somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"অ্যা ডেভিল'স ডিজাইন" - রামুতে বৌদ্ধদের উপর হামলার পিছনের বিস্তারিত কাহিনী!!

১৫ ই অক্টোবর, ২০১২ সকাল ১০:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ঘৃণা প্রচারের একটি নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছিল রামুতে, ২৯ সেপ্টেম্বরের সেই কালো রাতের আগ পর্যন্ত যে এলাকাটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য শতাব্দী জুড়ে পরিচিত ছিল। মাত্র ছয় ঘন্টার মাঝে ১৮টি প্যাগোডা ধ্বংস এবং প্রায় ৫০টি ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয় উন্মাদ ধর্মান্ধরা। জুলফিকার আলী মানিকের ব্যাপক তদন্তের ফলে সম্প্রতি এই ভয়াবহ তথ্য বের হয়ে আসে যে, এরুপ চরম সন্ত্রাসের মূল হোতা ছিল “একটি ভুয়া (fake) ফেসবুক পেজ”!!



ফেসবুকে ইসলাম বিরোধী যে ছবিটির কারণে ২৯ সেপ্টেম্বর বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের উপর হামলার ঘটনা ঘটে তা ছিল ফটোশপে এডিট করা। কে বা কারা উত্তম কুমার বড়ুয়ার ফেসবুক প্রোফাইলের একটি স্ক্রিনশট নিয়ে, ইসলাম বিরোধী ওয়েবসাইট “Insult allah” এর ওয়েব অ্যাড্রেসটি ঐ ছবিতে কাট-পেস্ট করে দেয়। এই জালিয়াতি করার ফলে আপাতদৃষ্টিতে দেখে মনে হচ্ছিলো, “Insult allah” - উত্তম এবং অন্য ২৬ জনের সাথে ইসলাম বিরোধী ছবিটি শেয়ার করেছে।
দৈনিক ডেইলি স্টার স্ক্রিনশটটি আইটি এবং গ্রাফিক্স বিশেষজ্ঞদের প্রদর্শন করে। পত্রিকাটি নিশ্চিত হয় যে, এই সুপরিকল্পিত কাজটি করা হয় স্থানীয় বৌদ্ধ উত্তমকে ফাঁসানো/উপলক্ষ্য হিসেবে ব্যবহার এবং ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর লক্ষ্যে, যা কিনা ১২টি বৌদ্ধ মন্দিরকে জ্বালিয়ে ছাই ও কয়েক ডজন ঘরবাড়িকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করে।

উত্তম বড়ুয়ার তথাকথিত ফেসবুক পেজটি কিভাবে মানুষের দৃষ্টিতে আসলো তা বোঝানোর জন্য একটি অতিসাধু গল্প রচিত হয়।
রামুনিবাসী যুবক ওমর ফারুকের দাবী অনুসারে, তার বন্ধু আবদুল মুক্তাদির ইলিয়াস আলিফ, যে কিনা চট্টগ্রামের একটি প্রাইভেট পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের ছাত্র, ২৯শে সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় তার (ওমর ফারুক) মোবাইল মেরামতের দোকানে আসে। ফারুকের মতে, তার বন্ধু (মুক্তাদির) নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করে এবং উত্তমের প্রোফাইল পেজে ইসলাম বিরোধী ছবি খুঁজে পেয়ে একটি দৃশ্যের অবতারণা করে। মুক্তাদির এবং ফারুক দাবী করে যে, তারা উত্তমের ফেসবুক প্রোফাইল পেজের স্ক্রিনশট নেয়।
স্ক্রিনশটের জালিয়াতি হতে পারে ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর পরিকল্পনার প্রথম ভাগ এবং হামলাকারীদের রামুর বাইরে থেকে নিয়ে আসা ছিল এর দ্বিতীয় ভাগ। পরিকল্পনাকারীরা কেন উত্তমের প্রোফাইল বেছে নিয়েছিল তা আদৌ পরিষ্কার না। উত্তম, যে কিনা একজন ছা-পোষা দলিল লেখক, ঘটনা রাত থেকে তার স্ত্রী-পুত্রসহ পালিয়ে বেড়াচ্ছে।

স্ক্রিনশটে একটি বিষয় পরিষ্কার যে, আবদুল মুক্তাদির নামক একজন উত্তমের প্রোফাইলে প্রবেশ করেছিল, যদিও সে উত্তমের ফেসবুক ফ্রেন্ড না। উত্তমের প্রোফাইল রেস্ট্রিক্টেড ছিল না। ‘আবদুল মুক্তাদির’ নামক ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি এখন কোনভাবে প্রবেশযোগ্য নয়। কিন্তু ফারুকের বন্ধু, যে ২৯শে সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় দোকানে এসেছিল সে চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে ‘আবদুল মুক্তাদির’ নামেই নিবন্ধিত। পুলিশ তাকে অক্টোবরের ৯ তারিখ আটক করে।

“আমার ছেলে একজন মেধাবী ছাত্র। সে স্কুলে থাকা অবস্থায় বৃত্তি পেয়েছিল। তার শ্রবণের সমস্যা আছে কিন্তু তার স্মৃতি অনেক তীক্ষ্ণ”, ৬ই অক্টোবর ফকিরাবাজার তার বাড়িতে এমনটাই বলেন তার (আবদুল মুক্তাদির) মা সাজেদা বেগম। তিনি ডেইলি স্টার’কে তার পুত্রের সাথে দেখা করিয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানান এবং প্রতিবেদককে এ বিষয়ে কোন কিছু না লিখার জন্য বারবার অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, “সে মোবাইল ফোনের সমস্যা সমাধান করতে পারে এবং কম্পিউটার বিষয়ে তার ভালো জ্ঞান আছে যেহেতু সে চট্টগ্রামে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে অধ্যয়ন করে”

অক্টোবরের ৩ তারিখ, এই প্রতিবেদকের সাথে কথাবলাকালীন সময়ে মুক্তাদিরকে পাওয়ার জন্য ফারুকের সাহায্য চাওয়া হলে ফারুক তার বিরক্তি প্রকাশ করে। ফারুক ক্লাস ফোরের পর পড়াশুনা ছেড়ে দিলেও কম্পিউটার এবং মোবাইল মেরামতে সে দক্ষ বলে জানায়। মজার ব্যাপার হল, তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট অনুসারে সে, রামু উচ্চ বিদ্যালয় এবং কক্সবাজার সরকারী কলেজে পড়াশুনা করেছে। সে তিন থেকে চার বছর আগে রামুর ফকিরাবাজারে একটা দোকান খুলে। স্থানীয়ভাবে যা “ফারুক’স কম্পিউটার শপ” নামে পরিচিত, এটি মুক্তাদিরের বাড়ির কাছেই। ফারুক কোনরুপ সংগঠন বা রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে। সাজেদাও তার ছেলে মুক্তাদিরের সম্পর্কে একি কথা বলেন।
এদিকে একজন পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, মুক্তাদির স্বীকার করে যে, সে ২০০৮-০৯ সালে রামু খিজারী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম এবং দশম শ্রেণীর ছাত্র থাকাকালীন সময়ে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাথে যুক্ত ছিল।

মুক্তাদিরের মা বলেন যে, তার নিকট আত্মীয়ের মধ্যে কেউ কোনরূপ রাজনীতিতে যুক্ত নেই। অন্যদিকে, তার একজন ভাসুর/দেবর (brother-in-law) বান্দরবানের নাইখাংছড়ি উপজেলার চেয়ারম্যান। তার নাম তোফায়েল আহমেদ, যিনি কোন সাংগঠনিক পদে না থাকলেও স্থানীয়ভাবে সকলের কাছে জামাত নেতা হিসেবে পরিচিত। তোফায়েল জামাতের সাথে তার যোগাযোগ অস্বীকার করে এবং বলে সে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাথে যুক্ত ছিল। আশ্চর্যজনকভাবে, সাজেদা বেগম এই প্রতিবেদকের কাছে তার নিকট আত্মীয়দের নাম ও পরিচয় দেওয়ার সময় তোফায়েল আহমেদকে ‘আলী আহমেদ’ নামে পরিচয় দেন। কিন্তু তার ভাই যখন বলেন যে ঐ ব্যক্তির নাম তোফায়েল আহমেদ, তখন তাকে (সাজেদা বেগম) বিব্রত দেখায় কিন্তু এ বিষয়টি তিনি ব্যাখ্যা করেননি।

ফারুকের কম্পিউটারে ছবিসমূহ -

কিছু ইসলাম বিরোধী ছবি দোকানে ফারুকের কম্পিউটারে আগে থেকেই জমা ছিল। ফারুক এই প্রতিবেদকের কাছে বলে যে, সে এবং তার বন্ধু আবদুল মুক্তাদির তাড়াহুড়া করে উত্তমের ফেসবুক অ্যাকাউন্টের স্ক্রিনশট নিয়ে কিছু ইমেজ ফাইল তৈরি করেছিল। দুইজন অপরিচিত লোক তাদের ফেসবুকে এই ছবিগুলো দেখে অসন্তুষ্ট হয় তাই তারা এমনটা করে, বলে ফারুক। ঐ দুইজন অপরিচিত লোক চলে যাওয়ার পর তারা ছবিগুলো সেভ করে এবং জানায় যে তা করার জন্য তাদের কিছু সফটওয়্যার ডাউনলোড করতে হয়েছিল। ফারুক বলে, তারা ফাইলগুলো তৈরি করেছিল এজন্যই যে তারা স্থানীয় লোকজনের কাছে প্রমাণ করতে চেয়েছিল কোরআন অবমাননাকারী ছবিগুলো তাদের নয় বরং উত্তমের প্রোফাইলের। ফারুক আরো দাবী করে যে, ছবিগুলো সেভ করার কিছুক্ষণের মধ্যেই উত্তমের অ্যাকাউন্টটি উধাও হয়ে যায়। যদিও ফারুকের দাবিটি বিভ্রান্তিকর কারণ অ্যাকাউন্ট হোল্ডার ব্যতীত একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট অন্য কেউ ডিএকটিভেট করতে পারে না।

অপরদিকে সে দুইজন অপরিচিত লোক চলে যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই কৌতূহলী অনেক মানুষ ভীড় জমাতে থাকে ঐ ছবিগুলো দেখার জন্য। তাদের সবাইকে ফারুকের কম্পিউটারে সেভ করে রাখা ছবিগুলো দেখানো হয়। ফলে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট ফেসবুক সম্পর্কে জ্ঞানহীন মানুষগুলো বিশ্বাস করে যে, ইসলাম বিরোধী ছবিসহ ফেসবুক পেজটি উত্তমের।
ফারুক এবং মুক্তাদির শুধু উত্তমের ফেসবুক প্রোফাইলের ফ্যাব্রিকেটেড স্ক্রিনশটটিই প্রদর্শন করেনি, বরং তারা ‘insult allah’ নামক পেজ থেকে আরো অনেক কোরআন অবমাননাকারী ছবি নামিয়ে নেয় এবং সেগুলো পরে মোবাইল থেকে মোবাইলে ব্লু-টুথের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। বস্তুতঃ, ফারুক, মুক্তাদিরের মা এবং অন্য স্থানীয়রা, যারা ফারুকের দোকানে ছবিটি দেখেছিল, তাদের বক্তব্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য দেখা যায়।

স্থানীয় অনেকেই ফারুক ও মুক্তাদিরের কাছ থেকেই ছবিগুলো পেয়েছিল ২৯শে সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায়। ফারুকের ভাষ্যমতে, তারা স্থানীয় সাংবাদিক, নাম না জানলেও তাদের প্রত্যেককে চিনতে পারবে বলে জানায় ফারুক।
অক্টোবরের ৩ তারিখ ফারুক জানায়, সে ডেইলি স্টারকে ঐ ছবিগুলো দিতে অপারগ যেহেতু ২৯শে সেপ্টেম্বর রাতেই রামু পুলিশ তার কম্পিউটার জব্দ করেছে। তবে ডেইলি স্টার ছবিগুলো পায় নাজির হোসাইন নামক একজন স্থানীয় কম্পিউটার-ট্রেইনিং শপের মালিকের কাছ থেকে। তিনি জানান যে, ছবিগুলো ফারুকের দোকান থেকে ছড়ানো হয়েছিল এবং তিনি ২৯শে সেপ্টেম্বরের পরে স্থানীয়দের কাছ থেকে সেগুলো সংগ্রহ করেন। স্থানীয়রা এবং একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান যে, এই ছবিগুলোই তারা ফারুকের কম্পিউটারে দেখেছিল।
ফারুক দাবী করে যে, ঐ বিতর্কিত ছবিটি তার ফেসবুক পেজে আবির্ভুত হয়। প্রথমে মুক্তাদির এবং পরে সে ছবিটি দেখে। কিন্তু সংগৃহীত ছবিগুলো ফারুকের দাবীকে সমর্থন করেনা। “আবদুল মুক্তাদির” এর অ্যাকাউন্টটি ব্যবহার করা হয়েছিল উত্তমের প্রোফাইল পেজটি দেখা এবং স্ক্রিনশট নেওয়ার কাজে।
উল্লেখ্য, কেউ যদি তার ফেসবুক প্রোফাইলকে রেস্ট্রিক্টেড না করে তবে যে কেউ সেই অ্যাকাউন্টধারীর তথ্য দেখতে পারবে। অন্যথায় প্রোফাইলটি রেস্ট্রিক্টেড হলে প্রোফাইলের একটি সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেখা যাবে।
এই প্রতিবেদক উত্তমের মন্তব্যের জন্য তার সাথে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হয়।


ছবি বড় করে দেখুন

ইউআরএল ফেইকড -

আবদুল মুক্তাদিরের নেওয়া স্ক্রিনশট অনুসারে, উত্তমের প্রোফাইল পেজে ব্রাউজারের অ্যাড্রেস বারে http://www.facebook.com/Insultallahswt নামক অ্যাড্রেসটি দৃশ্যমান।
কিন্তু ছবিটিতে জালিয়াতির স্পষ্ট চিহ্ন প্রমাণ করে “/Insultallahswt” লেখাটি পেস্ট করা হয়েছে, হয় আসল অ্যাড্রেসটি লুকানোর জন্য অথবা লোকজনকে উত্তম কত খারাপ তা বোঝানোর জন্য। এমনকি উত্তমের প্রোফাইলে ট্যাগ করা ছবিটির উপরে দেওয়া তথ্য – “Insult allah with Uttam Kumar Barua and 26 others” with a date of September 18 – সমানভাবে জালিয়াতি করা।
অবশ্য এটা জানা সম্ভব ছিল না যে, ছবি এডিটিঙের এই কাজটি কি ফারুকের কম্পিউটারে করা হয়েছে নাকি অন্য কোথাও ছবিটি তৈরির পর তা তার কম্পিউটারে রাখা হয়েছে। এই প্রশ্নের জবাব পুলিশের হাতে জব্দ হওয়া ফারুকের কম্পিউটারেই লুকিয়ে আছে বলে জানান একজন এক্সপার্ট।

কারা ছিল ঐ অপরিচিত দুইজন লোক? -

ফারুকের মতে, ২৩-২৪ বছর বয়স্ক দুইজন লোক, সে এবং মুক্তাদিরের সাথে তার কম্পিউটারে উত্তমের ফেসবুক পেজটি দেখেছিল। ফারুক ঐ দুইজনকে আগে কখনো দেখেনি। ফারুকের জন্ম ও বেড়ে উঠা রামুর দক্ষিণ শ্রীকুলে।
মুক্তাদিরের মা সাজেদা বেগম দাবী করেন যে, তিনি শুনেছেন দোকানে ফারুকের কম্পিউটারে ছবিটি দেখার পর চারজন ক্রেতা শোরগোল ও কান্নাকাটি করেছিল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ব্যক্তি জানান, তিনি ঐ রাতে সাড়ে আটটার দিকে আরো কয়েকজনসহ ছবিটি দেখতে দোকানে গিয়েছিলেন। তিনি দোকানে গিয়ে ফারুককে দেখেননি, একজন অচেনা বালক ছবিগুলো দেখাচ্ছিলো। অপরিচিত সুদর্শন বালকটি স্থানীয়দের ছবিটির মানেও ব্যাখ্যা করে দিচ্ছিলো।
“যখন বালকটি আমাকে একটা ছবির ব্যাখ্যা দিচ্ছিলো, আমি তাকে বলেছিলাম ব্যাখ্যা না করতে এবং শুধু ছবিগুলো দেখাতে”
দ্য ডেইলি স্টার তদন্ত করে জানতে পারে যে, ঐ অচেনা বালকটিই ছিল মুক্তাদির।

মুক্তাদির রামুতে কেন? –

রামু থেকে এসএসসি পাসের পর মুক্তাদির শ্যামলী আইডিয়াল পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং এর উপর ডিপ্লোমা করতে চট্টগ্রাম আসে। তখন থেকেই সে চট্টগ্রামে থাকে এবং মাঝে মধ্যে মাকে দেখতে যায়।
এদিকে ষষ্ট সেমিস্টারের ফাইনাল পরীক্ষা চলা সত্ত্বেও মুক্তাদিকে রামুতে দেখা যায়। তার মা সাজেদা বেগম বলেন, সেপ্টেম্বরের ২৫ তারিখ মুক্তাদির তাকে দেখতে এসেছিল এবং পরের দিনই সে নাইখাংছড়িতে আঙ্কেল তোফায়েল আহমেদের সাথে দেখা করতে যায় এবং সেপ্টেম্বরের ২৮ তারিখ পুনরায় রামুতে ফিরে আসে। অক্টোবরের ১ তারিখ সে আবার চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রামু ছাড়ে, তিনি বলেন।
রেকর্ড অনুসারে, মুক্তাদিরের ডরমিটরির সুপারিনটেনডেন্ট ইমাম হোসাইন জানান, সেপ্টেম্বরের ২২ থেকে ২৬ তারিখ পর্যন্ত মুক্তাদির ডর্মে ছিল না। সে সেপ্টেম্বরের ২৬ ও ২৭ তারিখ উপস্থিত ছিল কিন্তু সেপ্টেম্বরের ২৯ ও ৩০ তারিখ অনুপস্থিত। অক্টোবরের ১ তারিখ সে ডর্মে ফিরে আসে এবং অক্টোবরের ৫ তারিখ আবার চলে যায়।
অক্টোবরের ৯ তারিখ রাতে ডর্মে ফিরার সময় পুলিশ মুক্তাদিরকে আটক করে।

তার মা সাজেদা জানান, “পরীক্ষার গ্যাপে মুক্তাদির সপ্তম সেমিস্টারে ভর্তির ফি পরিশোধের জন্য টাকা নিতে এসেছিল। যেহেতু তার হাতে সময় ছিল তাই সে কিছুদিনের জন্য নাইখাংছড়ি বেড়াতে গিয়েছিল।” ভর্তি ফি হিসেবে মুক্তাদিরকে ১৭,০০০ টাকা দিয়েছিলেন বলেও তিনি জানান।
যদিও ইন্সটিটিউটের প্রিন্সিপাল জানান, যেহেতু ষষ্ট সেমিস্টারের ফাইনাল এখনো চলছে তাই তারা সপ্তম সেমিস্টারের ভর্তি ফি’র জন্য এখনো শিক্ষার্থীদের বলেননি। তারা নভেম্বরে ঐ ফি’র জন্য শিক্ষার্থীদের বলতেন।
ফারুক জানায়, স্থানীয় রেস্টুরেন্টে নাস্তার পর সে এবং মুক্তাদির ২৯শে সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় তার দোকানে যায়। উভয়ই ফেসবুকে ছবিটি দেখে, তা স্থানীয়দের দেখায় ও বিতরণ করে এবং পরে পুলিশ স্টেশানে যায়।
এদিকে সাজেদা দাবী করেন, ২৯শে সেপ্টেম্বর মুক্তাদির তার আন্টির মোবাইল সাড়াতে সাড়ে সাতটার দিকে ফারুকের দোকানে যায়। এই সময় সে ছবিগুলো দেখেছিল এবং ফোন মেরামত শেষে এক ঘন্টার মাঝেই ঘরে ফিরে আসে। পরে পুলিশ তাদের বাড়িতে আসে এবং ফারুকের দোকানে যে সে ছবিগুলো দেখেছিল তা নিশ্চিত করতেই মুক্তাদিরকে থানায় নিয়ে যায়।
এরুপভাবে একই বিষয়ে ফারুক ও সাজেদা বেগমের বক্তব্যে আরো নানা অসংগতি ফুটে উঠে। ৬ই অক্টোবরে ডেইলি স্টারের সাথে কথাবলাকালীন সময়ে সাজেদা বেগম অনেক তথ্য আড়াল করার চেষ্টা করেন এবং এমনকি পরবর্তীতে দ্য ডেইলি স্টারের তদন্তে তার দেওয়া অনেক গোপন তথ্যও মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়।

তারা কাছাকাছি থাকতো -

লোকজনকে উস্কানি দেওয়ার প্রথম ক্যাম্পেইনটি শুরু হয় রামুর ফকিরাবাজার এলাকার ফারুকের দোকানে, যা মুক্তাদিরের বাড়ির নিকটে। দোকানের নিকটেই প্রথম একটা ছোট মিছিল বের হয়। অন্যান্য অল্পসংখ্যক স্থানীয়ের উপস্থিতিতে এই মিছিলে নেতৃত্ব দেন হাফেজ আহমেদ, যিনি মুক্তাদিরের বাড়ির পাশেই থাকেন।
৬ই অক্টোবর এই প্রতিবেদক সাজেদা বেগমের সাথে কথা বলতে গেলে হাফেজ আহমেদের শ্যালিকাও (sister-in-law) উপস্থিত ছিল ঐখানে। তিনি মুক্তাদিরের পক্ষাবলম্বন করেন এবং এ বিষয়ে লিখতে প্রবলভাবে অনুৎসাহিত করেন।
উল্লেখ্য, ২ই অক্টোবর পত্রিকায় মিছিলে তার ছবি প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে হাফেজ আহমেদ পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
আলিফ কে? –
রামু বাজার এলাকায় মুক্তাদির আলিফ নামে পরিচিত। তার মা বলেন আলিফ মুক্তাদিরের ডাকনাম। ফেসবুক অ্যাকাউন্ট “আবদুল মুক্তাদির” এ এই ডাকনামটি ব্যবহার করা হয়নি।
যদিও দ্য ডেইলি স্টার “আবদুল মুক্তাদির আলিফ” নামক একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুঁজে পেয়েছে। অ্যাকাউন্টটি রেস্ট্রিক্টেড ছিল বিধায় অতি অল্প পরিমাণ তথ্য পাওয়া গেছে। যেখানে বলা হয়েছে, “আবদুল মুক্তাদির আলিফ” রামু উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছিল। অ্যাকাউন্টটির প্রোফাইল পিকচার ছেলেদের হলেও সেক্স উল্লেখ করা ছিল মেয়ে।
মজার ব্যাপার হল, ফারুকও তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একই ডাকনাম ‘আলিফ’ ব্যবহার করে, যদিও এটা ওর ডাকনাম না। ৩ই অক্টোবর জিজ্ঞেস করা হলে ফারুক বলে, তার বন্ধুর ডাকনামটি পছন্দ বিধায় সে এটি ব্যবহার করেছে।

মুক্তাদির শিবিরের লোক ছিল -

চট্টগ্রাম পুলিশের অ্যাডিশানাল সুপারিন্টেনডেন্ট মো. ইলতুত মিশ (Md IItut Mish), যিনি কক্সবাজারে কাজে নিয়োজিত আছেন, শুক্রবার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছেন, “মুক্তাদিরের স্বীকারোক্তি এবং তার ব্যক্তিগত ডাইরি অনুসারে, সে ২০০৯ সালে রামু থানা ইসলামী ছাত্রশিবিরের স্পোর্টস সেক্রেটারি ছিল।” মুক্তাদির পুলিশকে বলেছে যেহেতু সে খেলাধুলায় ভাল ছিল, তাই শিবিরের লোকেরা তাকে এই পোস্টটি দিয়েছিল, তিনি বলেন।
ফোনে যোগাযোগে করলে মুক্তাদিরের আঙ্কেল তোফায়েল আহমেদের বলেন, তিনি জামাতের সাথে জড়িত নন। “জামাত এর কোন ডকুমেন্টে আমার নাম দেখানো কারো পক্ষে সম্ভব না”
স্থানীয়রা বলেন, বৌদ্ধদের বাড়ি ও প্যাগোডাতে হামলার পর থেকে এই কিছুদিনের মধ্যে তোফায়েলের গাড়ি দুইবার রামুর উদ্দেশ্যে গিয়েছিল।
তোফায়েল জানান, তার স্ত্রী ডাক্তারের কাছে ও কক্সবাজারের কিছু জায়গায় গিয়েছিল এবং সে হয়তো রামুতে তার মা ও বোনের সাথেও দেখা করতে যেতে পারে।
নাখাইংছড়িতে তোফায়েলের সাথে মুক্তাদিরের দুই মাতৃসম্বন্ধীয় আঙ্কেল রাকিব এবং রাজীব থাকে। স্থানীয়দের মতে, তাদের মধ্যে একজনকে হামলার আগে ও হামলার রাতে রামুতে দেখা গিয়েছিল।
তোফায়েল অবশ্য তাদের ২৯শে সেপ্টেম্বর রাতে রামুর কাছাকাছি কোথাও থাকার সম্ভাবনা নাকোচ করেন। তিনি বলেন, “তারা (রাজীব ও রাকিব) আমার এখানে (নাইখাংছড়ি) থাকে এবং ঐদিন রাতে তারা ঘরেই ছিল।”
এই প্রতিবেদককে রাজীব ফোনে জানায় যে, ২৭ সেপ্টেম্বর পারিবারিক ব্যবসার উদ্দেশ্যে সে রামুতে যায় এবং ঐদিনই নাইখাংছড়ি ফিরে আসে।

মূললেখাঃ Attack On Buddhists - A devil's design
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই অক্টোবর, ২০১২ সকাল ১০:৩৪
৭টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×