন নল বেয়ে উপরে উঠে যেত। সেখানে কোন এক বিশেষ ধরনের সুতোর তৈরী ম্যান্টেল বলা হত যাকে তাতে তেলের বাষ্প চলে যেত এবং তা জ্বলে প্রচুর আলো দিত।
হ্যাজাক ছিল গ্রামের মানুষের কাছে বিদ্যুতের আলোর চেয়েও দামী। বড় বড় হাটে, মেলায় দোকানীরা হ্যাজাক সব সময় রেডি রাখতো। বিয়ে শাদীতে হ্যাজাক খুবই কাজে লাগতো। সবাই তো আর হ্যাজাক কিনতে পারতো না। ফলে জয়পাড়া বাজারে হ্যাজাক লাইট ভাড়া দেয়া হতো। যারা মাইক ভাড়া দিত তাদের দোকানে হ্যাজাক লাইটও ভাড়া পাওয়া যেত।
সর্বশেষ জয়পাড়া কলেজ রোডের মিন্টুদের হ্যাজাক লাইট ভাড়া দেয়ার দোকান ছিল। মিন্টুদের দোকানে হ্যাজাক লাইটের সাথে সাথে সাইকেলও ভাড়া দিত। মিন্টু এখন প্যারিসে থাকে। আমাকে মাঝে মাঝে কল দেয়। আলাপের এক পর্যায়ে ওকে জিজ্ঞেস করি- হ্যাজাক লাইটগুলো কি আছে রে দোস্ত?
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১০:০৩