একটা মেয়ে কি একটা ছেলেকে ধর্ষণ করতে পারে। পারে মনে হয় । ১৯৭৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের এক নারী তার প্রাক্তন প্রেমিককে কিডন্যাপ করে একটা ঘরে ৩ দিন বিছানার উপর শিকল দিয়ে বেঁধে রেখে জোর করে উপর্যপুরি ধর্ষণ করে । প্রেমিকা তার প্রেমিককে অনুসরন করতে করতে ইংল্যান্ডে চলে আসে এবং ঘটনাটা ইংল্যান্ডেই ঘটে। এই কারণে ঐ সময় ইংল্যান্ডের ট্যাবলয়েডগুলির সুবাদে এই খবর সারা বিশ্বে প্রচণ্ড আলোড়ন তোলে। এই বিউটি কুইন নারীর নাম জয়েস বারন্যান ম্যাকিন্নি (Joyce Bernann McKinney) যিনি একসময় সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে ‘মিস ওয়াইমিং’( যুক্তরাষ্ট্রের একটা রাজ্য) হয়েছিলেন এবং মিস ওয়ার্ল্ড ইউএসএ তে অংশ নিয়েছিলেন। ঐ সময় তার প্রেমিকের বয়স ছিল ১৮ বছর আর তার বয়স ছিল ২৪ বছর। প্রেমিকের নাম ছিল কার্ক অ্যান্ডারসন (Kirk Anderson) যে ছিল একজন নম্র, ভদ্র তরুণ মর্মন খৃস্টান মিশনারি।
অ্যান্ডারসনের ছবি
৩ দিন পরে ছাড়া পাওয়ার পর অ্যান্ডারসন তার প্রাক্তন প্রেমিকা জয়েসের বিরুদ্ধে পুলিশে রিপোর্ট করে এবং ইংল্যান্ডের আদালতে ধর্ষণ মামলা করে। যদিও ইংল্যান্ডের আইনে তখন নারী কর্তৃক পুরুষকে ধর্ষণের কোন ধারা বা আইন ছিল না। ১৯৭৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের উটাহ রাজ্যের একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ওদের প্রথম পরিচয় হয়। ওরা অভিসারে গেলেও ধার্মিক অ্যান্ডারসনের বিয়ে ব্যতীত শারীরিক মিলনে আপত্তি ছিল। বিভিন্ন কারণে পরবর্তীতে দুইজনের সম্পর্ক ভেঙে যায় । কিন্তু জয়েস তাকে ভুলতে পারেনি। ফলশ্রুতিতে জয়েস একজন ব্যক্তিগত গোয়েন্দা ভাড়া করে অ্যান্ডারসনকে অনুসরণ করার জন্য। ১৮ মাস ধরে তাকে অনুসরন করা হয় এবং জয়েসের এই কারণে অনেক পয়সা খরচ করতে হয়। অ্যান্ডারসন তখন মিশনারি কাজে ইংল্যান্ডে ছিল। অবশেষে ১৮ মাস পরে ১৯৭৭ সালে জয়েস তার আরেক বন্ধু কেইথ মেকে সাথে নিয়ে অ্যান্ডারসনকে অপহরন করার সিদ্ধান্ত নেয়। একটা বোতল ভর্তি ক্লরোফরম এবং একটা খেলনা পিস্তল তারা সাথে রাখে। ইংল্যান্ডের একটা চার্চের সিঁড়ি থেকে তারা অ্যান্ডারসনকে অপহরন করে এবং একটা বাড়িতে নিয়ে গিয়ে বিছানার উপর দড়ি, শিকল এবং হ্যান্ডকাফ দিয়ে বেঁধে ফেলে। এইভাবে বন্দি অবস্থায় তিন দিন পর্যন্ত জয়েস জোর পূর্বক অ্যান্ডারসনকে উপর্যপুরি ধর্ষণ করে।
জয়েসের ছবি
অ্যান্ডারসন ঘটনার বর্ণনা করতে গিয়ে বলে ‘আমাকে বিছানার উপর শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছিল। জয়েস তার পায়জামা টেনে ছিঁড়ে ফেলে এবং তাকে নগ্ন করে ফেলে।‘ তিনদিন পর্যন্ত পাশবিক নির্যাতন এবং এভাবে ইজ্জত হারানোর পর অ্যান্ডারসন স্বীকার করতে বাধ্য হয় যে সে জয়েসকে বিয়ে করবে। এই কথা বলার পর জয়েস তাকে ছেড়ে দেয়। যদিও কোর্টে জয়েস তার বিরুদ্ধে করা এইসব অভিযোগ অস্বীকার করে। পরবর্তী সময়ের সাক্ষাতকারে জয়েস অ্যান্ডারসনকে নিয়ে তার স্বপ্নের কথা বলতে গিয়ে বলেছে যে “আমি শুধু আন্ডারসনের সাথে ছোট্ট একটা ঘরে সংসার করতে চেয়েছিলাম। অ্যান্ডারসন কাজ থেকে ফিরলে দুজনে মিলে একসাথে ডিনার করবো। সাথী হয়ে তার পাশে দাড়াতে চেয়েছিলাম। আফসোস আমি কেন সেটা পেলাম না?” আরেক সময় বলে “ অ্যান্ডারসন চাইলে আমি এভারেস্টের চুড়া থেকে নগ্ন হয়ে স্কি করে তার জন্য ফুল নিয়ে নীচে নামতে রাজি ছিলাম”।
এই মামলায় জয়েস ও তার অপরাধের সঙ্গী জামিন পায় এবং পালিয়ে যুক্তরাষ্ট্র চলে আসে। পরবর্তীতে জামিনে থাকা অবস্থায় সময় মত আদালতে হাজিরা না দেয়ার জন্য জয়েসকে ১ বছরের সাজা এবং জরিমানার ঘোষণা দেয়া হয়। পাসপোর্টে ভুল তথ্য দেয়ার জন্য তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে আরেকটা মামলা ছিল। যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেফতার হওয়ার পর সেই কারণে তাকে সাজা খাটতে হয়। আন্ডারসনের মামলার কারণে জয়েস একজন মিডিয়া সেলিব্রেটিতে পরিনত হয় কিছু সময়ের জন্য। এই মামলা অবশ্য পরে আর এগোয়নি।
এত কিছুর পরও জয়েস কিন্তু অ্যান্ডারসনকে ছাড়েনি। পরবর্তীতে ১৯৮৪ সালে জয়েস আবারও আন্ডারসনের পিছনে লাগে। যদিও তখন আন্ডারসন বিয়ে করে ফেলেছে এবং সন্তানের পিতা হয়েছে। জয়েস নিজের বাড়ি থেকে হাজার মাইল দূরে এসে আন্ডারসনের অফিসের কাছে নিজের গাড়িতে থাকা শুরু করে এবং অ্যান্ডারসনকে পুনরায় পাওয়ার চেষ্টা করতে থাকে। পুলিশে রিপোর্টের কারণে জয়েসের গাড়ি তল্লাশি করা হয় এবং গাড়িতে দড়ি, হাতকড়া এবং আন্ডারসনের দৈনন্দিন চলাফেরার বিবরন সম্বলিত একটা নোটবুক পাওয়া যায়।
জয়েস আর অ্যান্ডারসনের এই ঘটনা নিয়ে ২০১০ সালে ‘ট্যাবলয়েড’ নামে একটা ডকুমেন্টারি ফিল্ম তৈরি করেন অস্কার বিজয়ী পরিচালক এরল মরিস। যদিও জয়েস এটার বিরুদ্ধে মামলা করেছে।
কিছুদিন আগে আমার একটা মন্তব্যে আমি এক নারী কর্তৃক আমার এক কলিগকে বিয়ের জন্য হুমকির বর্ণনা দিয়েছিলাম। ২০০১ সালের ঘটনা এটা। ঐ মেয়ে কিছু মাস্তান ভাড়া করেছিল আমার কলিগকে বিয়েতে বাধ্য করার জন্য। একই গ্রামে থাকার কারণে আমার ঐ কলিগ মেয়েটাকে ছোটবেলা থেকেই চিনত। কিন্তু ঐ মেয়ের সাথে তার প্রেম বা ভালোবাসা ছিল না। আমার ঐ কলিগ অনেক মেধাবী ছিল। ভালো চাকরী করতো। কিন্তু ঐ মেয়ে নাছোড়বান্দা। একদিন ওনার অনুরোধে আমি এবং আরেকজন কলিগ ওনার সাথে থানায় যাই এই ব্যাপারে জিডি করার জন্য। পরবর্তীতে অবশ্য উনি অন্য জায়গায় বিয়ে করেন এবং ভালো আছেন। ঐ মেয়ের খবর অবশ্য জানি না।
আসলে বর্তমান দুনিয়ায় মেয়েদের জ্বালায় ছেলেরাও নিরাপদে নাই । অনেক মেয়ে-মাস্তান আছে আবার অনেক মেয়ে মাস্তান, গোয়েন্দা এদেরকে ভাড়া করে প্রেমিককে পাওয়ার জন্য। বাংলাদেশে অবশ্য অ্যান্ডারসনের মত ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। কিন্ত তারপরও মেয়েদের দ্বারা ইজ্জত লুট হওয়ার আগেই ছেলেদেরকে সতর্ক হতে হবে। মেয়েরা এগিয়ে যাচ্ছে। গার্ল পাওয়ার বলে কথা। সামনে এই ধরণের ঘটনা বাংলাদেশে ঘটে কি না বলা যায় না।
সুত্রঃ
THEGUARDIAN.COM/FILM/2011/OCT/16/MCKINNEY-MORMON-MISSIONARY-SEX-TABLOID
EXPRESS.CO.UK/NEWS/WORLD/635114/RETURN-JOYCE-KIDNAP-BEAUTY-QUEEN
EN.WIKIPEDIA.ORG/WIKI/MANACLED_MORMON_CASE
EXPRESS.CO.UK/NEWS/WORLD/635114/RETURN-JOYCE-KIDNAP-BEAUTY-QUEEN
ছবিঃ theguardian.com
dailymail.co.uk
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে অক্টোবর, ২০২২ বিকাল ৩:১৮