somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দেশের জন্য, আদর্শের জন্য, অন্যায়ের প্রতিবাদের জন্য যারা মৃত্যুকে বেছে নেয় তাদের মৃত্যুকে কি বৃথা বলা যাবে?

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ভোর ৬:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মানুষ নিজের জীবনকে সবচেয়ে বেশী ভালোবাসে। তারপরও পৃথিবীর ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় যুগে যুগে বহু মানুষ বিভিন্ন পরিস্থিতিতে নিজেদের জীবন স্বেচ্ছায় উৎসর্গ করেছে দেশকে ভালোবেসে, কোন আদর্শকে ভালোবেসে কিংবা কোন অন্যায়ের প্রতিবাদ করে। এই মৃত্যু বরণের সিদ্ধান্ত কি ঠিক ছিল নাকি ওনারা জীবনটা বাঁচালে ভালো হত? যারা এইভাবে জীবন দান করেন তারা নিজে কিছু পাওয়ার জন্য আত্মত্যাগ করেন না। তাদের একটাই আশা থাকে, যে আদর্শ নিয়ে তারা লড়ছেন সেটা যেন সফল হয়। যদিও সব ক্ষেত্রে সফলতা আসে না। কিন্তু তাই বলে তাদের আত্মত্যাগের সিদ্ধান্তকে ভুল বলা কি ঠিক হবে?

২০১৬ সালের ঢাকার হলি আর্টিজানের ঘটনায় ফারাজ আইয়াজ হোসেন স্বেচ্ছায় মৃত্যুকে বেছে নিয়েছিলেন। কিন্তু তার সুযোগ ছিল ঐ স্থান ত্যাগ করার। ঐ দিন সন্ত্রাসীরা তাকে হত্যা করে, যদিও একজন বাংলাদেশী এবং মুসলিম হিসাবে তিনি সন্ত্রাসীদের লক্ষ্য ছিলেন না। সন্ত্রাসীরা তাকে চলে যাওয়ার সুযোগ দিয়েছিলো কিন্তু সে তার বন্ধুদের পরিত্যাগ করে একা চলে আসতে অস্বীকৃতি জানায়। তার এই সিদ্ধান্ত কি ভুল ছিল? সবাই হয়তো এই সিদ্ধান্ত নিতে পারতো না। কিন্তু তার এই সিদ্ধান্তের কারণে আজ সে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। সে চলে আসলে বেচে থাকতেন এবং কয়েক যুগ আরাম আয়েশে কাটিয়ে জীবন উপভোগ করতে পারতেন। সেই জীবন ভালো নাকি তার এই সম্মানজনক বীরোচিত মৃত্যু ভালো? মৃত্যু যেহেতু অনিবার্য সেই ক্ষেত্রে সাধারণ মৃত্যু সম্মানের নাকি এই ধরণের বীরের মৃত্যু সম্মানের? যদিও স্বীকার করতে হবে সব মানুষের এই ধরণের মৃত্যু বরণ করার সাহস থাকে না।

সারা বিশ্বে এই ধরণের আত্মত্যাগকে সম্মানের চোখে দেখা হয়। কখনও বলা হয় না যে এই আত্মত্যাগ ভুল ছিল। যুগে যুগে দেশের জন্য বহু বীর বিভিন্ন পরিস্থিতিতে স্বেচ্ছায় জীবন দিয়েছেন। ভবিষ্যতে নিজের দেশ যুদ্ধে জয়ী হবে কি না সেটাও তারা জানতেন না। কিন্তু তাদের সিদ্ধান্তকে ভুল বলা যাবে না। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় অনেক ঘটনা পাওয়া যায় যেখানে দেখা গেছে সঙ্গী সাথীদের জীবন বাঁচাতে গ্রেনেডের উপরে শুয়ে পড়েছে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময়েও দেখা গেছে অমানুষিক অত্যাচার করার পরও দলের কারও অবস্থান প্রকাশ করেনি এবং এক পর্যায়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে। এই ধরণের সাহস সবার হবে না। কিন্তু এই মৃত্যুগুলি সম্মানের এবং বীরত্বের। এগুলি নির্বুদ্ধিতা না বরং বীরত্ব। নিজের জীবনের বিনিময়ে অন্যকে বাঁচানো কিংবা একটা আদর্শকে বাঁচানোর চেষ্টা একটা বীরত্বপূর্ণ এবং মহৎ কাজ। যদিও সবার পক্ষে এই রকম বীর হওয়া সম্ভব না। কিন্তু যারা জীবন দিয়েছেন ওনারা ভুল করেননি।

সক্রেটিস ইচ্ছে করলে তার বাণী এবং শিক্ষা থেকে সরে এসে প্রাণ ভিক্ষা চাইতে পারতেন এবং সেটা মেনে নেয়ার সম্ভবনাও ছিল। কিন্তু তিনি সেটা না করে মৃত্যুদণ্ড মেনে নিয়েছিলেন। উনি প্রাণ ভিক্ষা চাইলে ওনার আদর্শের কাছে উনি পরাজিত হতেন। হয়তো উনি বেচে থাকতেন কিন্তু সক্রেটিসের মত লোকের পক্ষে সেই রকম বেচে থাকার কোন মানে হয় না।

সবাই বীর হতে পারে না। কিন্তু যারা বীরত্বের সাথে মৃত্যুকে বরণ করে নিয়েছেন তাদের সিদ্ধান্তকে হঠকারিতা কিংবা ক্ষণিকের আবেগ বশত সিদ্ধান্ত বলা যাবে না। বরং সেটা ছিল সময় এবং পরিস্থিতির দাবী এবং মানবতাকে প্রতিষ্ঠিত করার সর্বোত্তম প্রয়াস। মানুষের জন্য, মানবতার জন্য, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রাণ উৎসর্গ করাকে আমাদের স্যালুট জানাতে হবে। কারণ ঐ মাত্রার বীরত্ব দেখানোর কলিজা আমাদের সবার নেই। সাহসী মানুষের মানবতার প্রতি অবদানকে কখনই ছোট করা যাবে না।

ছবি - ফ্লিক আর
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ৭:০২
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×