somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সবাই কবি নয়, কেউ কেউ কবি

০৪ ঠা জুলাই, ২০০৯ দুপুর ১২:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সেদিন ক্যাফেতে বসে বেশ ভাবের সাথে রাজা উজির পেটাচ্ছি,বাইরে তখন বৃষ্টিটাও বেশ জেঁকে ধরেছে,তার সাথে অবধারিতভাবে উড়ে যাচ্ছে কাপের পর কাপ চা,আর সিগ্রেট তো দেখতে না দেখতে ভস্ম হয়ে যাচ্ছিলই।মন মেজাজ বড়ই শরিফ ছিল আমাদের।এমন সময় বলা নেই কওয়া নেই কোত্থেকে দুম করে মফিজ এসে পড়ল।মুহুর্তেই আসন্ন বিপদের আশঙ্কায় আমাদের মুখ শুকিয়ে আমসি হয়ে গেল।

জানতে চাইলাম,"কিরে,এমন ঝড়ো কাক হয়ে এলি যে?"

বেচারা তখন ভিজে জবজবে হয়ে পড়েছে।ভেজা কাপড় নিংড়াতে নিংড়াতে সে জবাব দিল," আর,বলিসনা,দৌড়োতে দৌড়োতে পেরেশান হয়ে গেলাম।"

মনে মনে ভাবলাম,এই সেরেছে,এখন শুরু হয়ে যাবে এফএম রেডিওর আরজেদের মত ননস্টপ বকবকানি। সবাই দেখলাম একেবারে ম্যাদা মেরে আছে,মফিজের কাহিনী শোনার ইচ্ছে কারো বিন্দুমাত্রও নেই।

কিন্তু মফিজ এসব ভ্রুক্ষেপ করার মত আদমীই নয়,সে ওদিকে বিশাল এক কাহিনী ফেঁদে বসার জন্য রীতিমত প্রস্তুতি নিচ্ছে।আমরা তখন ফাঁকেতালে
তাস পেটানো মুলতবি রেখেই সটকে পড়ার ফিকির
করছিলাম।কিন্তু,বিধিবাম,মফিজ অমনি আমাদের ক্যাঁক করে চেপে ধরল।
"আরে,কোথায় যাস,দাঁড়া ,একটু শুনে যা?" হতচ্ছাড়াটা এমন চিনেজোঁকের মত সেঁটে রয়েছে যে,শেষে পলায়ন পর্বে ইস্তফা দিতেই হল।
"আরে শোন,একটা ভালো খবর আছে।"উৎসাহে তার চোখ চিকচিক করছিল।

সবার মাথায় তখন একই চিন্তা,তোর আর ভাল খবর,গত তিনমাস এই "ভাল খবর " শুনতে শুনতেই তো কেটে গেল।তিন মাস আগে কিন্তু এই হ্যাপা আমাদের পোহাতে হয়নি।কিন্তু কোন কুক্ষণে যে মফিজের মাথায় কোবতে লেখার ভূত চেপে বসেছিল কে জানে।একদিন নাকি শীতের সকালে ঘাসের ওপর জমে থাকা শিশিরবিন্দু দেখে হঠাৎ তার মনে হল,সে একজন কবি।এসব কেচ্ছা সে যখন আমাদের সবিস্তারে শোনাচ্ছিল তখন আমরা দস্তুরমত ঘাবড়ে গেলাম।এমনিতেই সে একটু ক্ষ্যাপাটে কিসিমের বান্দা,এত বড় নাম সবার ডাকতে অসুবিধে,এই অজুহাতে সে নিজের পিতৃপ্রদত্ত নাম মোস্তাফিজকে অবলীলায় ছেঁটে মফিজ বানাতেও কিচুমাত্র কসুর করেনি।আমাকে তখন বাধ্য হয়েই বলতে হল,"দেখ,তুই কারো কাছ থেকে ছ্যাঁকাও খাসনি,পরীক্ষায়ও গোল্লা মারিসনি,বা অন্য কিছুও হয়নি যে তোকে কবিতা লিখতে হবে।সবচেয়ে বড় কথা হল সবাইকে দিয়ে তো আর সবকিছু হয়না,আদার ব্যাপারীর জাহাজের খবর নিয়ে লাভ কি?।"

এবার মফিজের উৎসাহে খানিকটা ভাটা পড়ল বোধহয়।ক্ষুণ্ণচিত্তে সে বলল,"তোরা আমার কবিতা না শুনেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললি ?প্রতিভা তো কেবল বের হওয়ার জন্য আকুলি বিকুলি করে,কেবল সুযোগের অভাবে পারেনা।বলতে পারিস,ঐ মুহুর্তে সেই দৃশ্য না দেখলে হয়ত আমি বুঝতেই পারতাম না আমার মাঝে এই প্রতিভা আছে।"

এহেন আবেগমথিত দার্শনিক কথন শুনে আমাদের মন খানিকটা দ্রবীভূত হল বৈকি।বললাম,"আচ্ছা,শোনা দেখি তোর কবিতা?"মানুষ না জেনে খাল কেটে কুমীর আনে,আর আমরা একেবারে হাঙ্গর নিয়ে আসলাম।


ওদিকে মফিজ তখন গলা খাকারি দিয়ে কবিতা শুরু করে দিয়েছে,

সেদিন দুজনে
গিয়েছিলাম বনের ধারে ,
কিন্তু সেখানে কোন বন ছিলনা,
সেখানে ছিল কেবল একখন্ড মরুভুমি,
সেই মরুভূমির শেষ প্রান্তে,
আমরা দিগন্ত দেখতে গিয়েছিলাম ,
কিন্তু আমরা দেখতে পাইনি কোন দিগন্ত,
কারণ আমরা দুজনেই ছিলাম অন্ধ।

এটুকু বলে মফিজ একটু দম ফেলল।আর আমরা ! কি আর বলব,আমরা যাকে বলে একেবারে বাকরুদ্ধ !।বলাই বাহুল্য,আনন্দে অবশ্যই নয়।খুব একটা উপাদেয় কিছু আমরা তার কাছ থেকে আশা করিনি অবশ্যই,তাই বলে এতটা ! ওদিকে মফিজ তখন রীতিমত আশা নিয়ে আমাদের দিকে চেয়ে আছে।আমরা তখন একজন আরেকজনের দিকে বোবা চাউনি মেলে তাকিয়ে আছি।ভাবখানা এমন,কিরে কি বুঝলি ? ওদিকে মফিজ বল,"এবার বল,কবিতা কেমন হয়েছে?"।আমি সাবধানে বললাম,"দোস্ত,কিছুই তো বুঝলাম না।"ও দেখি ততোধিক উৎসাহে বলে চলেছে,"আসলে ব্যাপার হল,আমি ব্যাপারটার মধ্যে খানিকটা পরাবাস্তব গন্ধ আনতে চেয়েছি।আর শেষের অসাধারণ চমকটা বলতে পারিস,অনেকটা নাটকীয়ভাবে আমার মাথায় চলে এসেছে।ব্যাপারটা তাহলে একটু খুলেই বলি............"

আমি তাড়াতাড়ি বললাম," ও আচ্ছা,আচ্ছা।এবার বুঝলাম।তা তুই এবার কি করবি?"।মফিজ তখন আনন্দে সপ্তম স্বর্গে,"ভাল কথা মনে করেছিস,এই কবিতাটা যে কোন সাহিত্য পত্রিকা লুফে নেবে,কি বলিস?"
আমরা আর কিছু বললামনা।কে আর পাগলকে সাঁকো নাড়তে নিষেধ করবে?

পরের তিন মাস এমনি অসংখ্য কবিতার অত্যাচারে আমরা একেবারে নাজেহাল হয়ে পড়লাম।তার সর্বশেষ "ভাল"খবর হল,সে নাকি এখন লিটল ম্যাগাজিন বের করবে।আমরাও রীতিমত ভয়ে ভয়ে আছি,কবিতার
ভূত ব্যাটার মাথা থেকে কবে নামবে কে জানে। ততদিন পর্যন্ত গা ঢাকা দিয়ে থাকাই সই।




সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুলাই, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:২৮
২০টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯

মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×