দিনকাল বড়ই খারাপ যাইতেসে,ইচ্ছামত যে কথা কমু সে উপায়ও নাই।যাউকগা,কথা প্যাঁচায়া লাভ নাই,বরং ঘটনা একটু খোলাসা কইরাই কই।
জন্মাবার পর থেইকা সেই যে চিল্লান শুরু করছি,আইজতক সেইটা থামাইতে পারিনাই । আসলে আমার ব্যাডলাকই খারাপ,আল্লাহ আমারে এতো সুন্দর একটা মুখের নিচে এত সুন্দর গলা দিসে,কিন্তু মাশাল্লাহ,ভয়েসটা দিসে সেইরকম সুপারসনিক।স্কুলে শপথ নেওনের সময় মাইক লাগতনা,স্যাররা আমারে দিয়াই মাইকের কাজ চালাইয়া নিত ।এদিকে আমি আবার কিঞ্চিত সঙ্গীতপ্রিয় লোক,মাঝে সাঝে এক আধটু গুনগুন না করলে চলেনা।কিন্তু এই গুনগুন যে কখন বুমবুম হইয়া যাইত,আমি নিজেই সেইটা টের পাইতামনা ।বন্ধুরা বলত,আমার গান শুনলে নাকি মরাও কবর থেইকা উইঠা পড়ব।মোটামুটি শ্রবণযোগ্য শব্দের আল্টিমেট পয়েন্টে না যাওন পর্যন্ত নাকি আমার গানবাজি(ওরা কয় গলাবাজি ) অব্যাহত থাকত।নিন্দুকের কথায় কান দিতে নাই,তাই শত্রুর বাড়া ভাতে ছাই দিয়া আমি ফুল ভলিউমে আমার গীতগাওন চালাইয়া গেলাম।কিন্তু শকুনরা সারাক্ষণই দোয়া দরুদ পড়তে থাকে,আর দেশে যে একটা দুইটা গরুও মরেনা তা না /।
ব্যাপারটা হইল,গলাটা কয়দিন থেকাই কেমন জানি বিট্রে করতাসিল ।অচিরেই গলায় শুরু হইল বেসম্ভব ব্যথা ,আমার এত সাধের গলাটা শুকাইয়া সাহারা মরুভূমি হইয়া গেল।আমি পড়লাম মহা ফাঁপড়ে ,কারণ গলাটারে লিটারের পর লিটার জলপান করত্রে হইতাসিল।তবে গ্যাঞ্জামটা লাগল আরেক জায়গায়,যেই বেগে জলপান করতেসিলাম তার চেয়ে ততোধিক বেগে জলবিয়োগে আমি মারাত্মক রকম পেরেশান হইয়া পড়লাম ।কিন্তু এই হুজ্জত তো আর সয়না।এদিকে আম্মা তো আমারে ডাক্তারখানায় নেওয়ার লাইগা উইঠাপইড়া লাগল।কি আর করা,মোগলের সাথে খানা খাইতে গেলাম ডাক্তারখানায়।ঢুইকা দেখি উপরে বড় বড় হরফে লেখা,"নাক,কান ও গলা বিশেষজ্ঞ" ।ভাবলাম,এইবার এক ঢিলে তিন পাখি মারা যাবে,গলার পাশাপাশি বোনাস হিসাবে সর্দি আর কানের ময়লাটারও একটা হিল্লা হইয়া যাইব । তয় কপালটা আসলেই বদনসিব ছিল।কি সব বিটকেলে জিনিসপত্র দিয়া গলার ময়নাতদন্ত করার পর ফাজিল ডাকার ব্যাটা আম্মাজানের সামনে আমারে জিগাইয়া বসল,
,"আপনি কি স্মোকিং করেন ? " ।আমি তো পুরাই চোদনা হইয়া গেলাম ,মনে মনে ডাক্তাররে যখন "জাতীয় সংসদীয়" ভাষায় গালিগালাজ করতাসি অমনি আম্মাজানের তীব্র প্রতিবাদ,"আরে ও তো এখনো অনেক ছোট,ওর কি সে বয়স হয়েছে "।মাতার হেন জবাব শুইনাও গাঁড়ল ডাক্তার বিরস বদনে হিব্রু ভাষায় কি সব লেইখা কইল,"আপনার ভোকাল কর্ডে পানি জমেছে,আপনার জন্য সকল রকম ধোঁয়া,ধূলা আর জোরে কথা বলা নিষেধ"।
ওদিকে আম্মা তখন চামে পাইয়া উপদেশের ঝড় বইয়া দিতাসে,এটা করবিনা,ওটা করবিনা,এটা খাবিনা,ওটা খাবিনা।মুখে আইচ্ছা ছাড়া আর কিছু না বললেও মনে মনে বললাম,ধোঁয়া আর ধূলারে তালাক দিলেও গানবাজি ছাড়তে পারুমনা।অন্দরের কথা না হয় বাদই দিলাম,বাথরুমেও যদি গলা খুইলা গান গাইতে না পারতি তয় বাঁচা থাইকা কি লাভ।কিন্তু অভাগা যেদিকে চায় সাগর শুকাইয়া যায়।ফ্যাঁসফেঁসে গলা দিয়া অনেক ঠেললে ঠুললে দুই একটা আওয়াজ বাইর হয়।কে বলবে,এই গলা একদিন বাঘের মত গর্জন করত ।
তয় আমার এই মুসিবতের দিনে আমার বন্ধুরা বড়োই দিলখুশ।তারা বলে,বাংলাদেশে নাকি সাউন্ড পলিউশন এই কয়েক দিনে কয়েক গুণ কইমা গেছে /।আমি অবশ্য এসব কথাকে ফাইজলামি হিসাবেই দেখি,শত হইলেও বন্ধু বইলা কথা, আমার খারাপ তো তারা চাইতে পারেনা ।একটা সত্য কথা কেউ স্বীকার করেনা,অসুখী মানুষ অন্যের অসুখ দেখেও স্বস্তি পায়।তয় আমি ভাবতাসি,যদি ওই শাখামৃগ পিনাক রঞ্জন আর তার খয়ের খাঁদের ভোকাল কর্ডে পানি জমত,তাইলে ব্যাপারটা নেহায়েত খারাপ হইতনা,দেশ জাতির কানও পরিষ্কার থাকত,ছাগলগুলার গলাবাজি শুনতে হইতনা, সাউন্ড পলিউশনটাও অনেক কমত,না কি কন?
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুন, ২০০৯ বিকাল ৫:৩৩