আমি যখন অনেক ছোট তখন আমার দাদী মারা যান। তার একটি কথা আমার আজো মনে আছে। তিনি অনেক অনেক রূপ কথার গল্প জানতেন। অসংখ্য পিঠার নাম জানতেন। বানাতে পারতেন। এক দিন রূপকথা শোনার বায়না ধরতেই দারুণ একটি রূপ কথা শুনালেন । শেষে একটি নীতি কথাও বলেছিলেন। তা হল: ঝিনুকের চামচ দিয়ে যদি মেপে মেপেও খরচ করা হয় তাহলে রাজার গোলাও এক দিন শেষ হয়ে যায়। পৃথিবীতে সম্পদের ভান্ডার অসীম নয়।
বাংলায় একটি কথা আছে, মারি তো গন্ডার, লুটি তো ভান্ডার!
সাধারণ প্রজারা ধরেই নিতে পারে যে, রাজার গোলা (ভান্ডার) অনেক বড়। কিন্তু তা যদি মেপে মেপেও খরচ করা হয় তাহলেও তা শেষ হয়ে বাংলায় একটি কথা আছে , মারি তো গন্ডার, লুটি তো ভান্ডার!
সাধারণ প্রজারা ধরেই নিতে পারে যে, রাজার গোলা (ভান্ডার) অনেক বড়। কিন্তু তা যদি মেপে মেপেও খরচ করা হয় তাহলেও তা শেষ হয়ে যাবে। তাই যে কোন কিছু খরচের ব্যাপারে মিতব্যয়ী হওয়া প্রয়োজন। তার মানে, প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত কোন খরচ করা উচিত নয়।
কিন্তু আমাদের দেশের অনেক জায়গায়ই দেখি প্রয়োজন না থাকলেও খরচ করা হয়।
বিধাতার এক অসামান্য দান বাংলাদেশের প্রাকৃতিক গ্যাস। এতে মিথেনের পরিমান অনেক বেশী বলে সরাসরি এই গ্যাস ব্যবহার করা যায়। শোধন করতে হয়না। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ গ্যাস রেখে খেতে পারল না এটাই আফসোস। তাই যে গ্যাসে ৫০০ বছর চলতে পারত তা হয়তো ৫০ বছরেই শেষ হয়ে যাবে।
অনেক আগে ঢাকা শহরে গ্যাসের মিটার ছিল। আমাদের উচিত ছিল মিটারকে আরো উন্নত করে নিখুঁত রিডিং পাবার ব্যবস্থা করা। তা না করে পরবর্তীতে সেই মিটার খুলে নেয়া হয়। ফলে যত পার খরচ কর। কিন্তু বিল আসবে সেই ৫০০ টাকাই । তারপর সব মিটার তারা খুলে নিয়ে গেল। মিটারের কোন দরকার আর রইলো না।
আম জনতা এই সুযোগ লুফে নিল। সেই থেকে কেউ আর ম্যাচ কিনে না। ২ টাকা খরচ করে ম্যাচ কেনা বাদ দিল সবাই । সকালে উঠে সেই যে চুলা জ্বালায় আর রাত ১২ টা না বাজলে নেভানোর নাম করে না। কেনই বা করবে? বিল তো একই । আপনি যদি চুলা জ্বালান তাহলে মাস শেষে যে বিল উঠবে আর না জ্বালালেও মাস শেষে সেই একই বিল উঠবে। আমরা তো আর বোকা নই। বিল যখন দেবই সারা দিন জ্বালিয়েই বিল দেই। তখন থেকে মানুষ কাপড় শুকায় গ্যাসের চুলোয়। মাস শেষে গ্যাসের বিল দেয়। দাম তুলে নিতে হবে না।
এই ভাবে ধীরে ধীরে শেষ হয়ে যাচ্ছে এবং গেছে আমাদের গ্যাস সম্পদ। সেই দিন বেশী বাকি নেই যেদিন ঢাকা বাসীকে আবারও কাঠ,কয়লা, কেরসিন কিংবা এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার কিনে চুলা জ্বালাতে হবে। আজকের গ্যাসের গ্যাসের ব্যবহার সেদিন হবে রূপকথার গল্প। আমরা সেই রূপকথার গল্পে দিকে ক্রমশ অগ্রসর হচ্ছি।
আমার দাদী গ্যাস দেখেছিলেন কিনা আমার মনে নেই। তবে তার নীতি কথাটা আমার চিরদিনই মনে থাকবেঃ চামচ দিয়ে যদি মেপে মেপে খরচ করা হয় তাহলে রাজার গোলাও একদিন শেষ হয়ে যায়।
আমাদের প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ শেষ হয়ে আসছে। কবে এক দিন শুনবঃ কোথাও গ্যাস নেই। আর গ্যাস আসবে না। শত মিছিল করলেও গ্যাস আর আসবে না। হ্যামিলন শহরের সেই দুষ্ট বাশিওয়ালা শহরে সব শিশুদের নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিল । আমাদের গ্যাসও সেই ভাবে হারিয়ে যাবে।
আফসোস!
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:১০