পরিশ্রম যেমন সৌভাগ্যের প্রসূতি তেমনি বাংলাদেশে সকল সমস্যার মূল হল এই জনসংখ্যা সমস্যা। জনসংখ্যা এখন যেন জনবোমা ! এর বিস্ফোরণে কষ্ট পাচ্ছে কত মানুষ! অথচ আশ্চর্যের বিষয় এই যে এ সমস্যাটাকে দেশের নেতা-নেত্রী সহ বেশীর ভাগ মানুষই সমস্যা মনে করতে চান না। তারা মনে করেন, মুখ দিয়েছেন যিনি আহার দেবেন তিনি। আহার তবু এখনো জুটছে। আর ক’ বছর পরে তাও আর জুটবে না।
স্বাধীনতার পর ৫০ বছর পরেও বাংলাদেশের জনসংখ্যা এমন দ্রুত গতিতে বেড়েছে যে, ম্যালথাসের জনসংখ্যা তত্ত্ব আর কোথাও না হলেও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। কেননা বাংলাদেশে সম্পদের পরিমাণ কম। জমির পরিমান এতই কম যে এখানে এখন আধুনিক চাষাবাদ করা আর সম্ভব নয়। সামনে তাই এখন সীমাহীন অন্ধকার। যাবেন কোথায়? এখনই তো বিদেশে বাংলাদেশের শ্রমিকদের চাহিদা নেই। সামনে কেউ তাদের আর নেবে না। কি যে কষ্ট হবে তখন বাংলাদেশের। কাজ নেই । কেবলই হতাশা আর আধার। যাবার কোন জায়গা থাকবে না।
এমন একটা সময় ছিল যখন এমন কোন পরিবারই ছিল যার সন্তান সংখ্যা ১০/১২ টার কম। বাংলাদেশে বর্তমানে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারে সন্তান নেবার হার কম হলেও নিম্ন বিত্ত পরিবারে সন্তান নেবার হার এখনো আশংকাজনক। বস্তির একটি পরিবার মনে করে, একটি সন্তান মানে একটি আয়ের উতস। যদি ৫টা ছেলে থাকে তাহলে রিক্সা চালালেও রোজ কম করে হলেও ৫০০ টাকা নগদ আয়। এমন আয়ের সযপোগ কে ছাড়বে বলুন। তাই তারা বাড়িয়ে চলেছে জনসংখ্যা।
সমাজ বিজ্ঞানের বইয়ে পড়েছিলাম ( ছাত্র জীবনে), দরিদ্রপরিবারে বিনোদনের অন্য কোন ব্যবস্থা না থাকায় স্বামী-স্ত্রী তাদের দাম্পত্য যৌন সম্পর্কটাকেই বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করে। ফলে জনসংখ্যা বেড়ে যায় অবাধ গতিতে। তাতে মনে হতে পারে যে, উচ্চবিত্ত আর মধ্যবিত্তরা বুঝি দাম্পত্য সম্পর্ককে উপভোগ করে না। বড় ভুল দারণা। উপভোগ করুন ঠিক আছে। তার জন্য গন্ডায গন্ডায় আন্ডা বাচ্চা পয়দা করতে হবে কেন?
তবে কেবল যে দরিদ্র পরিবারেই জনসংখ্যা অবাধে বৃদ্ধি পায় তা নয়। অনেক শিক্ষিত মানুষকে দেখেছি বর্তমানে সময়েও ৩/৪ টি বাচ্চা। তার যে কিভাবে এদেরেকে মানুষ করবে আল্লাহ মালুম। এই ধরনের ক্ষেত্রে যা হয় তাহল, কেউ কেউ মেয়ের জন্য আবার কেউ কেউ ছেলের জন্য জনসংখ্যা বাড়িয়ে তুলে। ফলে তাদের হয়তো খুব কষ্ট না হলেও বাজারের উপর সামগ্রিক প্রভাব পড়ে। কেননা, বাজার থেকেই তো তাকে জিনিসপত্র কিনতে হয়।
দু’টির বেশী সন্তান এখন আর কোন দম্পতিরই নেয়া উচিত নয়। ভেবে দেখুন, ১৯৭১ সালের সাড়ে সাত কোটি মানুষ ছিল। এখন ১৬ কোটি। যদি সেই সাড়ে সাত কোটিকে ৮/৯ কোটিতেও ধরে রাখা যেত তাহলে বাংলাদেশ হতে পারত এ অঞ্চলের অন্যতম প্রধান চাল রফতানীকারক দেশ।কারণ বাংলাদেশের মানুষ যেমন উর্ববর তেমনি এদেশের মাটিও উর্বর।
সেটা আর এ জীবনেও হবে না। প্রতি দিন জনস্যখ্যা বাড়ছে আর সেই সাথে বাড়ছে সব ধরনের অপরাধ। সুন্দর একটি দেশ চাইলে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ এখন সময়ের দাবী। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ না করলে আগামীতে বাংলাদেশের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে। তাই সময় থাকতে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য কার্যকর আইন প্রণয়ন করা হোক। ছেলে হোক মেয়ে হোক দু'টি সন্তানই যেন যথেষ্ট হয় সব দম্পতির জন্য। অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ-এর একটি বক্তব্যে দেখলাম তিনি মজা করে বলছেন- সন্তান দুটি হলে উৎকৃষ্ট, দুটি হলে শ্রেষ্ঠ আর না হলে সর্বশ্রেষ্ঠ।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই অক্টোবর, ২০২৩ সকাল ১১:০২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




