রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট জিনিয়াস। যিনি তার গান এত নিপুণতার সহিত এমনভাবে তৈরি করেছেন যে, এখনো পর্যন্ত এমন কোন পরিস্থিতিই তৈরি হয়নি, যে পরিস্থিতি উপলক্ষ্যে রবীন্দ্রনাথও গান লিখেননি!! সকল ইমার্জেন্সিতে আপনি কিছু খুঁজে না পেলেও পাশে পাবেন রবীন্দ্র সঙ্গীত। কি বিশ্বাস হচ্ছে না? তাহলে নিজেই দেখে নিন আপনার জীবনে ঘটতে পারে অথবা অলরেডি ঘটে গেছে এমন কিছু নিত্যদিনের ঘটনা ও একে সামনে রেখে রবীন্দ্র লিখনিতে লিখিত কিছু গান।
প্রথমেই বলে রাখি এটুকু পর্যন্ত লিখার পর মাথায় আসলো এই রচনাটি হয়তো বিশেষ পাত্তা পাবে না কারো কাছে, কেউ শুনবে না আমার এই পোস্টের ডাক! কিন্তু না পরক্ষণেই এমপিথ্রি প্লেয়ার বাজিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলে উঠলেন –
যদি তোর ডাক শুনে কেউ নাই আসে
তবে একলা চলো রে
একলা চলো, একলা চলো, একলা চলো, একলা চলো রে!
ডাউনলোড লিংকঃ ক্লিক মি
অতএব সকল চিন্তা ঝেড়ে একলা একলাই চলে আসলাম মূল বিষয়ে -
ধরুন, আপনি খুব আবিষ্কারপ্রবণ ব্যক্তি। ইস্পেশাল কোন কিছু করলেই বন্ধুদের তা ডেকে ডেকে দেখাতে খুব পছন্দ করেন। কিন্তু প্রকারান্তরে বন্ধুরা আপনাকে পাগল ছাগল ছাড়া অন্য কিছু ডাকতেই চায় না!! শত বোঝালেও কাজ হয়না, বান্দরগুলান রাইতদিন আপনাকে পাগল বলে খেপিয়েই যায়। ওয়েট অ্যা মিনিট ব্রো, আসুন গলাতে গলা মিলায়। আপনার আর আমার শ্রেণী একি। তাই আমাদের জন্য আছেন রবীন্দ্রনাথ, লিখেছেন –
যে তোরে পাগল বলে, তারে তুই বলিসনে কিছু
আজকে তোরে কেমন ভেবে, অঙ্গে যে তোর ধুলো দেবে
কাল সে প্রাতে মালা হাতে আসবে রে তোর পিছু পিছু
ডাউনলোড লিংকঃ ক্লিক মি
কাক ডাকা ভোরে তীব্র অনিচ্ছাসত্ত্বে বিছানা ছেড়ে পার্সেন্টেজ মার্ক হারাবার মায়াতে ভার্সিটি গেলেন নানা ঝক্কিঝামেলা পেরিয়ে বাসে ঝুলে ঝুলে, এরপর বলদের মত ধুঁকে ধুঁকে লেকচার শুনলেন, ল্যাব করলেন, পুনরায় টাকার মায়াতে ভার্সিটি শেষে ছুটলেন টিউশানিতে। অতঃপর সকল বোঝা মুক্ত হয়ে রাত ১০টায় বিধ্বস্ত শরীরে বাসায় এসে মাত্র বিছানায় গা হেলিয়েছেন, তখনই মনে পরলো আগামীকালই ৫০ পৃষ্টার অ্যাসাইনমেন্টটা জমা দেওয়ার শেষ দিন!!! সেই মুহুর্তের জন্যই যেন জন্ম হয়েছে এই গানের -
বল দাও মোরে বল দাও,
প্রাণে দাও মোর শকতি
ডাউনলোড লিংকঃ ক্লিক মি
দুই ঘন্টা পর পরীক্ষা, বহুকাল আগে অর্জিত হওয়া মি. লেট উপাধিটি গুছোবার জন্য আগেভাগেই চলে এসেছেন ক্লাসের সামনে। করিডোরে খুব মনযোগ দিয়ে সেলফ স্টাডি করছেন। বিশাল বিশাল ইন্টিগ্র্যাশান আপনাকে ঘায়েল করেই চলেছে ক্রমাগত। :-& এমনি সময় ভাবনার জগত প্রকম্পিত করে, সুগন্ধীয় রুপের মায়াজালে মাতিয়ে জুনিয়র ব্যাচের সেই দুধেআলতা রঙের মেয়েটি অতিক্রম করে চলেছে আপনাকে!! এই সময়টিতেই ব্যাকগ্রাউন্ডে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ আপনার হয়ে গেয়ে উঠবেন –
মোর ভাবনারে কি হাওয়ায় মাতালো
দোলে মন দোলে অকারণ হরষে,
হৃদয় গগনে সজল ঘন নবীন মেঘে
রসেরও ধারা বরষে।
ডাউনলোড লিংকঃ ক্লিক মি
রোমাঞ্চের প্রথম ধাক্কা দুর্বল হওয়ার পাশাপাশি গানের আবেশ ফিকে হয়ে আসার পর, এক মুহুর্তের জন্য দ্বিধায় ভুগতেই পারেন মেয়েটির সাথে পরিচিত হবেন কি হবেন না! ও কি আপনার ডাকে সাড়া দিবে নাকি বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে টাটা দিবে! :-& এমন সময়ে নিজেকে একা ভাবার কোন কারণ নেই ভ্রাতা, কবিগুরু নিজেও এমন পরিস্থিতির শিকার! হয়তো দেখবেন আপনার কাঁধে খাতা রেখে তিনি লিখে চলেছেন -
যদি তারে নাই চিনি গো সে কি
সে কি আমায় নেবে চিনে
এই নব ফাল্গুনের দিনে
জানি নে জানি নে
ডাউনলোড লিংকঃ ক্লিক মি
তাই দ্রুততার সহিত মেয়েটিকে চিনেও নিলেন, সুযোগ বুঝে বানিয়েও ফেললেন আপন হৃদয় সঙ্গিনী। সেই থেকে দুজনে দুজনাতে মধুর সময় কেটে যাচ্ছে দ্রুতই। প্রিয়ার সুরে সুরে তাল মিলানো আর মৃদু মান-অভিমানের খেলায় হারতে হারতে এই গানটিই হতে পারে সেই সময়ের আদর্শ সঙ্গীত –
আমার বেলা যে যায় সাঁঝ-বেলাতে
তোমার সুরে সুরে সুর মেলাতে
একতারাটির একটি তারে গানের বেদন বইতে নারে,
তোমার সাথে বারে বারে হার মেনেছি এই খেলাতে
তোমার সুরে সুরে সুর মেলাতে
ডাউনলোড লিংকঃ ক্লিক মি
অতঃপর রীতি অনুসারে কিছুদিন গত্যান্তে প্রিয়ার সাথে বাধিয়ে ফেললেন তুমুল ঝগড়া, রীতিমত সম্পর্ক ফেটে যাচ্ছে এমনাবস্থা!! ঠিক সেই মুহুর্তে অন্তিম বিচ্ছেদ দূরীকরণের স্বার্থে চিন্ময় চট্টোপাধ্যায় এর মত গেয়ে উঠতে পারেন -
না যেও না, যেও নাকো
মিলন প্রিয়াসি মোরা,
কথা রাখো, কথা রাখো
না যেও না, যেও নাকো
ডাউনলোড লিংকঃ ক্লিক মি
কিন্তু না শেষ রক্ষা আর হল না, ছ্যাকার নির্মমতা রেহাই দিলো না আপনার মত মাসুম বাচ্চাটিকেও! তাই মনের দুঃখে আত্মদহনের জন্য বনে না গিয়ে ঘরে বসেই শুনুন রবীন্দ্র সঙ্গীত। কারণ কবিগুরু ছ্যাকা ভক্ষণকারীদের অনুশোচনা বুঝেন আর তাই গুরুর সুরে গেয়ে উঠুন –
আমি জেনে শুনে বিষ করেছি পান
প্রাণেরও আশা ছেড়ে, সঁপেছি প্রাণ
আমি জেনে শুনে বিষ করেছি পান
ডাউনলোড লিংকঃ ক্লিক মি
এবার বিবাহিত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য কিছু ঘটনার দিকে আলোকপাত করা যাক -
সাত সকালে দিব্যি আরামসে ঘুমাচ্ছেন, হঠাৎ মনে হল কাছাকাছি কোথাও গ্যাঙর গ্যাঙর শব্দে বিকট জোরে কেউ চিল্লাছে! চোখ খুলে দেখলেন এ আর কেউ নই, আপনারি সোহাগী বউ। অতএব গেল মেজাজটা খারাপ হয়ে, ঝেড়ে দিয়েও দিলেন দুটো প্রমাণ সাইজের ধমক এবং আবার তলিয়ে গেলেন ঘুমের রাজ্যে আফটার এফেক্টের কথা না ভেবেই। অতঃপর নির্দিষ্ট সময়ে জেগে উঠে দেখলেন মহাসর্বনাশ করে বসে আছেন আপনি, বউ গাল ফুলিয়ে আছে! আহা চিন্তার কি আছে, সমস্যা সমাধানে আছেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ, গেয়ে উঠুন –
তুমি ডাক দিয়েছো কোন সকালে, কেউ তা জানে না
তুমি ডাক দিয়েছো কোন সকালে
আমার মন যে কাঁদে আপন মনে, কেউ তা মানে না
ডাক দিয়েছো কোন সকালে, কেউ তা জানে না
ডাউনলোড লিংকঃ ক্লিক মি
বিবাহ কর্ম সম্পন্ন করেছেন দুই মাসও পার হয়নি, বউয়ের প্রতি ভালোবাসাও এখনো তীব্র, অথচ বাজার থেকে পচা মাছ আনার দায়ে আপনার প্রতি ব্যাপক অভিযোগের বাণ নিক্ষেপণ সহকারে উদ্দিষ্ট শান্তি না পেয়ে অবশেষে বউ সিদ্ধান্ত নিয়ে নিল অন্নবর্জন কর্মসূচির। অন্যদিকে আপনি মহব্বতের টানে না পারছেন একা খেতে, না চাইছেন ডেকে আনতে। কারণ একটাই, নব্য বউয়ের কাছে ইগো হারাবার ভয়! :#> :#> এমন মুহুর্তের জন্য বেজে উঠবে এই গানটি –
ডাকবো না ডাকবো না
অমন করে বাইরে থেকে ডাকবো না
পারি যদি, অন্তরে তার ডাক পাঠাবো, আনবো ডেকে
না না না! ডাকবো না ডাকবো না
ডাউনলোড লিংকঃ ক্লিক মি
আবার এমনো হতে পারে, বন্ধুদের সাথে দীর্ঘ দিনের আড্ডার অভ্যাস ত্যাগ করতে না পারায় বাসায় ফিরতে হয়েছে গভীর রাত। আর এদিকে বউ পূর্ব শত্রুতার (!!) জের ধরে প্রতিশোধের লোভে ঘরে ছিটকিনি আটকে বাইরে দাড়া করিয়ে রেখেছে আপনাকে! :!> :!> বুঝতেই পারছেন এমনতর পরিস্থিতিতে ইজ্জত রক্ষার দায়ে দরজার সামনে নতজানু হয়ে বউয়ের প্রতি ব্যাকুল কন্ঠে কোন গানটি গাইতে হবে আপনাকে -
খোল খোল দ্বার রাখিও না আর
বাহিরে আমায় দাঁড়ায়ে
দাও সাড়া দাও এই দিকে চাও
এসো দুই বাহু বাড়িয়ে
ডাউনলোড লিংকঃ ক্লিক মি
হ্যা পাঠক রচনার এই প্রান্তে এসে আঙ্গুল মোর ব্যাথায় টনটন করা শুরু করলো এবং পরক্ষণেই এই আয়োজনে অংশ নিল পিঠের শিরদাঁড়াও। জানি না আমার রচনা গুলো সাইজে এইরকম হয় কেন! তবে আপনারা যে এত বড় রচনা পড়ে মোটামুটি বিরক্ত হয়েছেন তা আমি নিশ্চিত। কিন্তু আমার কি দোষ, সব দোষ ঐ রবীন্দ্রনাথের। উনার জন্যই তো আজকের এই রচনা।
যাই হোক রবি ঠাকুরের আরো অনেক অনেক গান বিশ্লেষণ করা বাকি আছে, লোভ হচ্ছে সবই এখানে লিখে ফেলি, কিন্তু তা তো আর সম্ভব না। তাই ইচ্ছা আছে এই বিষয়ে আরো একটি পর্ব লিখার, শুধু প্রয়োজন আপনাদের একটু উৎসাহ দান। ধন্যবাদ সবাইকে। :#> :!>
আর এখন শুনবো আমার এই ক্লান্ত মুহূর্তের জন্য রবি ঠাকুরের লিখা এই গানটি –
ক্লান্তি আমার ক্ষমা করো প্রভু
পথে যদি পিছিয়ে পড়ি কভু।
এই দীনতা ক্ষমা করো প্রভু
পিছন-পানে তাকাই যদি কভু।
ডাউনলোড লিংকঃ ক্লিক মি
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুলাই, ২০১২ রাত ৯:৫০