১৯৭১ সালে ঘটে যাওয়া একজন বীরাঙ্গনার জীবনের একটা ছোট গল্প বলি। আসলে গল্প না সত্যি ঘটনা। এই মহীয়সী নারী পরবর্তীতে সাক্ষাতকারের সময় এই ঘটনার কথা উল্লেখ করেছেন। খুলনার ক্রিসেন্ট জুট মিলে চাকরীরত অবস্থায় এই বীরাঙ্গনা নারী ১৯৭১ সালে ৯ মাস পাকিস্তানীদের দ্বারা নির্যাতিত হয়েছেন তাদের নিয়ন্ত্রণাধীনে থাকার কারণে। অক্টোবরের দিকে মানসিকভাবে দুর্বল করার জন্য শান্তি কমিটির এক নেতার হত্যা মামলায় তাকে জড়ানোর চেষ্টা করা হয়। তিনি আসলে ঘটনাচক্রে রাস্তায় দাড়িয়ে দূর থেকে ঘটনাটা দেখেছিলেন মাত্র। এই কারণ দেখিয়ে তাকে যশোর সেনানিবাসে নিয়ে যাওয়া হয় জেরা করার জন্য। পথিমধ্যে তিনি কয়েকবার পাশবিক নির্যাতনের স্বীকার হন। যশোর পৌঁছানোর পরে প্রথমে দুইজন অফিসার তাকে কিছুটা শারীরিক নির্যাতন করে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করার জন্য। পরে মেজর আলতাফ করিম নামের একজন অফিসারকে দায়িত্ব দেয়া হয়।
মেজর আলতাফ করিম রুমে আসার পরে এই বীরাঙ্গনা তার পা জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং এই বন্দি অবস্থা থেকে তাকে মুক্ত করার জন্য মেজর সাহেবকে বারবার অনুরোধ করতে থাকেন। মেজর আলতাফের মনোভাব কিছুটা নমনীয় ছিল। তিনি বীরাঙ্গনাকে কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেন এবং যাওয়ার আগে বলে যান যে তিনি একটা নমনীয় এবং পজিটিভ রিপোর্ট দিবেন যেন সেটা বীরাঙ্গনার জন্য ভালো হয়। বীরাঙ্গনা মেজর আলতাফ করিমের দুই হাত ধরে অনুরোধ করেন তিনি যেন তাকে মুক্ত না করে কোথাও না যান। শেষ পর্যন্ত এই দয়ালু অফিসারের সার্বিক সহায়তায় যশোর সেনানিবাস থেকে এই বীরাঙ্গনা মুক্তি পান। মেজর আলতাফ করিম একজন জওয়ানকে বীরাঙ্গনার সাথে দিয়ে দেন তাকে বাড়ি পৌঁছানোর জন্য। কিন্তু সেনানিবাস থেকে মুক্ত হলেও খুলনার যে মিলে তিনি চাকরী করতেন সেখানে তিনি নিয়মিত পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তা এবং মিলের অবাঙ্গালী অফিসারদের দ্বারা নির্যাতিত হচ্ছিলেন।
এই ঘটনার পরে মেজর আলতাফ মাঝে মাঝে খুলনার ক্রিসেনট জুট মিলে আসতেন। বীরাঙ্গনার মুখে পরবর্তী ঘটনা শোনা যাক।
তারপর থেকে ভদ্রলোক আমাকে …… মেজর আলতাফ করিম আমাকে যিনি ক্যান্টনমেন্ট থেকে উদ্ধার করে আমার প্রতি একটা মানবতা দেখিয়েছিলেন, তার প্রতি আমি মানসিকভাবে একটু দুর্বল হয়েছিলাম। আমার তো …… যদি তার সাথে সম্পর্কটা আরও আগে হত হয়ত এতটা কষ্ট নাও হতে পারতো। কিন্তু আমি একেবারেই শেষ দিকে পেলাম তো, আমি মানসিকভাবে তার প্রতি ইনভলভড হয়েছিলাম। আমার একটা ভালোবাসা বোধ জন্মেছিল তার জন্য। কারণ তিনি সেইভাবেই এসেছিলেন আমার কাছে। তো এক পর্যায়ে তিনি আমাকে খুব বড় একটা …… একদিন যেতে যেতে উনি আমাকে বললেন যে যদি …… একটা কথা বলবো যদি তুমি অসন্তুষ্ট না হও তাহলে তোমাকে আমি একটা কথা বলি। তো উনি আমাকে মাঝে মাঝে নিয়ে মানসিক কষ্টের জন্য …… নিয়ে বেড়িয়ে পড়তেন এবং তখন ঐ মিলের অফিসারদের অত্যাচারটা আংশিকভাবে একটু কমে আসল। ওনার হ্যা… ওনার… উনি একটু খুব … ইয়ে ছিলেন …… ওনার একটা প্রভাব ছিল। রেস্পেকট করতো আমার মিলের মালিকরা। তো বলছে যে …… উনি গেলেই বলত যে আমি … (বীরাঙ্গনার) বাসায় একটু ঘুরে আসব। আমার জেনারেল ম্যানেজার বলত কোন …… (বীরাঙ্গনার নাম)? উনি বলতেন তোমার পিএসের বাসায় একটু ঘুরতে যাব। ওকে তুমি চেন কি করে (জেনারেল ম্যানেজার বলছে)? তো বলে যে তুমিই তো পরিচয় করিয়ে দিয়েছ। বলে, আমি তার প্রটেকশনটা চাচ্ছি তাই ...... এই জন্য ফিদাই সাহেব (জেনারেল ম্যানেজার) একটু থমকে গিয়েছিল ব্যাপারটাতে। তো যখনই উনি বলতেন যে আমি …… বীরাঙ্গনার বাসায় যাচ্ছি …… হঠাৎ ওরা …… অত্যাচার করতো অন্যভাবে … আমাকে ফোন করে বলত আলতাফ কাহা গায়া? আমি বলতাম উনি তো অনেকক্ষণ আগে চলে গেছেন। সে তো বাসায় পৌছায়নি । তুমি তাকে কোথায় হত্যা করেছ? তুমি তাকে কোথায় মেরে ফেলেছ? (জেনারেল ম্যানেজার বলছে) এরকমভাবে উত্তর দিত ।
তো এই ভদ্রলোক (মেজর আলতাফ করিম) আমাকে একদিন বললেন যে ....... আমাকে একটা বিয়ের প্রপসাল দিলেন। তোমার যা অত্যাচার দেখলাম তোমার যা নয় মাসের … আমি তো অনেকদিন ধরে খবরও রাখি এবং আমি কিছুটা শুনতে পাচ্ছি যে তোমাকে তো সবাই কোলাবোরেটর বলছে। তুমি তো এখানে …… বাংলাদেশ স্বাধীন হবে শিগগিরি। তুমি কি স্বাধীন বাঙলা শোন? আমি বলি না। ওর কাছেও আমি সত্যি কথা বলতাম না। কিভাবে শুনবো? আমি একটা রেডিও দেই তোমাকে? আমি বলি, না, আমি রেডিও নেব না। বলে যে তাহলে এক কাজ কর। তুমি তোমার ব্যাগটা আমাকে দাও আর আমার ব্যাগটা তুমি নাও। আমি বলি আমার ব্যাগ তুমি নিয়ে কি করবে? মেয়েদের ব্যাগ। তোমার ব্যাগ ছেলেদের ব্যাগ, সেটাই বা আমি নিয়ে কি করবো? নেও না … আমি দেখি যে ওর ব্যাগে অনেক টাকা আমার ব্যাগে একশ দেড়শ টাকা। তো, ও বোধ হয় আমাকে কিছু টাকা দিতে চায় খুব সম্মানের সাথে। আমি বলি না এটা তো সম্ভব না। ব্যাগ চেঞ্জ এটা তো নিয়ম নাই। তো ও আমাকে পরীক্ষাও করলো যে আমি কোন টাকা পয়সা নেই না কারও কাছ থেকে। আমাকে বলছে যে আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই। এখন এটাকে তুমি কিভাবে একসেপ্ট করতে পারো। আমি তোমার ছেলেদের পড়াশুনার ভার নেব, অ্যামেরিকাতে পড়াশুনা করাব। সব কিছু আমাকে খুলে বললেন। আমি শিক্ষাবিদের ছেলে। এটাও আমি লিখিত দেব যে আমি আর্মিতে আর থাকবো না। আমার ফিয়ান্সে যে ছিল আয়ুব খানের ছেলে গওহর আয়ুবের সাথে তার বিয়ে হয়ে গেছে। আমার মনে ভীষণ কষ্ট। নয় বছরের বন্ধুত্ব চলে গেছে। আমি এখান থেকে বিয়ে করে ফিরবো। আমি চাচ্ছি যে তুমি যদি সম্মতি দাও তাহলে আমি তোমাকে একটা সম্মানে নিয়ে যেতে পারি। আর আমি এখান থেকে ছুটি পাব। কারণ বিয়ের জন্য ছুটি দেয়, অন্য কারণে ছুটি দেয় না। আমি তখন বলতে বলতে … এ কথা বলার পর আমি বললাম যে দেখ আমি খুব ভেবেই ৫ মিনিটেই বলে দিচ্ছি। ও বলে তুমি ভাব, তোমাকে আমি সময় দিলাম। তুমি দুই তিন দিনের মধ্যে আমাকে জানাও। আমি বললাম আমি ৫ মিনিটেই বলে দিচ্ছি যে এটা সম্ভব না কারণ বাংলাদেশ আজকে না হলেও একদিন স্বাধীন হবে। সেদিন আমার নাম না থাকুক বা আমাকে কেউ চিনুক বা চিনুক কিন্তু আমার বিবেক আমাকে খুজবে যে আমি একটা শত্রু .... যারা আমার দেশের উপরে এত ম্যাসাকার করলো তাদেরই একজনকে আমি বিয়ে করে সংসারী হয়ে চলে গেলাম। আমি আমার স্বদেশকে কি কৈফিয়ত দেব? তো আমি বললাম …… তখন আমি খুব গুছিয়ে … একটা কথাই খুব গুছিয়ে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলাম যে আমার স্বদেশের কাছে আমি কি জবাব দেব? আমার জন্য এটা অত্যন্ত নিরাপদ একটা প্রস্তাব। এই মুহূর্তে, এই ভয়ংকর ঝড়ের মধ্যে যেন তীরে ওঠার একটা নৌকা অপেক্ষা করছে। আর সত্যি কথা বলতে কি তোমাকেও আমি খুব পছন্দ করতে শুরু করেছি। ওকে আমি খুব সুন্দর করেই বুঝিয়েছিলাম যে ভালোবাসার তো খুব দীর্ঘ পথ অতদুর পথ আমি না এগুলেও তোমাকে আমার পছন্দ হয়। আমি এটার ডিসিশন সিদ্ধান্ত যাই বল নিতে পারি। কিন্তু এটা নেওয়াটা …… আমার বিবেক বলে যে এটা নেওয়াটা ঠিক হবে না। কারণ আমার স্বদেশের কাছে এটা হঠকারিতা হবে। আমার স্বদেশকে আমি কি জবাব দেব বল। আমি কোন পরিচিত কেউ না আমি কোন খ্যাতিমান কেউ না কিন্তু আমি একটা মানুষ। আমার স্বদেশ আছে। নিজের দেশ আছে। যে দেশের জন্য ....... আমি।বিভিন্নভাবে জানতে পাড়ছি যে … দেখতে পাড়ছি সচক্ষে এবং নিজেও নিগৃহীত হয়ে চলেছি ৯ মাস ধরে। সেখানে আমি আমার শত্রুপক্ষের যত লোভনীয় প্রস্তাবই হোক, শত্রুপক্ষের কাউকে আমি জীবনসঙ্গী করে চলে গেলাম এটা আমার …… কখনও সুস্থ মাথার কথা না।
তখন ভদ্রলোক অদ্ভুতভাবে গাড়ি থেকে নেমে, উনি ড্রাইভিংএ ছিলেন, হ্যাট অফ করে আমাকে একটা স্যালুট দিয়ে বললেন যে আমি এত বড়…… কেউ জানবে না তুমি কে, আমিও কোথায় হারিয়ে যাব, কিন্তু তুমি দেশকে এত ভালোবাসো তোমার এই এইজে, তোমার পরিপূর্ণ তারুণ্য, আর তুমি যে দেশকে ভালোবাসার জন্য এতদুর চিন্তা করেছ এটা তোমার সবচেয়ে বড় ত্যাগ। তুমি মুক্তিযুদ্ধ না করতে পারো, তুমি অস্ত্র হাতে যুদ্ধ কর নাই কিন্তু আমি মেজর আলতাফ করিম বলে যাচ্ছি যে এটা তুমি … একটা বড় ত্যাগ এবং আমাকেও শেখালে। আই এম সরি, আই উইদড্র মাই প্রপসাল এন্ড স্যালুট টু ইউ জাস্ট লাইক এ মাদার এন্ড সিসটার …।
নভেম্বেরের মাঝামাঝি সময়ে উনি এই প্রপসালটা দিয়েছিলেন। বলেন আমি তাহলে ছুটি পেতে পারি। বিয়ের জন্য ছুটি দেয় কিন্তু মা বাবার অসুখ হলে ছুটি দেয় না। কিন্তু যদি আমি বলি যে আমি বিয়ে করতে যাচ্ছি তাহলে আমাকে ছুটি দেবে। আমি আর এই যুদ্ধ করতে চাচ্ছি না। কারণ, ইয়াহিয়া খান ইজ কাটিং হিজ লেগস। তারপরে বলল যে ভুট্টো কাটিং হিজ লেগস। সুতরাং আমি এই যুদ্ধের সাথে …… যদিও আমি আমার সোলজারের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। আরেকটা কথা মনে রেখ ইট ইজ বেটার টু ডাই মোর দ্যান সারেন্ডার। আমি এই শপথ নিয়ে সামরিক বাহিনীতে যোগদান করেছিলাম। কিন্তু এখন আমি আর থাকতে চাচ্ছি না। ১২৫ রেজিমেন্ট (এই অফিসার নিয়োজিত ছিলেন)। তখন উনি এটা বলাতে… আমাকে সাঙ্ঘাতিকভাবে উনি একটা …… আজকে আমাকে কেউ চিনুক বা না চিনুক যে ই ভুল বুঝুক কিন্তু তার এই কথাটা …… আমি কিন্তু চিরদিনের জন্য সংলাপটা মনে রেখেছি। সে খুব বড় করে আমাকে দেখেছিল …… যে আমি তোমাকে একটা বড় করে তোমাকে চিন্তা করলাম … যে এত বড় একটা ঝড়ের মধ্যে এই এত বড় রেপ সিন …… এত রেপ সিন তুমি দেখছ, এত বড় দুর্যোগের মুখে তুমি যে আমাকে প্রত্যাখ্যান করলে এটা আমার জন্য একটা বিরাট অনার। একটা হিউম্যান বিইংয়ের একটা বিশাল মাইল ফলক তুমি তৈরি করলে। তারপরে আমি যখন ৪ ডিসেম্বর অফিস করি উনি আমাকে বলছেন যে …… উনি একটা কথা …… খুব … বাংলা শিখেছিলেন। কোথা থেকে জানি না। ফোন করলেই বলতেন আমি মানুষ বলছি। ঠিক এই শব্দটা ব্যবহার করতেন, আমি মানুষ বলছি। বলার সাথে সাথে আমি বলতাম হ্যা মেজর তুমি মানুষ। সত্যিই মানুষ। আমি তো মনে করবো যে তুমি among the ...... আমার যে নয় মাসের…… নয় মাস তো তখন জানি না… তখন আমি কত বছর জানি না… যে এত বড় একটা যুদ্ধময় সময়ে তুমি একটা মানুষ এটা ...... আমি তোমাকে খুঁজে বের করেছি এবং I love you immensely. এই কথাটা আমি বলেছি।
তোমার এই কথাটা নিয়েই আমি হয়তো খুব …… কিছুক্ষণের মধ্যেই মারা যাব। আমি শিরোমনিতে যুদ্ধ করছি (মেজর বলছে)। (সাক্ষাৎকার গ্রহিতার উদ্দেশ্যে - শিরোমণি এখান থেকে খুব কাছে। এই সেই জুট মিল। ক্রিসেন্ট জুট মিলে এসে আমরা কথা বলছি।) আমি তোমাকে মারা যাওয়ার কিছুক্ষণ আগে তোমার সঙ্গে একটু দেখা করতে পারি? আমি বলি, তুমি অবশ্যই দেখা করতে পারো। আমিও তোমার জন্য অপেক্ষা করবো। তখন মিলে গুটিকয়েক মানুষ আসা যাওয়া করে। তখন উনি দেখি যে খোলা জিপ চালিয়ে মাথায় হেলমেটের মধ্যে গাছ গাছরা দিয়ে …… আর সেই মানুষটাকে চেনা যাচ্ছে না। যাকে কিছু দিন আগেই এত সুদর্শন … খুব…… সে কাটাকাটা… বলে যে আমাদের পানি বন্ধ, খাওয়া বন্ধ, অনেক টাকা আছে। কিন্তু আমি তোমাকে দেব না কারণ এই অসম্মান …… আমি জানি …… কারণ এটাও তুমি শিখিয়েছ যে সম্পর্কের সাথে টাকার কোন সম্পর্ক নাই। আমি রাস্তায় ফেলে দেব যদি কারও কাজে লাগে কিন্তু আমার এই টাকা কোন কাজে লাগছে না। আমি তোমাকে লাস্ট স্যালুট জানাতে আসলাম। আমার বাড়ির একটি ঠিকানা দিচ্ছি…… (লাকাতুরা …… রাওয়ালপিণ্ডির একটা কোন জায়গা।) ঠিকানা দিলাম, তুমি আমার যদি কক্ষনও লাশের খবর তুমি পাও, আমার ডেডবডি তো কেউ এখান থেকে নেবে না। তুমি শুধু জানিয়ে দিও যে আমি নেই। যদি তুমি জানতে পারো। আর তোমার যদি আমার …… কোন অব্লিগেশন … তোমার মধ্যে থেকে থাকে তাহলে তুমি আমার বাড়িতে জানাবে। আমার বড় ভাই আমারই মত। দে আর রেডি টু একসেপ্ট ইউ। তোমার সব কিছু …… মানে তোমার সেখানে যেতে হবে না…… কিন্তু তুমি তোমার যাবতীয় আর্থিক সুবিধা বা তোমার …… যদি কোন রকম অনটন বা আর্থিক সাপরট যদি তুমি চাও তুমি যে কোন এসিসটেন্স তার কাছ থেকে পাবে। আমার বড় ভাইকে এটা বলা আছে।
তার ভাইয়ের নামও আমার মনে নেই। …… সেগুলি সবই বন্ধ… চাপটার ক্লোজ কারণ আমি তখন মুক্তিযুদ্ধ…… আমি তখন স্বাধীনতা পাচ্ছি…… আমি সত্যিকার অর্থেই ঐ কৃতজ্ঞতাটুকু অল্প একটু থাকলেও ঐ ভালোবাসাটুকু অল্প একটু থাকলেও আমি খুব বড় একটা নির্ভর করেছি আমার দেশের চিন্তায়ই। তখন স্বাধীনতা হচ্ছে এই আনন্দটাই আমাকে আচ্ছন্ন রেখেছিল। আমি ওটা রেখে দিলাম। তারপরের ঘটনা ঘটল…… আমাকে স্যালুট করে উনি চলে গেলেন। আমি কিন্তু দাড়িয়ে …… আমার কিন্তু চোখের পানি পড়েছিল। একটা রোমান্টিক সিন ক্রিয়েট হয়েছিল ওখানে। এটা আমি অপরাধী হলে অপরাধী …… কিন্তু আমি করেছিলাম। তারপরে উনি শিরোমণিতেই যুদ্ধ করে মারা গেলেন। আমি পরে জানতে পেড়েছিলাম। কিন্তু ওনার বাসার সাথে আমি কোন যোগাযোগ করিনি। ঠিকানাটাও আমার হারিয়ে গেল।
এই বীরাঙ্গনার নাম ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী।
ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী (১৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৭ - ৬ মার্চ ২০১৮) ছিলেন একজন বাংলাদেশি ভাস্কর। মূলত ঘর সাজানো এবং নিজেকে সাজানোর জন্য দামী জিনিসের পরিবর্তে সহজলভ্য জিনিস দিয়ে কিভাবে সাজানো যায় তার সন্ধান করা থেকেই তার শিল্পচর্চার শুরু। নিম্ন আয়ের মানুষেরা কিভাবে অল্প খরচে সুন্দরভাবে ঘর সাজাতে পারে সে বিষয়গুলো তিনি দেখিয়েছেন। ঝরা পাতা, মরা ডাল, গাছের গুড়ি দিয়েই মূলত তিনি গৃহের নানা শিল্পকর্ম তৈরি করতেন। স্বাধীনতাযুদ্ধে অবদানের জন্য ২০১৬ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে মুক্তিযোদ্ধা খেতাব দেয়। ২০১০ সালে তিনি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান স্বাধীনতা পদক পান।
নৃত্যশিল্পী বুলবুল চৌধুরী (বুলবুল ললিতকলা একাডেমীর প্রতিষ্ঠাতা বেগম আফরোজা বুলবুলের স্বামী) ছিলেন প্রিয়ভাষিণীর বাবার বন্ধু। হায়দার আকবর খান রনো এবং আরেক ভাই জুনো। এদেরকে প্রতিবেশী হিসাবে ভাই বলে ডাকতেন প্রিয়ভাষিণী। এদের পরিবারে কোন বোন ছিল না তাই ওঁদের মা প্রিয়ভাষিণীকে প্রায়ই বাসায় নিয়ে আসতেন এবং মেয়ের মত আদর করতেন।
ওনার মামাদের বন্ধু ছিলেন অভিনয় শিল্পী গোলাম মোস্তফা। নানা বাড়ি কে এম দাস লেনে ছিল। এখানে প্রথম কবি সুফিয়া কামালকে কবিতা আবৃত্তি করতে শোনেন। শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক ছিলেন ওনাদের প্রতিবেশী এবং ওনার বাবার দূর সম্পর্কের মামা। শেরে বাংলার সান্নিধ্য পেয়েছিলেন কিছু দিনের জন্য। পাড়ায় এবং নিজের জেলায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নাচ, গান, আবৃত্তি করে সুনাম অর্জন করেছেন তখন।
মায়ের ফুফাতো ভাইয়ের দ্বারা ধর্ষিত হতে নিয়েছিলেন ১৭ বছর বয়সে। খুলনার দৌলতপুরে তিনি শিল্পী চিত্রকর এস এম সুলতানের সান্নিধ্য লাভ করেন। ভাস্কর্যের অনুপ্রেরণা প্রথম ওনার কাছ থেকেই পান। বাবার প্রিয় ছাত্র জামি ভাইয়ের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হতে নিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর বাবাকে এবং বেগম মুজিবের সাথে দেখা হয়েছিল ঢাকা মেডিকাল কলেজ হাসপাতালে। তখন উনি চতুর্থ শ্রেণীতে পড়েন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেখানে ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বয়স তখন ৫/৬ বছরে হবে। প্রিয়ভাষিণী তাকে খেলার জন্য ডাকেন। তখন বেগম মুজিবের শাড়ির আচল ধরে ঝুলছিলেন শেখ হাসিনা।
এই সাক্ষাৎকারটা ইউটিউবে আছে। লিঙ্ক হল Interview of Ferdousi Priyabhashini shot for Tanvir Mokammel's mega-documentary film “1971” ( ১ ঘণ্টা ৩ মিনিট ১৩ সেকেন্ড থেকে এই বর্ণনা আছে)
এছাড়া ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর নিজের আত্মজীবনীমূলক একটা বই আছে যেটার নাম ‘নিন্দিত নন্দন’। ১৯০ পৃষ্ঠার এই বইয়ে ওনার শৈশব থেকে শুরু করে প্রায় ২০০৮ সাল পর্যন্ত জীবনের বিভিন্ন ঘটনা আছে। এই লিঙ্কে বইটা পাবেন
সূত্র – উইকিপিডিয়া
ইউটিউব
ছবি – বাতায়ন ২৪ ডট কম
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ২:৪৭