somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যে মডেলের গাড়িগুলি বাংলাদেশের রাস্তা থেকে হারিয়ে গেছে

২২ শে অক্টোবর, ২০২২ দুপুর ১২:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ছোট বেলায় রাস্তায় বের হলে আমার অভ্যাস ছিল প্রাইভেট গাড়ির মডেল চেনার চেষ্টা করা। তখন হাতে গোনা কয়েকটা মডেলের গাড়ি ঢাকার রাস্তায় চলত। আমি দূর থেকে দেখেই বলে দিতে পারতাম এটার প্রস্তুতকারক কোন কোম্পানি এবং এটার মডেল কি। এই গাড়িগুলির মধ্যে কিছু গাড়ি আছে যেগুলি বাংলাদেশে এখন আর দেখা যায় না। আবার কিছু গাড়ি আছে যেগুলির আধুনিক মডেল এখন রাস্তায় দেখা যায়। আমার জন্মের আগে আরও কিছু গাড়ি ছিল যেগুলির নাম শুনেছি কিন্তু নিজের চোখে দেখা হয়নি। ওল্ড কার ক্লাব নামে একটা ক্লাব আছে। ওদের কাছে আরও অনেক পুরনো গাড়ি আছে। আমি আমার দেখা পুরনো দিনের হারিয়ে যাওয়া গাড়িগুলি সম্পর্কে নীচে কিছু বলার চেষ্টা করেছি।

১। হিলম্যান MINX


এই গাড়ির প্রস্তুতকারক হল ব্রিটিশ কোম্পানি হিলম্যান। ১৯০৭ সালে এই কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯২৮ সালে এই কোম্পানি হাম্বার লিমিটেডের সাথে একীভূত হয়। ১৯৬৭ সালে এই কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় Chrysler। এই ক্রিসলার অনেক বিখ্যাত একটা অটোমোবাইল প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান এবং এখনও এই কোম্পানি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের গাড়ি তৈরি করছে। এদের অনেকগুলি ব্র্যান্ড আছে যেমন ক্রিসলার, ডজ, জিপ (আমরা এখন জিপ গাড়ি বলি এই ধরণের গাড়িকে। কিন্তু আসলে এটা একটা গাড়ির ব্র্যান্ড। যেমন জেমস ক্লিপ আসলে একটা পেপার ক্লিপের ব্র্যান্ড।), আলফা রোমিও, ফিয়াট ইত্যাদি।

নিউজিল্যান্ড এবং দক্ষিণ আফ্রিকাতে এই হিলম্যান (MINX) মডেল হাম্বার-৯০ নামে পরিচিত ছিল। ১৯৬১ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত এই মডেলের গাড়িগুলি তৈরি করা হয়েছিল। যুক্তরাজ্য, নিউজিল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়াতে এই গাড়ি তৈরি হতো। ২ দরজা, ৪ দরজা এবং ৫ দরজার হিলম্যান গাড়ি পাওয়া যেত। এই গাড়িতে ১৫৯২ থেকে ১৭২৫ সিসির ইঞ্জিন ব্যবহৃত হত। এই গাড়ির ওজন প্রায় ১ টন। আমার জন্মের আগে আমার বাবার একটা হিলম্যান গাড়ি ছিল শুনেছি। আমার বড় বোন দেখেছে।

২. অস্টিন (AUSTIN MINI COOPER)


এই গাড়ির প্রস্তুতকারক হল ব্রিটিশ কোম্পানি The Austin Motor Company Limited। ১৯০৫ সালে এই কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৫২ সালে এটা মরিস মটর লিমিটেডের সাথে একীভূত হয়ে যায়। কিন্তু অস্টিন ব্র্যান্ড চালু থাকে। বাংলাদেশে ছোট আকৃতির এই অস্টিন গাড়ি অনেক ছিল এক সময়।

৩। ফিয়াট (FEAT)


এই গাড়ির প্রস্তুতকারক হল ইতালিয়ান কোম্পানি ফিয়াট এসপিএ। ১৮৯৯ সালে এই কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয়। আগে এটা ফিয়াট ক্রিসলার অটোমোবাইলের অংশ ছিল। ফিয়াটের অনেক নতুন মডেল এখনও আসছে। ফিয়াট ইন্ডিয়া এই অঞ্চলে নতুন মডেলের গাড়ি তৈরি করছে।

৪ মরিস মাইনর (MORIS MINOR)


ব্রিটিশ কোম্পানি মরিস মটর এই গাড়ি তৈরি করে ১৯৪৮ সালে। ১৯৭১ সালের পর এই মডেল আর তৈরি হয়নি। ইংল্যান্ড, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডে এই গাড়ির কারখানা ছিল।এই গাড়ির ওজন ছিল ৭৭৫ কেজি। এই গাড়ি দেখতে অনেকটা ব্যাঙের মত। আমার মায়ের এক বান্ধবী অনেক আগে প্রায়ই এই গাড়িতে চড়ে আমাদের বাসায় আসতেন। আসার পর ড্রাইভার গাড়ির সিটে ঘুমিয়ে থাকতো আর আমরা ভাইয়েরা ধাক্কা দিতাম। কিছুক্ষণ পরে ড্রাইভারের হুশ হত।

৫. টয়োটা করোনা (CORONA RT 40)


এটাকে অনেকেই আরটি ৪০ নামে চেনে। এটা জাপানের টয়োটা কোম্পানির একটা ব্র্যান্ড। বাংলাদেশে প্রচুর দেখা যেত এক সময় এই মডেলটা। ১৯৫৭ সালে প্রথম এই ব্র্যান্ডের গাড়ি তৈরি হয়। জাপান ছাড়াও অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং ফিলিপাইনে এই মডেল তৈরি হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। পরবর্তীতে টয়োটা করোনার অনেক নতুন মডেল এসেছে।

৬. মাজদা প্রেস্তো (MAJDA PRESTO)


জাপানের মাজদা মটর কর্পোরেশন এই গাড়ি তৈরি করেছিল ১৯৭০ সালে এবং ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত উৎপাদন অব্যাহত ছিল। এটা মাজদা ফ্যামিলিয়া শ্রেণীর একটা মডেল। ইতালিয়ান ভাষায় প্রেস্তো মানে ‘দ্রুত’।

৭. ভক্সওয়াগেন বিটল (Volkswagen - Beetle)


আমরা এই গাড়িকে বলতাম ব্যাঙ গাড়ি। এখনও কদাচিৎ হঠাৎ এই গাড়ি দেখা যায়। হয়তো দুই একটা গাড়ি বাংলাদেশে এখনও আছে। এই গাড়ির প্রস্তুতকারক হল জার্মান কোম্পানি ভক্সওয়াগন গ্রুপ। ১৯৩৭ সাল থেকে শুরু করে এই কোম্পানি এখনও গাড়ি তৈরি করছে এবং বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় একটি ব্র্যান্ড। জার্মান ভাষায় ভক্সওয়াগন মানে হল ‘জনগণের গাড়ি’। বাংলাদেশে ব্যাঙের মত যে মডেলটা ছিল সেটা ১৯৬৬ সালের মডেল।

৮। ডজ ডার্ট


এই গাড়িটা প্রস্তুতকারক হল ডজ ক্রিসলার। ক্রিসলার গ্রুপের একটা ব্র্যান্ড হল ডজ ডার্ট। বাংলাদেশে খুব কম ছিল এই মডেলের গাড়ি। এই কোম্পানির কিছু রেসিং কারও ছিল অন্য দেশে।

৯। Datsun (Nissan )


এই মডেলটা নিসান কোম্পানির একটা ব্র্যান্ড। বাংলাদেশে অনেক দেখা যেত এক সময়। ১৯৮৬ সালে নিসান এই ব্র্যান্ড বন্ধ করে দিয়েছিল কিন্তু ২০১৩ সালে আবার শুরু করে। তবে ২০২২ সালে আবার বন্ধ করে দিয়েছে। এই ব্র্যান্ডের গাড়ি সর্ব প্রথম ১৯৩১ সালে তৈরি করা হয়। নিসান একটি জাপানি গাড়ির কোম্পানি। ডাটসান ব্র্যান্ডের ট্রাকও ছিল অন্য দেশে।

১০. টয়োটা পাবলিকা (TOYOTA PUBLICA) এবং টয়োটা স্টারলেট


দুই দরজা বিশিষ্ট টয়োটা পাবলিকা গাড়ি কদাচিৎ এখনও দেখা যায় প্রশিক্ষণ গাড়ি হিসাবে। এটা টয়োটা কোম্পানির একটা ব্র্যান্ড। ১৯৬১ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত এই গাড়ি তৈরি হয়েছে। ঐ সময় টয়োটা কোম্পানির এটাই সবচেয়ে ছোট আকৃতির গাড়ি ছিল। পরে এটার উত্তরসূরি হিসাবে আসে টয়োটা স্টারলেট গাড়ি। এটা আরও ছোট ছিল। বাংলাদেশে স্টারলেট ব্র্যান্ডটাও ভালো চলেছে। এছাড়া টয়োটা স্প্রিন্টার এবং টয়োটা পাবলিকা স্টারলেট গাড়িও আগে দেখা যেত। এখন দেখা যায় না। এই ব্র্যান্ডগুলি ছাড়াও মিতসুবিশি ল্যান্সার সেডান এবং হন্ডা কোম্পানির একটা ছোট আকৃতির গাড়ি দেখা যেত।

কালের পরিক্রমায় উপরে বর্ণিত গাড়িগুলি বিলুপ্ত হয়ে গেছে বলা যায়। কিন্তু আমাদের স্মৃতি থেকে এই গাড়িগুলি এখনও হারিয়ে যায়নি।

সুত্র - উইকিপিডিয়া এবং গাড়ির কোম্পানির ওয়েব সাইটগুলো যেমন;
হিল ম্যান
নিসান
ফিয়াট
ক্রিসলার
অস্টিন
মরিস
ডজ
ভক্সওয়াগেন
মাজদা

ছবি -
দেশী কার ডট কম
গাড়ি বাজার ডট কম
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে অক্টোবর, ২০২২ রাত ১১:২৮
২৩টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×