ব্লগে কিছু দিন আগে ফিচার লেখার প্রতিযোগিতা হল। আরও আগে ফটোগ্রাফির প্রতিযোগিতা হল। আমি এগুলি বুঝি না তাই অংশ নেই নাই। ছোটবেলা থেকে আমি চাপাবাজিতে বেশ সুনাম কুড়িয়েছি। তাই ভাবলাম নিজ উদ্যোগে ব্লগে চাপাবাজির প্রতিযোগিতার আয়োজন করলে কেমন হয়? মডারেটর জাদিদ ভাইয়ের সাথে এই ব্যাপারে কথা বললাম। উনি খুব খুশি হলেন আমার উপর। বললেন দেখেন চাপাবাজি হল একটা আর্ট। সঠিকভাবে চাপা মারতে পারলে আপনার উন্নতি কেউ ঠেকাতে পারবে না। আমি বললাম তাই নাকি, এটা তো জানতাম না। উনি তখন একটু ডানে বামে দেখে নিলেন আশে পাশে কেউ আছে কি না, তারপর আমার একটু কাছে এসে কানে কানে বললেন ‘আমি যে সামু ব্লগের মডারেটর হয়েছি এটাতো চাপাবাজির কারণেই সম্ভব হয়েছে।‘
ওনার কথায় আমার উৎসাহ আরও বেড়ে গেল। আমি জিজ্ঞেস করলাম ছোটবেলায় আপনার জীবনের লক্ষ্য কি ছিল? জাদিদ ভাই বললেন ‘আমার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য ছিল সামু ব্লগের মডারেটর হওয়া।‘
আমি বললাম যাক আপনার লক্ষ্য পূরণ হয়েছে। কিন্তু পরের কথায় জাদিদ ভাইয়ের কষ্টটা প্রকাশ হয়ে গেল। উনি বললেন যে মডারেটর হওয়ার যে এত প্যারা আগে জানতাম না। আমি তখন বললাম যে জাদিদ ভাই আপনি যদি অভয় দেন তাহলে একটা কথা বলি। জাদিদ ভাই বললেন, বলেন না, নির্ভয়ে বলেন। আমি বললাম যে, জাদিদ ভাই আপনি তো মডারেশন টিমে কাজ করতে করতে হাঁপিয়ে উঠেছেন তাই বলছি যে আপনি যদি জানা আপাকে বলে আমাকে আর অনল চৌধুরী ভাইকে মডারেশনের দায়িত্ব দেন তাহলে আমরা ১ সপ্তাহের মধ্যে সব কিছু টাইট করে দিব।
জাদিদ ভাইয়ের আনন্দচ্ছল চোখের দিকে তাকিয়ে মনে হল উনি যেন অতলান্তিক সমুদ্রে একটা লাইফবোটের সন্ধান পেলেন। আমি বললাম জাদিদ ভাই খেয়াল করে দেখবেন যে ব্লগে আমি আর অনল চৌধুরী ভাই ছাড়া সবাই কিন্তু কম বেশী চাপা মারে। আপনি আমাদের দায়িত্ব দিলে আমরা এই ধরণের চাপাবাজ আর বদ ব্লগারদের সবার হালুয়া টাইট করে দেব। অনল ভাই ক্যারাটে, কুংফু জানেন। কত লোককে ফ্লাইয়িং কিক মেরে পরপারে পাঠিয়েছেন তার হিসাব নাই। কত বড় বড় দাগী আসামি, দুর্নীতিবাজ ওনার মামলার প্যাচে পড়ে আদালতের বারান্দায় দৌড়াতে দৌড়াতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছে। আর আমি তো কলমের জোরে ব্লগে লেখালেখি করে কত নাস্তিককে আস্তিক বানিয়েছি সেটা তো আপনি ভালো করেই জানেন। তাই আপনি দেরী না করে রাজি হয়ে যান।
জাদিদ ভাই যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলেন। দ্বিতীয় কোন চিন্তা না করে তিনি তৎক্ষণাৎ বললেন যে তিনি জানা আপার কাছে এখনই ইস্তফা দাখিল করবেন। ওনার কাছ থেকে বিদায় নেয়ার আগে আমি বললাম যে আপনি কিন্তু আমার আয়োজিত চাপাবাজি প্রতিযোগিতায় অবশ্যই অংশ নিবেন। উনি বললেন যে আমার জন্য আপনারা দেরী করবেন না। কারণ কয়েকদিন আগে আমার লুজ মোশনের কারণে ব্লগ ডে অনুষ্ঠান পিছিয়ে গিয়েছিল। আমার লুজ মোশন এখনও পুরোপুরি ভালো হয়নি। তাই আমার জন্য অপেক্ষা না করে আপনারা শুরু করে দেন। আমি বললাম যে, লুজ মোশনের একটা অত্যন্ত শক্তিশালী ওষুধের নাম লিখে দিচ্ছি। এই ওষুধ খেলে আপনি একদিনে সুস্থ হয়ে যাবেন। আর ওষুধ ঠিক মত কাজ করলে ভবিষ্যতে কোন দিন আর আপনাকে ওয়াশরুমে যেতে হবে না। উনি খুব খুশি হলেন আর আমাদের এই প্রতিযোগিতার জন্য প্রাণ খুলে আল্লাহর দরবারের দোয়া করলেন।
সম্মানিত ব্লগারেরা আপনারা যারা মনে করেন যে চাপাবাজি কোন ব্যাপারই না তারা অতি সত্বর এই চাপা মারা প্রতিযোগিতায় চাপা মারা শুরু করে দেন। এই ব্যাপারে প্রচুর অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে এই প্রতিযোগিতার বিচারক হিসাবে প্রথমে সোনাগাজী সাহেবকে বলা হয়েছিল। কিন্তু উনি বলেন যে আমি বিচারক না বরং একজন তুখোড় চাপাবাজ হিসাবে এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে চাই। ওনাকে আশ্বস্ত করার জন্য বলছি যে ওনাকে একজন প্রতিযোগী হিসাবে পেলে সবাই আরও বেশী চাপা মারতে উৎসাহিত হবে। তাই চাপাবাজি করার জন্য এই পোস্ট ওনার জন্য সম্পূর্ণ উন্মুক্ত রইল।
সোনাগাজী সাহেব বিচারক হতে রাজি না হলেও সমস্যা নাই। এই প্রতিযোগিতায় বিচারক হিসাবে থাকতে সম্মতি দিয়েছেন আমাদের ব্লগের মধ্যমণি সদা আনন্দচ্ছল, সদা কিশোরী, চপলা, চঞ্চলা, সুহাসিনী, মায়াবিনী হরিণী ব্লগার শায়মা। এই ব্লগার আবার বিচারক হতে খুব পছন্দ করেন। ঘণ্টা তিনেক সাজু গুজু করে নতুন বউয়ের মত সেজে বিচারকের আসন গ্রহণ করেন। ওনার সাথে যোগাযোগ করার পর উনি অত্যন্ত খুশি মনে বিচারক হতে রাজি হয়েছেন। আর বলেছেন যে এই প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের এবং উদ্যোক্তাকে উনি নিজে কাওরান বাজার থেকে বাজার করে, নিজের হাতে মাছ কূটে, মসলা বেটে এবং রান্না করে খাওয়াবেন। উনি এটাও স্বীকার করেছেন যে ইতিপূর্বে ব্লগে ওনার খাবারের ছবি দিয়ে মানুষকে প্রলুব্ধ করাটা এক ধরণের চাপাবাজির পর্যায়ে পড়ে। কারণ মানুষ কেউ এগুলি বিশ্বাস করে না। তাই খাবারের ছবি না উনি সত্যি সত্যি ওনার বাসায় কোন কাজের বুয়ার সাহায্য ছাড়া নিজ হাতে রান্না করে বিজয়ীদের এবং এই প্রতিযোগিতার উদ্যোক্তাকে খাওয়াবেন। আমি ওনাকে ধন্যবাদ দিয়ে বললাম যে শুধু একটা সমস্যা আপনার হবে। সেটা হল বিচারক হওয়ার কারণে এই পোস্টে চাপাবাজি করার লোভ সামলাতে হবে আপনাকে। উনি বললেন ঠিক আছে চাপামারার জন্য আরও কত পোস্ট আছে। সেখানে গিয়ে চাপা মারবো। তাই এটা কোন সমস্যা না আমার জন্য।
তাই আর দেরী না। আগ্রহী চাপাবাজিতে পারদর্শী ব্লগাররা চাপা মারা শুরু করতে পারেন। (ব্লগের গতি কমে গেছে তাই চাপা মারার লোকও খুঁজে না পাওয়া যেতে পারে বলে আশংকা হচ্ছে)
বিঃদ্রঃ কোন কঠিন চাপা ব্লগ টিমের গায়ে লাগলে কোন সমস্যা হবে কি না এই ব্যাপারে জাদিদ ভাইকে জিজ্ঞেস করা হলে উনি অভয় দিয়ে বলেছেন যে ‘দুনিয়াটা তো চলেই ভাই চাপার উপরে। তাই কঠিন কোন চাপার কারণে ব্লগ টিম মাইন্ড খাবে না এবং অংশ গ্রহণকারী কোন ব্লগার বা এই প্রতিযোগিতার উদ্যোক্তার বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নেবে না। '
সুত্রঃ কোন সূত্র খুঁজে পেলাম না।
ছবিঃ ইউটিউব
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ৯:৫৯