somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বপ্নের শহর আর আর্তনাদ।

২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১২:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ছোট মেরুন রঙের প্যাকেটটা দেখে এগিয়ে গেলাম।নাবিস্কু বিস্কিট।২০ বছর আগের সেই নাবিস্ক বিস্কিট ৩ টাকা নয়ত ৫ টাকা দাম ছিল। অনেকদিন পর দেখলাম।এই বিস্কিটটা যে এখনও পাওয়া যায় এখানে না এলে জানতামই না।
ছোট একটা চায়ের দোকান, পিছনের তাঁকে থরে থরে সাজানো বিস্কিট, চিপস আর নানা রকমের খাদ্য।পানও পাওয়া যায়। এই পুরো এলাকায় প্রায় ১০ কিমি এর মধ্যে শুধু এই একটি দোকান। দোকানদার মধ্য বয়স্ক। এই দিকে বহিরাগত আগন্তুক খুব কম বলে লোকটি আমাদের দেখে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠলো। সে চা এগিয়ে দিলো আর আমি নিলাম সেই নাবিস্ক বিস্কিট।এই দিকে বিদ্যুৎ সরবরাহ নাই,তাই একটা তেলের কুপিই ভরসা, টিমটিম করে জ্বলছে।

আমি যে জায়গাটার কথা বলছি সেটা হচ্ছে সেন্টমারটিন বাজার আর ছেড়াদ্বীপ এর মধ্যবর্তী একটা জায়গা।সেন্টমারটিন বাজার থেকে হেঁটে হেঁটে সেই সকালে ছেড়াদ্বীপ গিয়েছি।তখন দোকানটি চোখে পড়েনি। এখন ফেরার সময় হয়তো রাত বলে চোখে পড়েছে।
এরকম একটা জায়গায় লোকটা কি মনে করে চায়ের দোকান দিলো তাও বুঝছি না।কতোজন কাস্টমারই বা আসে প্রতিদিন এখানে।আর এখন আমি ছাড়া আর কোনও কাস্টমারই নেই।কাস্টমার না থাকলে উনি কি করেন,পুরোটা দিন কি সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে থাকেন।
আমরা যেখানে বসে আছি তার বিপরীতে মানে দোকানের সামনে হচ্ছে বিশাল সমুদ্র।সমুদ্রের উপরে যে চাঁদ উঠেছে তার আলোতেই পুরো এলাকা আলোকিত হয়ে গেছে।সমুদ্রের প্রচণ্ড গর্জন আর ঝলসানো রুপালী আলোয় এক মায়াময় পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
দোকানের সামনে দুটি ছোট বেঞ্চি পাতা রয়েছে।তার উপর বসে চায়ে চুমুক দিচ্ছিলাম।অনেক চিনি দেয়ায় স্বাদটা বিস্বাদ ঠেকছিল।
“কি নাম? – জিজ্ঞেস করতেই বলল “মোখলেস”।
কতদিন ধরে এইখানে?
এই যে ধরেন বাপ দাদা মিলাইয়া ৭০ বছর তো হবেই।
দোকান কেমন চলে?
মোটামুটি ,কোনমতে।
দীর্ঘ পথ হাটার বিরতি হিসেবে একটু বিশ্রাম নিচ্ছিলাম আর টুকটাক কথা চলছিলো। কথায় কথায় জানা গেল তার প্রধান ব্যাবসা হচ্ছে সমুদ্রে মাছ ধরা।অবসর সময়ে , মুলত সন্ধ্যায় দোকানে বসে।অন্যান্য মাঝি ও লোকরা এখানে আড্ডা মারতে আসে।তখন টুকটাক বেচাকেনা হয়।যা চলে তাই লাভ।এখন বুঝলাম ছেড়াদ্বীপ যাওয়ার সময় দোকানটি চোখে পড়লো না কেন।
ভাই কি শহর থেকে আসলেন?
হ্যাঁ – আমি চট্টগ্রামের এলাকার নাম বললাম।
দোকানের পিছনে এতক্ষন যে একটা ১৯-২০ বছরের ছেলে কাজ করছিলো তা এখন খেয়াল করলাম। সে পিছন থেকে মাথা বের করে বলল,
“আপনি তো একদম শহরে থাকেন। সে তো অনেক বড় শহর!সেখানে অনেক বাতি, তাই না?আমার খুব ইচ্ছা শহরে থাকার”।
“বাতি, ঝলমলে সবই ঠিক আছে,কিন্তু এই জায়গা তো সুন্দর, প্রাকৃতিক, স্বপ্নের মতো।এতো শান্তি সেখানের চাঁদের আলোতে নেই। ওখানের চাঁদের আলো প্রচণ্ড ম্রিয়মাণ।আমার তো ইচ্ছে করে আপনাদের এমন সুন্দর জায়গায় পুরো জীবনটা কাটিয়ে দেই।সমুদ্রের পাশে, চাঁদের সাথে”।
“সমুদ্র আর চাঁদ ছাড়া আর কিইবা দেখার আছে এখানে।সমস্ত সুখ তো আপনাদের ওখানে, শহরে।ভালো থাকা, ভালো খাওয়া।একটাই তো জীবন।ভালোভাবে যদি কাটানো না যায় তবে কি আর জীবন? আমি শহরে থাকতে চায়,আমাকে একটা কাজ যোগাড় করে দিবেন”।- ছেলেটার সহ্জ সরল আকুতি।
ছেলেটা কি সত্যিই শহর দেখেনি? এসব সহজ সরল ছেলেরা কি শহরে যান্ত্রিকতার সাথে মিলাতে পারবে?চাঁদের আলো তার কাছে কি আমার মতই সুন্দর মনে হবে।নাকি পুরো শহরকে এরা তাদের মতো সহজ সরল, মায়াময় বানিয়ে ফেলবে।
“নদীর এপার কহে ছাড়ি নিঃশ্বাস, ও পাড়েতে সর্বসুখ আমার বিশ্বাস”।

আমি উঠে দাঁড়ালাম। আমার যেতে হবে আমার গন্ত্যব্যে।নয়তো জোয়ারের পানি এসে ছেড়াদ্বীপকে আলাদা করে দিবে মুল দ্বীপ থেকে। নিজেকে তাগাদা দিলাম।জোরে চলো মাঝি,জোয়ার ভাটার জীবনে থমকে দাড়াতে নেই। দাঁড়ালে আর পৌঁছানো যাবে না গন্ত্যব্যে।


সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১২:৫৯
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×