
২০১৬ সালের ঢাকার হলি আর্টিজানের ঘটনায় ফারাজ আইয়াজ হোসেন স্বেচ্ছায় মৃত্যুকে বেছে নিয়েছিলেন। কিন্তু তার সুযোগ ছিল ঐ স্থান ত্যাগ করার। ঐ দিন সন্ত্রাসীরা তাকে হত্যা করে, যদিও একজন বাংলাদেশী এবং মুসলিম হিসাবে তিনি সন্ত্রাসীদের লক্ষ্য ছিলেন না। সন্ত্রাসীরা তাকে চলে যাওয়ার সুযোগ দিয়েছিলো কিন্তু সে তার বন্ধুদের পরিত্যাগ করে একা চলে আসতে অস্বীকৃতি জানায়। তার এই সিদ্ধান্ত কি ভুল ছিল? সবাই হয়তো এই সিদ্ধান্ত নিতে পারতো না। কিন্তু তার এই সিদ্ধান্তের কারণে আজ সে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। সে চলে আসলে বেচে থাকতেন এবং কয়েক যুগ আরাম আয়েশে কাটিয়ে জীবন উপভোগ করতে পারতেন। সেই জীবন ভালো নাকি তার এই সম্মানজনক বীরোচিত মৃত্যু ভালো? মৃত্যু যেহেতু অনিবার্য সেই ক্ষেত্রে সাধারণ মৃত্যু সম্মানের নাকি এই ধরণের বীরের মৃত্যু সম্মানের? যদিও স্বীকার করতে হবে সব মানুষের এই ধরণের মৃত্যু বরণ করার সাহস থাকে না।
সারা বিশ্বে এই ধরণের আত্মত্যাগকে সম্মানের চোখে দেখা হয়। কখনও বলা হয় না যে এই আত্মত্যাগ ভুল ছিল। যুগে যুগে দেশের জন্য বহু বীর বিভিন্ন পরিস্থিতিতে স্বেচ্ছায় জীবন দিয়েছেন। ভবিষ্যতে নিজের দেশ যুদ্ধে জয়ী হবে কি না সেটাও তারা জানতেন না। কিন্তু তাদের সিদ্ধান্তকে ভুল বলা যাবে না। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় অনেক ঘটনা পাওয়া যায় যেখানে দেখা গেছে সঙ্গী সাথীদের জীবন বাঁচাতে গ্রেনেডের উপরে শুয়ে পড়েছে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময়েও দেখা গেছে অমানুষিক অত্যাচার করার পরও দলের কারও অবস্থান প্রকাশ করেনি এবং এক পর্যায়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে। এই ধরণের সাহস সবার হবে না। কিন্তু এই মৃত্যুগুলি সম্মানের এবং বীরত্বের। এগুলি নির্বুদ্ধিতা না বরং বীরত্ব। নিজের জীবনের বিনিময়ে অন্যকে বাঁচানো কিংবা একটা আদর্শকে বাঁচানোর চেষ্টা একটা বীরত্বপূর্ণ এবং মহৎ কাজ। যদিও সবার পক্ষে এই রকম বীর হওয়া সম্ভব না। কিন্তু যারা জীবন দিয়েছেন ওনারা ভুল করেননি।
সক্রেটিস ইচ্ছে করলে তার বাণী এবং শিক্ষা থেকে সরে এসে প্রাণ ভিক্ষা চাইতে পারতেন এবং সেটা মেনে নেয়ার সম্ভবনাও ছিল। কিন্তু তিনি সেটা না করে মৃত্যুদণ্ড মেনে নিয়েছিলেন। উনি প্রাণ ভিক্ষা চাইলে ওনার আদর্শের কাছে উনি পরাজিত হতেন। হয়তো উনি বেচে থাকতেন কিন্তু সক্রেটিসের মত লোকের পক্ষে সেই রকম বেচে থাকার কোন মানে হয় না।
সবাই বীর হতে পারে না। কিন্তু যারা বীরত্বের সাথে মৃত্যুকে বরণ করে নিয়েছেন তাদের সিদ্ধান্তকে হঠকারিতা কিংবা ক্ষণিকের আবেগ বশত সিদ্ধান্ত বলা যাবে না। বরং সেটা ছিল সময় এবং পরিস্থিতির দাবী এবং মানবতাকে প্রতিষ্ঠিত করার সর্বোত্তম প্রয়াস। মানুষের জন্য, মানবতার জন্য, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রাণ উৎসর্গ করাকে আমাদের স্যালুট জানাতে হবে। কারণ ঐ মাত্রার বীরত্ব দেখানোর কলিজা আমাদের সবার নেই। সাহসী মানুষের মানবতার প্রতি অবদানকে কখনই ছোট করা যাবে না।
ছবি - ফ্লিক আর
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ৭:০২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




