somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভালোবাসা এবং নোনতা কফির গল্প

২১ শে জুন, ২০০৯ রাত ১:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম দর্শনে প্রেম যাকে বলে,সেটাই হল ছেলেটির।শ্বেতশুভ্র বসনের মেয়েটিকে দেখে সে চোখ ফেরাতেই পারছিলনা।মেয়েটির সাথে একটু কথা বলার জন্য ছেলেটি তাই তক্কে তক্কে রইল।কিন্তু,বিধিবাম চারপাশের আরো অনেক মুগ্ধ দৃষ্টির আনাগোনা ছিল যে!


কিন্তু ভাগ্য বোধহয় সেদিন তার সুপ্রসন্নই ছিল।আচমকা মেয়েটির সাথে কথা বলার ফুরসত পেয়ে গেল ছেলেটি।দ্বিধান্বিত ছেলেটি শুধাল,”তুমি কি আমার সাথে এক কাপ কফি খাবে?”


স্বাভাবিক সৌজন্যতা বশত মেয়েটি না করতে পারলনা।এবার ছেলেটি খানিকটা দিশেহারা হয়ে পড়ল,বলার মত কোন কথা খুঁজে পাচ্ছিলনা সে।অপ্রস্তুত মেয়েটিও কিছুটা উশখুশ করতে লাগল।


হঠাৎ ছেলেটি বলল,”কিছু মনে না করলে আমার জন্য কফিতে খানিকটা লবণ দেবে?”


এবার মেয়েটি চমকে উঠল।একটি দোনোমোনো করে মেয়েটি জানতে চাইল,”তুমি কফির লবণ নাও কেন জানতে পারি?”


“সাগর পাড়ের ছেলে আমি,সাগর তীরেই আমার বেড়ে ওঠা।সাগরের সেই নোনা স্বাদ আমাকে সবসময় ফেলে আসা দিনগুলোর কথা মনে করিয়ে দেয়। তাই এই নোনতা কফিতে চুমুক দিয়ে আমি শৈশবের সেইসব স্মৃতি,সেই প্রিয় শহর আর প্রিয় মানুষগুলোকে খুঁজে ফিরি। ”কথা গুলো বলার সময় ছেলেটির কন্ঠ বাষ্পরুদ্ধ হয়ে পড়ল।


আমরা জানিনা,ছেলেটির চোখের কোণায় চিকচিক করা অশ্রুকণা মেয়েটি দেখেছিল কিনা।হয়তো দেখেছিল, নয়তো সেই মুহুর্তে চার চক্ষুর আরক্তিম মিলন হবেই বা কেন।এবার মেয়েটির কথা বলার পালা।স্বপ্নালু চোখে মেয়েটি তার নিজের শৈশবের,নিজের স্মৃতির কথা বলতে লাগল।আর ছেলেটি! ছেলেটি তখন তন্ময় হয়ে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে রইল।


এরপর কি হল,সেটা আপনারা সবাই জানেন।রুপকথার সেই গল্পের মতই রাজপুত্র-রাজকন্যের দুটি হৃদয় এক হয়ে গেল।এবং বলাই বাহুল্য,এরপর একটি ছোট্ট সুখের নীড় রচিত হল,অতঃপর তারা সুখে শান্তিতে বসবাস করতে থাকল।


কিন্তু,গল্পের শেষ এখানেই নয়।সময় গড়াল।দেখতে দেখতে কেটে গেল চল্লিশটি বছর।দুজনেই তখন বয়সের ভারে ন্যুজ্ব,কিন্তু প্রথম দেখার সেই মুগ্ধতার খানিকটা তখনও অবশিষ্ট ছিল বৈকি।তাইতো,এই সুদীর্ঘ চল্লিশ বছরের প্রতিটি বিকেলেই মেয়েটি ছেলেটির জন্য কফি বানিয়ে আনত।হ্যাঁ পাঠক,ঠিকই ধরেছেন,সেই কফিতে কিন্তু চিনির লেশমাত্র থাকতনা,বরং সেই নোনতা কফিই হয়ে থাকত তাদের প্রথম ভালবাসার স্মারক।
এরপর,একদিন ছেলেটি হঠাৎ জরাগ্রস্ত হয়ে পড়ে।মৃত্যুশয্যায় সে তার প্রিয়ার কাছে একটি চিঠি দিয়ে যায় এবং অনুরোধ করে তার মৃত্যুর পর যেন চিঠিটি পড়া হয়।তারপর ছেলেটি ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল।এক বুক শুণ্যতা নিয়ে মেয়েটি চিঠিটি হাতে নিল।


প্রিয়তমা আমার ,

এই চিঠি যখন তুমি পড়বে তখন আমি তোমার পাশে থাকবনা।।মনে পড়ে আমাদের প্রথম দেখার কথা? আমি তোমার কাছে খানিকটা লবন চেয়েছিলাম। মজার ব্যাপার কি জান,আমি কিন্তু তোমার কাছে চিনিই চাইতে গিয়েছিলাম।কিন্তু আমি এতটাই শংকিত ছিলাম,ভুল করে চেয়ে বসেছিলাম লবণ।কে ভাবতে পেরেছিল,আমাদের এই দীর্ঘ যাত্রার শুরুটা এভাবেই হবে? আমার কিন্তু তখন ফেরার আর কোন উপায় ছিলনা। আমি পরে তোমাকে অনেকবারই বলতে চেয়েছিলাম,কিন্তু আমরা দুজন শপথ নিয়েছিলাম,কেউ কারো কাছে কখনো মিথ্যে বলবনা।তাই মুখ ফুটে আর কখনোই তা বলা হয়নি।তাই তো সারাজীবন এই বিস্বাদ নোনতা কফি আমাকে খেতে হয়েছে।তবে তুমি জেনে রেখো,এটিই তোমার কাছে বলা আমার প্রথম ও শেষ মিথ্যে।এই একটি ভ্রান্তির জন্য তুমি কি আমাকে ক্ষমা করবেনা?
তোমার প্রিয়তম।

(পাদটীকাঃ বলাই বাহুল্য,গল্পটি আমার লেখা নয়,নেটেই পড়েছিলাম।
গল্পটিকে তাই ছায়া অবলম্বনে বলাটাই সমীচীন হবে।আর কেউ আগেই পাঠ করে থাকলে বিরক্তি উদ্রেকের জন্য দুঃখিত। )






সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুন, ২০০৯ দুপুর ১:১২
২০টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×