কিছু বৈজ্ঞানিক এবং যৌক্তিক কারণে বর্তমান যুগের তরুণ সমাজ বিবাহ বিমুখ হচ্ছে। এছাড়া ইদানিং কিছু আন্তর্জাতিক জরীপ থেকে জানা যাচ্ছে যে অবিবাহিত মানুষও বিবাহিতদের মতই সুখী এবং স্বাস্থ্যবান হতে পারে। আগে একটা প্রচলিত ধারণা ছিল যে বিবাহিতরা অবিবাহিতদের চেয়ে বেশী স্বাস্থ্যবান এবং সুখী। কিন্তু মনোবিদ এবং সমাজ বিজ্ঞানীরা এখন বিপরীত তথ্য দিচ্ছেন। আসলে এই নতুন তথ্যগুলি আরও আগেই সমাজ বিজ্ঞানীদের আবিষ্কার করা উচিত ছিল। ওনাদের কথা শুনেই আগেকার অনেক মানুষ বিয়ের দিকে ঝুকেছিলেন। এখন ওনারা অন্য রকম বললে সবার জন্যই সমস্যা। এই জিনিস আগে জানলে অনেকে ভিন্ন রকম সিদ্ধান্ত নিতেন হয়তো।
নতুন প্রজন্মের বিবাহবিমুখ হওয়ার পিছনের বৈজ্ঞানিক এবং যৌক্তিক কারণ সমুহঃ
আসলে এই লেখাটা শুধু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে না। সারা বিশ্বের মানুষের সংস্কৃতিকে বিবেচনা করে লেখা হয়েছে। তাই অনেকগুলি কারণ হয়তো আমাদের দেশের জন্য প্রযোজ্য নাও হতে পারে। তবে অনেকগুলির হাওয়া এই দেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে লাগছে।
১। বিয়ে না করেই এক সাথে থাকা যাচ্ছেঃ
আগে সারা বিশ্বেই ধর্মের অনেক প্রভাব ছিল। বিয়ে না করে এক সাথে থাকাকে এখন থেকে ৫০ বছর আগেও অনেক সংস্কৃতিতেই খারাপ চোখে দেখা হত। এখন মানুষ ধর্মের চেয়ে বিজ্ঞানকে বেশী গুরুত্ব দেয়। রানুর মত মনে করে ধর্ম হল কুসংস্কার। আসলে বিজ্ঞানের আলোকে বাচ্চাকাচ্চার জন্ম বা যৌন সুখের জন্য বিয়ের কোন প্রয়োজন নেই। এগুলি এক সময়ের ধর্মীয় কুসংস্কার ছাড়া আর কিছু না। অনেকেই এইভাবে মনে করে।
২। বিয়ে খুব ব্যয়বহুল
শুধু আমাদের দেশে না পৃথিবীর বেশীরভাগ দেশে বিয়ে খুব ব্যয়বহুল। এই খরচ জোগাড় করতে প্রায় ১০ বছরের সঞ্চয়ের প্রয়োজন হয়। আর যদি বাড়ি হয় চট্টগ্রাম এবং কন্যার পিতা কেউ হন তাহলে তার যে কি অবস্থা হয় তা একমাত্র ভুক্তভোগীই বুঝতে পারবে। আমাদের দেশে একমাত্র বিশ্ব ইজতেমার সময়ে প্রতি বছর সম্পূর্ণ বিনা খরচে, বিনা যৌতূকে প্রায় ১০০ থেকে ২০০ জোড়া বর এবং কনের বিয়ে হয়ে থাকে। আমার মনে হয় এই ধরণের বিয়ে সারা বিশ্বের তরুণদের জন্য একটা অনুপ্রেরণা বা উদাহরণ হতে পারে।
৩। অবিবাহিত নারী এবং বাচ্চাহীন নারীরা বেশী সুখীঃ
নতুন জরীপ সমুহ এই রকমই বলছে। ফলে আগ্রহী ছেলেরা সম্ভবত বিয়ে করার মত মেয়ে খুঁজে পাচ্ছে না। এই জরীপের প্রভাবে সামনে হয়তো আরও বেশী নারী বিয়ে বিমুখ হবে। ফলে ছেলেরা চাইলেই বিয়ে করতে পারবে না। তবে ভবিষ্যতে পুরুষেরাও মনে করা শুরু করবে যে অবিবাহিত থাকা বেশী সুখকর। (তবে ওনাদের এই ধারনার মধ্যে সত্যতা থাকার সম্ভবনা আছে। এই কারণেই সম্ভবত বিবাহিতরা বিয়ে করার পড়ে মাথার চুল ছেড়ে)
৪। বিয়ের কোন আইনগত প্রয়োজনীয়তা এখন আর নাই অনেক দেশেঃ
আমাদের দেশে এখনও বিয়ের আইনগত প্রয়োজনীয়তা থাকলেও অনেকেই এখন আর আইন মানতে তেমন আগ্রহী না। বিয়ে না করেও মোটামুটি বিয়ের সব সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায় আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে।
আর বিশ্বের অনেক দেশে বিয়ে ছাড়া সম্পর্কের আইনগত ভিত্তি দেয়া হয়েছে। ফলে তারা অনেক খুশি।
৫। আধুনিক পরিবারগুলি প্রকৃতপক্ষে টিভি শোর মত এত সুখের নাঃ
বিশ্বের বিভিন্ন টিভি শোগুলিতে সুখী পরিবারের যে চিত্র দেখানো হয় বাস্তব তার থেকে অনেক দূরে। অনেক দেশে ৩ টা বাচ্চার মধ্যে ১ টা বাচ্চাই বড় হচ্ছে একক বাবা বা মার কাছে। এগুলি বাবা, মা এবং সন্তানের জন্য সুখকর না কিন্তু বাস্তবতা। বাংলাদেশে গৃহ নির্যাতন কি পরিমান হয় তার সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া মুশকিল। তবে পত্রিকা এবং অন্তরজাল থেকে আমরা বুঝতে পারি গৃহ নির্যাতনের মাত্রা আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে। উন্নত দেশেও গৃহ নির্যাতন ঘটে। ফ্রান্সের মত দেশে নাকি প্রতি ৩ দিনে একজন নারী হত্যা হয় তার স্বামী বা পার্টনারের হাতে। এই ধরণের সহিংসতার কারণে অনেক তরুণ/ তরুণী এখন বিয়ে করতে চায় না।
৬। বিবাহ বিচ্ছেদের ভয়ে অনেকে বিয়ে করতে চায় নাঃ
বিবাহ বিচ্ছেদের কারণে আইনগত, আর্থিক এবং আবেগজনিত সমস্যায় পড়ে মানুষ। অনেকে বিয়ে করতে দেরী করছে এই কারণে যে তারা পূর্ণ নিশ্চয়তা চাচ্ছে যে বিয়েতে বিচ্ছেদ হবে না। কিন্তু এই নিশ্চয়তা আসলে দেয়া সম্ভব না। ফলে অনেকে বয়স পার হয়ে যাচ্ছে এবং শেষ পর্যন্ত বিয়ে করছে না। সারা বিশ্বেই বিবাহ বিচ্ছেদের হার বাড়ছে। অ্যামেরিকায় প্রথম বিয়ের প্রায় ৪৪% বিচ্ছেদ হয়ে যায়। অনেক দেশে গড়ে বিয়ের আয়ু হল ১২/১৩ বছর।
৭। বর্তমানে অনেক মানুষ বিয়ে প্রথাকেই বিশ্বাস করে নাঃ
পৃথিবীর অনেক মানুষ বিয়েকে একটা বাতিল প্রথা হিসাবে দেখে। তারা মনে করে এই আধুনিক যুগে বিয়ের কোন প্রয়োজন এখন আর নেই।
তবে আমার মনে হয় এত কিছুর পরেও বিয়ের দরকার কাছে, পরিবারের দরকার আছে। এত সুস্বাদু লাড্ডু না খেয়ে পস্তানোর কোন মানে হয় না। বুকে একটু সাহস নিয়ে দুরুদুরু বুকে বিয়ে করে ফেলা উচিত। বাকিটা আল্লাহ ভরসা। বিয়ে এবং বিচ্ছেদের আইনগুলি ভালো করে পড়ার পরে এই কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।
সূত্র - purewow.com/wellness/reasons
ছবি - শ্রদ্ধেয় নুরু ভাইয়ের একটা পোস্ট থেকে নেয়া
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ২:২২