somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোটগল্পঃবৃত্তের ভিতর

০১ লা এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৩:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এই নিয়ে দশবারের উপরে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিল রিমা।বার বার থেমে যাচ্ছে। সাহস হচ্ছে না। কিছুক্ষণ আগেও যে সাহসটা ছিল, এখন তা নেই। হাত দিয়ে এখনও রক্ত পড়ছে। ফোঁটা ফোঁটা রক্ত। কিছুক্ষণ আগেই কতটা সাহস করে, হাতের কয়েক জায়গায় কেটে ফেলল। রক্ত পড়ল। লাল টকটকে রক্ত।দিনারকে মেসেজ দিয়ে বলল, হাত কেটে ফেলেছি।দূরে চলে যাচ্ছি, অনেক দূরে। আর আসব না জ্বালাতে।
দিনার ঠিক মেসেজ দেখেছে রিমা জানে। তবে রিপ্লাই দিবে না। রাগ করে আছে যে। এর আগেও অনেক বার মিথ্যে মিথ্যে এসব বলেছে রিমা। দিনার বিশ্বাস করেছে। আজ সত্যি করেছে, দিনার আজ বিশ্বাস করবে না। এক ফোঁটাও না। আজ যে রাগের পরিমাণটা বেশি। অনেক বেশি। অভিমানের মাত্রা আজ বেশি। অনেক বেশি। দিনারের সাথে ঝগড়া হবার পরই, রিমার কেন যেন মরে যেতে ইচ্ছে করে। কাছের মানুষের অবহেলা সহ্য হয় না। একটুও না। আর দিনার কথায় কথায় অবহেলা করে। পচা পচা কথা বলে। দিনার এমন ছিল না। অনেক ভাল ছিল। ঐ মেয়ে বন্ধুটা পাবার পর থেকে এমন করছে। রিমার সাথে কেমন যেন করে। রিমা ভালবাসে দিনারকে। দিনার জানে। তবুও রিমা কখনও দিনারকে, ভালবাসতে বলে না। শুধু একটু ভাল করে কথা বলতে বলে। একটু চুপ করে সব কথা শুনতে বলে। হাসির শব্দ, কান্নার শব্দ সব শুনুক রিমা চায়। কিন্তু দিনার বার বার এড়িয়ে যায়। নানা ব্যস্ততা দেখিয়ে এড়িয়ে যায়। ভার্সিটিতে একটা ফর্সা বান্ধবি পেয়েই, রিমাকে ভুলে গেছে। সারাদিন নাকি লাইব্রেরিতে বসে থাকে, মেয়েটাকে নিয়ে। রিমার সহ্য হয় না। একদম না। মাঝে মাঝে মনে হয়, ঐ মেয়েটাকে গলা টিপে মেরে ফেলে। তারপর দিনারকে সামনে বসিয়ে বলুক, আমি কাঁদব। তুই দেখবি এখন।আমাকে হাসাবি। না হাসাতে পারলে আমিও মরে যাব। তুই বুঝিস না, ঐ ফর্সা মেয়েটাকে আমার পছন্দ না। একটুও না। তাও কেন ওর সাথেই থাকিস? আমার কান্না কে শুনবে? একটা বাহিরের মেয়ের সামনে আমি কাঁদব? তুই এটাই চাস?


দিনার তাই চায়। রিমা সারাক্ষণ কাঁদুক। তাই তো কষ্ট দেয়। ক্ষণে ক্ষণে কষ্ট দেয়। একটুও ভাল না ছেলেটা।তবুও তো ভালবাসে। বুকের ভিতর কেমন করে, একটুও বুঝে না ছেলেটা।রিমা প্রতি রাতে এক লাইন করে লিখে পাঠায়। অনেক ভালবাসা নিয়ে। সারাদিন তুই তুই। সেই মেসেজে তুমি। কোনদিন লিখে, "রাত জাগবে না বাবু, আচ্ছা?" কোনদিন, " একটু জানালা দিয়ে হাতটা বের করবে? অনেক সুন্দর জোসনা, ধরে দেখ, ভাল লাগবে।" কোনদিন লিখে, " এতো করে কেন বুঝাতে হয় তোমাকে? একটু বুঝলে কি হয়? "
ছেলেটা তাও বুঝে না। কষ্ট দিয়েই যায়। দূরে রেখেই যায়। আজও দিল।ঠিক না। দিনারকে কল করাতেই দিনার বলে, ঐ মেয়েটার সাথে। আজ সারাদিন নাকি ঘুরবে। ঐ ফর্সা পেত্নীটার নাকি আজ জন্মদিন।
রিমা রাগ করে বলল, তুই এখন চলে আসবি। ঐ সব ফালতু মেয়ের সাথে তোর কি?তুই আমার সাথে থাকবি। আয় আমি কাঁদব তুই দেখবি। আমার কান্না পাচ্ছে। ঐটাকে ধাক্কা দিয়ে, গাড়ির নিচে ফেলে চলে আয়। মরুক ঐ পেত্নীটা।


এই কথার পর দিনার অনেক গুলো কড়া কথা বলে। সেসব সহ্য করার মত না। ২ দিনের ঐ মেয়ের জন্য, রিমার সাথে খারাপ ব্যবহার করতে পারল? রিমার সাথে দিনারের ১২ বছরের বন্ধুত্ব। তাও ঐ মেয়ের দাম বেশি ওর কাছে?
রিমা যখন বলল, তুই না আসলে আমি মরে যাব। সত্যি মরে যাব দেখে নিস। মিথ্যা না, এবার সত্যি সত্যি।
দিনার বলে দিল, তোর যা ইচ্ছা কর। তবুও আমাকে জ্বালাস না তো। তোর যন্ত্রণায়, আমারই মাঝে মাঝে মরে যেতে ইচ্ছা করে।


রেখে দিল দিনার। এতো কষ্ট জীবনে খুব কম পেয়েছে রিমা।এই কষ্ট মানা যায় না। হাতের কাছে ফল কাঁটা নতুন চাকুটা পেয়ে, হাত কেটে ফেলল। অনেক খানি। রক্তে ভেসে যাচ্ছিল। রিমা কাঁদছিল। আর দিনার ঐ দিকে ঐ ফর্সা পেত্নী নিয়ে ঘুরছে।
আর এখন ছাদের রেলিং ধরে দাড়িয়ে আছে। ছ তলার এই ছাদ থেকে লাফ দেবার জন্য। মরে যেতে চায় রিমা। যাকে এতো ভালবাসে, সেই যদি না বুঝল। বেঁচে কি হবে? দশ বারের উপরে ঠিক করলেও, সাহস করতে পারছে না রিমা।আর না, এবার ঠিকই লাফ দিবে। দেখতে একটু কালো বলে, দিনার এতো অপমান, এতো অবহেলা করবে সবসময়? থাকুক ও ওর ফর্সা পেত্নী নিয়ে। আর আসবে না কান্না শুনাতে, হাসি শুনাতে।রেলিং ধরে আবার নিচে তাকাতেই, পিছন থেকে কারও কণ্ঠ শুনল।
- আমার পরীটা কি করে একা একা, এই রোদের মধ্যে ছাদে?


বাবা এসেছে ছাদে। আজ তো শুক্রবার। বাবার অফিস বন্ধ। বাবা রিমাকে পরী ডাকে। এই কালো মেয়েটাকে পরী ডাকার কি আছে, রিমা বুঝে না। দিনার তো কোনদিন ডাকল না। মুখ ঘুরিয়ে, চোখ বাবার থেকে আড়াল করে রিমা বলল, কিছু না। তুমি আসছ কেন ছাদে?
- আসলাম এমনি।পরীটা সকালে অল্প একটু খেল। তাই পরীটার জন্য একটা আপেল নিয়ে আসলাম। আমার পরী আম্মু।খাও তো দেখি এটা।


রিমার মুখ ঘুরাতেই বাবা দেখলেন, রিমা কাঁদছে। চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।বাবা পানি মুছতে মুছতে বলল, আরে আমার পরীটার কি হইছে? কাঁদে কেন? কে বকা দিছে?
বাবা রিমার হাত ধরতেই দেখল, রক্ত পড়ছে। রিমার হাতের অনেকখানি কাটা।
- মা, কি হইছে হাতে? কাটছে কি করে? আল্লাহ কত রক্ত। আমার পরীটার কত কষ্ট হচ্ছে। আম্মু বল কিভাবে কাটছে?


বাবা পাগলের মত করছেন। এতো বড় মেয়েকে আড় কোলা করে, নিচে নিয়ে গেলেন। মাকে ডাকলেন।
-এন্টিসেপ্টিক আনো, আমার বক্স দাও। ব্যান্ডেজ করতে হবে।মেয়েটার এতো কষ্ট হচ্ছে।


বাবা চিৎকার করছেন। মাও কেঁদে কেঁদে ঘুরছেন, আর বাবার বক্স খুঁজছেন। ছোট বোনটাও এসে পাশে দাঁড়িয়েছে। ৪ বছর বয়স।বাবা ব্যান্ডেজ করছেন আর চোখের পানি ঝরিয়ে। মা , ছোট বোন রুনাকে জড়িয়ে কাঁদছেন। রুনাও ছোট হাতে ওর পানি মুছছে। চোখের পানি। আপুর কষ্ট হচ্ছে বুঝতে পারছে। রিমা কিছুই বুঝতে পারছে না, আসলে কি ঘটছে। সব একটা যেন ঘোরের মধ্যে কাটছে। অল্প অল্প করে ভাবছে, কাদের একা করে দিয়ে চলে যেতে চাচ্ছিল রিমা?একটু হাত কাটাতেই তিনটা মানুষ কেঁদে কেঁদে চোখ ভাসাচ্ছে। তার মধ্যে দুজন বয়সী। তারাও বাচ্চার মত কাঁদছেন।এই ভালবাসা ছেড়ে চলে যাওয়া কি আসলেই সম্ভব? একটা মানুষ একটু অপমান করল, ভালবাসল না, তাই সব ভুলে মরতে চলে গেল। কতটা স্বার্থপর রিমা। এতোগুলা ভালবাসা মেরে ফেলতে চাচ্ছিল, শুধু একটা ভাল না বাসা মানুষের অবহেলার জন্য। রিমার ভুল হয়েছে, অনেক বড় ভুল। বাবার ব্যান্ডেজ করার মাঝে , জড়িয়ে ধরল রিমা।
- বাবা, আমি তোমার পরী হয়ে সারাজীবন থাকতে চাই। আমি ভালবাসি বাবা। তোমাদের ভালবাসি বাবা। আম্মু ভালবাসি, রুনা ভালবাসি। অনেক ভালবাসি।


রিমাও কাঁদছে। পাল্লা দিয়ে কাঁদছে চার জন। এভাবে কাঁদে নাকি কেউ? হয়ত কাঁদে। কিছু কিছু সময়ে চোখের জল এমনিতেই ভাসিয়ে দেয়। কিছু হাসি মেকির হতে পারে, তবে ভালবাসার কান্না মিথ্যা নয়। কেউ সেই কান্নার মূল্য দিতে জানে। কেউ জানে না। মিথ্যে কিছু ভালবাসা থাকে, কিছু অভিনয়ের, কিছু ক্ষণিকের, কিছু সারাজীবনের। সারাজীবন ভালবাসা মানুষগুলোকে, অলীক কিছুর জন্য একা করে দিতে নেই। কিছু ভালবাসা বৃত্তের মত। বৃত্ত থেকে বেড়িয়ে আসা যায় না। শুরু পাওয়া যায় না, শেষ পাওয়া যায় না। হেরে যেতে নেই, মিথ্যে কিছুর কাছে।যার থেকে ভালবাসা পাওয়া যায় না, তার জন্য কষ্ট পেতে নেই।যে ভালবাসে না, সে কখনই পাশে থাকে না। সারাজীবন ভালবাসার মানুষগুলো পাশে থাকেই। তাদের একা করে দিতে নেই।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৩:৪৫
৭টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×