somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অণুগল্প - এ জার্নি বাই ট্রেন

১৪ ই অক্টোবর, ২০০৯ রাত ৩:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঝকঝকে আকাশের দিকে তাকিয়ে মনটা এক লহমায় ভাল হয়ে গেল অপুর ।সত্যি বলতে কি ,আগের দিনের বিচ্ছিরি রকমের বৃষ্টিটা বেশ ভয়ই পাইয়ে দিয়েছিল ওকে ।নাছোড়বান্দার মত ঝরছে ঝরছে তো ঝরছেই ,থামার আর নামগন্ধটুকুও নেই ,মনটাই তেতো হয়ে গিয়েছিল ওর ।সেই সাথেখানিকটা শঙ্কাও জেগেছিল বৈকি ।কালকের আকাশটা যদি এরকম থম মেরে থাকে তাহলে তার অর্ধেক আনন্দই মাটি ।তাই ম্যাদামারা মন নিয়েই ঘুমুতে হয়েছিল তাকে ।এই মুহুর্তে সে অবশ্য বেজায় খুশি ,ঠিক যেন বাইরের নির্মেঘ আকাশের সূর্যটির মত , আজকের দিনে আর উটকো বৃষ্টির ঝক্কি পোহাতে হবেনা ,এই ব্যাপারে অন্তত এই মুহুর্তে সে নিশ্চিত ।

অপুর জন্য এই দিনটি অবশ্যই বিশেষ কিছু ।উচ্চতায় খুব বেশি নয় ,তায় আবার একহারা গড়নের বলে তাকে দেখে বোঝার উপায় নেই ,এরই মধ্যে সে দশ দশটি ক্লাস পার করে মাধ্যমিক পরিক্ষা অবধি দিয়ে দিয়েছে ।নিজেকে সে এরই মধ্যে বেশ লায়েক ভাবতে শুরু করে দিয়েছে ।তাতে অবশ্য তাকে খুব বেশি দোষ দেওয়া যাবেনা ,কিন্তু তার মা বাবাকে এই কথা বোঝানো বেশ শক্তই ।ছেলেকে আদর দিয়ে মাথা খাননি বটে ,কিন্তু চোখে চোখে রাখার কাজটি তারা ঠিকই করেছেন ।তাইতো বাড়ির বাইরে ইচ্ছেমাফিক খুব বেশিদূর যাওয়ার জো তার কখনোই হয়নি।এবার একটা মওকা খুব ভালমতই মিলেছে তার ।পরীক্ষা শেষের লম্বা ছুটি ,হাতে অফুরান অবসর ।আর কাহাঁতক ঘরে বসে ভেরেন্ডা ভাজা যায় ।তাই মামার বাড়ি যাওয়ার জন্য সে তক্কে তক্কে ছিল ।অবশেষে অনেক কসরতের পর বাবা মার ক্লাছ থেকে পারমিশনও মিলে গেল তার ।আজ তাই সে ট্রেনে চেপে মামাবাড়ি যাচ্ছে সে ,এবং সবচেয়ে বড় কথা হল ,এটাই তার প্রথম একা ট্রেনে চেপে মামাবাড়ি যাওয়া ।


বরাতটা তার ভালই ছিল বলতে হবে ,জানালার পাশেই সিটটা মিলে গেল তার ।তবে পাশের যাত্রীর দিকে তাকিয়ে মনটা খানিকটা দমে গেল তার ।এরই মধ্যে ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে ,শহর পার হয়ে ট্রেন এগিয়েও চলেছে ,অথচ পাশের যাত্রীটি এখনো তার সাথে কথা কওয়া তো দূরে থাক ,ভালমত তাকিয়েও দেখেনি ।আর সবচে বড় ব্যাপার হল এমন গাড়লের মত ট্রেনে ওঠার সাথে সাথে কেউ সটান ঘুমিয়ে পড়তে পারে ,তা সে ভাবতেই পারিনি ।তবে একটু খেয়াল করলেই অপু দেখতে পেত ,ট্রেনের বেশির ভাগ লোকই বেঘোরে ঘুমুচ্ছে ,আর দুয়েকজন রাজা উজির পেটাচ্ছে ।খানিক বাদে সে অবশ্য এই কথা বিলকুল ভুলে গেল ,জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখল দূরে যেন পাহাড়ের কায়া আবছা দেখা যাচ্ছে ,হঠাতই চোখের সামনে সবুজ পাহাড়ের সারি যেন মাটি ফুঁড়েই উদয় হল ।আজকের সূর্যটা একটু বেশি রকমেরই বেহিসাবী , তার আলো পাহাড়ের গায়ে পড়ে রীতিমত ধুইয়ে দিচ্ছিল ,আর অপুও যেন তারিয়ে তারিয়ে সেই মনলোভা দৃশ্য চেখে নিচ্ছিল ।সত্যি করে বললে ,সবুজের প্রতি তার দুর্বলতা একটু বেশিই ,আর তাই পাহাড় না সমুদ্র ,এই দুয়ের মাঝে সে বরাবরই চোখ বন্ধ করে সমুদ্রকে ছেটে ফেলেছে ।আর আজকের এই একলা ট্রেনজার্নিটাকে সে অনেক দিন থেকে খুব করে চাইছিল ।

ট্রেন চলছে দুদিকে ঘন পাহাড়কে সাক্ষী রেখে ।সাথে সাথে অপুও বাইরে দিকে নিনির্মেষ চেয়ে আছে ।মামাবাড়ি সে আগেও গিয়েছে ,কিন্তু সেসব বাসে ,রেলে এটাই তার মেইডেন জার্নি ।তার মনে হল ,এতকাল জার্নি বাই ট্রেন রচনায় সে কিসব গতবাধা ছাইপাশ লিখেছে ,বইয়ের ওসব লেখকেরা রেলভ্রমণের মাহাত্ম্য আদৌ বুঝেছে কিনা ,সে বিষয়েও তার গুরুতর সন্দেহ হতে লাগল ।

হঠাত সে সম্বিত ফিরে গেল পাশের যাত্রীটির ডাকে ,
-এমন হা করে কি দেখছ তুমি।
-পাহাড় দেখছি ,আপনি পাহাড় ভালবাসেন ?
অপু সাগ্রহে উত্তরের জন্য তাকিয়ে রইল ।
-পাহাড় ভালবাসব ?
এবার লোকটি খানিকটা অবাক,
-পাহাড় -টাহাড় কেউ আবার ভালবাসে নাকি ?আর ওসব দেখারই বা কি আছে ।এগুলো যত তাড়াতাড়ি পারা যায় কেটে সাফ করে ফেলাই ভাল ।

অপু ফ্যালফ্যাল করে লোকটির দিকে তাকিয়ে রইল ।বাকি সময়টা সে গল্পের বইয়েই গুঁজে রইল ,পাহাড়ের দিকে তাকানোর ফুরসত সে আর পায়নি ।



২৭টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯

মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×