somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্মৃতির পাতা থেকে-নটরডেম কলেজ (অম্লমধুর নানা অভিজ্ঞতা).........পর্ব ৫ (আমর হৃদয়ে ঝড় তোলা টিনা ম্যাডামের কথা)

১৭ ই জুলাই, ২০১১ বিকাল ৫:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১ম পর্ব
২য় পর্ব
৩য় পর্ব ৪র্থ পর্ব


এই লেখাটি শুরু করার আগে কিছু কথা বলে নেয়া ভাল। হয়ত এই লেখার কিছু কিছু অংশ “নিম্নরুচির” বা “অশ্লীল” মনে হবে, কিন্তু আমি যা লিখেছি তা একজন ১৬-১৭ বছরের ছেলের যৌবনে পদার্পন করার পূর্ব মুহুর্ত সময়ের কথা, সেই বয়সে একটা ছেলের মনের মধ্যে ঝড় বয়ে যায়, যেখানে অনেক ছেলেমানুষী ব্যাপার আছে। হয়ত কিছু সেন্সর করতে পারতাম, কিন্তু পরে ভেবে দেখলাম ওইসব বর্ননা বাদ দিলে সেই ২০০০-২০০১ সালের ১৬-১৭ বছরের কিছু ছাত্রের মন প্রকৃত রূপে বোঝা যাবে না। টিনা ম্যাডামকে খুব অল্প সংখ্যক ছাত্রই চেনে। ২০০১ ও ২০০২ ব্যাচের কিছু সেকশনের ছাত্ররাই তাকে চেনে। কারন তিনি মাত্র কয়েক মাস কলেজে ক্লাস নিয়েছিলেন।

ফার্স্ট ইয়ারের মাঝামাঝি সময়ের কথা। একদিন কানাঘুষা শুনলাম কলেজে একজন সুন্দরী ম্যাডাম এসেছেন, ইংরেজীর টিচার। অসম্ভব সুন্দর নাকি তার রূপ। তাঁর রুপের বর্ননার বিভিন্ন ডালাপালা গজাতে লাগলো। কেউ কেউ বলল একদম কারিনা কাপুরের মত দেখতে, আরেক দলের কাছে শুনলাম ঐশ্বরিয়ার মত। আমি ভাবলাম নতুন কে এসেছে? কলেজের সব ম্যাডামদেরকেই তো চিনি। একদিন লাইব্রেরিতে পড়ার সময় আমার সামনে বসা দুই সিনিয়র ভাইয়ের কথপোকথন শুনলাম। একজনকে বলতে শুনলাম- “ওই ম্যাডামের সাথে চোখাচোখি হলেই আমার অনেক লজ্জা লাগে!!”। এতকিছু শোনার পর ম্যাডামের ক্লাস করার জন্য আমিও উৎসাহিত হলাম। একদিন টেরেন্স স্যার ক্লাস নিতে আসেননি। তার বদলে এলেন সেই ম্যাডাম।মনে হয় সদ্য ইউনিভার্সিটি পাশ করে বের হয়েছেন। তাকে দেখে আমরা সবাই একটু যেন ধাক্কা খেলাম। স্কুলের সব ম্যাডামই শাড়ি বা সালোয়ার কামিয পড়ে আসতেন। টিনা ম্যাডাম সেদিন ক্যাজুয়াল ড্রেসে ছিলেন। জিন্সের সাথে ক্যাজুয়াল কামিজ, ওড়নাটা ঘাড়ের ওপর দিয়ে দুই পাশে ঝোলানো (যেভাবে নেতারা গলায় চাদর ঝুলান)।তাঁর চুল ছিল শ্যাম্পু করা কিন্তু ছড়ানো এবং মুখে মিষ্টি হাসি। উনি মিষ্টি রিনরিনে গলায় বললেন, “ছেলেরা আমি শুধু আজকের ক্লাস নিতে এসেছি। আর আমার নামটা হচ্ছে ‘টিনা’ T…I…N…A ঠিক আছে?”

উনি সেদিন কিছুর উপর লেকচার দিয়েছিলেন, কিন্তু সেটা আমার মনে নেই। কেননা, আমি পুরোটা ক্লাস তাঁর দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম। :#> :#> ক্লাসিক কোচিং এ সেই আপুদের ক্লাস উপভোগ করলেও, সেই দিনের মত এরকম অনুভুতি কখনও হয়নি। সম্পূর্ন অন্য ধরনের একটা কিছু মনের মধ্যে একটা অদ্ভুত অনুভূতির সৃষ্টি করেছিল, হৃদয়ে ঝড় ওঠা মনে হয় একেই বলে। তার রিনরিনে মিষ্টি গলা, হাত দিয়ে চুল ঠিক করে নেয়ার স্টাইল, মায়াময় দৃষ্টির সাথে মিষ্টি মুচকি হাসি ইত্যাদি সব মিলিয়ে যেন আমি আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলাম। :#> :!> ক্লাস শেষের বেল বাজার পর যেন হুঁশ ফিরে পেলাম, আশেপাশে তাকিয়ে দেখি সবার অবস্থাই আমার মত। পুরো সময়টি যেন কয়েক মিনিটে শেষ হয়ে গেল। মনে মনে ভাবলাম “ইশ উনি যদি সব সময় আসতেন”।

আমার ইচ্ছাই কয়েকদিন পর সত্যি হলো। টেরেন্স স্যার একদিন বললেন, কালকে থেকে আরেকজন ক্লাস নিবেন। তো যিনি নিবেন সে আমারই হাতে গড়া ছাত্রী, “মিস টিনা”। ক্লাসের মধ্যে একটা গুঞ্জন শুরু হলো। স্যারকে সবাই বলতে চাইলো না যেতে। স্যার বলল, “দ্যাখো যিনি নিবেন সে আমার মতে খুবই ভাল। আর আমি তাকে বলে দিয়েছি- কেউ যদি বেয়াদবি করে, তাহলে যেন তাকে চুল ধরে চড় মেরে ক্লাস থেকে বের করে দেয়।“ আমি বাইরে বাইরে স্যার ক্লাস নিবেননা দেখে কপট বিষন্নতা দেখালেও ভেতরে ভেতরে উল্লাসে ফেটে পড়লাম। টিনা ম্যাডাম শেষ পর্যন্ত আসছেন আমাদের ক্লাসে। 8-| :#>

যেদিন টিনা ম্যাডামের আসার কথা সেদিন বেশ জোশে ছিলাম। যতই তাঁর ক্লাসের সময় এগিয়ে আসতে লাগলো আমার হার্টবিট বেড়ে যেতে লাগলো। যখন তার ক্লাসের সময় হলো, তখন কিছু ক্লাসমেট দরজার সামনে তাঁর জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। একটু পরে দেখলাম সবাই যে যার সিটের বসে পড়ল। অর্থাৎ ম্যাডাম আসছেন। আমার হার্টবিট আরও বেড়ে গেল।

১০৩ নম্বর রুমে আসতে গেলে জানালার পাশ দিয়ে আসতে হয়। ম্যাডাম যখন জালালার পাশ দিয়ে আসতে লাগলেন তখন দেখলাম, তিনি আকাশি রঙের শাড়ি পড়েছেন, আর চুলে খোঁপা। তাকে সেদিন অপুর্ব লেগেছিল। তিনি এসে রোল কল করার পর তিনি বললেন। “দেখ তোমরা আমাকে টেরেন্স স্যারের সাথে তুলনা করবে না তাহলে ভুল করবে।“ আরও বললেন, “আমাকে তোমাদের ফ্রেন্ডের মতই ভাববে। আমি তোমাদের ফ্রেন্ডের মত, তবে ফ্রেন্ড না।.......তোমাদের গার্ল ফ্রেন্ডের সাথে সমস্যা হলে আমাকে বোলো, আমি শিখিয়ে দেব কি করতে হবে।“ এই কথা শুনে আমরা আরও পেয়ে বসলাম। এরপর ম্যাডাম কথা প্রসঙ্গে আরেকটা কথা বললেন, “আমার দুটি বাচ্চা হয়েছিল দুটাই মারা গেছে।“ শুনে সেদিন মন খারাপ হলেও পরে আমরা ধারনা করেছিলাম যে ম্যাডাম মিথ্যা কথা বলেছিলেন। কেননা অন্যান্য ম্যাডামদেরকে মিসেস অমুক বলে সম্বোধন করা হতো। কিন্তু টেরেন্স স্যার ম্যাডামকে মিস টিনা বলেছিলেন। ম্যাডাম হয়ত আমাদের মত “অতিভদ্র টাইপ” পোলাপাইনদের ফাজলামি থেকে বাচতে এই কথা বলেছিলেন। তবে এটা নিছক আমাদের ধারনা ছিল, ভুলও হতে পারে।

একদিন ম্যাডাম লেকচার দিচ্ছিলেন। তখন বোর্ডের কিছু লেখা লাইটের রিফ্লেকশনের জন্য দেখা যাচ্ছিলনা। তখন কিছু ক্লাসমেট সামনে পেছনের লাইট জ্বালিয়ে ও নিভিয়ে আলো অ্যাডজাষ্ট করার চেষ্টা করছিল। তখন ম্যাডাম বললেন- “আমাকে না দেখলেও চলবে, বোর্ডের লেখা গুলো দেখ।“ আপনারাই বলেন এই কথা শুনলে তখন আমাদের মাথা কি আর ঠিক থাকে?

ম্যাডাম আমাদের পাশাপাশি ‘বি’ সেকশনে ক্লাস নিতেন। আমাদের সময় ‘বি’ সেকশনের বেশ সুনাম ছিল। সুনাম ছিল কলেজের সবচাইতে ‘বদ’ সেকশন হিসেবে। আমার ফ্রেন্ড বলেছিল ম্যাডাম ক্লাসে ঢুকলেই কিছু ছাত্র মুখ দিয়ে ননস্টপ ‘সসস্‌সসসসস্‌....” করে শব্দ করত। ম্যাডাম অনেক নিষেধ করলেও তারা থামেনি।

একবার ‘বি’ সেকশনের বন্ধুর মুখে শুনেছিলাম সেই সেকশনের এক ছেলে নাকি সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় ম্যাডামকে দেখে পাশের জনকে বলে ওঠে যে “দোস্ত......মাল একখান”। ম্যাডাম সেটা শুনে ফেলেছিলেন। ম্যাডাম সেই দিনই ‘বি’ সেকশনে ক্লাস নেবার জন্য আসে। সেই ছেলেটাকে সামনে পেয়ে জিজ্ঞেস করেন “অ্যাই ছেলে....তোমার নাম কি?” ছেলেটার নাম ছিল “ডন”। সেটা বলতেই ম্যাডাম বললেন “নামের সাথে তো কাজেরও মিল আছে”।

আমি আগেই উল্লেখ করেছি যে ম্যাডামকে প্রথম দেখার পর হৃদয়ে ঝড় উঠেছিলো। কলেজের টিচার্স রুম ছিল গাঙ্গুলি হাউজের দোতালায়। রিসেস টাইমের সময় একদিন টিচার্স রুমের বাইরে জালার সামনে দাঁড়িয়ে দেখলাম, জানালার এক সাইডে পর্দা একটু ফাঁক করা। কৌতুহল বসত উঁকি দিলাম। দেখলাম যে একটি সিঁড়ি নিচে নেমে গেছে, সামনে টিচার্স রুম, কিছু শিক্ষককেও দেখতে পেলাম। এবং সেখানে টিনা ম্যাডামকেও দেখলাম। একদম জানালা বরাবর চুপচাপ বসে রয়েছেন, আনমনে কিছু ভাবছিলেন মনে হয়। আমি ম্যাডামকে দেখার জন্য কিছুদিন ওই জায়গাটায় যেতাম এবং কয়েকবার ঠিক একই জায়গায় তাঁকে বসতে দেখেছিলাম। :#>

ক্যুইজ পরীক্ষার দিন কথা ছিল যে poem এর উপর পরীক্ষা হবে, কারন টেরেন্স স্যার সেরকমই বলে গিয়েছিলেন। কিন্তু পরীক্ষার সময় দেখলাম প্রশ্ন আসলো “The Ancient Mariner” থেকে, এটা আবার ম্যাডাম পড়িয়েছিলেন। আমরা পরীক্ষার হলে গুঞ্জন শুরু করে দিলাম। শেষ পর্যন্ত সমস্যার সমাধান হলো। যারা এই প্রশ্নে পরীক্ষা দিতে পারবে না তারা যেন “Experience in Notre dame College” এই টপিকের উপর লেখে। যারা পড়ে আসেনি তাদের জন্য এই নতুন টপিক লেখাই নিরাপদ ছিল। কেননা, আমিও পড়ে আসিনি। কিন্তু “ম্যাডাম প্রশ্ন দিয়েছেন” এই আবেগে “The Ancient Mariner” থেকেই উত্তর করলাম। পরীক্ষার রেজাল্ট কি হয়েছিল, তা পরে বলছি।

ম্যাডাম মনে হয় ক্লাসে “শিক্ষামূলক” কিছু করতে চেয়েছিলেন, সেজন্য মনে হয় “লর্ড বায়রনের” অ্যাডাল্ট একটি গল্পের অংশ বিশেষ শুনিয়ে ছিলেন। ম্যাডামের মুখে সেই গল্প শুনে সমস্ত ক্লাস যেন একদম বরফ হয়ে গিয়েছিল। গল্পের কিছু অংশ এখনও মনে আছে যা শুনে সেদিন আমাদের গায়ে কাঁটা দিয়েছিল, আমার এক ক্লাসমেট ঘুমানোর প্রস্তুতি নিয়েছিল কিন্তু গল্প শুনে ধরমর করে উঠে বসে।

গল্পটা ছিল পল ও তার এক অল্প বয়সি সুন্দরী আন্টির অবৈধ সম্পর্ক নিয়ে। ম্যাডাম বলেছিলেন “তোমরা গল্পটা পড়ে নিবে আমি সংক্ষেপ করে বলছি....... এক পর্যায়ে বললেন...।গল্পের এইজায়গায় একটু সেন্সর আছে......পল তার আন্টির সাথে বিছানায় শুয়েছিল, তাদের গায়ে কোন কাপড় ছিলনা....এমন সময় সেই আন্টির হাজবেণ্ড এসে পরল। আন্টি পলকে বললেন.....দৌড়াও”। এই কথাগুলো একদম ১০০% হুবহু না হলেও ৯৫% নিশ্চিত মনে আছে যে ম্যাডাম ঠিক এই কথা গুলোই বলেছিলেন। এই টাইপের গল্পের কিছু চটিবই পড়লেও ম্যাডামের মুখে এই গল্প শুনে তাজ্জব হয়ে গিয়েছিলাম। পুরো ক্লাসের উপর যেন বজ্রপাত হলো। :!> :!> :#> :#>

ম্যাডাম ক্লাসে এলেই আমি উশখোশ করতাম। আমার সিট পেছন দিকে ছিল বলে খুব আবসোস করতাম। যাদের সিট সামনে ছিল তাদের জন্য হিংসা হতো। আমি ম্যাডামের দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য মাঝে মাঝে নাম ডাকার সময় কলম খোজার ছুতো করে বেঞ্চের নিচে উবু হয়ে যেতাম, যেন আমাকে না দেখতে পেয়ে ম্যাডাম আমার রোল কল করেন এবং আমি দাঁড়িয়ে বলি “ইয়েস ম্যাডাম”। ম্যাডামের চোখে পড়ার জন্য ছেলেমানুষী ভাবনা আরকি! কিন্তু দু;খের বিষয় হলো, আমার বিশাল দেহের জন্য সেটা সম্ভব হয়নি।

একদিন ম্যাডাম পড়া ধরছিলেন। আমি পড়া বলার জন্য উশখোশ করছিলাম। আমি এক পর্যায়ে একবার দাঁড়িয়ে সঙ্গে সঙ্গে বসে পড়লাম। ঠিক তখন ম্যাডাম আমাকে খেয়াল করলেন এবং পড়া বলতে বললেন। আমি উঠে দাঁড়িয়ে বেকুবের মত চুপ করে রইলাম। পড়া তো আর মনে আসে না! আমি বললাম “সরি ম্যাডাম, মনে আসছে না। ম্যাডাম আমাকে বললেন “কান ধরে বেঞ্ছের উপর দাড়াও”। আমি বাইরে থেকে বেশ কাঁচুমাচু ভাব দেখালেও ভেতরে ভেতরে বেশ খুশিই হলাম। মনে হলো- “যাই হোক ম্যাডামের চোখে তো পড়লাম আর ম্যাডাম আমাকেই কান ধরে বেঞ্চের উপর দাড়াতে বলেছে আর কাউকে বলেননি।" B-)) B-)) B-) আর নটরডেম কলেজে তো আর কো-এডুকেশন নেই যে মেয়েদের চোখে পড়ে যাব।“

সে সময় এমন অবস্থা দাড়ালো যে ঘুমানোর পর সপ্নের মধ্যেও ম্যাডাম আসতে লাগলো। সেসেব সপ্নের বিস্তারিত কিছু মনে নেই আর বলারও দরকার নেই। :#> তবে একটা সপ্ন এখনও মনে আছে। সপ্নটি বেশ মজার। তখন আমি একটি কম্পিউটার গেমস্‌ খুব খেলতাম। কলেজ থেকে বাসায় ফিরেই গেমস্‌টি নিয়ে বসে যেতাম। গেমসটি ছিল “Mortal Kombat 3”। সেজন্যই মনে হয় সেই সপ্নে “Mortal Kombat 3” এর ভিলেন “Shao Kahn” এসেছিল।

আমি দেখলাম যে কলেজের মাঠে আমি দাঁড়িয়ে রয়েছি, আকাশ মেঘলা, এবং মাঠের মাঝখানে “Shao Kahn” দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অট্টহাসি হাসছে। আমার ফ্রেন্ড রতন আর সাকিব মাঠের পাশে বসে রয়েছে। হঠাৎ দেখলাম টিনা ম্যাডাম হুইল চেয়ারে বসা এক বৃদ্ধকে ঠেলে নিয়ে আসছে। রতন বলে উঠল “...তুই আইজাকা টিনার সাথে পারবি না রে”। এরপর দেখলাম টিনা ম্যডাম আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। মনে হয় Mortal Kombat ফাইট শুরু হবে। :-/ এরপর আর কিছু মনে নেই। মনে হয় ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছিল।

শুধু আমার ক্ষেত্রেই যে এমন অবস্থা হয়েছিল তা নয় অনেকের ক্ষেত্রেই তা হয়েছিল। আমার আরেক ক্লাসমেট নাকি আবিস্কার করেছিল যে ম্যাডাম নাকি জামার নিচে কিছু পড়েন না!! আমি তাকে জিজ্ঞেস করাতে সে বলল যে সে নাকি ম্যাডামকে গভীর পর্যবেক্ষন করে এই তথ্য আবিস্কার করেছে। :-& :-& :-& মজার ব্যাপার হলো এই কথা অনেকেই বিশ্বাস করত। ‘ডি’ সেকশনের এক ছেলে (সে আমার সাথে কোচিং করত) নাকি ম্যাডাম আসার সময় জানালার গ্রিলের সাথে সেঁটে থাকতো ম্যাডামকে দেখার জন্য।

একবার ক্লাসে আসার সময় ‘ডি’ সেকশনের কেউ জানালা দিয়ে চক ছুড়ে মারে এবং সেটা গিয়ে পড়ে ম্যাডামের গায়ে। আমাদের সিনিয়র ভাইদের ক্লাস নেবার সময় ম্যাডাম কথা প্রসঙ্গে বলেছিলেন “গল্পের শেষে সবার সাথে সবার মিল হয়ে যায়।“ এই কথা শুনার পর এক ভাই নাই ম্যাডামকে বলে “যেমন আমার সাথে, আপনার মিল হয়ে যেতে পারে। এই কথা শুনে ম্যাডাম নাকি সেই ছেলেটিকে চড় মারেন। পাশের রুম থেকে টেরেন্স স্যারকে ডেকে নিয়ে আসেন। টেরেন্স স্যারও নাকি ম্যাডামকে ধমক দেন এই বলে যে “বাচ্চাদের সামলাতে পারো না কেন?” ওই ছেলেকে নাকি কলেজ থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছিল। :-/

বড় ভাইদের মুখেই শোনা একটা কথা শুনেছিলাম। ম্যাডাম নাকি একবার ক্লাসে বলে ছিলেন, “তোমাদের কোন সমস্যা হলে আমাকে বল, দরকার হোলে আমি তোমাদের দু’ দু’ বার করে দেখাবো।“ ম্যাডাম “দুই দুই” বার কে শুদ্ধ ভাষায় বলেছিলেন। কিন্তু ফাজিল পোলাপাইন সেটাকে একসাথে করে পুরো বাক্যটাকে অন্য অর্থ বানিয়ে সারা কলেজ ছড়িয়ে দিলো।:-*:-*

ম্যাডাম মনে হয় খুব বেখেয়াল টাইপ ছিলেন। কর্মক্ষেত্রে যখন মেয়েরা আসে তখন তারা সাধারানত ওড়না পিনআপ করে আসেন। কিন্তু ম্যাডাম মনে হয় অতকিছু খেয়াল করেননি। সেজন্য প্রায়ই লক্ষ্য করতাম তার কাধ থেকে বারবার ওড়না পড়ে যেত আর তিনি বারবার ঠিক করতেন, আর আমরা?..... স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে দেখতাম। :!> :!> :#> :#>

কিছুদিন পর এক বন্ধের পরে কলেজ খোলার পর ম্যাডাম ক্লাস নিতে এলেননা।শুনলাম তিনি আর ক্লাস নিবেননা। এখন থেকে টেরেন্স স্যার আবার ক্লাস নিবেন।ম্যাডামকে এরপর শুধু একদিন দেখেছিলাম, হয়ত কোন কাজে এসেছিলেন। দূর থেকে দেখলাম যে উনি বের হয়ে যাচ্ছেন। সেটাই ছিল তাকে শেষ দেখতে পাওয়া। ওই ছুটির পর নিয়মিত উপস্থিত থাকার জন্য আমার সিট একদম সামনে চলে আসে। কিন্তু, ম্যাডাম আর ক্লাস নিতে আসেননি”.....হায়রে আবসোস!! :(( :((

আজ ১০ বছর পর সেইসব ছেলেমানুষির কথা মনে পড়লে হাসি পায়। তবে এটা বলতে পারি, “টিনা ম্যাডাম” আমাদের সেদিনের উচ্ছল হৃদয়ে সাময়িক ভাবে ঝড় তুলেছিলেন যা ছিল একদম অন্যরকম এক অনুভুতি।

পরিশিষ্টঃ আগেই বলেছিলাম যে ম্যাডামের জন্য আবেগের ঠেলায় না জানা সত্ত্বেও ক্যুইজ পরীক্ষায় “The Ancient Mariner” থেকে উত্তর দিয়েছিলাম। ম্যাডাম চলে যাবার কিছুদিন পর সেই পরীক্ষার খাতা দেয়া হয়েছিল। কত পেয়েছিলাম জানেন? “০”(শূন্য) পেয়েছিলাম, একদম গোল্লা। এবং ক্যুইজ পরীক্ষায় সেটাই ছিল প্রথম এবং শেষ “শুন্য” পাওয়া।.....(চলবে)


সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই আগস্ট, ২০১১ সকাল ৯:৫৭
১২টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

পেচ্ছাপ করি আপনাদের মূর্খ চেতনায়

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩৮

আপনারা হাদি হতে চেয়েছিলেন, অথচ হয়ে গেলেন নিরীহ হিন্দু গার্মেন্টস কর্মীর হত্যাকারী।
আপনারা আবাবিল হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়াতে চেয়েছিলেন, অথচ রাক্ষস হয়ে বিএনপি নেতার ফুটফুটে মেয়েটাকে পুড়িয়ে মারলেন!
আপনারা ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×