
মেঝো সন্তান যারা তারা একটু অবহেলিত হয় সাধারণত। পরিবারে মেঝো সন্তান একাধিকও হতে পারে যদি ভাই বোন বেশী থাকে। ভালো প্যারেন্টস হতে চাইলে এই অবহেলার বিষয়টা মাথায় থাকা উচিত। পরিবারের বড় সন্তান এবং সবচেয়ে ছোট সন্তান বাবা মায়ের বিশেষ স্নেহ ভালাবাসা এবং মনোযোগ বেশী পায় মাঝখানে জন্মানো সন্তানদের চেয়ে। এই কথাটা চিরন্তন সত্য না হলেও বহুলাংশে সত্য বলে মনে হয়। এই না পাওয়া কি মেঝো ছেলে/ মেয়ের ব্যক্তিত্ব বিকাশে প্রভাব ফেলে? অনেক মনোবিজ্ঞানী এই বিষয়ের পক্ষে বলেছেন আবার অনেকে বিপক্ষে বলেছেন। তবে আমার নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে আমার কাছে মনে হয়েছে যে এই বিষয়টার মধ্যে কিছুটা সত্যতা আছে।
আমার বড় বোনকে আমার বাবা মা তুই করে সম্বোধন করতেন আজীবন কিন্তু বাকি ৩ ভাইকে তুমি করে সম্বোধন করতেন। আমি এই ব্যাপারে একবার আমার মাকে বলেছিলাম যে তোমরা তো আপাকে বেশী ভালোবাসা এবং এটা তো বোঝাই যায় কারণ তোমরা তাকে তুই করে ডাক আর আমাদের তুমি বলে ডাক। এই কথার কোন সদুত্তর আমার মা দিতে পারেননি। কিছুটা বিব্রত হয়েছিলেন বটে।
আবার আমার তিন ভাইয়ের মধ্যে বড় ভাই ছোটবেলা থেকে সব কিছুতে অগ্রাধিকার পেয়ে এসেছে। কারণ সে বড় ছেলে। ছেলেদের জন্য যে কোন আকর্ষণীয় জিনিসের ক্ষেত্রে আমার বড় ভাইকে সবার আগে দেয়া হত। যেমন প্রথম আলাদা আলমারি, প্রথম আলাদা কক্ষ, প্রথম সাইকেল, প্রথম পড়ার টেবিল, ক্যাসেট প্লেয়ারের নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি আরও অনেক কিছু। আবার আমার ছোট ভাই মানুষ হয়েছে ছোট বাবু হিসাবে। সবার ছোট বলে তার সাত খুন মাফ। আমার সাথে কোন কারণে ঝগড়া হলে সবাই ছোট ভাইয়ের পক্ষ নিত। ওর বিরুদ্ধে আমার অভিযোগ শুনলে বাবা মা চাচা ফুফুরা হেসে উড়িয়ে দিত। আমাকে নিয়ে ঠাট্টা করতো। যেটা ছিল আমার জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক।
অনেক মনোবিজ্ঞানী মনে করেন যে মেঝ সন্তানরা বড় বা ছোটদের চেয়ে একটু আলাদা হয়। তাদের মতে সাধারণত মাঝখানের সন্তান/ সন্তানদের কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য থাকে মাঝেখানে থাকার কারণে। যদিও এটা স্বতঃসিদ্ধ না। বড় বা ছোট সন্তানেরও এই বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে। তবে সাধারণত ভাইবোনের মাঝখানে থাকার কারণে মেঝোদের এই প্রবণতা বা বৈশিষ্ট্য বেশী থাকে।
১। একটু বিদ্রোহী প্রকৃতির হয়।
২। পরিবারমুখীতা কম থাকে
৩। পারফেকশন খোঁজে না
৪। দুই পক্ষকে আপোষ করাতে এরা দক্ষ হয়
৫। অন্যায়ের প্রতিবাদ করার প্রবণতা থাকে
৬। ঝুকি নিতে ভয় পায় না
৭। খোলা মনের হয়
৮। কাউকে কোন কিছুতে উৎসাহিত করা বা অনুপ্রাণিত করার ক্ষমতা থাকে
৯। সহানুভূতিশীল হয়
১০। অনেকে নিজেদের শৈশবকাল সম্পর্কে নেগেটিভ ধারণা পোষণ করে।
১১। অন্যায় কিছু না হলে আপস করার মনোভাব রাখে।
১২। এরা ইজি গোয়িং হয়ে থাকে
১৩। এদের উদ্ভাবনী শক্তি অপেক্ষাকৃত বেশী থাকে
১৪। এরা স্বাবলম্বী হয়
নেতিবাচক বৈশিষ্ট্য কি কি আছে? আমার মনে হয় নেতিবাচক বৈশিষ্ট্যগুলি হল;
১। অনেকে হীনমন্যতায় ভোগে।
২। আবেগ প্রবণ বেশী হয়
৩। উদাসীন হয়
আশা করি ব্লগাররা পরিবারে ভাইবোনদের মধ্যে নিজেদের অবস্থান থেকে এই বিষয়ের পক্ষে বা বিপক্ষে কিছু বলবেন। এটা হতে পারে অনেকটা অন্ধের হাতি দেখার মত। হাতিকে যে যেভাবে অনুভব করেছে সেই ভাবেই বর্ণনা করেছে। উপরের বর্ণনা সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নাও হতে পারে।
সুত্রঃ
en.wikipedia.org/wiki/Middle_child_syndrome
webmd.com/mental-health/what-to-know-middle-child-syndrome
rd.com/list/middle-child-traits/
ছবি - ইডি টাইমস
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জানুয়ারি, ২০২৩ সকাল ৮:২০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



