আফিম জিনিসটা দিয়ে যে নেশা করা যায়, এ ব্যাপারে চাইনিজদের ধারণা খুব একটা ছিলো না। এ জিনিস তারা ব্যবহার করত ছোটো খাটো চিকিৎসার কাজে।
ব্রিটিশরা চামেচুমে শিখাইছিলো চাইনিজদের, এ বড় ভালো নেশার জিনিস।
এর পিছনে কারণ অবশ্য ছিলো। চাইনিজরা সেই বহুকাল আগে থেকেই মোটামুটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিলো। এরা বাণিজ্য করত, ব্রিটিশদের সাথে রূপার বিনিময়ে। তখন না-কি রূপা ছাড়া চাইনিজদের আর কিছুর খুব একটা দরকার ছিলো না।
এই রূপার বিনিময়ে ব্রিটিশরা চাইনিজদের কাছ থেকে চীনামাটির বাসন পত্র, সিল্ক, সর্বোপরি চা খরিদ করত।
রূপা দিতে দিতে যখন রাজ কোষে টান পড়ল ব্রিটিশদের, তখন এক ফন্দি এটে আফিম পাচার শুরু হলো অবৈধভাবে চীনে, রূপার বিনিময়ে। এই আফিম আবার উৎপাদিত হতো ভারতীয় উপমহাদেশে। তখন আবার ব্রিটিশ শাসন চলে এখানে। চীনে বিপুল চাহিদা পাওয়া "মাদক আফিম" থেকে ব্রিটিশরা বিপুল রূপা সংগ্রহ করে, তা দিয়েই আবার চীনের কাছ থেকে মালপত্র কেনা শুরু করলো। ব্যাপারটা চীনের রূপায় চীনকে ভাজার মতন।
এই ভাজাভাজির খবর যখন চীনের রাজা পেলেন, তখন তিনি ব্রিটিশদের সাথে এক যুদ্ধ বাধিয়ে দিলেন। ব্রিটিশদের কাছ থেকে আসা মিলিয়ন কেজির আফিম ধ্বংস করে ঘোষণা দিলেন, আমার দেশে এসব চলবে না। আফিম দিয়ে নেশা পাতি হবে না। ব্রিটিশরাও আর চা পাবে না।
চায়ের কাপে শুরু হওয়া ঝড়ে, ব্রিটিশ আর চাইনিজদের এই যুদ্ধের নাম "আফিম যুদ্ধ", শুরু হয়েছিলো ১৮৩৯ সালে, চলেছিলো তিন বছর। আফিমের নেশায় দুর্বল হওয়া চাইনিজ বাহিনী, ব্রিটিশদের কাছে শোচনীয় পরাজয় বরণ করে সেবার।
এই চাইনিজরাই আবার ঠিক ঠিক ১০০ বছর পরে ১৯৩৯ সালে শুরু হওয়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলার বাহিনীর বিপক্ষে দাঁড়ায় ব্রিটিশদের পক্ষ নিয়ে। ইতিহাস কাকে কখন কোথায় নিয়ে দাঁড় করায় বোঝা মুশকিল।