somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃএলোমেলো বিন্দুর সরল রেখা

১৬ ই মে, ২০১৪ রাত ৯:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লাইব্রেরির কোণায় এপ্রোন পরা মেয়েটার দিকে বার বার তাকাচ্ছে সিয়াম। চোখে লাল ফ্রেমের একটা চশমা, মুখে কলম, আর দৃষ্টি সামনের মোটা বইটার দিকে। আর কোন দিকে মনোযোগ নেই, এক মনে পড়ে যাচ্ছে। একই ক্লাসের দুজন। একই গ্রুপের। এম বি বি এস পড়ছে, একই মেডিকেল কলেজে। পড়াশুনার ব্যাপারে প্রচণ্ড সিরিয়াস মেয়েটা। আবার দেখতে শুনতেও বেশ। ক্লাসের অনেক ছেলেই পছন্দ করে, পাত্তা পায় না। কথা বলতে চায় না ছেলেদের সাথে। সবসময় মুখে একটা রাগী রাগ ভাব। মনে হয়, কথা বলতে গেলেই, এখনি জুতা খুলে, হিলের গোঁড়া দিয়ে মাথার ভিতর একটা বারি দিবে। সিয়াম কখনও কথা বলতে যায় ও নি। তবে আজ বড় প্রয়োজন। কথা না বললে অনেক বড় সমস্যা। পরদিন আর ক্লাসে ঢুকতে দিবেন না ম্যাডাম। ফিজিওলজি ম্যাডাম। ঢুকতে দিলেও ঠিক দাড় করিয়ে রাখবেন। গ্রুপের ২২ টা মেয়ে আর ১৭ টা ছেলের সামনে। কি এক সাবজেক্ট, আগা মাথা কিছু নেই, তবুও তাই সামনে দাড়িয়ে বক বক করে বুঝাতে চান ম্যাডাম। তবে সিয়ামের মাথায় কিছুই ঢুকে না। একটা দিন, ক্লাসে কিছু জিজ্ঞেস করলে পারে না। একটা দিন, ভাইভা তে কোন প্রশ্ন করলে পারে না। ম্যাডাম জানে, সিয়াম কিছু পারবে না। তাও প্রতিদিন পড়া জিজ্ঞেস করেন। আর কিছুক্ষণ ধমক। স্কুলে কলেজে থাকতে, পড়া জিজ্ঞেস করলে একটা কথা ছিল। এখন এম বি বি এস পড়ছে। এখনও যদি এই অবস্থা হয়। অবশ্য ডাক্তারি পড়ার মত মেধা সিয়ামের নেই, সিয়াম বেশ জানে। সিয়ামের পড়া বুঝতে সমস্যা হয়, মুখস্থ করতে সমস্যা হয়, মাথায় তা রাখতে সমস্যা হয়, তবে ইদানীং সমস্যাটা একটু বেশীই দেখা দিচ্ছে। বাবা পড়ালেখার কোন খোঁজ খবর নেন না। এতগুলো টাকা দিয়ে, এই প্রাইভেট মেডিকেলে ভর্তি করিয়ে দিয়ে আর কখনও জানতেও চাননি, সিয়াম ক্লাস করতে যাও তুমি?
শুধু মাঝে মাঝে জানতে চান, টাকা কি শেষ তোমার? লাগলে বলবে।
ক্লাস করতে ভাল লাগে না সিয়ামের। তবুও আসে। কেন আসে জানে না। সিয়াম ওর করা অনেক কাজেরই কোন কারণ জানে না। এই যে এখন বুকের ভিতর ধড়ফড় করছে। এটার কারণও জানে না। ফিজিওলজি ম্যাডাম সেদিন অফিসে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার সমস্যা কি সিয়াম?
- জ্বি ম্যাম?
- আমি কি জিজ্ঞেস করেছি, তুমি শুনতে পেরেছ তাও জ্বি ম্যাম বলছ কেন আবার?
- সরি ম্যাম।

সিয়াম ম্যাডামের সামনে দাড়িয়ে থাকে মাথা নিচু করে। তখনও বুকের ভিতর ধড়ফড় করছিল। বুঝতে পারছিল পায়ে শক্তি কমে আসছে। কেন হচ্ছে এমন জানে না সিয়াম। ম্যাডাম একটু উঁচু গলায় বললেন, তুমি ক্লাসে একদিন কোন পড়া পার না। কোন এসাইমেন্ট দিলে করে আসো না। ক্লাসে পড়া না বুঝলে আমি বলেছি, বাহিরে জিজ্ঞেস করবে। আমাকে জিজ্ঞেস করতে সমস্যা হলে, ক্লাসমেট দের থেকে বুঝে নিবে। আমি শুনলাম তুমি কোন ক্লাসমেটের সাথেও মিশ না। এসব কি? আমি ক্লাসে এখন নার্ভাস সিস্টেম পড়াচ্ছি। রাইসা খুব ভাল রিস্পন্স করে ক্লাসে। তুমি ওর সাথে গ্রুপ স্টাডি করবে এক সপ্তাহ। ও লাইব্রেরিতে নিয়মিত অনেক বই পড়ে। ওর কাছ থেকে পড়া বুঝে, তারপর ওর সাথে এসাইমেন্ট জমা দিবে। দুজন একটা জমা দিবে এসাইমেন্ট। আমি রাইসাকে বলে দিচ্ছি। এর পরদিন যেন পড়া পাই আমি তোমার কাছ থেকে। নয়ত খারাপ হবে। যাও এখন।
- জ্বি ম্যাম।

সিয়াম অফিস থেকে বের হয়ে আসে। লাল চশমা পরা পড়ুয়া মেয়েটার নাম রাইসা। রাইসার কাছ থেকেই পড়া বুঝে নিতে বলেছে ম্যাডাম। সময় তো এক সপ্তাহ। তখনই সিয়াম লাইব্রেরিতে চলে যায়। দেখে, রাইসা পড়ছে। মনে মনে অনেক ভাবে, গিয়ে বলবে, ম্যাডাম তোমার কাছ থেকে পড়া বুঝে নিতে বলেছে। সাহস করে সামনে যাওয়া হয় না। ম্যাডাম বলে দিয়েছেন। তাও ভয় করছিল। তার পরদিন আবার যায়। মনে অনেক সাহস নিয়ে। তবুও পারে না। তার পরদিন সাত থেকে আট বার লাইব্রেরিতে গেলেও , সাহস হয় না। এতো ভয় পাবার কি আছে জানে না সিয়াম। একটা ক্লাসমেটের কাছ থেকে পড়া বুঝবে, এই ই তো। আর তো কিছু না। তার পরের দুই দিন অসংখ্য বার লাইব্রেরির সামনে ঘুরাঘুরির পরও ব্যর্থ। আজও লাইব্রেরির ভিতরে ঘুর ঘুর করছে। আজ সাহস করে না বলতে পারলে, আর শেখা হবে না। কাল বন্ধ কলেজ। পরশু ম্যাডাম পড়া নিবেন। এখন খুব আফসোস হচ্ছে। একদিনে শিখে নেয়া যাবে তো? সিয়ামের মাঝে এই সমস্যাটাও আছে, একটা কাজ করবে ঠিক করলে, তা করার জন্য অস্থির হয়ে যায়। ব্যস্ত হয়ে পড়ে। তবে কখনই সেই কাজ বাস্তবায়ন করতে পারে না। মাঝে মাঝে খুব করে খুঁজতে চায় কারণ গুলো সিয়াম। আসলেই সিয়াম এমন কেন? সিয়াম আস্তে করে রাইসার টেবিলের পিছনে গিয়ে দাঁড়াল। লাইব্রেরির চারদিকে চোখ বুলাল। কিছু ছেলে মেয়ে এক মনে পড়ছে, খাতা নিয়ে নোট করছে। কিছু ছেলে মেয়ে উদাস হয়ে বসে আছে। কিছুই করছে না। আর জায়গায় জায়গায় টেবিলে জোড়া জোড়া ছেলে মেয়ে বসে আছে। এরা পড়াশুনা করছে না, এরা করছে অন্য কিছু। চোখে চোখ রেখে চেয়ে থাকা। মিষ্টি হাসিতে মনের কথা বিনিময় করা বই খুলে। সিয়াম নিঃশব্দে দাড়িয়ে ভাবছে, রাইসাকে ডাক দিবে কিনা। বুকের ভিতর ধড়ফড় ভাবটা আরও বাড়ছে। ভয় করছে খুব, খুব ভয়। রাইসা বুঝতে পারল, পিছনে এসে কেউ দাঁড়িয়েছে। মুখ ঘুরিয়ে তাকাল। লাল ফ্রেমের চশমার ভিতর থেকে, সিয়ামের দিকে।
- হ্যাঁ, কি?

সিয়ামের বুকের ভিতর ধক করে উঠল। কিছুনা, বলেই হাঁটতে লাগল। পিছন থেকে ডাক দিল রাইসা।
- এই যে শোন।

সিয়াম ঘুরে আস্তে এসে দাঁড়াল রাইসার সামনে। এমন ভাবে দাঁড়াল যেন কত বড় একজন অপরাধী।
- তুমি সিয়াম না? E- group?

মাথা নিচু অবস্থায় বলল সিয়াম, হ্যাঁ।
- বসো সামনের চেয়ারে। তুমি অমন পালিয়ে যাচ্ছিলে কেন? তনু ম্যাডাম তোমার কথা আমাকে বলেছে। কিন্তু এতো দিনে আসলে? আমি তো কয়েক দিন থেকেই ভাবছি তুমি আসবে। কোন কাজে ব্যস্ত ছিলে নাকি?

মাথা নিচু করে সিয়াম তাকিয়ে আছে, মসৃণ টেবিলের দিকে।
- না আসলে আসা হয় নি।
- থাক সমস্যা নেই। তোমার তো ফিজিওলজি বুঝতে সমস্যা হচ্ছে, তাই না? নার্ভাস সিস্টেম?
- হুম।
- অত কঠিন কিছু না। দুজন মিলে পড়লে দেখবে একদম সোজা। একটু সময় লাগবে শুধু।
- আচ্ছা।

মাথা উঁচু করতে খুব অস্বস্তি লাগছে সিয়ামের। ব্যাপারটা সবসময়ই ঘটে। সিয়াম কোন মেয়ের সাথে মাথা উঁচু করে কথা বলতে পারে না। কথা ধরে আসে। রাইসা বই বের করে নার্ভাস সিস্টেমের যে টুকু ম্যাডাম পড়িয়েছেন তাই বুঝিয়ে দিচ্ছে। আর একটু পর পর জানতে চাচ্ছে, বুঝতে পারছ?
সিয়াম কিছু না বুঝেই বলছে, হ্যাঁ।
রাইসা ব্যাপারটা ধরতে পেরে বলল, তুমি কিছুই বুঝছ না, তাই না? এভাবে মুখ নিচু করে রাখছ কেন? স্বাভাবিক হও। বুঝতে পারবে।
সিয়াম স্বাভাবিক হতে চাচ্ছে, কিন্তু কেন যেন কোথাও আটকে যাচ্ছে। সরাসরি রাইসার মুখের দিকে তাকাতে পারছে না। দূর থেকে অনেক দিন দেখেছে রাইসাকে, কিন্তু সামনে এসে তাকাতে ভয় লাগছে। নার্ভাস সিস্টেম বুঝাচ্ছে রাইসা, আর ভিতরে ভিতরে নার্ভাসনেসে গুটিসুটি মেরে যাচ্ছে সিয়াম। রাইসার একটু বিরক্ত লাগছে। এই ছেলে কিছুই বুঝতে চাচ্ছে না। বইয়ের দিকে তাকাচ্ছে না, বুঝাবার সময় মুখের দিকে তাকাচ্ছে না। মুখ নিচু করে শুধু টেবিল দেখছে।
- আচ্ছা, সমস্যা কি তোমার? এমন করছ কেন? বুঝতে হবে না পড়া? পড়া শেষে আবার এসাইমেন্ট করতে হবে। আচ্ছা তাকাও বইয়ের দিকে, আমি আর একবার বুঝিয়ে দেই? পারবে তো। আর আমাকে ভয় পাবার কিছু নেই তো। আমি ম্যাডাম না। তোমার ক্লাসমেট, ফ্রেন্ড। আসো দুজন চেষ্টা করে দেখি পারি কিনা পড়া, আচ্ছা?

সিয়াম একটু মুখ তুলে তাকাল রাইসার দিকে। খানিকটা স্বাভাবিক হয়ে তাকাল বইয়ের দিকে। ভিতরের অস্বস্তি কেটে যাচ্ছে। পড়া বুঝতে পারছে। রাইসা একটু পর পড়া বুঝিয়ে বুঝিয়ে হাসি দিচ্ছে। সেই হাসি দেখছে সিয়াম। এই মেয়ে হাসতে পারে, সেটা জানা ছিল না সিয়ামের। পড়ার অনেকটা বুঝে গেছে সিয়াম। রাইসা আবার সেই পড়া নিচ্ছে। একটা কিছু জিজ্ঞেস করে রাইসা বলে, দেখি তো আমরা এটা পারি কিনা। তুমি না পারলে আমি বলে দিব। আবার আমি না পারলে তুমি। ঠিক আছে?
- হুম।
সিয়ামকে জিজ্ঞেস করে পড়া রাইসা। ঠিক ঠিক উত্তর দেয়। কি করে মাথার ভিতর গেঁথে গেল পড়াগুলো বুঝতেও পারেনি সিয়াম। আবার সিয়াম জিজ্ঞেস করে রাইসাকে পড়া। রাইসা কোনটা ঠিক দেয় উত্তর, কোনটা ভুল। ভুল উত্তর গুলো যে ইচ্ছা করে দিচ্ছে বুঝতে পারে সিয়াম। সিয়াম ধরতে পারে কিনা দেখার জন্য। রাইসা ভুল দিলে উত্তর, সিয়াম একটা হাসি দিয়ে বলে, আরে এটা তো হয় নি।
এরপর নিজেই বলে উত্তর। পড়াগুলো অনেক দ্রুত পরিস্কার হয়ে গেল। চোখের সামনে ভাসছে, মাথার ভিতর সারাক্ষণ রাইসার কথাগুলো ঘুরছে। এর পরের সময়টা দুজন মিলে এসাইমেন্ট করা।
সন্ধ্যা হয়ে গেছে। চলে যাবে রাইসা। সিয়ামের দিকে তাকিয়ে একটু হাসি দিয়ে বলল, বাসায় গিয়ে আর একটু দেখো, আচ্ছা? আর শনিবার দেখা হচ্ছে। ম্যাডামকে তাক লাগিয়ে দিবে পড়া বলে।
- আচ্ছা। ভাল থেকো।

রাইসা চলে গেল। সিয়াম বাসায় গিয়েও পড়ল কয়েকবার পড়াগুলো। বেশ ভাল লাগছে পড়তে। শনিবার ম্যাডাম সত্যি অবাক হয়ে যাবেন।

ক্লাসে এসেছেন তনু ম্যাডাম। এসে দাড়িয়েই বলতে শুরু করলেন, আমরা সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম পড়ছিলাম গতদিন। আচ্ছা সিয়াম দাঁড়াও তো।
সিয়াম দাঁড়াল। চারপাশে একটু দেখে নিল। ক্লাসের সবাই তাকিয়ে আছে সিয়ামের দিকে। হয়ত প্রতি দিনকার ঘটা ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখার জন্য। শুধু রাইসা জানে, সিয়াম পারবে।
তনু ম্যাডাম বললেন, can you say something about spinal cord?
স্পাইনাল কর্ড নিয়ে সব বুঝিয়ে দিয়েছে রাইসা। সিয়াম পারে সেসব। কিন্তু ম্যাডাম জিজ্ঞেস করার পর, হঠাৎ করেই বুকের ভিতর কেমন করে উঠল। নার্ভাস লাগছে। ভয় লাগছে। কেন লাগছে বুঝতে পারছে না। সিয়াম এই পড়া পারে। তবুও মুখে বলতে পারছে না। রাইসা বুঝিয়ে দিয়েছিল। খুব করে মাথায় সেগুলো আনতে চাচ্ছে। ম্যাডাম কে বলতে চাচ্ছে। কিন্তু পারছে না। মনে পড়ছে না। কষ্ট হচ্ছে সিয়ামের। সিয়াম মুখ ঘুরিয়ে পাশের দিকে বসা রাইসার দিকে তাকাল। রাইসাও তাকিয়ে ছিল সিয়ামের দিকে। সিয়াম তাকাতেই রাইসা ইশারা করল,বুঝিয়ে দিল, বল? পারবে তুমি।
কিন্তু সিয়াম পারে নি। অনেক চেষ্টা করেও পারে নি। ম্যাডাম রাগ করে বের করে দিয়েছেন সিয়াম কে ক্লাস থেকে। সিয়াম দরজার কাছে দাড়িয়ে আছে। দরজার বাহির থেকে রাইসাকে দেখা যাচ্ছে। রাইসাও একটু পর পর সিয়ামের দিকে তাকাচ্ছে। চোখে মুখে একটা বিষণ্ণ ভাব রাইসার। প্রচণ্ড কষ্ট হচ্ছে, সিয়াম পড়া না পারাতে নিজের ভিতর খুব অপমান বোধ কাজ করছে। কান্না পাচ্ছে রাইসার। চোখ ফেটে বেড়িয়ে আসতে চাচ্ছে পানি। কিন্তু কেঁদে দেয়া যাবে না ক্লাসে। ক্লাস শেষে সিয়ামের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করল, তুমি ওটা পারতে না পড়া?
সিয়াম মাথা নিচু করে থাকে। বলে না কিছু।
- আমি কিছু একটা জিজ্ঞেস করছি।
- হ্যাঁ পারতাম।
- তাহলে বললে না কেন? আমাকে অপমান করে খুব ভাল লাগল?
- ম্যাম দাঁড় করানোর পর, ভয় লাগছিল খুব। ভুলে গেছিলাম। আর তোমাকে অপমান করব কেন? আমি পারি। এই যে দেখো।

সিয়াম খাতা নিয়ে লিখতে শুরু করল।
" spinal cord
- conducts sensory information to the brain.
-conducts motor information to the effector organs.
- serves as a simple regulatory centre ( reflexes)
-demage of spinal cord breaks down the connection between periphery and higher centres- serious consequences. "

গোটা গোটা হাতে লেখা খাতার কাগজের দিয়ে তাকিয়ে রাইসা দেখে, সবই ঠিক আছে।
- হ্যাঁ, তাহলে ম্যাডামকে বললে না কেন?
- বললাম না ভয় লাগছিল। আমি কখনও দাঁড়িয়ে পড়া বলতে পারি না। কোন বড় মাপের মানুষ, সম্মানিত ব্যক্তি বা অচেনা মেয়েদের দিকে তাকিয়েও কথা বলতে পারি না। আমার ভয় করে।
- আরে ভয় পাবার কি আছে? পারতে হবে তো। আচ্ছা বাদ দাও এসব। এখন একটু ভাল করে পড়। আমি সাথে আছি তোমার। কিছু বুঝতে সমস্যা হলে আমার কাছ থেকে বুঝে নিবে। আর আইটেম গুলো ক্লিয়ার কর। নয়ত ম্যাডাম কিন্তু ফাইনালে বসতে দিবেন না।
- একটা কথা বলব?
- বল।
- ভয় করছে।
- আমি সম্মানিত বা অচেনা কোন মেয়ে না। আমাকে বলতে পার।
- না মানে, তুমি কি আমার সাথে প্রতিদিন ক্লাস শেষে লাইব্রেরিতে বসবে? আমি অত ডিস্টার্ব করব না। একটু বুঝিয়ে দিবে এরপর একা একাই পড়ব। শুধু আটকে গেলে তোমাকে জিজ্ঞেস করব।

রাইসা হাসতে শুরু করল, শব্দ করে। ক্লাসের সবাই তাকিয়ে আছে সেই শব্দ শুনে। রাইসা হাসছে এটা যেন কত একটা বিরল দৃশ্য। সবাই অবাক চোখে, রাইসা আর সিয়ামের দিকে তাকিয়ে। রাইসা ব্যাপারটা বুঝতে পেরে হাসি থামিয়ে দিল। স্বাভাবিক হয়ে সিয়ামের দিকে তাকিয়ে বলল, এটা বলতে ভয়ের কি? কাউকে পড়া বুঝিয়ে দিলে নিজের পড়াটা আরও ক্লিয়ার হয়ে যায়। আমরা প্রতিদিনই ক্লাস শেষে লাইব্রেরিতে বসব। ঠিক আছে? কিন্তু তোমাকেও ভাল ভাবে পড়তে হবে।
- হ্যাঁ পড়ব।

প্রতিদিনই লাইব্রেরিতে বসা হয়। সিয়ামকে পড়া বুঝিয়ে দেয়। সিয়াম বুঝে নেয়। বুঝতেও পারে। নিজের উপর একটা আত্মবিশ্বাসের জায়গা তৈরি হচ্ছে। তবুও ক্লাসে পড়া জিজ্ঞেস করলে পারে না সিয়াম। তখন খুব রাগ হয় সিয়ামের উপর। এইতো সেদিন, এতো সুন্দর করে বায়োকেমিস্ট্রির মেটাবোলিজম বুঝিয়ে দিল রাইসা। স্যার যখন দাঁড় করালেন, হাঁ করে শুধু তাকিয়ে ছিল সিয়াম। কিছুই বলতে পারে নি। রাগ হচ্ছিল খুব সেদিনও রাইসার। সিয়ামের উপর। তবে রাগ ধরে রাখতে পারে না বেশিক্ষণ। রাইসা ধমক দিলে মাথা নিচু করে বসে থাকে সিয়াম। কিছুই বলে না। কেউ যদি কিছু না বলে, তার উপর কি করে রাগ দেখানো যায়? রাইসা বুঝতে পারে, সিয়ামের ভিতর অনেক অস্বাভাবিকতা আছে। কোন একটা সমস্যায় ভুগছে। নিজেকে ঠিক প্রকাশ করতে পারে না। সব কিছুতেই একটা ভয় কাজ করে ভিতরে। সহজে মিশতে পারে না কারও সাথে। কথা বলতে পারে না, অপরিচিত কারও সাথে। পারে না কথা জমিয়ে দিতে পরিচিত কারও সাথেও। তবুও রাইসার সাথে অনেক স্বাভাবিক। পড়া শেষে প্রায় একদিন ক্যাম্পাসের রাস্তা ধরে হাঁটে দুজন গল্প করতে করতে। অনেক কথা বলে। রাইসা বলে ওর বাবার কথা, মায়ের কথা। সিয়াম বলে নিজের কথা, বাবার কথা। রাইসা মাঝে মাঝে জানতে চায় মায়ের কথা। সিয়াম তখন চুপ করে থাকে। বলে না কিছু। রাইসাও চুপ করে থাকে। কোনদিন মাকে নিয়ে কিছু বলেনি সিয়াম। রাইসাও অনেকটা আপন করে নিয়েছে সিয়ামকে। ছেলেদের খুব অসহ্য লাগা মেয়েটার, কেন যেন সিয়ামের সাথে থাকতে ভালই লাগে। কত অবুঝ রকম একটা ছেলে। ভাল না লেগে পারা যায় না। একটু কথা বললেই বলে দেয়া যায়, ছেলেটার মনের মধ্যে কোন জটিলতা নেই। জীবনের জটিলতার কিছুই বুঝে না। তবে জটিল কোন সমস্যায় ভুগছে সিয়াম। অনেক বড় কোন সমস্যা। সেদিন ক্লাসে রাইসার পাশে বসেছিল একটা ছেলে। ক্লাসমেট। একটু পর পর এসে গায়ে পড়ে কথা বলতে চাচ্ছিল। রাইসার খুব বিরক্ত লাগছিল। রাইসা বলতে চাচ্ছে না কথা, ঐ ছেলে সেধে বলবে কেন? এনাটমি ক্লাস শেষে সেদিন, স্যারের সাথে কিছু কথা বলা দরকার ছিল। রাইসা বসেছে, বেঞ্চটার ভিতর দিকে। ছেলেটা বাহির দিকে। রাইসা বের হবার জন্য ছেলেটাকে বলল, সর, আমি বের হব।
- সরব না।
- কেন?
- এমনি। আমার ইচ্ছা। পারলে বের হ।
- পার্থ ফাজলামি করিস না। বের হতে দে তো।

রাইসা বের হতে যাবে। অমনি হাতটা চেপে ধরল পার্থ।
- বের হ দেখি। পারলে।

মুখে প্রচণ্ড রাগ বিরক্তি নিয়ে হাত ছাড়াবার চেষ্টা করছে রাইসা। পিছন থেকে জিনিসটা চোখে পড়ে সিয়ামের। এসে বলে, এই পার্থ, তুই এভাবে ওর হাত ধরে আছিস কেন? ওকে যেতে দে।
- ওরে আমার হিরো। আমি দুষ্টামি করতেছি। তাতে তোর কি?
- আমার কি মানে? তুই ওর সাথে শুধু শুধু দুষ্টামি করবি কেন?
- আমার ইচ্ছা।

রাগে কাঁপতে থাকে সিয়াম। পার্থ এসে একটু এগিয়ে সিয়ামের হাতটাও চেপে ধরল।
- তোর টাও ধরলাম। ছুট তো পারলে।

সিয়াম হাত ছাড়াবার চেষ্টা করছে, আর ধমকে কথা বলছে পার্থর সাথে। তবে কেমন যেন বুকের ভিতর ধক ধক করছে। উঁচু গলায় কিছু বলতে পারছে না। হাত পা কাঁপছে। প্রচণ্ড রাগ হচ্ছে ,আবার ভয়ও করছে। রাইসা পাশ থেকে চিৎকার করে বলে উঠে, একটা থাপ্পড় দিব ধরে। হাত ছাড়। আর তুই সর এখান থেকে। অসভ্য ছেলে।
ক্লাসের আরও কয়েকজন আসাতে, পার্থ হাত ছেড়ে দেয়। কথা বাড়ায় না। কিন্তু সিয়ামের রাগ কমেনি। রাগে হাত পা কাঁপছে। বুকের ভিতর কখনও ধক ধক করছে। রাইসা এসে পাশে বসে বলে, বাদ দাও তো। ফাজিল ছেলে এগুলো।

সিয়ামের মাঝে মধ্যেই রাতে অনেক একা লাগে। কারও সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করে। কি বলতে ইচ্ছা করে ঠিক নেই। তবে কথা বলতে ইচ্ছা করে। অনেক বড় ঘরটায় একা ঘুমায় সিয়াম। কখনও কোন দুঃখ বাবা রাখেননি। বাবা লোকটা অনেক ভাল। তবুও সিয়ামের কষ্ট লাগে মাঝে মাঝে। সেই কষ্ট গুলো কাউকে বলতে ইচ্ছা করে। বলতে পারে না সিয়াম কাউকে। রাইসার মোবাইল নাম্বারটা আছে সিয়ামের কাছে। কখনও কখনও রাতে এই একাকীত্বের সময় মোবাইলে নাম্বারটা তুলে। তবে সাহস করে ডায়াল করা হয় না। কথা গুলোও বলা হয় না। অনেক আপন কিছু কথা। মনের গভীরের কিছু কথা। কথাগুলো রাইসাকেই শুধু বলতে ইচ্ছা করে। একদিন পড়তে পড়তেই হঠাৎ সিয়াম বলে, রাইসা শুনবে একটু?
- বল।
- পড়ালেখার বাহিরের কথা। বলব?
- হ্যাঁ বল।
- তোমাকে আমার অনেক কথা বলতে ইচ্ছা করে। সেই কথাগুলো আমি কখনও কাউকে বলিনি।
- আচ্ছা বল এখন।
- এখন না। আমি একদিন রাতের বেলা বলব তোমাকে। আমার মাঝে মধ্যে রাতের বেলা খুব একা লাগে। বুকের মধ্যে অনেক কষ্ট হয়। ভয় করে অনেক। তখন তোমাকে বলব। শুনবে না?
- হ্যাঁ শুনব। অবশ্যই শুনব।
- তুমি অনেক ভাল।
- তুমিও সিয়াম।

কথাগুলো সে পর্যন্ত থাকে। প্রায় প্রতি রাতে কষ্ট লাগে। একা লাগে সিয়ামের। মনের জমিয়ে রাখা কথা গুলো বলতে ইচ্ছা করে রাইসাকে। বলতে পারে না। সাহস করে। ভয় কাটিয়ে।
----- ----- ------
ক্যাম্পাসের এই দিকটাতে কয়েকটা মরা গাছের গুঁড়ি ফেলে রাখা। তার উপর বসে আছে সিয়াম। মন বিষণ্ণ করে। ভাল লাগছে না কিছু। পাশে এসে দাঁড়াল রাইসা।
- বসা যাবে?
মুখ তুলে রাইসার দিকে তাকিয়ে বলল, বসো।
রাইসা পাশে বসে বলল, মন খারাপ কেন?
- তুমি জানো কেন খারাপ। তাও জিজ্ঞেস করছ?
- হ্যাঁ করছি। বল।
- আমাকে দিয়ে কিছু হবে না রাইসা। আমি আসলেই একটা অপদার্থ। তুমি এতো ভাল করে পড়াগুলো বুঝিয়ে দিলে। আমি পারতাম , সব পারতাম। কিন্তু একটা ভাইভা পরীক্ষায়ও, একটা প্রশ্নের উত্তর দিতে পারিনি। একটাও না।
- কেন?
- আমার ভয় করছিল রাইসা। আমি সব ভুলে গিয়েছিলাম।

সিয়ামের চোখ ভিজে আসছে। বুকের কষ্ট গুলো চোখের জল হয়ে বের হতে চাচ্ছে। রাইসা আস্তে করে এটা হাত রাখল সিয়ামের গালে। আবার নামিয়েও নিল সাথে সাথে।
- তুমি তো পারতে। তোমার সবগুলো রিটেন এক্সাম ভাল হয়েছে। আর পারছ না, সেটা তোমার দোষ না। তোমার ভিতরে ভিতরে কোন একটা ভয় কাজ করছে। তুমি সবকিছুর সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারছ না।
- রাইসা। আমি সবার মত হতে চাই। আমি এমন থাকতে চাই না। আমার কষ্ট হয়।

সিয়াম কাঁদছে। চোখ দিয়ে টপটপিয়ে পানি পড়ছে। রাইসা কি করবে বুঝতে পারছে না। মায়া হচ্ছে খুব সিয়ামের উপর। মনে হচ্ছে, জড়িয়ে ধরে বলুক, কেঁদো না।
রাইসা হাতটা ধরল সিয়ামের। সিয়াম অবাক হয়ে তাকাল রাইসার দিকে। এই স্পর্শটা কেমন যেন অন্য রকম অনুভবের। রাইসা এতো কাছে থাকার পরও কখনও, সিয়ামকে স্পর্শ করে নি। কিন্তু আজ, গালে ছুঁয়ে দিল। হাত ধরল। সিয়ামের বুকের ভিতর আবার ধড়ফড় করছে। হৃদস্পন্দন বেড়ে যাচ্ছে। রাইসা সিয়ামের হাত ধরে বলল, চল।
- কোথায়?
- তোমার সমস্যার সমাধান করতে।
- কিভাবে?
- চল আমার সাথে।

সিয়াম আর রাইসা মাত্র ওদের মেডিকেল কলেজের, এক শিক্ষকের রুম থেকে বের হল। একজন মনঃচিকিৎসক তিনি। সিয়ামের সব কথা শুনলেন, অনেক মনোযোগ দিয়ে। প্রতিটা কথা। সব শুনে তিনি বললেন, সিয়াম সোশ্যাল ফোবিয়ায় ভুগছে। ভাল মতন সাইকোথেরাপি পেলে, ঠিক হয়ে যাবে। তবে সময় লাগবে কাটিয়ে উঠতে। সিয়ামকে ওর বাবাকে নিয়ে এর পরদিন আবার আসতে বলেছেন। সিয়াম কোনভাবেই ওর বাবাকে বলবে না এসব। বাবা সিয়ামকে অনেক ভালবাসে। তবু সিয়াম ভয় পায় বাবাকে। বাবাকে ও কিছুই বলবে না। রাইসা খুব করে অনুরোধ করার পরও না। রাইসা শেষে বলল, তুমি সুস্থ হতে চাও না?
- চাই।
- তাহলে? আঙ্কেলকে নিয়ে স্যার এর সাথে কাল দেখা করবে।
- না। আমি বাবাকে কিছু বলতে পারব না।
- বলতে হবে।
- আমার ভয় করে বাবাকে বলতে কিছু।
- কেন?
- জানিনা।
- আচ্ছা আজ আমি তোমার বাসায় যাব। আমাকে নিয়ে যাবে?
- কেন যাবে?
- তোমার বাবার সাথে দেখা করব। আমি রাজি করাব তাকে।
- বাবা আসতে আসতে রাত ৯ টা বাজে।
- সমস্যা নেই। আমি ততক্ষণ অপেক্ষা করব। তোমার সাথে গল্প করব।
- বাবা যদি রাগ করে?
- করবেন না।

রাইসা সিয়ামের সাথে সিয়ামদের বাসায় আসে। অনেক বড় বাড়ি। একদম সাজানো গুছানো। এতো বড় বাড়িতে মাত্র নাকি ৫ টা মানুষ থাকে। সিয়াম, সিয়ামের বাবা আর কাজের লোক তিন জন। দারওয়ান দুজন থাকে, গেটের সাথের ঘরটায়। রাইসা সিয়ামের বাবাকে রাজি করাবে। রাইসাও চায় সিয়াম সুস্থ হোক। একদম সুস্থ। সিয়ামের বাসায় আসার আরও একটা কারণ আছে। সিয়ামের কাছে জিজ্ঞেস করে কোনদিন মায়ের কথা শুনতে পারে নি। বাসা থেকে জানবে সিয়ামের মায়ের ব্যাপারে। সিয়াম ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সব গুলো ঘর দেখাল। কিন্তু কোথাও মায়ের ছবি বা কোন ঘরকে মায়ের ঘর বলে মনে হয় নি। একজন কাজের লোকের কাছেও জানতে চেয়েছিল, সিয়ামের মায়ের ব্যাপারে। লোকটা একটু চমকে উঠে কথাটা শুনে। এরপর চুপ করে কাজের বাহানা দিয়ে চলে যায়। বলে না কিছু।
রাত ৯ টার দিকে সিয়ামের বাবা আসে। লম্বা করে বেশ সুঠাম দেহের লোক। সোফার উপর সিয়ামের সাথে রাইসাকে দেখে, একটু তীক্ষ্ণ চোখে তাকালেন। সিয়াম বাবাকে দেখেই উঠে দাঁড়াল। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল। কিছু বলল না। রাইসা নিজে থেকেই সালাম দিল সিয়ামের বাবাকে।
- আঙ্কেল আমি, সিয়ামের বন্ধু। ক্লাসমেট। এক সাথে পড়ি। আপনার সাথে দেখা করতে এসেছি।
- আচ্ছা। বসো। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। ডাইনিং এ কথা হবে।

ডাইনিং এ বসে আছে সিয়াম, রাইসা আর সিয়ামের বাবা। খাওয়া দাওয়ার মাঝে এমনি টুকটাক কথা হল। রাইসার বাবা মা সম্পর্কে জানলেন। খাওয়া শেষে রাইসা আস্তে আস্তে বলল রাইসা। সব বলল সিয়ামের বাবাকে। সিয়ামের সমস্যা গুলো। সিয়ামের কথা গুলো। আজ ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবার কথা গুলো। শেষে রাইসা বলল, আঙ্কেল, আমি চাই সিয়াম সুস্থ হোক। আমি জানি, চিকিৎসা পেলে সুস্থ হবে। প্লিজ আঙ্কেল আপনি কাল একটু আমাদের সাথে স্যার এর কাছে যাবেন। অনুরোধ করছি।
সিয়ামের বাবা কিছু একটা ভাবলেন। এরপর গম্ভীর গলায় বললেন, আচ্ছা ঠিক আছে। আমি যাব।
রাইসা চলে আসল হোস্টেলে সেদিন রাতে। আসার আগে একটা জিনিস একটু অবাক লাগল। সিয়ামদের বাসার দারওয়ানটা, সিয়ামের সাথে রাইসাকে দেখে জিজ্ঞেস করলেন, বাবা, তোমার বন্ধু লাগে সে?
সিয়াম মাথা নেড়ে বলল, হ্যাঁ।
লোকটা রাইসার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। হাত বুলিয়েই এই বৃদ্ধ লোকটা কাঁদতে লাগলেন। মুখ লুকিয়ে কাঁদতে লাগলেন। রাইসা জিজ্ঞেস করল, আপনি কাঁদছেন কেন?
- কিছু না মা। দোয়া করি তোমার জন্য।

এমন করার কারণ জানে না রাইসা। লোকটা এমন করবে কেন? কাজের লোকটার ব্যাপারটাও বুঝল না। লোকটাকে সিয়ামের মায়ের কথা জিজ্ঞেস করাতে অমনই বা করবে কেন? ভাবতে পারছে না রাইসা। ভাবতে চায়ও না। রাইসা চায়, সিয়াম সুস্থ হোক। একদম সুস্থ।

সিয়াম, সিয়ামের বাবা, রাইসা বসে আছে অফিসে। সামনে বসে আছেন সিয়াম, রাইসার স্যার। তিনি কথা বললেন, সিয়ামের সাথে, কথা বললেন, সিয়ামের বাবার সাথে। বললেন সমস্যা গুলো মনের। এই সমস্যা গুলোতে অনেক মানুষই ভুগছে। তবে কারও কারও ক্ষেত্রে তা প্রখর। এদের জন্য চিকিৎসা দরকার। অনেক ছেলেই আছে, মেয়েদের সাথে কথা বলতে ভয় পায়। সম্মানিত ব্যক্তির সামনে হাত পা কাঁপে। ভাইভা বোর্ডে বুক ধক ধক করে। এরাও সোশ্যাল ফোবিয়া আক্রান্ত। তবে সিয়ামের ক্ষেত্রে তা অনেক বেশী প্রখর। চিকিৎসা দরকার। ওষুধ সেবন আর সাইকোথেরাপি করলে একদম সুস্থ হয়ে যাবে। কিন্তু একটু সময় লাগবে। সবসময় হাসি খুশি থাকতে হবে। প্রথম দিকে বেশী মাত্রায় ওষুধ, এরপর সাইকোথেরাপি।
সিয়ামের বাবা মন দিয়ে শুনলেন সব। স্যার সিয়ামের বাবার দিকে তাকিয়ে বললেন, সাঈদ সাহেব। আপনার ছেলেকে কিছু ওষুধ লিখে দিচ্ছি। এগুলো একটু নিয়মিত খেতে দিবেন। সেরোলাক্স সকালে ১ টা, আর ইপনিল সকালে রাতে একটা করে।
- জ্বি আচ্ছা। খাবে নিয়মিত ওষুধ।
- আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করি আপনাকে?
- জ্বি বলেন।
- মিসেস সুরাইয়া বেগম , মানে সিয়ামের মা, উনি?
- নেই।

আর কোন কথা হল না। স্যার প্রসঙ্গ পাল্টে বললেন, কিছুদিন জায়গা পরিবর্তন করে কোথাও থেকে ঘুরিয়ে নিয়ে আসলে, মনে পরিবর্তন আসবে। আর কাছে থাকার মত একটা বন্ধু দরকার। যার সাথে সব কথা বলবে।
- আচ্ছা খেয়াল থাকবে। বন্ধু তো রাইসা আছে। আর কিছু বলবেন?
- হ্যাঁ সিয়ামকে বলছি, তুমি মাঝে মাঝে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজে নিজে পড়া বলবে। এতে করে মনের ভিতরের ভয় গুলো আস্তে আস্তে কেটে যাবে। দেখবে যে কারও সাথে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলতে পারবে। সোশ্যাল ফোবিয়া আক্রান্ত রা কখনও হই চই পছন্দ করে না। একটা অনুষ্ঠান হচ্ছে দেখা যায় তারা এক পাশে চুপ করে বসে আছে। তোমার ভিতরেও জিনিস গুলো আছে আমি জানি। এসব করা চলবে না। আমাদের ক্যাম্পাসে যে কোন অনুষ্ঠানে তোমার অংশগ্রহণ চাই। আর রাইসা, বন্ধুটার খেয়াল রাখতে হবে কিন্তু। এসব কিছুই না। একদম ঠিক হয়ে যাবে কয়েকদিন পরই। ওষুধ গুলো খাক ঠিক মত।

অফিস থেকে বের হয়ে আসলেন সিয়ামের বাবা, সাথে সিয়াম, রাইসা। সিয়ামের ক্লাস আছে। সিয়াম রাইসা ক্লাসে চলে গেল। আর সিয়ামের বাবার কিছু কাজ আছে। কাজ গুলো করতে হবে। জরুরী কিছু কাজ।

সিয়াম ঘরটার এক কোণে বসে আছে। জানালা ধরে। সিয়ামের বাবা এসে দরজায় দাঁড়ালেন। একটু নক করে বললেন, আসব?
- হ্যাঁ বাবা আসেন।

সাঈদ সাহেব ছেলের পাশে বসে বললেন, কেমন লাগছে এখন? শরীর ভাল?
- জ্বি বাবা।
- একটা ভাল সংবাদ আছে। আমরা কাল রাতে রওয়ানা দিচ্ছি। ১৫ দিনের জন্য কানাডা যাচ্ছি। ঘুরে আসব। কাল সন্ধ্যার আগে সব গোছগাছ করে নাও। ঠিক আছে?
- জ্বি বাবা।
- তুমি থাক। আসছি আমি।

সাঈদ সাহেব বের হয়ে গেলেন। খুশির সংবাদে সিয়ামের একদম খুশি লাগছে না। আরও ভিতরে খুব অস্বস্তি লাগছে। ১৫ দিন অনেক সময়। এতদিন বাহিরে থাকা সম্ভব নয়। ১৫ দিন কেন? রাইসা ছাড়া একদিন থাকাও সম্ভব না। রাইসা এখন সিয়ামের সবচেয়ে কাছের মানুষ। রাইসাকে ছাড়া দূরে থাকা সম্ভব নয়। একদম নয়।

সন্ধ্যা বেলা বাবা একবার কল করে বললেন, সিয়াম সব গুছিয়ে নাও। আমরা আজ রাতে রওয়ানা দিচ্ছি। আমি তাড়াতাড়ি চলে আসছি।
সিয়াম বিষণ্ণ হয়ে বসে আছে। কিছুই গুছায় নি। মন খারাপ লাগছে। কষ্ট হচ্ছে কেন যেন। একা লাগছে খুব। খুব কথা বলতে ইচ্ছা করছে রাইসার সাথে। মনের গভীরের কথাগুলো বলতে ইচ্ছা করছে। অনেক আপন কথাগুলো। যেই কথাগুলো কাউকে বলে নি। সেই কথাগুলো। সিয়াম বাসা থেকে বের হয়ে আসল। দারওয়ান জিজ্ঞেস করল, কই যাও বাবা?
- চাচা, আসছি। মনটা হালকা করতে যাই।

আর কিছু বলেনা দারওয়ান চাচা। সিয়াম হাঁটছে, হেঁটে হেঁটে চলে এসেছে রাইসার হোস্টেলের সামনে। এসে কল করল, হ্যালো রাইসা?
- হ্যাঁ। তুমি? তুমি কল দিয়েছ, ভাবতেই ভাল লাগছে। তারপর কি অবস্থা বল?
- আমি তোমার হোস্টেলের সামনে।
- মানে?
- হ্যাঁ। আমি তোমার সাথে দেখা করব। অনেক কথা আছে। নিচে আসো।
- আচ্ছা। ২ মিনিট দাঁড়াও। আসছি আমি।

রাইসা নিচে নেমে আসল দৌড়ে। পোশাক না পাল্টেই। রুমে যে জামা কাপড় পরা ছিল তাই পরেই। মাথার চুল এলোমেলো অবস্থাতেই। রাইসা এসে সামনে দাঁড়াল সিয়ামের। হোস্টেলের এই পাশটা অনেক নীরব। আশেপাশে লোকজন কম।
- হ্যাঁ বল এখন। এতো রাতে হঠাৎ আমার হোস্টেলের সামনে?
- তোমাকে একদিন বলেছিলাম না, কিছু কথা বলব তোমাকে? যখন আমার অনেক কষ্ট হয়, অনেক একা লাগে তখন। আজ আমার অনেক একা লাগছে, কষ্ট হচ্ছে। তোমাকে মনের কথাগুলো বলতে ইচ্ছা করছে।
- আচ্ছা বল, আমি শুনব।

সিয়াম একটু আশেপাশে তাকাল। এরপর মাথাটা নিচু করে ফেলল।
- রাইসা, আমি আমার বাবাকে অনেক ভয় পাই। আমার বাবা অনেক ভাল মানুষ। আমার বাবা আমাকে অনেক ভালবাসে তবুও। আমি ভয় পাই চারপাশের সব মানুষ গুলোকে। আমার চারপাশে যারা আছে, পরিচিত অপরিচিত সব মানুষগুলোকে।
- কেন?
- বলব, সব বলব। আমি বলছি। তুমি মাঝে মাঝে আমার মায়ের কথা জানতে চাইতে তাই না?
- হ্যাঁ।
- আমি কখনই বলিনি।
- হ্যাঁ তুমি এড়িয়ে গেছ সবসময়। আমি তোমাদের বাসার এক কাজের লোককেও জিজ্ঞেস করেছিলাম। সেও এড়িয়ে গেছে।
- হ্যাঁ। রাইসা, আসলে মিসেস সুরাইয়া বেগম বলতে কেউ নেই। এটা শুধু একটা সার্টিফিকেটের নাম। এই মানুষটার কোন অস্তিত্ব নেই।
- মানে? কি বলছ এসব পাগলের মত কথা।
- এসবই সত্যি কথা। আমার মা নেই।
- মা নেই মানে কি? সোজা করে বল।

সিয়াম মুখ তুলে তাকাল রাইসার দিকে। তাকিয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। গাল বেয়ে নিঃশব্দে পানি পড়ছে। একটু একটু আলোতে দেখতে পারছে রাইসা। গাল মুছে সিয়াম বলতে লাগল, সাঈদ আহমেদের কোন স্ত্রী নেই। তিনি বিয়ে করেন নি। আর আমিও সাঈদ আহমেদের ছেলে না।
- সিয়াম। তুমি পাগল হয়ে গেছ?
- আমি পাগলই রাইসা। একদিন অনেক বৃষ্টি। আকাশে বিজলী চমকাচ্ছিল। সেই বৃষ্টির মাঝে রাগী রাগী লোকটা, সাঈদ আহমেদ। তিনি ছাতা মাথায় নিজের বাড়িতে ঢুকবার সময় গেটের কাছে, একটা বাচ্চা ছেলেকে দেখতে পান। দেড় দুই বছরের। বাচ্চাটা কাদার ভিতর বসে ছিল। আশেপাশে কেউ নেই। বৃষ্টির মধ্যে কাঁপতে কাঁপতে কাঁদছিল ছেলেটা। বাচ্চাটাকে তুলে নিলেন। আশেপাশে তাকিয়ে বললেন, কেউ কি আছেন আশেপাশে। বাচ্চা কার? গেটের দারওয়ান বের হয়ে আসে। এসে দেখেন মালিক এক বাচ্চা কোলে দাঁড়িয়ে আছেন। আশেপাশে কাউকে খুঁজছেন। তিনি দারওয়ানকে বলেন, বাচ্চা কার? দারওয়ান বলে, জানিনা স্যার। মালিক রাগ করে বলেন, কে রেখে গেল দেখবে না? এতটুকু বাচ্চা একটা। মানুষের কি দয়া মায়া নেই? সাঈদ আহমেদ বাচ্চাটা নিয়ে চলে আসেন ঘরে। বাচ্চাটাকে নামিয়ে রাখতে চান, দিয়ে দিতে চান দারওয়ানের কাছে। বাচ্চাটা ছাড়ে না, আঁকড়ে ধরে অনেক শক্ত করে। তিনিও কি মনে করে রাস্তার ছেলেটাকে ফেলে দিলেন না। রাস্তার ছেলেটাকে নিজের কাছে রেখে দিলেন। কি মায়ায় পড়লেন কে জানে? তিনি অফিসে দারওয়ান সহ, বাচ্চাটাকে নিয়ে যান। চোখে চোখে রাখেন। বড় করেন। কাজের লোক হিসেবে না। রাস্তার ছেলেটাকে নিজের ছেলে হিসেবে। সেই রাস্তার ছেলেটা আমি রাইসা। আমি কে আমি জানিনা। আমার মা নেই, বাবা নেই। আমি এসব কিছুই জানতাম না। একদিন সাঈদ আহমেদের খুব অসুখ। ডাক্তার বললেন, বাঁচবে না হয়ত। আমি হাত ধরে কাঁদি সাঈদ আহমেদের। তখন আমার বয়স পনের বছর। সাঈদ আহমেদ অনেক কঠিন মানুষ। তিনি কারও চোখের জল দেখতে পারেন না। এসব আবেগ তাকে ছুঁয়ে যায় না। তিনি তবুও সেদিন কেঁদে কেঁদে বলে, কাঁদিস কেন তুই? আমি তোর কেউ না। আমি মরে গেলেও তুই কাঁদবি কেন? এরপর অসুস্থ শরীর নিয়ে সেদিন বলে দেন সব। আমি কুড়িয়ে পাওয়ার কথা। আমি রাস্তার ছেলে সেই কথা। এই ভেবে, যদি মরে যান, তিনি আমার কেউ নন, এটা ভেবে আমি আর কাঁদব না। আমি সত্যি চুপ হয়ে গিয়েছিলাম সেদিন। কিছুই বলিনি। কিন্তু সাঈদ আহমেদ সেদিন কাঁদছিলেন অনেক। আমাকে জড়িয়ে ধরে বলছেন, আমি মরে যেতে চাই নারে বাবা। আমি তোকে ভালবাসি। আমি তোকে নিয়ে বাঁচতে চাই। লোকটা মারা যান না। বেঁচে যান। আগের চেয়ে আমাকে অনেক বেশী ভালবাসেন। কিন্তু আমি বদলে যাই। আমার ভয় করে। সবকিছুতে ভয় করে। পৃথিবীর সব মানুষগুলোকে ভয় করে। সাঈদ আহমেদ বিয়ে করেননি। শুধু আমাকে ভালবেসে। আমার মত একটা রাস্তার ছেলেকে ভালবাসে।

সিয়াম হাউ মাউ করে কাঁদছে। মাথা চেপে ধরে কাঁদছে। রাইসা কিছু বলছে না। স্তব্ধ হয়ে গেছে কথাগুলো শুনে। মুখ দিয়ে একটা কথাও বের হচ্ছে না। কি বলবে ভেবে পায় না।
- রাইসা, আমি রাস্তার ছেলে। আমি একটা পাগল। সাইকো। সোশ্যাল ফোবিয়া রুগী। আমার সবাইকে ভয় লাগে। আমার বাবা মা আমাকে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে চলে গেছে। কতটা নিষ্ঠুর। আমার বাবা মা যদি এমন করতে পারে। পৃথিবীর আর মানুষগুলো কতটা নিষ্ঠুর, ভাবতেই আমার ভয় লাগে। পৃথিবীর সব মানুষ ভয়ংকর। প্রতিটা মানুষকে আমার ভয়। জানো এতো মানুষ গুলোর ভিড়েও, এতো ভয়ংকর মানুষগুলোর ভিড়ে একটা মানুষকে আমার ভাল লাগে। কেন যেন ভয় হয় না। মানুষটা তুমি। তোমাকে আমার অনেক কাছের কেউ লাগে। তোমাকে মাঝে মাঝে অনেক ভালবাসতে ইচ্ছা করে। কিন্তু এরপর থেকে আর জিনিসগুলো এমন থাকবে না। রাস্তার ছেলেটার প্রতি তোমার দৃষ্টি ভঙ্গী বদলে যাবে। আমি খারাপ ছাত্র বলে, তুমি আমার কাছে থেকে সব পড়া বুঝিয়ে দিতে। আমি অসুস্থ বলে, তুমি আমার অনেক কাছে এসেছ। জানো, এখন আর আমার সুস্থ হতে ইচ্ছা করে না। ভাল রেসাল্ট করতে ইচ্ছা করে না। তোমার কাছ থেকে দূরে যেতে ইচ্ছা করে না। তোমার পাশে থাকতে ইচ্ছা করে।

রাইসার চোখ দিয়েও জল পড়ছে। হাত দিয়ে মুছে সিয়ামের হাত ধরল, আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাব না সিয়াম। প্লিজ আর কষ্ট দিও না এসব বলে। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। আমি তোমার পাশে আছি থাকব।

সিয়াম একটু হাসি দিয়ে হাতটা চেপে ধরল। এরপর বলল, রাস্তার ছেলেটার সাথে এসব হয় না রাইসা। এলোমেলো কিছু এতো সহজে গুছিয়ে নেয়া যায় না।
হাতটা ছেড়ে বলল, যাও রাইসা। বাবা বাসায় অপেক্ষা করছে। ১৫ দিনের জন্য আমরা কানাডা যাচ্ছি। আবার দেখা হবে কোনদিন, কিংবা হবে না কখনও।

বলেই সিয়াম হাঁটতে শুরু করল। পিছন থেকে রাইসা দু একবার ডাক দিল। পিছন ফিরে তাকাল না। সম্ভব না।
রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটছে সিয়াম। মোবাইলটা বেজে যাচ্ছে। সাঈদ আহমেদ , মানে বাবা লোকটা কল করেছে। সিয়াম ধরবে না। যাবে না সিয়াম। পার্কের ভিতরের রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে একটা বেঞ্চ দেখল। বেঞ্চের উপর শুয়ে পড়ল। মোবাইলটা ছুড়ে ফেলে দিল দূরে। রাস্তার ছেলেটা রাস্তার পাশে শুয়ে আছে।
একটু একটু বাতাস বইছে। আকাশের দিকে তাকাল। মেঘ নেই। একদম চকচকে আকাশ। আকাশে মিটিমিটি করে জ্বলছে তারা। অনেক গুলো তারা। এলোমেলো হয়ে আছে। একেকটা তারা একেক দিকে। এলোমেলো হয়ে থাকা তারা। জীবনের মত এলোমেলো। সিয়ামের জীবনের মত। তারা গুলোকে একটা খাতার ভিতর এলোমেলো কিছু বিন্দু লাগছে। এই এলোমেলো বিন্দু গুলো খাতার ভিতর এলোমেলো হয়ে থেকে যাচ্ছে। সহজ সরল কোন কিছু হবে না। তেমনি সিয়ামের জীবনটাও কখনও হয়ত সাজিয়ে নেয়া যাবে না। হুট করে কল্পনায়, সিয়াম এলোমেলো তারাগুলোর দুটি নিয়ে মাঝখান দিয়ে একটা সরল রেখা আকল। বাহ কি সুন্দর। এরপর তিনটা নিয়ে, সরল রেখার একটা ত্রিভুজ। এলোমেলো বিন্দু গুলোর মাঝেও কত সুন্দর সরল রেখা এঁকে ফেলা যায়। ভাবনা একটু একটু করে বদলে যাচ্ছে। আসলেই কি সম্ভব? সিয়ামের এলোমেলো জীবনটাও কি, অমন সরল করে দিতে পারবে রাইসা? ভালবাসা দিয়ে, কিংবা হাত ধরে থেকে? দূরের মোবাইলটার দিকে তাকাল সিয়াম। বাবা কল করে যাচ্ছে। হ্যাঁ বাবা। কলটা ধরবে নাকি? বলে দিবে নাকি, বাবা আমি সুস্থ হয়ে গেছি। আমার কোথাও যেতে হবে না। আমার শুধু একটা মানুষ দরকার, রাইসার মত। যে সরল করে দিবে, এলোমেলো জীবনটা। আমার শুধু একটা বাবা দরকার, তোমার মত। রাস্তার ছেলেটাকে যে অনেক ভালবাসে। সেই পনের বছর বয়সের আগের বাবাটা দরকার। একটু ভালবাসা দরকার। এলোমেলো বিন্দু গুলোর একটা সরল রেখার রূপ দরকার।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০১৪ রাত ১০:০৪
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শিয়াল ফিলিস্তিনীরা লেজ গুটিয়ে রাফা থেকে পালাচ্ছে কেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১১ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



যখন সারা বিশ্বের মানুষ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে ফেটে পড়েছে, যখন জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে সাধারণ সদস্য করার জন্য ভোট নিয়েছে, যখন আমেরিকা বলছে যে, ইসরায়েল সাধারণ ফিলিস্তিনীদের হত্যা করার জন্য আমেরিকান-যুদ্ধাস্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসানের মা হিজাব করেন নি। এই বেপর্দা নারীকে গাড়ি গিফট করার চেয়ে হিজাব গিফট করা উত্তম।

লিখেছেন লেখার খাতা, ১১ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩


ছবি - সংগৃহীত।


ইফতেখার রাফসান। যিনি রাফসান দ্যা ছোট ভাই নামে পরিচিত। বয়স ২৬ বছর মাত্র। এই ২৬ বছর বয়সী যুবক মা-বাবাকে বিলাসবহুল গাড়ি কিনে দিয়েছে। আমরা যারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ এঁটেল মাটি

লিখেছেন রানার ব্লগ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৫৬




শাহাবাগের মোড়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম, মাত্র একটা টিউশানি শেষ করে যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলাম । ছাত্র পড়ানো বিশাল এক খাটুনির কাজ । এখন বুঝতে পারি প্রোফেসরদের এতো তাড়াতাড়ি বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসুন সমবায়ের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন করি : প্রধানমন্ত্রী

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১২ ই মে, ২০২৪ ভোর ৪:১০



বিগত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নিজ সংসদীয় এলাকায় সর্বসাধারনের মাঝে বক্তব্য প্রদান কালে উক্ত আহব্বান করেন ।
আমি নিজেও বিশ্বাস করি এই ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খুবই আন্তরিক ।
তিনি প্রত্যন্ত অন্চলের দাড়িয়ারকুল গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১২ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৪০

ছবি সূত্র: গুগল

বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×